top of page
..

হরিণের মত প্রাণীদের খাদ্য সংকটের সামনে সুন্দরবন ?

ইদানিং আবার বারেবারে মানুষ ও বাঘের মুখোমুখি দেখা হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে। বাঘ বন ছেড়ে গ্রামে চলে আসার অনেক কারণ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন যথেষ্ট পরিমাণে বাঘের খাদ্যের যোগান রয়েছে কিনা তা নিয়ে। আবার বাঘের খাদ্য যেসকল প্রাণী, সুন্দরবন তাদের যথেষ্ট খাদ্য যোগাতে পারছে কিনা আসছে সে প্রশ্নও। কলম ধরলেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ লেফট্যানেন্ট কর্নেল শক্তিরঞ্জন ব্যানার্জী


সুন্দরবন এই পৃথিবীতে একটি বিশিষ্ট বাস্তুতন্ত্র হিসাবে সুপরিচিত। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো একে ঐতিহ্যশালী এলাকার তালিকাভুক্ত করায় এবং গোটা সুন্দরবনকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে ঘোষণা করায় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে। খাদ্য-শৃঙ্খলে বাঘ (Panthera tigris tigris) এখানে সবার ওপরে অবস্থান করে। তাই তার পরিপূরক হবার জন্য এখানে তার খাদ্য হিসাবে তৃণভোজী প্রাণীদের প্রয়োজন যথেষ্ট সংখ্যায়। শেষবার ক্যামেরা ট্র্যাপের সাহায্যে গণনায় ১০৩টি বাঘের সন্ধান মিলেছিল সুন্দরবনে। তৃনভোজী বা herbivorous জীবের মধ্যে চিতল হরিণ (Axis axis) আর বন্য শুকরই (Sus scrofa) প্রধান। এমনকি রেসাস প্রজাতির বাঁদরও (Macaca mulatta ) খাদ্য তালিকায় আছে। এই তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা ধরে রাখতে তাদের খাদ্যের যোগানও যথাযুক্ত থাকা দরকার।দুর্ভাগ্য এই যে, চিতল ও বন্য শূকর ছাড়া অন্য কোন ধরনের খাদ্য তেমন নেই বাঘেদের জন্য সুন্দরবনে। এটা প্রমাণিত যে, সোয়াম্প ডিয়ার( Cervus duvauceli ), কাকড় হরিণ(Muntiacus muntjak ), হগ ডিয়ার ( Axis porcinus ) এর মত হরিণের প্রজাতি সুন্দরবন থেকে হারিয়েই গেছে। অন্য কোন মাংসাশী জীবের থেকে এখানে বাঘ কোন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয় না। এমন ছোট তিনটি প্রজাতি যদিও আছে- বন বেড়াল, মেছো বিড়াল ও লেপার্ড ক্যাট। কিন্তু বাঘেদের কোন তুলনাতেই এরা আসে না। তাও আমরা স্বল্পই কিছু হরিণ দেখতে পাই নদী ও খাঁড়ির পারে, যেখানে ১০-১৫ বছর আগেও বড় বড় দলে তাদের দেখা পাওয়া যেত। হরিণের এই সংখ্যা কমে যাওয়া কি তাদের খাদ্যের অভাবের ইঙ্গিত করছে?


অন্যদিকে, বাংলাদেশের সুন্দরবনে হরিণ ও শূকর -দুটোই অনেক বেশি সংখ্যায় দেখা যায়। কেউ যদি বাংলাদেশর পূর্ব দিকে কাটকা অঞ্চলের সুন্দরবনে ভ্রমণ করেন- তবে ৫০-৬০টি হরিণের দল প্রায়ই দেখা যায়। যদিও বাংলাদেশ সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলের অবস্হা প্রায় ভারতের অংশের মতই।


ঘাসের প্রজাতি

সতেজ ঘাস থাকা খুবই দরকার তৃণভোজী প্রাণীদের টিকে থাকার জন্য। চিতল হরিণ হল এক্ষেত্রে সবথেকে সংখ্যাধিক্যে থাকা প্রাণী যাদের টিকে থাকতে চাই যথেষ্ট ঘাস। ভারতীয় সুন্দরবনে যে সকল ঘাস পাওয়া যায় তারা হল-

Porteresia coarctata বা ধানি ঘাস

Myriostachya wightiana বা মুথাঘাস

Sprobolus spp


হরিণের প্রিয় গাছ

কেওড়া গাছ হল হরিণের খুব প্রিয়। একটা পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক আছে বানর ও হরিণের মধ্যে। বানর কেওড়া গাছের পাতা খায়, আবার তা নীচে ছড়ায় যেটা হরিণ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। তবে এই পশ্চিমদিকের সুন্দরবনে গেঁওয়া গাছও তাদের বেশ প্রিয়। তোরা জাতীয় উদ্ভিদ , যা জলের উচ্চ লবণাক্ত ভাব সহ্য করতে পারে তাও হরিণের প্রিয় খাদ্য। আসলে পশ্চিমদিকের সুন্দরবনের জলের উচ্চ লবণাক্ত ভাব খাদ্যাভাবের একটা কারণ।

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের তুলনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে কেওড়া জাতীয় গাছই হরিণের পছন্দের খাবার। পশ্চিম বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা বিভাগে পশ্চিমবঙ্গের অংশের মত মুথা ঘাসই প্রধান খাদ্য হরিণের।কিন্তু পূর্ব বাংলাদেশ সুন্দরবনে Saccarum spontaneum, Imperata cylindrical, Desmostachya bitillata প্রজাতির ঘাস প্রচুর। ফলে হরিণের বড় দল এখানে দেখা যায়।যেহেতু বাংলাদেশ সুন্দরবনে হেঁটে ঘোরা যায়, এইসব বড় বড় দলকে কাছ থেকে দেখা সম্ভব।বন বরাহও ভাল সংখ্যায় আছে সেখানে। জলের লবণাক্ত ভাব কম হওয়ায় গাছের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বড় হয়। এই কারণে সুন্দরী ও নিপা পাম গাছের সংখ্যাও বেশি এইসব দিকে।

ভারতীয় সুন্দরবন ও তার বিশেষত: পশ্চিমাংশের জলের লবণাক্ত ভাব অনেক বেশি ও তা উদ্ভিদ এবং ঘাসের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক নয়। ভারতীয় সুন্দরবনে তৃণভোজীদের খাদ্যের সম্ভারের ওপর সমীক্ষা করা প্রয়োজন ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার দরকার। তৃণভোজী প্রাণীদের সংখ্যা ও অরণ্যের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই তা করতে হবে।


লেখক পরিচিতি: লেখক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটানেন্ট কর্নেল।WWF India র পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রাক্তন ডিরেক্টর। বর্তমানে সাম্মানিক ডিরেক্টার, ওয়াইল্ডলাইফ প্রোটেকশান সোসাইটি অব ইন্ডিয়া।



Comments


Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page