top of page

গাড়োয়ালের ডায়েরি (পর্ব ৫): গঙ্গোত্রী থেকে গোমুখের পথে

Writer's picture: s bhattacharyas bhattacharya

চলছে উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ের ওপর ধারাবাহিক ভ্রমণ-কথা। স্মৃতি থেকে কলম ধরলেন সুমন্ত ভট্টাচার্য্য



গঙ্গোত্রী মন্দির

পা’য়ে পা’য়ে ছেড়ে এলাম গঙ্গোত্রী মন্দির চত্বর। চারধামের এক ধাম গঙ্গোত্রীর গঙ্গা মা’য়ের মন্দির। তীব্র স্রোতে বয়ে যাওয়া ভাগীরথীর তীরে, সবুজ পাহাড়ের নীচে এই মন্দির চত্বরে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে দূরে বরফঢাকা শৃঙ্গের হাতছানি। আমাদের গন্তব্য তো ওই দিকেই। ওদিকেই গোমুখ। যেখান থেকে বরফের প্রাচীন গুহা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন পতিতপাবনী গঙ্গা। এত হাজার হাজার মানুষের কলরোলে মুখর গঙ্গোত্রী ধাম। তার মন্দির, ধর্মশালা, হোটেল, অলি-গলি, দোকান-পসরায় ভূভারতের পুণ্যার্থীর ঢল। এইসব পেরিয়ে তাদের কতজনই বা যাবেন গঙ্গার উৎসের সন্ধানে! পার্থিব চাওয়া-পাওয়ার বাইরে ক’জন খুঁজতে চাইবেন হিমালয়ের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা দেবভূমিকে! এসব ভাবতে ভাবতে উঠে এলাম শুরুর বেশ কিছুটা চড়াই। এখন নীচে দেখা যাচ্ছে শ্বেতশুভ্র গঙ্গোত্রী মন্দির আর তার সোনালী চূড়া। আর নীচে দেখলাম ধীরে ধীরে উঠে আসছে আমাদের বাকি সঙ্গীরা। ছ’জনে চলেছি এবার গোমুখের পথে। আমি আর আমার গিন্নী ছাড়া বাকিদের কাছে এটাই প্রথম বড়সড় ট্রেকিঙের অভিজ্ঞতা। আমাদের দলের গাইড কেশব। কেশব রাণা। হরশিলের ছেলে। সঙ্গে মালবহনের কাজে সঞ্জীব, মনোজ আর দীপক। হাস্যমুখর ও শিক্ষিত একদল গাড়োয়ালি তরুণ। কেশবকে আমাদের সঙ্গীদের অনভিজ্ঞতা সম্বন্ধে অবহিত করে ওদের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে বললাম। ওরা উঠছে ধীরে ধীরে বিশ্রাম নিয়ে। আমরা দু’জন ঠিক করলাম নিজেদের ধীর ছন্দে এগিয়ে চলব। পাহাড়ের পথে এটাই নিয়ম। ধীর পায়ে এগিয়ে চলা অহেতুক বিরতি না নিয়ে। এ শিক্ষা পেয়েছি হিমালয়-পথিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রচনা পড়ে। পাহাড়ের পথে ছুটে চলে মন, যখনই চোখ বোলাই তাঁর হিমালয় পথের অনিন্দ্যসুন্দর ভ্রমণকথায়। এই পথ তো তাঁর স্মৃতি-ধন্য। বেশ কয়েকবার হিমালয়ের এইদিকে ছুটে এসেছেন তিনি পতিতপাবনী গঙ্গার আকর্ষণে। তাঁর বর্ণনা দেওয়া গঙ্গোত্রী আর সেই শান্ত, স্নিগ্ধ তপোবনটি নেই। তীর্থব্যবসার এক প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়ে তা আজ নেহাতই পণ্যসভ্যতার অংশ। কিন্তু এই পথের যে অনুপম রূপ তিনি এঁকেছিলেন বইয়ের পাতায় পাতায় তা যেন এবার ফুটে উঠছে চোখের সামনে। বিশাল আকাশছোঁয়া সব পাহাড় গাড়োয়াল হিমালয়ের এই অংশে। মাথায় তাদের শ্বেতশুভ্র বরফের আলপনা। দু’পাশ থেকে পাহারা দিচ্ছে এই ভাগীরথী উপত্যকাকে। পাইন বনের মধ্যে দিয়ে সরু পথ। জায়গায় জায়গায় ধ্বস আটকানোর জন্য বাঁধিয়ে দিয়ে রক্ষা করার মরিয়া চেষ্টা মানুষের।

মাথা তুলছে বড় বড় শৃঙ্গরা

ডানদিকে খাদের গভীরে তীব্র স্রোতে বয়ে যাচ্ছেন মা গঙ্গা। ওপাশে উঠে গেছে খাড়া পাহাড়। জায়গায় জায়গায় নেমে এসেছে ঝর্ণা কি কোন হিমবাহ। প্রকৃতপক্ষে ধারাসু, উত্তরকাশি, ভাটোয়ারি কি হরশিল হয়ে গঙ্গোত্রী পৌছতে পৌছতে বুঝতে শিখেছি গঙ্গার সৃষ্টিরহস্য। গোমুখ তার মূল উৎস হতে পারে। হতে পারে অলকানন্দা বা মন্দাকিনী তার প্রধান দুই ধারা। কিন্তু এই হিমালয়ে যত জলস্রোত, নদী, নির্ঝরিণী- তারা সবাই এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই গঙ্গার বুকে। এমনকি যমুনা বা নেপাল হিমালয়ের যত প্রধান নদী তাদেরও শেষ গন্তব্য এই গঙ্গারই বুকে। এভাবেই তিলে তিলে বেড়ে উঠে গোটা উত্তর ভারতকে ধারণ করেছে প্রাণস্বরূপিনী এই নদী। তাই তো সে সব নদীর মা। এত তার বন্দনা। স্হানীয় কথায় বলে “মানো তে গঙ্গা মাইয়া...নেহি মানো তো বহতা পানি”।


দেখতে দেখতে এসে গেল গঙ্গোত্রী ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বার।

চেকপোস্ট



এখান থেকেই দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ টাকা মূল্য দিয়ে মিলবে গোমুখ-তপোবনের পারমিট। তপোবন গেলে অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে গাইড। বুঝে নেওয়া হবে সাথে নিয়ে যাওয়া প্লাস্টিকের সামগ্রীর পরিমাণ। ৫০০টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট ফেরত পাওয়া যাবে সেসব ফিরিয়ে আনলে। প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত হিমালয়ের কোনা কোনা। তা রোধ করার যথাসাধ্য প্রয়াস আর কি! এখানেই শেষ মিলবে মোবাইলের সিগন্যাল। তারপর সভ্যতার সাথে বাকি যোগাযোগ শেষ। সঙ্গীদের এবং গাইডের জন্য প্রতীক্ষায় বসে বসে মনে পড়ে যাচ্ছে এই পথের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা। ভারতীয় সভ্যতার লালন-পালন করে এসেছে যে নদী, তাকে নিয়ে চির-কৌতূহল, চিরকালীন আকর্ষণের টানে যুগ যুগ ধরে মানুষ ছুটে গেছে ভাগীরথীর উৎসর খোঁজে।আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে-“..... নদীকে জিজ্ঞাসা করিতাম ‘তুমি কোথা হইতে আসিতেছ?’ নদী উত্তর করিত ‘মহাদেবের জটা হইতে’। তখন ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন বৃত্তান্ত স্মৃতিপথে উদিত হইত”। অথচ দীর্ঘকালই গঙ্গার উৎপত্তিস্হল নিয়ে ছিল বিভ্রান্তি, ভুল ধারনা। পুরাণ কথায় ভাগীরথের গঙ্গা আনয়নের পুণ্যকাহিনী একসময় পবিত্র তীর্থ মানস সরোবরকেই গঙ্গার উৎপত্তিরূপে ভাবতে শেখায়। আবার হিউয়েন সাং থেকে আল বিরুনী মনে করেছিলেন হরিদ্বারই গঙ্গার উৎপত্তিস্হল। মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে এর উৎসস্হলের খোঁজে অভিযান হলেও তা শিবালিক পর্বতমালা পেরোতে পারেনি। এমনকি চীনদেশের বা প্রথম ইওরোপীয় অভিযাত্রীদের মানচিত্রেও তিব্বতের মানস সরোবর বা তার সন্নিহিত অঞ্চলকেই গঙ্গার উৎপত্তিস্বরূপ ধরা হয়েছে। শেষ অবধি জট কাটে ১৮১৭ সালে। ব্রিটিশ সার্ভে অফিসের ক্যাপ্টেন হজসন, লে হার্বার্ট গঙ্গোত্রী মন্দিরের জনৈক পূজারীকে নিয়ে ৩১শে মে গোমুখ আবিষ্কার করেন। তখন গঙ্গোত্রীতে সামান্যই কিছু সাধারণ মানুষের আনাগোনা ছিল। তাদেরও গঙ্গার দুর্গম উৎসমুখ নিয়ে ছিল না তেমন আগ্রহ। গোমুখ আবিষ্কারের পর গঙ্গার মূলধারা রূপে স্বীকৃতি পায় ভাগীরথী। গঙ্গোত্রীতেও বাড়ে পুণ্যার্থীর আনাগোনা। এরপর ব্রিটিশ সার্ভে অফিসের তৎপরতায় আবিষ্কার হয় নতুন করে একের পর এক হিমবাহ, শৈলশিখর। গোমুখ আবিষ্কারের সেই ঠিক ২০০ বছরের মুখে আমরা যাত্রা করেছি গোমুখ ও গোমুখ ছাড়িয়ে তপোবনের নির্জন উপত্যকার উদ্দেশ্যে। এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এ যেন আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ হিমালয় পথের সেইসব অভিযাত্রীদের প্রতি যাদের দু:সাহসিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম হিমালয়ের দ্বার নতুন করে উন্মোচন করেছে পৃথিবীর সামনে।





সঙ্গীরা এসে পৌঁছালে পারমিটের কাগজপত্র সব মিলিয়ে নিয়ে এক এক করে বেরিয়ে পড়লাম সামনের পথে। এবার পথ আরো সরু হয়ে এসেছে। বড় বড় পাথরে তা গতি অবরূদ্ধ করছে যাত্রীদের। আগে-পিছে চলেছে আরও বেশ কিছু দল। কেউ পুণ্যার্থী। বেশিরভাগই দুর্গম পথের অভিযানের টানে। সন্ন্যাসীরা চলেছেন সামান্য লোটাকম্বল নিয়ে খালি পায়ে। বিদেশিরাও আছেন তাদের বড় বড় ব্যাকপ্যাক, তাঁবু ও সরঞ্জামের বোঝা নিয়ে। এক ইজরায়েলি দম্পতি চলেছেন। পিঠে তাদের ২ বছরের ছেলে। গতকাল আলাপ হয়েছিল বিদেশি আর একজোড়া তরুণ-তরুণীর সাথে। গেরুয়া কাপড়, রুদ্রাক্ষের মালা, মাথায় জটা। হিমালয়ে এসে খুঁজছেন ভারতকে, তার সনাতন আত্মাকে। তাদেরও পথে দেখা পেলাম। কুশল বিনিময় হল। হিমালয়ের পথে আলাদা দলে থেকেও সবাই যেন সাথী। পথের হাল দেখে মনে পড়ে যাচ্ছে উমাপ্রসাদের কথা- কেমন ভাবে একটা পাথর থেকে আর একটা পাথরের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয়েছিল তাঁকেও।


সময়ের সাথে পথকে বাঁধার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু হিমালয়ের রুদ্র প্রকৃতিকে বশ মানানো তো এত সোজা না। বিশেষত উত্তরকাশী জেলার এইসব দিক বড়ই ধ্বস-প্রবণ। তাই পথের সেই উগ্ররূপের মালুম পড়ছে জায়গায় জায়গায়। এক এক জায়গা ধ্বস নেমে এতই সরু যে দু’জন পাশাপাশি যেতে পারে না। মুখোমুখি আগন্তুক থাকলে একজনকে দাড়িয়ে যেতে হয়। কোথাও বা পথে নেমে এসেছে ঝর্না। খরস্রোতের ওপর ভুজ বা পাইন গাছের কাঠ দিয়ে বানানো সেতু সাবধানে পার হয়ে যেতে হচ্ছে। এছাড়া তীর্থযাত্রী যারা এপথে হাঁটতে সক্ষম নন- তাদের নিয়ে আর মালপত্র নিয়ে ছোট ঘোড়া চলেছে টুং টাং ঘণ্টা বাজিয়ে। আমাদের সঙ্গীরা বোধহয় বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। আমরা সামান্য সময়ের জন্য কোথাও বসছি একটু জিরিয়ে নিতে গাছের ছায়ায়। ঘামে ভেজা দেহটা মুহূর্তের মধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে বরফশৃঙ্গের ছোঁয়া লাগা বাতাসে। একটু জল পান, সঙ্গে বিস্কুট কি লজেন্স। পথের জ্বালানি। ভাবছি কখন চিরবাসা আসবে। চটিতে জিরিয়ে নেব। একটু চা, জলখাবার পাব। গঙ্গোত্রী থেকে চিরবাসা ৯ কিমি। তারপরে আরো ৫ কিমি চলে ভোজবাসা। সঙ্গী মনোজ, সঞ্জীবরা ভরসা দেয়- আর একটু দূরে। কিন্তু পাহাড়ের মানুষদের একটু পথ তো আমাদের জন্য অনেকখানি। অগত্যা লাঠি হাতে আবার পাথর ভাঙ্গা পথ। এদিকটায় চীর, অর্থাৎ পাইন গাছ নদীর তীরে ঘন হয়ে এসেছে। কত রকমের পাখি। তাদের ডানায় দুরন্ত রোদ্দুর। ক্যামেরায় ছবি নিতে নিতে চিরবাসা কাছে এসে গেল। কিন্তু পথ তো এখানে ভয়ানক! পুরানো পথ ধ্বসে ভেসে গেছে ক’বছর আগে। এখন বড় বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে প্রথমে খাড়া নেমে, তারপর একটা ঝোড়া পেরিয়ে আবার খাড়া উঠতে হবে। তবেই পৌঁছানো যাবে চীরবাসা চটি। সেই হাঁটুভাঙ্গা পথ পার হয়ে গাছে ঢাকা চীরবাসায় এলাম। যাত্রী, ঘোড়া, ঘোড়াওয়ালার ভিড়ে সরগরম। এখানে একটু বিশ্রাম। চা, আলুপরোটা আর বিস্কুট। তারপর আবার হাঁটা।

ওই দেখা যায় চীরবাসা

মনোজদের বলে এলাম বাকি সাথীদের জন্য অপেক্ষা করতে। এবার আকাশে একটু একটু মেঘের ভিড়। সামনের ভৃগু আর মন্দা পিকগুলো ঢেকে গেছে। চাইছি তাড়াতাড়ি পা চালাতে। চিন্তা হচ্ছে পিছনে থাকা সঙ্গীদের জন্য। তবে এটাই ভরসা কেশব, মনোজরা আছে ওদের জন্য। গাড়োয়ালের পথে ওখানকার গাইড-পোর্টাররা জান দিয়ে আগলে রাখেন যাত্রীদের। এটাই ওদের যুগ যুগান্তরের ধর্ম। পিছন থেকে দেখলাম দ্রুত আসছে সঞ্জীব। এসে জানাল, সামনের পথটা খুব খারাপ। যখন তখন ধ্বস নামতে পারে। তাই ও চলে এল আমাদের সাথে চলব বলে। দেখিয়ে নিয়ে যেতে লাগল পথ। সত্যিই এখানে মাথার ওপরে পাহাড়ের গায়ে বড় বড় পাথর এমনভাবে রয়েছে যেন, যে কোন মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বে। এখানে বিশ্রামের জন্য দাঁড়ানোও নিরাপদ নয়। বৃষ্টিও পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা। এরই মাঝে দেখলাম একদল ভরাল চরে বেড়াচ্ছে পথের ওপর পাহাড়টায়। হিমালয়ের উঁচু এলাকায় বাস এই ছাগল জাতীয় প্রাণীর।

ভরালের দল

মনে পড়ে গেল তুঙ্গনাথেও এদের দলে দলে দেখেছিলাম। এভাবে চলতে চলতে পাথরের বেশ উঁচু একটা চড়াই এল। সঞ্জীব জানালো, ওখানে উঠলেই ভোজবাসা দেখা যাবে। এখন একটু রোদ উঠেছে। উঁচু জায়গাটায় পৌঁছে চোখে পড়ল দূরে ঝলমল করছে ভাগীরথী শৃঙ্গরা। আর তার নীচে? ওই দেখা যাচ্ছে গোমুখ। সে এক স্মরণীয় মুহূর্ত। পুণ্য স্মৃতি। সামনেই বিস্তৃত উপত্যকায় ভোজবাসার ছোট ছোট ক্যাম্প আর আশ্রমগুলি দেখা যাচ্ছে। আজকের যাত্রার ওখানেই বিরতি। পাথরের মধ্যেই ছুটে নেমে চললাম আমরা সেদিকেই।

সামনেই ভোজবাসা। আর ওই দূরে ভাগিরথী শৃঙ্গের নীচে গোমুখ।



251 views0 comments

Komentar


472988974_1066719631921628_7123774556652206934_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page