এই দেশে প্রজেক্ট এলিফ্যান্টের তিন দশক হয়ে গলেও হাতিদের খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট বাড়ছে বই কমছে না, যার ফলে নিত্য নতুন সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে মানুষের সাথে। কর্ণাটকের একটি গবেষণা এই সংঘাতের সাথে হাতিদের যাতায়াতের স্বাচ্ছন্দ্যের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। কর্ণাটক বনবিভাগও জোর দিচ্ছে এই বিষয়টির উপরে। লিখছেন সারদা বালাসুব্রহ্মণ্যম।
কর্ণাটকের মাইসোর এলিফ্যান্ট রিজার্ভ। হাতি এবং মানুষের সংঘাত যেখানে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল একসময়। আর মোক্ষম দাওয়াই বলতে যেখানে বেড়া বা ফেন্সিং দুর্দান্ত একটা স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ব্যবহার করা হল। সরকারি টাকার বড় অংশ এতেই ব্যয় হয়। গবেষকরা সম্প্রতি আরেকটা বিষয় জানতে পেরেছেন। নগরহোল-বন্দিপুর ন্যাশনাল পার্কের উত্তরের সীমানা বরাবর যে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, তা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ছড়িয়ে থাকা দুটি সংরক্ষিত এই দুটি এলাকা যা হাতির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এবং সংরক্ষণের জন্য আদর্শ, সেখানে হয়ত সংঘাত প্রশমন করতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। তবে সেটা যোগাযোগ ব্যবস্থার বিনিময়ে।
এলিফ্যান্ট রিজার্ভে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিয়ে গবেষণা এমন একটি মডেল বা নকশা প্রয়োগ করে করা হয়েছে যেখানে হাতিদের যোগাযোগ ও মানুষে-হাতিতে সংঘাতকে আলাদা আলাদা ভাবে না দেখে এক সুতোয় বাঁধা হয়েছে। দীর্ঘ এই গবেষণা যোগাযোগের পথ এবং সংঘাতের এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে এই গবেষণা বৃহত্তর ক্ষেত্রে সংরক্ষণ পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করবে এমন সব জায়গায়, যেখানে হাতি এবং মানুষের দেখা-সাক্ষাৎ হামেশাই হয়ে থাকে।
আর এই সংঘাতের ব্যপারে কথা বলতে গিয়েই তাঁরা জোর দিয়েছেন একটি বিষয়ে। সেটা হল, ২০১৪ সালের ঘটনা। আলুর-সাকলেশপুর এলাকার বাইশটি হাতি ধরা এবং বিচ্ছিন্ন দল ভেবে তাদের সরিয়ে দেওয়া। এই পুরো ভাবনাটাই ভুল ছিল।
তারপর অবশ্য এক বছরের মধ্যেই শূন্যস্থান পূরণ হয়ে যায়। হাতিরা ফের থাকতে শুরু করে। “আমাদের গবেষণায় ওই এলাকায় হাতিদের বেশি সংখ্যায় যাতায়াতের সম্ভাব্যতার কথা বলা হয়েছিল। সেটাই ২০১৪ এর পরে হাতিদের ফিরে আসার যে প্রত্যাশা করেছিলাম ও হতে দেখলাম, তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখা দেয়। আর এটাই খন্ড খন্ড বাসভূমি থেকে হাতিদের সরিয়ে দেবার বিরুদ্ধে একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়”, জানালেন লেখক বরুণ গোস্বামী, যিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের Conservation Initiatives এর পরিচালক ও বরিষ্ঠ গবেষক।
“সংযোগ এবং সংঘাত একে অপরের ওপর নির্ভরশীল; কারণ সংঘাতের আশঙ্কা বেশি না কম সেটা নির্ভর করে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা একটা হাতি যদি মানুষ বা ফেন্সিং- কিছু দেখতে পায়, তাহলে এমনিই সে তার পথ পরিবর্তন করবে। অর্থাৎ সংঘাত নতুন সংযোগের রাস্তা তৈরি করে দেবে। এই দুটো দিক একসাথে পর্যবেক্ষন করা হয় এই গবেষণায়, এবং আমরা দেখতে পাই, কোথায় গিয়ে এই দুটো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়” জানালেন কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভের জয়েন্ট ডিরেক্টর এবং বরিষ্ঠ গবেষক দিব্যা বাসুদেব, যিনি নিজে আবার এই গবেষণাপত্রটির মুখ্য লেখিকা।
গতিবিধির নজরদারি
বাসুদেবের মতে, বন্য পশুদের যাওয়া-আসার ব্যপারে সবার আগে বুঝতে হবে, বন্যরা কোন পথে যাতায়াত করে, কেন তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর কতদূর পর্যন্ত তারা যেতে পারে?
উদাহরণস্বরূপ আমাদের দেশে, একটি হাতি যদি বড় বড় বৃক্ষ সর্বস্ব এলাকা বা কৃষিজমির মুখোমুখি হয়, তাহলে তার সম্ভাব্য পথ কোনটা হবে?
ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির ওয়াইল্ড লাইফ ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশন ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক রবার্ট ফ্লেশার যিনি এই গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক, তিনি জানান যে বন্যপ্রাণীরা তাদের বাসস্থান কিভাবে ব্যবহার করে সেই তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে এখানে। আর সেই তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় তাদের গতিবিধির অনুমান করা হয়েছে।
মাইসোর এলিফ্যান্ট রিজার্ভে গবেষকরা ৯,১০০ জনের ওপর একটি সমীক্ষা চালান। কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। জানতে চান, তারা হাতিদের দেখেছেন কিনা বা কোন সংঘাত হয়েছে কিনা। সাক্ষাৎকারের তথ্যের সঙ্গে শস্য ধ্বংসের যে সব খবর সংবাদমাধ্যমে আসে সেগুলি বিবেচনা করা হয়, তারপর যাচাই করা হয় মডেলের সঙ্গে।
প্রস্তাবিত ব্যবস্থা
বরুণ গোস্বামীর কথায়, সংরক্ষিত ভূ-ভাগে চার ধরণের জায়গা থাকতে পারেঃ কম সংঘাত, বেশি যাতায়াত; কম সংঘাত, কম যাতায়াত; বেশি সংঘাত, কম যাতায়াত; বেশি সংঘাত, বেশি যাতায়াত।
“আমরা মাইসোর এলিফ্যান্ট রিজার্ভের একটা মানচিত্র তৈরি করেছি, যেখানে এই চারটে জায়গাই আলাদা আলাদা ভাবে রয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় সংরক্ষণের জন্য সবথেকে উপযুক্ত পরিকল্পনার পরামর্শ দিয়েছি। আশা রাখি, আমাদের পরামর্শ বন্যপ্রাণ বিভাগের পরিচালক এবং সংরক্ষণবিদদের ভালো রকম সাহায্য করবে, হাতি এবং মানুষের সংঘাতহীন বেঁচে থাকার জন্য একটা নতুন পরিকল্পনা দেবে”
তাঁর মতে, সবথেকে গোলমেলে বিষয় হল সংযোগপথ ও সংঘাতের অন্তর্দ্বন্দ। হাতিদের জন্য সংযোগ ব্যবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সংঘাতের জায়গাটা কমিয়ে আনাও অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। যে সকল এলাকায় বেশি বেশি সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে সংঘাত কমানোর জন্য কৌশল নিতে হবে, যা সংযোগ ব্যবস্থায় কোনরকম বাধা তৈরি করবে না।
এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, হাতির গতিবিধি জঙ্গলের চারপাশে বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করে বরং যেখানে মানুষের যাতায়াত বেশি, সেখানে বেড়া দেওয়া হোক যেমন মানব বসতি, কৃষিজমি ইত্যাদির চারপাশে যাতে হাতিরা সেখানে যেতে না পারে। হাতির সঙ্গে মানুষের নেতিবাচক সম্পর্কের পরিণতি এভাবেই এড়ানো সম্ভব যদি হাতির অবাধ যাতায়াত কোন এলাকায় বাধা না পায়
এর জন্য অনেক গভীর তথ্যের প্রয়োজন রয়েছে, জানালেন বাসুদেব।
তিনি বললেন, “সরলরৈখিক পরিকাঠামো নির্মাণ এই সংযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলার অন্যতম একটা কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে, যোগাযোগের পথে কোন রাস্তা তৈরি হলে, সমস্যা কমানোর জন্য সেভাবে পরিকল্পনা আমাদের নেওয়া উচিৎ”
বাসুদেব পরামর্শ দিচ্ছেন, করিডরগুলোকে নিরাপদ রাখা খুব দরকার ও জমির ব্যবহার অক্ষুন্ন রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ যোগাযোগের করিডোরের অর্থ তো শুধু অরণ্যের এলাকা নয়, এমনকি আবাদী জমি বা বাগানও তার মধ্যে পড়তে পারে। এতে হাতির গতিবিধি যেমন ব্যহত হবে না, তেমনই মানুষের জীবিকার দিকটাও বজায় থাকবে।
জমিনীতি এমন হতে হবে যাতে হাতিদের যোগাযোগের বিষয়টা মাথায় থাকে। এমন শস্য চাষ করতে হবে যা হাতিরা খায় না। “প্রত্যেক এলিফ্যান্ট রিজার্ভ এবং সংরক্ষিত অরণ্যের ব্যবস্থাপনায় এই ধরনের জমির মানচিত্র রাখতে হবে। আর নিয়ম মেনে নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে যাতে সংঘাত প্রশমনে এবং যোগাযোগের এলাকার সংরক্ষণে সাফল্য আসছে কিনা সেটা বোঝা যায়। তার জন্য যারা এর সঙ্গে যুক্ত, প্রত্যেককে একজোট হয়ে কাজ করাটা জরুরি।
বি. রামকৃষ্ণন যিনি উটির গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং IUCN Asian Elephant Specialists Group এর একজন সদস্য, তিনি নিজেও হাতির সঙ্গে সংঘাতের ইতিহাসটা আরেকবার ভালো করে ঝালিয়ে নিতে বলছেন। তার সাথে জমি ব্যবহারে পরিবর্তন বা বাসস্থানগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়গুলি। কারণ এই সংঘাত বহুদিন ধরেই চলে আসছে এবং এইসবের পরিবর্তনটা বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
এই সংঘাতের অন্যতম কারণ, হাতিদের বাসস্থানগুলোবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। বাসুদেব বলছেন, “যখনই কোন সংঘাতের ঘটনা ঘটে, তখনই আমরা বাসস্থানের বিছিন্ন হয়ে পড়ার(fragmentation) কথা বলি। এই বিভাজন থামানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
রামকৃষ্ণন বলেন, “হাতিরা বড় পশু। তাদের বড় জায়গার প্রয়োজন। ছোট ছোট জায়গায় আটকে রাখাটা একেবারেই ঠিক নয়। যেহেতু ওদের বাসস্থান সংকুচিত হয়ে আসছে, গাছপালা এবং ঘুরে বেরাবার জায়গাও ক্রমশ কমছে আর যে কারণে, ঠিকঠাক খাবার পাওয়াটাও এই সকল বন্যদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জায়গার জন্য অন্যান্য পশুদের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে”
“হাতিরা ফসল দেখে প্রলোভনে পড়ে, যদি তারা দুটি সংরক্ষিত এলাকার মাঝামাঝি ঘোরাফেরা করে”, এমনটাই জানালেন কর্ণাটকের এক বন দফতর আধিকারিক।
“কৃষি ব্যবস্থা এখন পাল্টেছে। মরসুমি চাষ না করে তারা এখন সারা বছর চাষ করছে। কৃষকরা ফসল পাল্টাতে ইচ্ছুক নয়, যেহেতু তারা ভালোরকম লাভ করতে পারছে; এটাই তাদের জীবিকা” বললেন রামকৃষ্ণন।
সহনশীলতার অভাব
“হাতি এবং মানুষের সংঘাতের একমাত্র ওষুধ – সহাবস্থান। কিন্তু সেখানে কোন সহনশীলতা নেই। যখন একটি হাতি মানুষের থাকার জায়গায় ঢুকে পড়ছে, এবং দু’তিনজনের মৃত্যু হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্যার সমাধান করা উচিৎ। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে, পঞ্চায়েতের মিটিং করে কোন লাভ নেই। মৃত্যুর সংখ্যা যখন বাড়ে, মানুষ তখন শোনার মতন অবস্থায় থাকে না” এমনটাই জানালেন কর্ণাটক বন দফতরের এক অভিজ্ঞ আধিকারিক।
এই ঘটনা সমাধানের জন্য এলিফ্যান্ট টাস্ক ফোর্স রয়েছে। যখনই সংঘাতের ঘটনা ঘটে, তখনই বন দফতর বিষয়টা নিয়ে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়। বছর ঘুরছে, বন দফতর নিজেদের ব্যবহার করা পদ্ধতিগুলোয় অনেকটাই পরিবর্তন এনেছে। একইসঙ্গে বেড়া দেওয়া বা পরিখা দেওয়ার ক্ষেত্রেও। কিন্তু হাতিরা এইসব এড়িয়ে যাবার রাস্তা ঠিক খুঁজে পায়।
“আমরা যাই করি না কেন, সংঘাত যেন নিত্যদিন বেড়েই চলেছে” জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক।
বন দফতরের পক্ষ থেকে হাতিদের জন্য জলের বড় বড় গর্ত খোঁড়া হয়েছে। লান্টানা কামারা বা যাকে আমরা বাংলায় পুটুস বলি (এক ধরণের বহিরাগত উদ্ভিদ), সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অরণ্যের চারপাশে পরিখা কাটা হচ্ছে। এছাড়া আগেভাগে সতর্কতা জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে এসএমএস অ্যালার্ট। যে সব হাতিদের কলার পরানো রয়েছে, তারা নির্দিষ্ট কোন এলাকায় এলেই গ্রামবাসীদের কাছে মেসেজ পৌঁছে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, অকারণে তাঁরা যেন বাইরে না বেরোন।
সংঘাত প্রশমনের জন্য, বন দফতর ক্ষতিপূরণ এবং বেড়া-এর ওপর আলাদা খরচা করছে। সেই জন্য খরচ এখন কর্ণাটকের বন দফতরের কাছে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আধিকারিকদের বক্তব্য, “হাতির আটকানোর ব্যবস্থা যেখানে, সেখানে সমস্যা অনেকটাই কমে আসে। ব্যারিকেড পেরোতে গিয়ে হাতির মৃত্যু হবার মত ঘটনা এখন অনেকটাই কম। সব হাতি বেড়া পেরোতে পারে না। যাদের উচ্চতা ৩ মিটারের থেকে বেশি, একমাত্র তারাই টপকাতে পারে। আর যাদের উচ্চতা ঘোরাফেরা করে ২-২.৫ মিটারের মধ্যে, তারা টপকাতে ব্যর্থ হয়। যদিও সেই ধরণের ঘটনা একেবারেই নামমাত্র বলা যায়”
বন দফতর হাতি-মানুষের সংঘাত কমানোর জন্য তাদের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে বেড়া আর পরিখা লাগিয়ে। কিন্তু হাতিরা ঠিক এই সব বাধা পেরনোর রাস্তা খুঁজে বের করে নেয়।
যে সকল এলাকায় সংঘাত হবার সম্ভাবনা বেশি কিন্তু যাতায়াতের সম্ভাবনা কম, সেই সকল এলাকায় বেড়া দেওয়া ঠিকঠাক (যখন দুটি জায়গার মধ্যে কোন সংযোগ থাকে না)। আবার অন্য দিকে, যদি সংযোগ ও সংঘাতের দুটি বিষয়ই সংশ্লিষ্ট থাকলে, সেখানে জমির ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী এই লড়াই প্রশমনের মাপকাঠি খুঁজে বার করতে হয়। এমন ভাবে জমির ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে যাতে সংঘাতের সম্ভাবনা কমে আসে।
“আমরা যাই করি না কেন, সংঘাতের বহর দিন দিন বাড়ছেই”, জানালেন এক আধিকারিক।
সংঘাত প্রশমনের জন্য, বন দফতর ক্ষতিপূরণ এবং ফেন্সিং-এর ওপর আলাদা খরচা করছে। সেই খরচ এখন কর্ণাটকের বন দফতরের কাছে দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগে যেখানে মানুষের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হত ৭.৫ লক্ষ টাকা, আজ সেখানে অঙ্কটা দ্বিগুণ করে দেওয়া হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকা। ফসলের ক্ষতি হলেও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, আগে এক কুইন্টাল ধানের জন্য যেখানে দেওয়া হত ১৩২০ টাকা, আজ সেটা বেড়ে হয়েছে ২৬৪০ টাকা। এই অঙ্কটা আবার শস্য বিশেষে পাল্টে যায়।
“কর্ণাটক বন দফতরে, এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পদ্ধতি অ্যাপ নির্ভর। কৃষকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়, ফটো তোলা হয়, কৃষিজমির কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা মাপা হয়, আর সেই অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা বোঝা যায় যা সরাসরি চলে যায় নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে, অবশ্যই জেলা বন আধিকারিকাদের কাছ থেকে অনুমোদন পাবার পর। তারিখ, ফোন নম্বর যুক্ত করা হয়। পুরো বিষয়টা এতো স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয় যে কেউই দ্বিতীয় কোন দাগ ফোটাতে পারবে না, এমনকি বন দফতরও না” জানালেন এক আধিকারিক।
এর সঙ্গে কিছু কিছু পরিবারের সদস্যদের অস্থায়ী কিছু কাজ দেওয়া হয় (যেমন গাড়িচালক, পাহারাদার)। বছর বছর ধরে বন দফতর মানব সম্পদের নিয়োগে জোর দিচ্ছে যাতে একটা সুসংহত দল তৈরি করা যায়। সংঘাত প্রশমনের জন্য খরচ বাড়াচ্ছে। এমনকি দফতর পরিখা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা খরচ করছে।
“অনেক গবেষণা হয়েছে, কিন্তু কতজন গবেষক তাঁদের প্রকাশিত গবেষণার ফল ভাগ করে নেন বনদপ্তরের সঙ্গে অথবা সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেন? তাঁদের মধ্যে কয়েকজন মাত্র এগিয়ে আসেন আমাদের কাছে” তেমনটাই জানালেন এক আধিকারিক।
রামকৃষ্ণনের বক্তব্য, “আমাদের আরও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় জোর দিতে হবে এবং বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে গবেষণালব্ধ ফল নিয়ে নীতি নির্ধারনের জন্য”
রামকৃষ্ণনের বক্তব্য অনুযায়ী, সংঘাত-সংযোগের জায়গাগুলো চিহ্নিত করার কাজটা খুবই দরকারি, অন্তত তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত এই জায়গাগুলোকে নজরে রেখে। তিনি বলেন, “তাহলেই আমরা এই ফলাফলের মূল্যায়ন করতে পারব। এছাড়াও সংঘাতের ক্ষেত্রে বন্য পশুদের স্বভাব, জমির ধরণ, শস্যের ধরণ, বিচ্ছিন্ন আবাসস্থলের দিকগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি আলোকপাতের প্রয়োজন রয়েছে”
মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2023/03/mapping-connectivity-and-human-elephant-conflict-in-karnataka/
ভাষান্তর: ঋতিঙ্কর বসু
Comentários