ভারতীয় ভূ-খন্ডের দক্ষিণতম প্রান্ত নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অদ্বিতীয় তার আদিম রেন ফরেস্ট আর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রের জন্য। সেখানে বাস বিভিন্ন প্রাচীন উপজাতির। এই স্হানে নীতি আয়োগের পরিকল্পনায় ভাবা হচ্ছে একটি কন্টেনার বন্দর সহ আধুনিক নগরী, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মানের কথা। এতে এখানকার বৈচিত্রপূর্ণ ভূ-প্রকৃতি, জীবজগৎ ও মানবসমাজের অস্তিত্বের জন্য বিরাট এক প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদ, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ থেকে বৈজ্ঞানিকেরা। কাটতে হবে আট লক্ষ বাহান্ন হাজার গাছ। সর্বোচ্চ ভূমিকম্প-প্রবণ এই এলাকায় এমন কাজ থেকে নিবৃত্ত হতে বলছেন তারা। আলোচনায় ময়াঙ্ক আগারওয়াল।
ভারত সরকার সম্প্রতি গ্রেট নিকোবর দ্বীপের 'সামগ্রিক উন্নয়ন' এর কথা ভেবে জোর কদমে নামতে চলেছে একটি বহুমুখী প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে। একটি আন্তর্জাতিক কন্টেনার বন্দর, সামরিক ও সাধারণ কাজের জন্য ব্যবহৃত একটি বিমানবন্দর, একটি গ্যাস, সৌর ও ডিজেল নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং একটি নগর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এর মধ্যে যা ১,০৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হবে। এই প্রকল্পের জন্য কাটা হবে আট লক্ষ বাহান্ন হাজার বৃক্ষ। এর ফলে স্হানীয় জীবজগতের উপরেও পড়বে বড়সড় প্রভাব যাদের মধ্যে রয়েছে লেদারব্যাক টার্টল, মেগাপড জাতীয় পাখি, সামুদ্রিক প্রবাল, পরিযায়ী পাখির দল আর নিকোবারের কাঁকড়া-ভুক বাঁদরেরা (Nicobar crab-eating macaques)। এছাড়া এর ফলে স্হানীয় বিপন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীরও অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ার সম্ভাবনা।
৭৫ হাজার কোটি টাকার এই বিশাল প্রকল্পের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বাস্তবায়নের যদিও প্রতিবাদ করছেন পরিবেশবিদ, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ থেকে নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ।তারা এই প্রকল্পের পরিবেশ গত সমীক্ষা (environmental impact assessment) -র অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভারতীয় ভূখন্ডের দক্ষিণতম প্রান্ত এই নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ যা অবস্হানগত ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই স্হান ভারতীয় ভূখন্ডের তুলনায় মায়ানমার বা সুমাত্রার বেশি নিকটবর্তী এবং ২০১৩ সালে এই জায়গাকে UNESCOর biosphere programme এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জীববৈচিত্রের দিক থেকে এই স্হান অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এবং বেশ কিছু অভিনব বন্যজীবের বাস এখানে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, "এখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা সুরক্ষিত বৃষ্টি-অরণ্য বা রেনফরেস্ট।"
ভারত সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি এই প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য বিবেচনা করে ২০২২ এর মে মাসে।যদিও এই কমিটি পরিবেশ ও উপকূল এলাকার জন্য ছাড়পত্রকে মান্যতা দেয়নি বরং আরও তথ্য চেয়েছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার জন্য। এই প্রকল্পের জন্য চাই ১৬৬.১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা যার মধ্যে ১৩০.৭৫ বর্গ কিলোমিটারের অরণ্য পড়ছে যা কাটার জন্য ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে আলাদা ভাবে।
কিন্তু নাগরিক সমাজের একটা অংশ মনে করছে এই সমস্ত ছাড়পত্র পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা, যখন সরকারের সর্বোচ্চ অংশ যেমন 'নীতি আয়োগ' থেকে এই প্রকল্প রূপায়নের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।
মে, ২০২২ এর সভার 'মিনিটস্' অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ কমিটি স্হানীয় সম্প্রদায় ও জীববৈচিত্রের উপর প্রভাবের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা দূর করার চেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিরক্ষা ছাড়া অন্য যে কোন কাজের জন্য গ্রেট নিকোবার দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে পেমায়া বে, ক্যসুরিনা বে এবং আলেকজান্দ্রিয়া বে যেখানে লেদারব্যাক কচ্ছপ, মেগাপড পাখি বা কুমীরেরা তাদের প্রজননের জন্য ব্যবহার করতে পারে বিকল্প স্হান হিসাবে, তা প্রকল্পের এলাকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
RoW (Right of Way) অনুযায়ী যে ৫৫ মিটার রাস্তার কথা বলা হয়েছে তা এই কমিটি দেখেছে এমনকি জাতীয় সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ের মাপকাঠি অনুযায়ীও তা প্রয়োজনের থেকে বেশি চওড়া। তাদের মতে, "রাস্তা ৩০ মিটারের বেশি চওড়া করার দরকার নেই। বাকি ২৫ মিটারের অংশ প্রকল্প এলাকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত এবং কোন গাছ না কেটে তা সড়কের দুইধারে প্রাকৃতিক সবুজ রক্ষাকবচ হিসাবে রাখা উচিত"।
প্রকল্পটির অবস্হানগত গুরুত্বের কথা ভেবে প্রস্তাবিত গলফ্ কোর্সটির পরিকল্পনাও নাকচ করে দেয় কমিটি এবং একে “misfit” বলে ঘোষণা করে কারণ এতে প্রচুর জলের প্রয়োজন।বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি প্রণালী বানানোর কথাও বলে যাতে কচ্ছপেরা অবারিত যাতায়াত করতে পারে আর বন্যপ্রাণীদের জন্য আরণ্যক একটি করিডর তৈরি করার কথাও বলে যাতে বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা সহজে সমুদ্র উপকূলে যেতে পারে, এই প্রকল্প তাদের জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। কমিটি রাস্তা তৈরির সময় সাপ, কাঁকড়া, কুমীর ও অন্য সরীসৃপ/ উভচর প্রাণীদের জন্য গাছপালায় তৈরি canopy walks/bridges- এর ব্যবস্হাও রাখতে বলে।
বন্যপ্রাণী ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য ভাবা ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই প্রকল্প ওই এলাকার জনবিন্যাসে স্হায়ী পরিবর্তন আনবে।আর এই প্রকল্প ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় তৈরি হচ্ছে। আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ সর্বোচ্চ ভূ-কম্প প্রবণ এলাকা অর্থাৎ, সিসমিক ৫ নাম্বার জোনে অবস্হিত। ২০০৪ সালে এই এলাকায় ৯.৩ রিখটার স্কেল মাত্রা কম্পন দেখা দিয়েছিল যার পরবর্তী সুনামি আছড়ে পড়ায় এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০২২ এর জানুয়ারিতে প্রকল্পটির জনশুনানির সময়, Tata Institute of Social Sciences এর অন্তর্গত Jamsetji Tata School of Disaster Studies এর অধ্যাপক ও ডিন জানকী আন্ধেরিয়া আন্দামান ও নিকোবারের প্রশাসনকে একটি চিঠি লিখে জানান যে, যে স্হানে কন্টেনার টার্মিনালের পরিকল্পনা হয়েছে তা গত দশ বছরে ৪৪৪ টি অর্থাৎ বছরে ৪৪ টির মত ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়। তাই এই পরিকল্পনার পুনর্বিবেচনার কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,"এটা সবার জানা যে ইন্দিরা পয়েন্ট যা গ্রেট নিকোবারের দক্ষিণতম সীমা, সেখানকার লাইট হাউসটি ২০০৪ এর ভূমিকম্পের পর কিছু অংশ জলের তলায় চলে যায় যা ইঙ্গিত দেয় ৩-৪ মিটারের মত জমি তলিয়ে যাবার। আর একটি বড় ভূমিকম্পের ফলে গোটা প্রকল্পের বিনিয়োগ সংকটে পড়ে যাবে এবং এর ফলে যে গ্যাস ও তেল ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তার ফলে এই স্হান যা পৃথিবীর বুকে অতুলনীয় জীববৈচিত্রের দিক থেকে, সেখানে একটা পরিবেশগত বিশাল বিপর্যয় ঘটবে।"
আন্ধেরিয়া আরো বলেন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে এখানে আনুমানিক সাড়ে ছয় লক্ষ মানুষ বসতি স্হাপন করবে যা আন্দামানের বর্তমান সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষেরও কম জনসংখ্যার থেকেও বেশি, বিশেষত গ্রেট নিকোবারে বাস মাত্র ৮,৫০০ জনের।
বন্যপ্রাণীদের কী হবে?
পরিবেশবিদ ও আন্দামান নিকোবর পরিবেশ দলের ভূতপূর্ব সদস্য মনীশ চান্ডির মতে," অরণ্য কাটার অনেক রকম ফলাফল আছে। দ্বীপটির ভূমিকম্প প্রবণতা ও ভূমিক্ষয়ের কথা মাথায় রাখলে বোঝা যায় ভূমিক্ষয় বেড়ে যাবে বিশাল পরিমাণে, তাই প্রবালের পুন:স্হাপনের যে ভাবনা ভাবা হচ্ছে তা আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এর বড়সড় প্রভাব পড়বে পার্শ্ববর্তী প্রবাল প্রাচীর ও সামুদ্রিক জীবের উপরে।"
তাঁর মতে কচ্ছপদের জীবনে এর বড় প্রভাব পড়বে কন্টেনার বন্দরের দূষণ, উপকূলভূমির ক্ষয়, জাহাজের ভারসাম্য রাখার ব্যালাস্ট, জাহাজের সাথে সংঘর্ষ, জাহাজ থেকে তেল ছড়িয়ে পড়া, বিভিন্ন কাঠামো নির্মাণ প্রভৃতি কারণে।
সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের সুরক্ষার কারণে বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটি আন্দামান ও নিকোবরের বনবিভাগকে Wildlife Institute of India-র সাথে পরামর্শ করে পেমায়া বে, ক্যাসুরিনা বে এবং আলেকজান্দ্রিয়া বে এলাকায় লেদারব্যাক কচ্ছপ, মেগাপড পাখি, লবণাক্ত জলের কুমিরের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান ও প্রজননের স্হান সনাক্ত করতে বলেন যেখানে তারা নিরাপদে বংশবৃদ্ধি করতে পারবে। কমিটি বিশদে প্রবালের সংরক্ষণ ও স্হানান্তরন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চেয়েছে এবং কুমিরের সংরক্ষণের বিষয়েও জানাতে বলেছে।কমিটি এছাড়া লেদারব্যাক কচ্ছপের গ্রেট নিকোবার আইল্যান্ডে আগামী দশ বছরের গতিবিধি, বাসস্হানের সুরক্ষা ও প্রজনন স্হানের সংরক্ষণ বিষয়ক রোড ম্যাপ চেয়েছে। এইসব পরিকল্পনাকে চান্ডি সরাসরি বাস্তব বিবর্জিত বলে অভিহিত করেন।
তিনি জানান যে মেঞ্চল দ্বীপকে বিশেষজ্ঞ কমিটি মেগাপডের বাসস্হান বলে চিহ্নিত করেছে সেখানে দুই জোড়ার বেশি এই পাখি নেই। কিন্তু গ্যালেথিয়া বে এলাকা যেখানে কন্টেনারের বন্দর তৈরি হবে সেখানে ২০-৩০ জোড়ার বেশি এই পাখির বাস।
তাঁর কথায় ,"মেঞ্চল হল নারকেল উৎপাদনের কেন্দ্র, যা লিটল নিকোবারিজদের ব্যবস্হাপনায় রয়েছে। কমিটি মেরো দ্বীপকে প্রবাল সংরক্ষণের জন্য চিহ্নিত করেছে।তারা হয়ত অবহিত নয় যে এটি একটা সামুদ্রিক পাহাড় যেখানে ভাল সংখ্যায় পাখি, বাদুড়, কুমির ও লাখে লাখে ইঁদুর রয়েছে। এই দুটি দ্বীপই লিটল নিকোবার ও কুন্ডুল দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য নারকেলের উৎস যা তারা বহুদিন ধরে করে আসছে। কিন্তু এখন কমিটি এই দুটি দ্বীপকে দুটি বিন্দুর মত বিবেচনা করে যে ব্যাপক অরণ্য, জল ও ভূমির দখল হবে কয়লা জমা করা ও বন্দরের জন্য , তার বিকল্প হিসাবে দেখতে পেয়েছে।"
উপজাতিদের কী হবে?
ওই মিটিং এ বিশেষজ্ঞ কমিটি এটা লক্ষ্য করে যে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, " কোনভাবেই কোন সোম্ফেন বা নিকোবারি উপজাতির মানুষকে বিরক্ত বা স্হানান্তরিত করা যাবে না" এবং "জমি ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট সীমানা থাকবে যাতে ভবিষ্যতেও কোন সংঘাতের পরিস্হিতির উদ্ভব না হয়"। উপজাতিদের বাসস্হানের ব্যাপারে বন অধিকার আইন ২০০৬ অনুযায়ী খেয়াল রাখা হবে।
মিটিং এ এই ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় যে এই সংবেদনশীল উপজাতি গোষ্ঠীগুলির বাসস্হানের যদি কোনরকম ক্ষতি হয় তবে তারা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাবে। এছাড়া তাদের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য আলাদা প্যাকেজ হবে এবং লক্ষ্য রাখা হবে যাতে পরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় থাকে। যদিও চান্ডির মত বিশেষজ্ঞরা এতে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাঁর মতে," গ্রেট ও লিটল নিকোবারের সম্ফেন ও নিকোবারিদের মত উপজাতিরা একবারেই বিরুদ্ধে এইসব প্রকল্পের তাদের এলাকায়, আর তাদের প্রয়োজনও অতি সামান্য যে তাদের জন্য কিছু বিশেষ করতে লাগব। বরং তাদের ক্ষতির সম্ভাবনাই রয়েছে বুলডোজার আর ট্রাকের আনাগোনায়।"
উদয় মন্ডল যিনি একজন প্রকৃতিবিদ ও বিগত চার বছর ধরে এই দ্বীপপুঞ্জের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের তথ্য সংগ্রহ করছেন, তাঁর মতে এই প্রকল্পের ভাবনাটাই নীতিগতভাবে দুর্ভাগ্যজনক। মন্ডল আমাদের জানান যে,"বিশিষ্ট যেসব নৃতাত্ত্বিক যারা এই অঞ্চলে কাজ করেছেন তাঁরা পরিবেশগত সমীক্ষার অনেক ভুলভ্রান্তি খুঁজে পান ও দেখেন যে সাম্ফেন ও নিকোবারিদের বেঁচে থাকার রসদ নিয়েই কোন ভাবনা নেই সেখানে। তাদের একটি যৌথ পত্রে তঁরা স্পষ্টতই উল্লেখ করেন যে, একদল সম্ফেন তো প্রকল্প এলাকার খুব কাছেই বাস করেন। আমরা আশা করি যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে না কারণ তা হলে তা যেমন এখানকার আদিম অরণ্যকে ধ্বংস করবে, তেমনই আদিবাসী সম্প্রদায়ের অস্তিত্বও বিপন্ন হবে।"
তিনি নজরে আনেন যে, ২০০৪ সালের সুনামির পরে ঠিক বন্দরের স্হানে অবস্হিত ওল্ড চিঙ্গেন গ্রামের নিকোবারিদের ক্যাম্পবেল বে শহরের কাছে পুনর্বাসন দেওয়ার পর তারা আর তাদের পুরানো জীবনধারায় ফিরতে পারেনি।
তিনি জানান, "নিকোবারিরা বলেন যে তাঁরা তাদের পূর্বপুরুষের জমিতেই ফিরে যেতে চান যখন রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে ওল্ড চিঙ্গেন গ্রাম অবধি। এটা সম্ভব হবে না যদি কন্টেনার বন্দর তৈরি হয়ে যায়। পরিহাসের বিষয় যে দপ্তরের দায়িত্ব উপজাতিদের অধিকার রক্ষা করা তারা শুধু উপজাতিদের সাথে আলোচনা না করে চুক্তিপত্রে সই-ই করেনি, বরং জোর দিয়ে বলছে যে তারা বর্তমান আইনের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে প্রকল্পটি করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চাইবে সব নিয়ম কানুনের বাইরে গিয়ে"। মন্ডল বলেন, "যখন সারা পৃথিবীতেই আদিবাসী মানুষের অধিকারে উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন আমরা তাদের জীবনধারণের ও দ্বীপভূমির উপরে অধিকার সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি। এসবের পরেও প্রকল্পটির অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় যেখানে সমস্ত কাঁচামাল অনেক দূর থেকে আনতে হবে খরচ করে এই প্রান্তিক এলাকায় আর তারপরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত বন্দরের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।"
মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2022/07/the-container-terminal-that-could-sink-the-great-nicobar-island/
Comments