ঝাড়খন্ডের অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি পালামৌ। সেখানে যেমন রয়েছে ভারতের অন্যতম পুরানো টাইগার রিজার্ভ পালামৌ আর আছে এশিয়ার একমাত্র নেকড়ে অভয়ারণ্য মহুয়াডারে। সেই অভয়ারণ্যকে এবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে ঝাড়খন্ড বনবিভাগ। সেই খবর জানাচ্ছেন সৈকত চট্টোপাধ্যায়।
পালামুর বিখ্যাত মাহুয়াডার নেকড়ে অভয়ারণ্যে এবার থাকতে পারবেন টুরিস্টরাও। এশিয়ার একমাত্র নেকড়ে অভয়ারণ্য হবার শিরোপা পাওয়া এই জায়গায় থাকতে হলে পালামু টাইগার রিজার্ভ এর সাউথ ডিভিশন এর ডাল্টনগঞ্জ দফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এই অভয়ারণ্যের সারনাদিহ স্থিত প্রাচীন ভগ্ন প্রায় ফরেস্ট রেস্ট হাউস টিকে নতুন লুক দিয়ে টুরিস্টদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে থেকে যদি কেউ বন ও বন্য জীব বিষয়ের কোনও রিসার্চ করতে চান তাহলে তাদের জন্য বুকিং এ কিছু ছাড় ও দেওয়া হবে বলে জানালেন সাউথ ডিভিশন এর ডেপুটি ডাইরেক্টর মুকেশ কুমার।
এখানে থাকার জন্য রুম পিছু প্রতিদিন 24 ঘন্টার জন্য 1000 টাকা ভাড়া ধার্য করা হয়েছে। রুম মেন্টেনেন্স এর জন্য আলাদা করে প্রতিদিন 300 টাকা দিতে হবে। বর্তমানে দুটি রুম এর রেস্ট হাউস করা হয়েছে, যেখানে দুজন করে মোট চারজন থাকা যেতে পারে। এখানে থাকার সময় রান্না করে দেবার লোক থাকলেও কাঁচা রসদ সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। ওখানে পৌঁছে টাকা দিয়ে দিলে যদিও বাজার করে নিয়ে এসে দেয় তবুও সাথে করে কাঁচা রসদ নিয়ে যাওয়াটাই ভালো।
এখানে এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা বহাল করা যায় নি, তার বদলে লাগানো হয়েছে সোলার সিস্টেম। এতেই চলে জল তোলার পাম্প থেকে নিয়ে যাবতীয় বিদ্যুতের সরঞ্জাম।
বুড়া ও বহটা নদীর সঙ্গমের সামনে থাকা রেস্ট হাউস
সারনাদিহ ফরেস্ট রেস্ট হাউস এর সামনে পায়ে হাঁটা দূরত্বে বয়ে যাচ্ছে বুঢ়া ও বহটা নদী। কিছু দূর পাশাপাশি গিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছে একে অন্যের উপর, তারপর শুধু বুঢ়া'র বয়ে যাওয়া। শীতকালে সঙ্গমে আসে বহু পাখির ঝাঁক। গরমের হাঁটু জলে মাছের ঝাঁক। সন্ধ্যা নামলেই ঝিঁঝি আর নেকড়ের ডাক। গরমের সময় যখন ডাল্টনগঞ্জ আর তার আশপাশ লু র দাপটে অস্থির তখনো এই রেস্ট হাউস এ একটা পাতলা চাদর গায়ে না জড়িয়ে রাতে বাইরে আসা যাবে না।
পূর্ণিমার রাতে ভেসে ওঠে এক অলৌকিক রূপ
সারনাদিহ ফরেস্ট রেস্ট হাউস এ থাকার প্লান করার সময় যদি পূর্ণিমার রাত কে রাখা যেতে পারে তাহলে এক অলৌকিক রাতের সাক্ষী থাকা যেতে পারে। চারিদিকের শাল, ইউক্যালিপটাস, মহুয়া, কেন্দু গাছের সারির মাঝে পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা চাঁদ, তার ছড়ানো আলো আর নিস্তব্ধতা সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।
নেকড়ের বাচ্চা দের নিয়ে আসা যাওয়ার পথে থাকতে হবে সাবধান
যদিও নেকড়ে লোক এড়িয়ে চলে ও সাঁঝ নামলেই নিজের মান্দ ( গর্ত) থেকে বাইরে আসে কিন্তু বাচ্চা হলে মায়েদের খাবার খোঁজে দিনের আলোতেও বাইরে আসতে হয়। বাচ্চারা একটু বড় হলে নানা রকম ট্রেনিং দিয়ে জঙ্গলের উপযোগী করে তুলতেও নেকড়ে মা তাদের নিয়ে দিনের আলোতেও বাইরে আসে। সেই সময় তাদের সাথে দেখা হলে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
নিরিবিলিতে অলস সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান
কাজের চাপে অস্থির দৈনিক জীবনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে নিরিবিলিতে অলস সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান সারনাদিহ ফরেস্ট রেস্ট হাউস। সাথে ফাউ হিসাবে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সুন্দরী প্রকৃতি যার প্রেমে না পড়ে থাকা যায় না। এখানে সুরক্ষার জবাবদিহি ফরেস্টগার্ডদে'র যারা রেস্ট হাউসের পিছনেই বানানো ডেরা তে থাকেন আর পালা করে ডিউটি দেন। তাছাড়া রেস্ট হাউস সংলগ্ন এলাকাটি মজবুত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। নিয়ম মেনে চললে নেই কোনোই বিপদ । সব জায়গাতেই জঙ্গলে থাকার বেশ কিছু লিখিত ও অলিখিত নিয়ম থাকে, এখানেও আছে। লিখিত নিয়ম বুকিং এর সময় দফতর থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যার মধ্যে জঙ্গলে আগ্নেয়াস্ত্র, মদিরা, জোরে বাজনা ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া বারণ, অলিখিত নিয়ম অনুসারে জঙ্গলে থাকতে গেলে তাকে সন্মান করতে হবে, ভালোবাসতে হবে, যদি মানতে পারেন তাহলে যে কোনও সপ্তাহান্তে বেরিয়ে পড়ুন।
কি করে যাওয়া যাবে
সারনাদিহ ফরেস্ট রেস্ট হাউস আসতে হলে সড়ক মার্গ ই ভরসা। রাঁচি থেকে বানারী হয়ে, রাঁচি থেকে নেতারহাট হয়ে বা ডাল্টনগঞ্জ থেকে সোজা মাহুয়াডার যাবার রাস্তায় আসা যেতে পারে।
যোগাযোগ
সমগ্র পালামৌ ভ্রমণের জন্য Rustic Trails এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: 9875578459 ।
লেখক পরিচিতি: লেখক ঝাড়খন্ড স্হিত এক সাংবাদিক, বন্যপ্রাণ ফটোগ্রাফার ও সংস্কৃতিকর্মী।
Very promising.