top of page
  • ..

জোনাকিরা সব কোথায় গেল

রাত হলেই অন্ধকারে ঝকমক করে ওঠা সেই জোনাকিদের এখন আর দেখতে পাই না বললেই চলে। জীবনে আমাদের এসে গেছে অনেক অনেক রকম বৈদ্যুতিক আলো। ফলে জোনাকিরা হারিয়ে যাচ্ছে সেই আলোর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে। লিখছেন শ্রেয়া শর্মা







পতঙ্গদের জীবনযাত্রা আলোর সাথে সাথে আবর্তিত হয়। তা বদলায় আলোর তীব্রতা, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, উৎস ও অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য।নিশাচর পতঙ্গরা রাতে ঘুরে বেড়ায়, শিকারিকে দেখলে সাবধান হয় আর দিক নির্দেশ পায় তারা ও চাঁদের আলো দেখে।জোনাকি পোকা যা Lampyridae বর্গভুক্ত, তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য আলো কম হওয়া দরকার পরিবেশে।

জুন মাস হলে এই জীবন্ত আলোকবিন্দুদের দেখার জন্য সেরা সময়। এটা তাদের প্রজননের সময়। মহারাষ্ট্রে এই সময় মে ও জুন মাসে জোনাকি উৎসব হয়। জমায়েত হয় বন্যপ্রাণী নিয়ে চর্চা করা মানুষ জন, ফটোগ্রাফাররা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আর স্হানীয় অধিবাসীরা মেতে ওঠে এই উৎসবে।কিন্তু চারপাশে বেড়ে যাওয়া কৃত্রিম আলোয় এদের সংখ্যা ভীষণ ভাবে কমিয়ে দিচ্ছে।


আসলে জোনাকি পোকার এই আলো জ্বালায় একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া। আরেই জ্বালিয়েই তারা সঙ্গী খোঁজে প্রজনন ঋতুতে। আলোর ঝলকানির রকমফের দেখে সঙ্গী খুঁজে পায় সঙ্গিনী। প্রজনন ঋতুতে, এই আলোয় ঝকমক করে উঠে তারা সাধারণত: সূর্যাস্তের পরেই।কৃত্রিম আলোতে এই পুরো প্রক্রিয়াটাই বাধা পায়।

কৃত্রিম আলোর পরিবেশে তারা আরও বেশি শক্তিক্ষয় করে আরও আলো জ্বালাতে চেষ্টা করে সঙ্গীর খোঁজে। ২০১৮-র একটি গবেষণায় দেখা গেছে Aquatica ficta গোষ্ঠীর জোনাকি যাদের চীন ও তাইওয়ানে পাওয়া যায়, তারা কৃত্রিম আলোর পরিবেশে আলোর ঝলকানিগুলোর তীব্রতা বাড়াতে চেষ্টা করে। ফলে দুটি আলোর ঝলকানির মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেড়ে যায়। এবং এই গোটা প্রক্রিয়াটার ফলে সঙ্গী খুঁজে পেতে তাদের অসুবিধা হয়, তাদের প্রজনন কার্যে ব্যাঘাত ঘটে।


নিশাচর পতঙ্গরা প্রকৃতির আলোর সাথেই একমাত্র মানাতে পারে। তাই তারা কৃত্রিম আলোর প্রতি খুব বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল যা তাদের বিভ্রান্ত করে, আকর্ষণ করে ও চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এমন জৈব আলো উৎপাদনকারী পতঙ্গ ও নিশাচর পতঙ্গদের বিষয়ে যথাযথ তথ্যের অভাব থাকলেও বারা পৃথিবীতেই গবেষকরা দেখছেন পরিবেশে কৃত্রিম আলোর বাড়ার সাথে সাথে এদের সংখ্যাও সর্বত্র কমছে। পরিণত জোনাকিরা সাধারণত স্বল্পদিন বাঁচে, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস।

ভারতে জোনাকিদের নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয়নি।কতটা আছে তারা তাও সঠিক তথ্য নেই। রমেশ চট্রগদ্দা তাঁর একটি গবেষণায় Abscondita chinensis গোত্রের জোনাকিদের সংখ্যা নিরূপণের চেষ্টা করেছেন অন্ধ্র প্রদেশের বিশেষ এলাকায়। বারানকুল্লা নামের সেই গ্রামের ১০ মিটার এলাকায় ১৯৯৬ সালে জোনাকির সংখ্যা ৫০০ ছিল, যা ২০১৯ সারে ১০-২০টি তে এসে দাঁড়িয়েছে। স্হানীয় মানুষরাও বলেছেন, তারাও এই সংখ্যায় কমে যাবার ঘটনার বুঝতে পেরেছেন।

২০২০ সালের একটি সমীক্ষায় বিশ্বজুড়ে জোনাকি পোকার কমে যাওয়া নিয়ে কারণগুলির পর্যালোচনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে সব তেকে বড় কারণগুলি যথাক্রমে-বসবাসের স্হান ধ্বংস, রাতের বেলা কৃত্রিম আলোর মেলা, কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার। দক্ষিণ এশিয়া থেকে মাত্র দু;জন বিশেষজ্ঞ এতে অংশ নিলেও, তারাও বাসস্থানের ধ্বংস হওয়া ও কীটনাশকের ব্যবহারকে বড় বিপদ বলে চিহ্নিত করেন।

যদিও কীটনাশকই সবচেয়ে বড় কারণ এদের কমে যাবার পিছনে মনে করা হচ্ছে, কিন্তু ব্রাজিলে হওয়া একটি গবেষণায় Photinus sp1 প্রজাতির কীটনাশক কমে যাবার জন্য আলোর দূষণকে বড় কারণ বলে দেখা গেছে। সেই গবেষণায় চারটি স্পট-লাইট ব্যবহার করে আলোর উৎসের যত কাছে যাওয়া গেছে, তত পতঙ্গের সংখ্যা কম পাওয়া গেছে দেখা গেছে। এই গবেষণাটি এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে , এখানে অলোক উৎসের নৈকট্যর সাথে সক্রিয় পতঙ্গের সংখ্যার সম্পর্ক বোঝা গেছে। আলো বেড়ে যাবার জন্য অন্ধকার হারিয়ে গেছে, জোনাকিদের বাসস্হানে এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে।

নাসার উপগারহ চিত্রে ধরা পড়েছে কয়েক বছরের ব্যবধানে রাতের ভারতে কৃত্রিম আলোর তীব্রতা কতটা বেড়েছে

যেহেতু জোনাকিরা সংখ্যায় কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক ভাবে, বেশ কয়েকটি প্রজাতি এখনই বিলুপ্তির মুখে।গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ জাতীয় ব্যাপার ভারতে দুর্লভ। আলোর দূষণ পরিমাপের বিষয়টি জটিল।তাই গবেষণাও করা জটিল।আরও গবেষণা দরকার বিভিন্ন প্রজাতিকে নথিভুক্ত করার জন্য এবং আলোর দূষণের কারণে তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন দেখার জন্য।

জোনাকির আলো জ্বালানোর জিনের চিকিৎসা বিদ্যায় অনেকরকম ব্যবহার আছে,যেমন ফরেনসিক ও খাদ্য নির্মাণ শিল্পেও আছে।বাস্তুতন্ত্রে তাদের আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেখান থেকে তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির শৃঙ্খলের জন্য বিপর্যয়। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে আন্ত:সম্পর্ক। জোনাকির লার্ভা শামুক, কেঁচো, ছোট পোকামাকড় খেয়ে থাকে আর তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। এইসব জীবের অতিরিক্ত বৃদ্ধি গাছপালার ক্ষতি করে, যাদের উপর বন্য-জীবেরা নির্ভরশীল। এই snowball effect ধীরে ধীরে প্রকৃতির ওপর একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।


তথ্যঋণ:

Owens, A., Meyer-Rochow, V. B., & Yang, E. C. (2018). Short- and mid-wavelength artificial light influences the flash signals of Aquatica ficta fireflies (Coleoptera: Lampyridae). PloS one, 13(2), e0191576. https://doi.org/10.1371/journal.pone.0191576


Owens, A. C. S., & Lewis, S. M. (2018, October 23). The impact of artificial light at night on nocturnal insects: A review and synthesis. Wiley Online Library. Retrieved March 5, 2022, from https://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1002/ece3.4557


Jain, N. (2020, May 12). Fireflies appear to be vanishing in this Andhra pradesh village. Mongabay. Retrieved March 5, 2022, from https://india.mongabay.com/2020/04/fireflies-appear-to-be-vanishing-in-andhra-pradesh-village/


Hagen, O., Santos, R. M., Schlindwein, M. N., & Viviani, V. R. (2015). Artificial night lighting reduces firefly (Coleoptera: Lampyridae) occurrence in Sorocaba, Brazil. Advances in Entomology, 03(01), 24–32. https://doi.org/10.4236/ae.2015.31004



মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2022/06/explainer-how-are-fireflies-affected-by-light-pollution/



Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page