বাঘ ভারতের জাতীয় পশু। শৌর্যে, শক্তিতে সে পশুজগতের শীর্ষে ভারতের মাটিতে। বলা হয় বনের রাজা। হ্যাঁ, একসময়ে সত্যিই ছিল সে বনের রাজা। তারপর? তার সে রাজত্ব চলে গিয়ে অস্তিত্বের সংকট তৈরি হল কোন পথে? সারা দেশের মাটিতে যে দাপিয়ে বেড়াত, সে আস্তে আস্তে কোনঠাসা হয়ে পড়ল কেন সীমিত কিছু অরণ্যে! আজকের দিনেই বা কতটা তাকে স্বমহিমায় ফিরে পাবার আশা রাখা যায়! এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা Wildlife Conservation Trust এর সভাপতি ও National Tiger Conservation Authorityর সদস্য, ভারতের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ ড: অনীশ আন্ধেরিয়া এবং ভারতের নরখাদক বাঘের ওপর মার্কিন গবেষক ও লেখক ডেন হাকলব্রিজের হাত ধরে। তাঁদের সাথে আলোচনায় বনেপাহাড়ে'র পাঠকদের সামনে ভারতের বাঘের সময়ের পথ ধরে যাত্রার কথা তুলে ধরছেন আমাদের সহযোগী সম্পাদক ড: ঐশিমায়া সেন নাগ।ধারাবাহিক রচনার শুরু হয়েছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবসে। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
দু:সময়ে জন্ম এক সাহসী যোদ্ধার
রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির আর কেউ যুগপৎ এতটা ভয় ও বিস্ময়ের উদ্রেক করেনি বিংশ শতাব্দীতে, চম্পাবতের নরখাদক বাঘিনী যতটা করেছিল।গিনেস বুক ওফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তার নাম নথিভুক্ত আছে কোন বাঘের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসাবে!
৪৩৫ জন মানুষের মৃত্যুর কারণ স্বরূপ দন্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে এই বাঘিনী জিম করবেটের নিশানায় চলে এসেছিল। সেই শিকারী জিম করবেট যিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলন একটার পর একটা কঠিন শিকারের ঘটনায়।চম্পাবতের এই বাঘিনীকে তিনি ১৯০৭ সালে শিকার করে তার 'সন্ত্রাসের রাজত্ব'র অবসান ঘটান। এর ফলে অসংখ্য নীরিহ গ্রামবাসীকে তিনি এই দুর্দ্ধর্ষ বাঘিনীরে মুখে মৃত্যু হওয়ার থেকে বাঁচান। অন্তত, এটাই এত এত বছর ও কয়েক প্রজন্ম ধরে আমাদের সামনে তুলে ধরা ছবি চম্পাবতের বাঘিনী ও তার শিকারী সম্পর্কে।
বস্তুত: যে সব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে এই বাঘিনীটি নরখাদকের মত একটা দুর্ভাগ্যজনক তকমা পেয়েছিল, তা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে কোন সময়ে সে জন্মেছিল। এমন একটা সময়ে যখন দেশের শাসকশ্রেণী এমন জানোয়ারদের ব্যাপারে একটাই লক্ষ্য নিয়ে চলত- তাদের একেবারে নি:শেষ করে ফেলা যে কোন মূল্যে।
একবিংশ শতকে ডেন হাকলব্রিজ ইতিহাসের পাতা খুঁড়ে আরও কিছু তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন যাতে এই বাঘিনীর অসময়ে মৃত্যুর প্রকৃত ছবিটা আমাদের সামনে উঠে আসে। যখন আমরা তাঁকে প্রশ্ন করি কেন তিনি এতদিন পরে "No Beast So Fierce" লিখতে বসলেন, ডেন আমাদের বললেন- "শিকারী জানোয়ারদের নিয়ে আমার বরাবরই উৎসাহ ছিল। আমার মূল পরিকল্পনা ছিল একটা বড় বই বানানোর যেখানে এই সব শিকারী জীবরা যখন মানুষের শিকার করে -তাদের নিয়ে, যেখান একটা চ্যাপ্টার থাকবে চম্পাবতের নরখাদককে নিয়ে। সম্পাদক ভাবলেন যে, পুরো ব্যাপারটা একটু বেশিই বড় হয়ে যাচ্ছে। শেষে তিনি বললেন, যে কোন একটা ঘটনার ওপর 'ফোকাস' করতে যাতে বার্তাটা খুব পরিষ্কার ও নির্দিষ্ট হয়। আমি ভাবলাম, সব ক্ষেত্রেই প্রায় গল্পটা তো একই- পরিবেশের ধ্বংস, বাসস্হানের সঙ্কোচন, খাদ্যের অভাব। কিন্তু সবার মধ্যে চম্পাবতের বাঘের ঘটনাটা এই সব কিছুকেই খুব ভাল ভাবে শিখিয়ে যায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে।"
বস্তুত: যে সব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়ে এই বাঘিনীটি নরখাদকের মত একটা দুর্ভাগ্যজনক তকমা পেয়েছিল, তা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে কোন সময়ে সে জন্মেছিল। এমন একটা সময়ে যখন দেশের শাসকশ্রেণী এমন জানোয়ারদের ব্যাপারে একটাই লক্ষ্য নিয়ে চলত- তাদের একেবারে নি:শেষ করে ফেলা যে কোন মূল্যে। ডেন ব্যাখা করেছেন বেঁচে থাকার চরম সব চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে- যার মুখোমুখি এই বাঘিনীটি হয়েছিল যখন জিম করবেট লক্ষ্যস্হির করেন তাকে মারার। তার প্রথম 'নরখাদক' শিকার।
"বিংশ শতাব্দীর প্রথম কয়েক বছরে পৃথিবীতে বোধহয় ১ লাখের মত বাঘ ছিল বন্য পরিবেশে।ভারতে তার অন্তত তিন চতুর্থাংশ থাকত।কিন্তু অতি দ্রুত তাদের সংখ্যা হ্রাস হওয়া শুরু হয়ে গেছিল তখনই, যদিও মানুষজন বুঝতেই পারেনি তখন। ১৮০০ শতকের শেষ ভাগ থেকে ১৯০০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত্য বাঘেদের অবলুপ্তির প্রক্রিয়া চলছিল দ্রুত হারে।"
আর চম্পাবতের বাঘিনী ছিল এই সংহার পর্বের প্রথম দিকের এক শিকার। বস্তুত: তাকে নীরব করে দেবার পর করবেট নিজেই পরীক্ষা করে দেখেন বাঘটির ডানদিকের উপর ও নীচের দুটো শ্বদন্তই(ক্যানাইন দাঁত) ভাঙ্গা। তার কারণ পুরানো কোন বন্দুকের গুলির আঘাত।করবেট এই সিদ্ধান্তেই আসেন অত:পর যে, এই ভাঙ্গা শ্বদন্তের কারণেই বাঘটি তার স্বাভাবিক শিকার করতে না পেরে মানুষকে বেছে নেয়, যে কিনা সহজ শিকার। ডেন আরো বুঝালেন যে, কেন এই নরখাদক বাঘের সমস্যাটা ব্রিটিশ শাসকদের নীতির ফলাফল, প্রকৃতির কোন বেখাপ্পা খেয়াল নয়।
" ঔপনিবেশ-পূর্ববর্তী যুগে বাঘকে 'রাজকীয় শিকার' বলে গণ্য করা হত প্রায় সারা ভারতেই এবং বাঘ শিকার সাধারণত: অভিজাত ও রাজা-রাজড়াদের জন্যই নিয়ম ছিল। গ্রামাঞ্চলের লোক কখনও-সখনও বাঘ মারত যদি তা বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি করত। কিন্তু ঔপনিবেশিক যুগের মত এমন ব্যাপক হারে শিকারের কোন প্রথা ছিল না। তাই ওই পুরানো সময়ে যথেষ্ট বাসভূমি আর খাদ্য থাকার ফলে বাঘেদের ওপর এলাকা ও খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেরানোর চাপ ছিল না। তাই বাঘে-মানুষে সংঘাতের ব্যাপারও তেমন ছিল না।হ্যাঁ অবশ্যই, মানুষখেকো বাঘের কিছু কথা প্রাক-ঔপনিবেশিক বা ঔপনবেশিক যুগের প্রথম দিকে কিছু শোনা যেত। কিন্তু মানুষখেকো বাঘের ঘটনার যে বিস্ফোরণ ঘটল করবেটের সময়ে, বিশেষত: উত্তর-পশ্চিম ভারতে - তা তারা যখন সত্যিই চরম বিপন্নতার মুখে পড়েছিল তখনই হল। এসব ১৯১০ ও ১৯২০'র দশকের কথা। যখন ব্যাপক হারে শিকার ও অরণ্য নিধন চলে আসছে তার আগে কয়েক দশক ধরে ব্রিটিশ সরকারের সৌজন্যে। চম্পাবতের বাঘের ঘটনার আগে কুমায়নে এমন মানুষ-বাঘের সংঘাতের ঘটনা তেমন শোনা যায়নি, করবেটের মোকাবিলা করা ঘটনাগুলোর মধ্যে এটা প্রথম দিককার একটি ঘটনা। পরবর্তী দশক গুলোতে করবেটকে বারবার ডাকা হয়েছে এমন সমস্যা সৃষ্টি করা বাঘ ও লেপার্ডকে মারার জন্য। মূলত: খাদ্য ও বাসযোগ্য অরণ্যের অভাবে তারা লোকালয়ে চলে আসত এবং মরিয়া অবস্হায় মানুষ শিকার করত। ঠিক একই ঘটনা ১৭০০ ও ১৮০০ শতকে ঘটেছিল ইওরোপে শেষ কিছু সংখ্যক নেকড়ের সাথে। যত কোনঠাসা হয়ে পড়ে এই জীবেরা, তত মরিয়া হয়ে যায় তারা"।
মানুষ না হাতের পুতুল?
আরো একটা বিষয় ভাবায় আমাদের এই ঘটনায় যে, স্হানীয় মানুষজন কি বিতৃষ্ণা সহকারে এই বাঘেটিকে দেখত- যে তাদেরই দেশের একটি প্রাণী! জিম করবেট স্মরণ করেছেন সেই ঘটনা যে, গ্রামের লোকেরা শিকারের পর কিভাবে বাঘটির মৃতদেহ গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়ে তাদের বৌ-বাচ্চাদের দেখিয়ে আশ্বস্ত করতে চেয়ছিল যে, তাদের "ভয়ানক শত্রু" এবার সত্যিই মরেছে। তিনি বইতে বিবরণ দিয়েছেন কিভাবে গ্রামের মানুষজন ভিড় করে দাড়িয়ে বাঘটির ছাল ছাড়ানোর এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করার ভয়াবহ দৃশ্যটি কেমন সম্ভ্রম মিশ্রিত ভয় সহকারে দেখেছে। পরে তারা একটি পান-ভোজন ও নাচাগানারও আয়োজন করে তাদের উদ্ধারকর্তা করবেট সাহেবের সম্মানে।
যদিও, ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে উঁকি মেরে দেখলে আমরা বুঝতে পারব প্রাচীন বা নবীন- সব সময়েই গাছপালা ও প্রাণীজগতকে ভারতীয়রা রক্ষা করার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। বস্তুত: ডেন বলেছেন কিভাবে থারু সম্প্রদায়, যারা মূলত হিমালয় পাদদেশে থাকে এবং যে অঞ্চলে চম্পাবতের বাঘিনী তার শিকার করত, তাদের বাঘেদের উপাসনা করার কথা বনভূমির রক্ষাকর্তা হিসাবে। বনের ওপরেই তো তাদের জীবন নির্ভরশীল। এমনকি, এখনও তারা বিশ্বাস করে কারুর ওপর বাঘের আক্রমণ মানে সেই সম্প্রদায়ের ওপর অভিশাপের ইঙ্গিত। তাহলে ব্রিটিশ যুগে এমন কী হল যে নিজেদের উপাস্য রক্ষাকর্তাই শত্রু হয়ে গেল। তাদের রক্ত দেখতে মরিয়া হয়ে গেল এই পাহাড়ি মানুষেরা! তারা কি এমন কোন শক্তির প্রভাবে পড়েছিল, যা তাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছিল!ডেন তার মত করে উত্তর খুঁজেছেন,
" আমি মনে করি, গ্রামের মানুষ যারা বাঘের সাথে বরাবর মানিয়ে বেঁচে এসেছে, তারা এই জীবদের শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম ও ভয়ের চোখে দেখেছে। কোন চাষী যে তার ক্ষেতের ফসলের ওপর নির্ভর করে, তার এলাকায় বাঘ থাকলে ফসলের পক্ষে ভাল, কারণ তার ফলে সেখানে বুনো শুয়োর ও হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। হরিণের পাল ক্ষেতের ফসল সাবাড় করে দিল- এই ভয় তাদের হঠাৎ কোন বাঘের আক্রমণের ভয়ের থেকে অনেক বেশি। তাছাড়াও, প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে এই সব গ্রামদেশের বাসিন্দাদের কাছে আচমকা বাঘ বা অন্য জন্তুর আক্রমণ প্রতিরোধ করবার উপায় ছিল। তাদের শিকার করা ও অস্ত্র রাখা ঔপনিবেশিক যুগের পরের দিকে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।ফলে অনেক গ্রামই বাঘের আক্রমণের মুখে প্রতিরোধহীন হয়ে পড়ে। এর সাথে বাঘ শিকারে মাথার দাম ঘোষনার ব্যবস্হা আর দিনে দিনে বাসস্হান ও খাদ্যের অভাবে বেপরোয়া, হিংস্র হয়ে পড়া বাঘেরা সহজেই গ্রামবাসীদের কাছে শয়তানের প্রতিরূপ হয়ে দেখা দিচ্ছিল। কিন্তু আজকের দিনেও যখন আমি থারু সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে কথা বলে দেখেছি, যেখানে এখনও বাঘে-মানুষে সংঘাত ঘটে থাকে, তবুও ওখানকার চাষীরা দেখতে পাই বাঘের থেকেও শস্য নষ্ট করার জন্য হাতির পাল বা বুনো শুয়োরের থেকেই বেশি আতঙ্কে ভোগে। বাঘের থেকে আচমকা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং একটা মত্ত হাতির বাড়িতে এসে উপদ্রব করা বা শুয়োরের দলের শস্যের ক্ষতি করা এদের কাছে অনেক বেশি বাস্তব। বাঘের দেখা পাওয়া খুবই দুর্লভ, বরং এমনটাকে সৌভাগ্যই মনে করা হয়।"
স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে তিনি কি সত্যিই একজন রূপকথার নায়ক ছিলেন, যিনি নিস্বার্থ ভাবে হতভাগ্য গ্রামবাসীদের মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, নাকি নিছক ষড়যন্ত্রের অংশীদার ইওরোপীয় পিতৃতান্ত্রিক আধিপত্যকামীদের একজন!
যখন এটা পরিষ্কার যে এদেশীয়রা নিছকই ক্রীড়ানক ছিল বিদেশি শাসকদের হাতে, শিকারিদের ভূমিকা ঠিক কি ছিল যারা শাসকদের কথায় কাজ করত? আমরা জানি, জিম করবেট আজ দেশে-বিদেশে উচ্চ প্রশংসিত বন্যপ্রান সংরক্ষণে তাঁর বিরাট অবদানের জন্য, প্রথম অল্প কিছু প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি একজন যিনি বন্যপ্রাণের গুরুত্ব বুঝেছিলেন এবং তাদের সংরক্ষণে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু, কেউ অস্বীকার করতে পারবে না প্রথম জীবনে তিনি বড়সড় শিকারিদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি ব্রিটিশ সমাজের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উপরে উঠেছিলেন তার একটার পর একটা "নরখাদক" বাঘের সফল শিকার অভিযানের দ্বারা। তাই, স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে তিনি কি সত্যিই একজন রূপকথার নায়ক ছিলেন, যিনি নিস্বার্থ ভাবে হতভাগ্য গ্রামবাসীদের মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, নাকি নিছক ষড়যন্ত্রের অংশীদার ইওরোপীয় পিতৃতান্ত্রিক আধিপত্যকামীদের একজন!
ডেন এই শিকারী থেকে সংরক্ষণবিদ হয়ে যাওয়া কিংবদন্তী তুল্য করবেটকে খানিকটা এইভাবে দেখেছেন- " করবেট একজন বহুগুণ সম্পন্ন এবং অসমসাহসী মানুষ ছিলেন, যিনি ভারতকে গভীর ভাবে ভালবাসতেন আর কর্তব্যবোধ ছিল টনটনে। কিন্তু একটা ঔপনিবেশিক ব্যবস্হায় বড় হয়ে উঠবার কারণে একটু সংশয়ে ছিলেন তাঁর কর্তব্যবোধ নিয়ে! আমি মনে করি না করবেট ব্রিটিশদের হাতে ব্যবহৃত হতেন, কারণ তিনি নিজেই এই ঔপনিবেশিক ব্যবস্হার অংশীদার ছিলেন এবং এতেই জড়িয়ে ছিল তাঁর অনেক কিছু।
তবুও আমি মনে করি, স্হানীয় কুমায়নি মানুষজনের শুভচিন্তক ছিলেন তিনি। তিনি সত্যিই চাইতেন স্হানীয় মানুষকে বাঘের হামলার হাত থেকে বাঁচাতে। কিছু অনৈতিক কাজ নিশ্চই হয়েছিল এর কোন কোন ক্ষেত্রে, সেটা মাথায় রেখেও বলা যায় সেটাই তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু মনে রাখা ভাল, করবেট যেমন অনেক দিক থেকে তাঁর সময়ের অনেক এগিয়ে ছিলেন, তেমনই তিনি সেই সময়েরই একজন ফসল, এবং আমি মনে করি না তিনি জীবনের পরের দিকে ছাড়া তার আগে বুঝতে পেরেছিলেন আদৌ এই ঔপনিবেশিক অরণ্য-আইন ও যথেচ্ছ শিকার কতটা ক্ষতি করে দিচ্ছে! কিন্তু যেদিন তিনি সেটা অনুভব করলেন, তিনি তাঁর সাধ্যমত সব কিছু করতে চেষ্টা করলেন বাঘেদের বাঁচাতে ও সরকারি নীতিতে বদল আনার। যদি তিনি যুবা বয়সে অনুধাবন করতেন যে, বাঘেরা এভাবে বিলুপ্তির কিনারায় চলে যাবে, তবে মনে করি না তিনি আদৌ তাদের শিকার করতেন ব্যতিক্রমি কোন চরম ঘটনা বাদ দিয়ে বা অন্য কাউকে শিকারে সাহায্য করতেন!"
এইসব আলোচনা থেকে এটা তো স্পষ্ট যে, চম্পাবতের বাঘিনীর গল্প শুধু তার গল্প নয়। বরং এ হল এই দেশের ও তার মানুষদের ধারাবিবরনী এমন এক সমস্যাসঙ্কুল সময়ের, যখন বিদেশী শাসকশ্রেনী তাদের অর্থ-ভান্ডার ভরতে এই দেশকে যত রকম উপায়ে পেরেছে লুটে নিতে চাইছিল।
(চলবে)
লেখক পরিচিতি: ড: ঐশিমায়া সেন নাগ বায়োকেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট। বর্তমানে বন্যপ্রাণ ও সংরক্ষণের কাজে নিবেদিত। কানাডা থেকে প্রকাশিত শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট worldatlas এর অন্যতম সম্পাদক। বর্তমানে বাংলা ওয়েবজিন 'বনে-পাহাড়ে'র সহ-সম্পাদিকার দায়িত্বেও তিনি যুক্ত।
Click here to join us at Facebook. Follow our page for more updates.
Comments