top of page

পঞ্চচুল্লীর নীচে, পাইন বনে ঘেরা মুন্সিয়ারিতে

..

কুমায়ন হিমালয়ের মুকুট পঞ্চচুল্লীর শিখরে সাজানো ছোট্ট জনপদ মুন্সিয়ারি। ঝরনা, পাথরে বাঁধানো পথ, ছোট ছোট গ্রামের বাড়ি আর পাইন বনে তার রূপ থেকে চোখ ফেরানো দায়। সেই মুন্সিয়ারি ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন শতদীপ রায়



কালামুনি টপে যখন গাড়িটা এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেল। পার হয়ে এসেছি বিরথি জলপ্রপাত। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পঞ্চচুল্লির শিখরে তখন গোধূলির রং। মা'কালির মন্দিরটায় জানালা দিয়ে এসে পড়ছে সেই সোনালি রশ্মি। পাখিরা উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে তাদের নীড়ে। এভাবেই প্রথম পরিচয় মুন্সিয়ারির সাথে। কুমাযন হিমালয়ের মাথায়, তার শেষ প্রান্তে অবস্হিত এই ছোট্ট জনপদ তার অপার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে বসে।

সন্ধ্যের পর নেমে গেল প্রবল ঠান্ডা। যে হোটেলে আমরা আছি সেখান থেকে ঢিল ছুড়লেই যেন গিয়ে পড়বে পঞ্চচুল্লীর

শিখরে। মহাভারতে বনবাসের সময় দ্রৌপদি নাকি এই পাঁচটা শিখরে পঞ্চপান্ডবের জন্য রান্না বসাতেন- এমনটাই লোকশ্রুতি। আমাদের সেখানে রান্না বসাবার জো তো নেই, কিন্তু রাতটা উষ্ণ হয়ে উঠল হোটেলের রেস্টুরেন্ট থেকে পাঠানো গরম গরম হট সাওয়ার চিকেন স্যুপ গলায় যেতে। ঘরের কাচের জানালা দিয়ে দেখছি আশেপাশের ছোট ছোট গ্রামে টিমটিম করে জ্বলা আলোর মালাগুলো। মুন্সিয়ারির সেই রাত চিরকাল মনে থাকবে।



সকালে হাঁটা হালকা চড়াই ভেঙ্গে মহেশ্বর কুন্ডের দিকে। পাইন আর দেওদার গাছের আড়াল থেকে পঞ্চচুল্লী ঝলমল করছে রোদে। মনে পড়ে যাচ্ছে আলমোড়ার হোম স্টে বা পাতাল ভুবনেশ্বরের রিসর্ট থেকে দেখা পঞ্চচুল্লীকে। দূর থেকে দেখা সেইসব শৃঙ্গ এখন যেন হাত ছোঁয়ালেই ধরা যায়। তবে এখানে আর দেখা মেলে না কুমায়নের অন্যান্য শৃঙ্গের। একদম কাছে এখানে মাথার ওপর শুধুই পঞ্চচুল্লী। আর মেসার কুন্ড থেকে দেখা তার রূপ? সে যেন অ্যাম্ফিথিয়েটারে বসে দেখা প্রকৃতির রঙের খেলা। আমাদের পথ দেখাতে এসেছে সারমোলি গ্রামের বাসন্তী দিদি। আজ আমরা হোটেল থেকে চলে যাব ওর গ্রামের হোম-স্টে তে থাকতে। ওঁর থেকে শুনছিলাম মহেশ্বর কুন্ডের মিথ, মানুষের বিশ্বাসের গল্প। সত্যিই দেবভূমি এই উত্তরাখন্ড। তেমনই এখানকার মানুষ।

সারমোলি গ্রামটা আর পাঁচটা হিমালয়ের গ্রামের মত দেখতে হলেও একটু আলাদা। এখানে এক একটি বাড়িতে মহিলারা গড়ে তুলেছেন হোম-স্টে। গড়ে উঠেছে স্ব-নির্ভরতা ও প্রকৃতি বাঁচানোর এক আলাদা সংস্কৃতি। এই গ্রামের কথা আমরা জানতাম না। খোঁজ দিয়েছিল Rustic Trails, যারা আমাদের পুরো কুমায়ন সফরের আযোজন করে দিয়েছিল। এবং এটা দেখে ভাল লেগেছিল যে তারা প্রচলিত হোটেল-রিসর্টের বাইরেও বিভিন্ন গ্রামে হোম-স্টে'তে থাকতে উৎসাহ দেন তাদের গ্রাহকদের, যা স্হানীয় অর্থনীতির পক্ষে যেমন সহায়ক, তেমনই পরিবেশ বান্ধব। আতিথেয়তার উষ্ণতায় ঘেরা পাহাড়ি মানুষের এই সব ঘর। বিকেলে বাসন্তীদিদির বাড়ির পাথরের উঠানে বসে অস্তগামী সূর্যে সোনালী হয়ে থাকা পঞ্চচুল্লীকে দেখতে দেখতে আর পকোড়া-চা'য়ে চুমুক দিতে দিতে সেটাই অনুভব করছিলাম। আসার পথে আলমোড়ায়, এই সারমোলিতে আর এই সফরে ফেরার পথে বিনসর আর করবেটে এমন সব গ্রাম-জীবনের অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে আমাদের ঝুলি। আর পাঁচটা ট্যুর অপারেটারের থেকে বোধহয় এখানেই আলাদা কলকাতার Rustic Trails। ধন্যবাদ তাদের আমাদের কুমায়ন সফর এইভাবে সাজাবার জন্য।





মুন্সিয়ারির শেষ রাতটা আমরা কাটাই একট পাহাড়ের টং এ। তার নাম খালিয়া টপ। এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এখানকার ট্রেকার হাটে থাকার ব্যবস্হা আগে থেকেই করা ছিল। এখান থেকে পঞ্চচুল্লী আর রাজারম্ভা ছাড়িয়েও চোখে পড়ে নেপালের অন্নপূর্ণা সার্কিটের চূড়াগুলি আর খালিয়া টপের পিছনে দেখা যায় নন্দাদেবীর বিস্তার। মেঘে রোদে সেখানে লুকোচুরি খেলে। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত। সূর্যাস্তের পর ঝপ করে নেমে আসা অন্ধকার। এর পর গাইড বিক্রমের হাতে হাত রেখে উৎরাই ভেঙ্গে নেমে আসা রাতের আশ্রয়ে ট্রেকার্স হাটে যা চূড়া থেকে এক কিলোমিটার নীচে। অক্টোবরের ঠান্ডায় রাতে জল বরফ হযে গেলেও রান্নাঘরের উষ্ণ পরিবেশে গল্প করতে করতে সন্ধে-রাত্তির কখন কেটে যায় বোঝা যায় না। বাইরে তখন আকাশ তারায় ঝলমল।




কিভাবে যাবেন: মুন্সিয়ারি যেতে হলে আপনাকে পৌঁছতে হবে কাঠগোদাম বা হলদোয়ানি বা লালকুঁয়া। কলকাতা ও দিল্লী থেকে ট্রেন পৌঁছে যাচ্ছে সেসব স্হানে। সেখান থেকে সড়কপথে যেতে হবে মুন্সিয়ারি। আসা যাওয়ার পথে বিরতি নেওয়া যেতে পারে নৈনিতাল, বিনসর, আলমোড়া, চৌকরি, পাতাল ভুবনেশ্বর, কৌশানি বা রাণীক্ষেতের মত অপার সৌন্দর্য ভরা জায়গায়। পুরো সফরের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন Rustic Trails এর সাথে (9875578459/9674122240)। চাইলে ছোট ছোট গ্রামে হোম-স্টে'তে থেকে কুমায়নি সংস্কৃতির আস্বাদ গ্রহন করতে পারেন তাদের ব্যবস্হাপনায়।




লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় অধ্যাপক, হিমালয় প্রেমী।


ছবি: লেখক ও বনেপাহাড়ে।







Comments


472988974_1066719631921628_7123774556652206934_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page