top of page

ভয়ংকর সুন্দরের অভিযানে

  • ..
  • Aug 6
  • 12 min read

সিকিমের বিখ্যাত ট্রেক পথ জোংরি-গোছালা। সেই জনপ্রিয় পথও যে প্রকৃতির খেয়ালে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তার কথা উঠে এল সুমন গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে।



ree

এক ।

সহসা কুকুর আর খচ্চরগুলোর প্রাণান্তকর চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল।স্লিপিং ব্যাগ সমেত ধরমড়িয়ে উঠে বসলাম। বাইরের চিৎকার ক্রমশ কমে এসে কুকুরদের ডাক কেমন যেন একটু আকুতিতে পরিণত হলো। লগ হাটের মধ্যে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সবাই বোধহয় নিদ্রামগ্ন। পাশ থেকে হঠাৎ উপলের গলা "এ নির্ঘাত স্নো লেপার্ড না হয়ে যায় না। "

জংরি ঢোকার সময় কোথায় যেন লেখা দেখেছিলাম You are in the habitat of snow leopard।

একটা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে উপলের কথার সম্মতি জানালাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় তুষার ঝরা রাতেও আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আমাদের দলের বাকিরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। স্লিপিং ব্যাগ থেকে বেরিয়ে মাথার হেড টর্চটা জ্বালিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। লগ হাটের জানলা দিয়ে উঁকি মারতে টর্চের আলোয় যেটুকুনি দেখলাম সবই সাদা। তার সাথে হয়ে চলেছে তুষারপাত।

-"কাল সকালে ও আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কোন আশা নেই ।" উপলের স্বগতোক্তি ।

-"শুরু থেকেই এমন সব ঘটনা ঘটছে , তাতে ঈশ্বর যেন চাইছে না, আমরা এগিয়ে যাই। "

-"সাহস ও দুঃসাহসের সীমারেখাটা বড়ই ক্ষীণ।" অনির্বাণ আমাদের কথায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে কথাটা বলল ।

একে একে দেবজ্যোতি ও প্রদীপ ঘুম থেকে জেগে উঠেছে।

ree

-"দেবু কি করবো বল ?" সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে উপল তাকাল দেবজ্যোতির দিকে।

-"সবাই যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই করব ।এমনিতে চারিদিকে এত সাদা দেখতে দেখতে মনের মধ্যে এক ডিপ্রেশন আসছে ।"

-"তাহলে কাল ফেরার পথ ধরি, চল ।" বলল উপল।


দুই।


২৩ শে এপ্রিল 2025।

শিয়ালদা স্টেশন থেকে আমরা পাঁচ জন অর্থাৎ আমি, উপল, অনির্বাণ, দেবজ্যোতি এবং আমাদের আর্ডেন্ট ট্রেকার গ্রুপের নবাগত সত্যম এবং আমাদের ট্রেক গাইড প্রদীপ দার্জিলিং মেলে করে বেরিয়ে পড়লাম পশ্চিম সিকিমের গোচেলার উদ্দেশ্যে। সকালে NJP স্টেশনে নেমে রওনা হলাম ইয়কসাম এর উদ্দেশ্যে।সেবক রোডে একটা ভয়ংকর এক্সিডেন্ট দেখে আমাদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল । অবশ্য তারপর হই হুল্লোড় আড্ডা মারতে মারতে প্রায় সাত ঘন্টা পরে পৌঁছে গেলাম ৫৮৪০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সিকিমের প্রথম রাজধানী ইয়কসাম। আমাদের জন্য নির্ধারিত হোমস্টেতে ব্যাগ পত্র রেখে আমরা বেরিয়ে পড়লাম চারপাশটা একটু ঘুরে দেখতে। সংলগ্ন বাজার চত্বরে এসে অনুভব করলাম কিছু একটা হয়েছে। একটা নিশ্চুপ অস্বস্তিকর উত্তেজনা। আমাদের ট্রেক গাইড প্রদীপ যে স্থানীয় সংস্থার সাথে আমাদের এই ট্রেক এর আয়োজন করেছে, সেই সংস্থার সাথে আগের একটি দল গোচেলা গিয়েছিল, সেই দলের একটা ছেলেকে থানসিং বলে একটা জায়গা থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবার মনের একটা ফুরফুরে আনন্দ নিমেষে উধাও। মনটা কোথাও যেন একটা কু গান গেয়ে গেল। তার ওপর আবহাওয়া সংবাদ দেখাচ্ছে আমাদের গোচেলা পৌঁছবার আগের দিন থেকে মেঘলা আকাশ ও তুষারপাতের প্রভূত সম্ভাবনা। নিরাশা আরও বাড়তে লাগলো।


তিন ।

সমস্ত অশুভ ইঙ্গিত গুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে ইয়কসাম থেকে শুরু হল আমাদের প্রথম দিনের যাত্রা। সঙ্গে আমাদের ট্রেকের গাইড প্রদীপ এবং স্থানীয় গাইড শিবা ।ঠিক শুরু হওয়ার আগে খবর পেলাম উত্তর সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বহু পর্যটক আটকা পড়েছে ।এদিকে ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধকালীন অবস্থা ।


নির্দিষ্ট স্থানে পারমিশনের কাগজ নিয়ে আমরা চড়াই উঠতে লাগলাম। প্রথমে কয়েকটি ঘরবাড়ি থাকলেও তারপরে জঙ্গল ।মাঝে বেশ কয়েকটা ল্যান্ড স্লাইড জোন। এগুলোকে তাড়াতাড়ি পার করে চড়াই উৎরাই পথে এগোতে থাকলাম। প্রায় এক ঘন্টা চলার পর এলো প্রথম হ্যাঙ্গিং ব্রিজ। নিচ দিয়ে প্রচন্ড উচ্ছ্বাসে বয়ে যাওয়া পার্বত্য স্রোতস্বিনী প্রেক চু র ওপর দিয়ে সদা দদুল্যমান জরাজীর্ণ ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে পৌঁছে গেলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বারে।

ree

কাঞ্চনজঙ্ঘা - ভারতের উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ। নামটা দেখেই মনের মধ্যে বিশালাকায় ধবল শুভ্র পিরামিডের ন্যায় বিশিষ্ট আকৃতির পর্বত শৃঙ্গের অপার্থিব রূপ সামনে থেকে দর্শন করার অভিলাষ বহু গুন বেড়ে গেল। অদম্য উৎসাহে চড়াই ভাঙতে শুরু করলাম। শুধুই চিরহরিৎ ঘন জঙ্গল। কোন কোন স্থানে এতই নিবিড় যে আকাশ পর্যন্ত দেখা যায় না।

ree

পরস্পরের সঙ্গে গল্প আলাপচারিতা করতে করতে মাঝেমধ্যে অল্প বিশ্রাম নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। চলার পথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ভেদ্য জঙ্গল পার করে প্রায় কিছুই দেখা যায় না। তবে এ পথ পাখিদের স্বর্গরাজ্য। রাস্তার মধ্যে মাঝেমধ্যেই দেখা মিলছে Yellow billed blue magpie, scarlet minivet, purple sunbird। মন চাইছে যদি একটা Himalayan Monal এর দেখা পাই। এইভাবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পর একটা লম্বা অংশ জুড়ে উতরাই পথে নেমে এসে পৌছলাম দ্বিতীয় ঝুলন্ত ব্রিজ। একটু বিশ্রাম নিয়ে,ভালো করে কিছু ড্রাই ফ্রুট চকলেট ও জল খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। জঙ্গল আরও গহীনতর হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ঝিঁঝি পোকার ডাক। আমাদের সঙ্গে কোনো না কোনো কুকুর আমাদেরই টিম মেম্বারের মত হেঁটে চলেছে । জঙ্গল জুড়েই ঘন মসে ঢাকা বর্ষিয়ান বৃক্ষরাজি।


এইভাবে প্রায় আরো ঘণ্টা দুয়েক হাঁটার পর এসে পৌছালাম রাথুম চু নদীর উপর তৃতীয় ঝুলন্ত সেতু। তখন প্রায় বিকেল চারটে। আজ দুপুরের খাওয়া হয়নি। সারাদিনের পরিশ্রমে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তৃতীয় ব্রিজ পেরিয়ে আরও কিছুটা গিয়ে পৌঁছে গেলাম আজকের আস্তানা সাচেনে। জঙ্গল কেটে একটা ছোট্ট উপত্যকা সম অঞ্চল সাচেন। খান দুয়েক ক্যাম্পিং এরিয়া। মাঝখানে দু কামরার একটা কাঠের বাড়ি, একটা শৌচালয় আরেকটা চারিদিক খোলা মাথা ঢাকা গোলাকৃতির খাওয়ার জায়গা। কাঠের বাড়ির সামনেই আমাদের জন্য পাতা হয়েছে তিনটে তাঁবু।


অন্ধকার যত ঘন হলো ততই কেমন জানি না একটা অস্বস্তি হতে লাগলো।ইয়াকসাম থেকে প্রদীপের কাছে ফোন এসেছিল হারিয়ে যাওয়া ছেলেটিকে খোঁজার জন্য উপলের পারমিশন করিয়ে নিয়ে আসা ড্রোনটা ভাড়ায় পাওয়া যাবে কিনা। চারিপাশে দুর্ভেদ্য গভীর জঙ্গলের অপার নৈশব্দ। হঠাৎ করে জন্তু-জানোয়ারের দেখা মিললেও অবাক হবার কারণ নেই। একটাই ভরসা সামনে বিচুটি পাতার জঙ্গল। তাড়াতাড়ি রাত্রির খাবার খেয়ে ঢুকে পড়লাম তাঁবুতে। তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করতে লাগলাম । গভীর রাতে শুরু হলো বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি। কিছুটা ভয় কিছুটা উদ্বেগ আধা ঘুম এবং আধা জাগরনে কেটে গেল রাত্রি।


চার ।

সকালে সুন্দর ঝলমলে সাচেনের আকাশ। তাঁবুর চারপাশে খেলে বেড়াচ্ছে Blue magpie যুগল ।মাঝেমধ্যে কিছু Baya weaver, purple sunbird এসে দেখা দিচ্ছে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে প্রাতরাশ সেরে আমরা শুরু করলাম দ্বিতীয় দিনের যাত্রা। প্রথমেই চড়াই দিয়ে শুরু হল। কিছুটা যাওয়ার পরেই দেখতে পেলাম প্রথম লাল রডডেন্ড্রন এ ভরা বেশ কিছু গাছ। মন ভোরে উঠলো তা দেখে। তার পর আবার চড়াই ভেঙে ওপরে উঠে চলা। কখনো কখনো রাস্তা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রী চড়াই এবং প্রকৃত রাস্তা বলতে প্রায় কিছুই নেই । মাঝখানে একটু ফাঁকা জায়গায় উল্টো দিকের পাহাড়ে দেখতে পেলাম একটা সুতোর মতো ঝর্ণা। এই ভাবে চলতে চলতে ঘেমে ক্লান্ত হয়ে ঘন্টা আড়াই পরে এসে পৌছালাম চতুর্থ হ্যাঙ্গিং ব্রিজ এ। বেশ জরাজীর্ণ অবস্থ্যা এই ব্রিজ এর। আমাদের যাত্রা পথে এই শেষ ঝুলন্ত সেতু। যাত্রায় আমাদের সঙ্গ নিয়েছে আরেকটি কুকুর ।

ree

বেশ কিছুটা চলার পর চারপাশটা বেশ কিছুটা বদলে গেলো। মাঝে মধ্যে দেখা দিলো উপত্যকা। কখনো রডডেন্ড্রন গাছ, কখনো বা ঘাসের গালিচা। কোথাও বা ঘাসের ওপর ফুটে আছে সাদা হলুদ নীল ছোট ছোট ফুল। মন ভরে যেতে লাগলো এই অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভা দেখে। আরো কিছুটা চলার পর এলো একটা সুন্দর উপত্যকা। যেটা পার করে ডান দিকের মোড় ঘুরতেই এলো ৮৬৫৪ ফুট উচ্চতায় পাহাড় জঙ্গলের মাঝে একটি ছোট্ট উপত্যকা -ৰাখিম। সামনেই একটা ছোট্ট লগ হাট - গায়ে একটা বোর্ডের ওপর লেখা "Blooming Rhodedendron is one of the most surreal wonders that you can witness, welcome to the trails of Rhodedendrons"।

ৰাখিমের একদিকে সবুজ হলুদ ধূসর লাল এরকম নানা বর্ণের গাছ গাছালি, আর অন্য দিকে কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়। উপত্যকা অঞ্চলে খেলে বেড়াচ্ছে নানা রঙের পাখি। একটা Verditar Flycatcher নির্ভয়ে আমাদের সামনে এসে বসলো। এই জায়গা থেকে বিশেষ কয়েকটি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। তাই বাড়িতে কথা বলে নিয়ে ভালো করে জল, কফি আর ম্যাগি খেয়ে পেট ভরিয়ে নিলাম ।

ree

এর পর শরীর মন চাঙ্গা করে নতুন উদ্দমে হাঁটা শুরু করলাম । পরবর্তী রাস্তার সৌন্দর্য অবর্ণনীয়।কখনো সাদা , কখনো লাল, কখনো হলুদ, কখনো ক্রিম রঙের গুরাস ফুল এ ঢাকা গাছ, কখন ও বিস্তীর্ণ ঘাসের উপত্যকা, কখনো বা কুয়াশা ঢাকা জঙ্গল ।এই ভাবে আরো এক ঘন্টা মনোমুগ্ধকর পরিবেশে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম ৯৭০০ ফুট উচ্চতায় এক অনন্য সুন্দর উপত্যকা শোকায় । ঘন মেঘের আস্তরণ সরিয়ে বেশ কিছু লগ হাট আর অনেক তাঁবু দিয়ে সুসজ্জিত শোকা তে পৌছালাম যখন তখন বিকেল সাড়ে তিনটে। এই জায়গা টা দেখে আমাদের মন ভোরে গেলো। মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে আমরা পৌছালাম একটা ছোট্ট লেকের ধরে। শুনেছি তিব্বতী ভাষায় TSO মানে লেক। হয়তো সেই থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে শোকা। লেকের অন্য প্রান্তে রয়েছে একটা ছোট্ট মনাস্ট্রি। চোখ জুড়ানো দৃশ্য। প্রচন্ড হাওয়াতে প্রেয়ার ফ্ল্যাগ গুলো উড়ছে। অনবরত চলছে মেঘের আনাগোনা। তা ভেদ করে ঘোড়া গুলো জল খেতে নামছে লেকের মধ্যে। সে এক অপার্থিব দৃশ্যপট। সন্ধ্যা ঘনালো পাহাড়ের কোলে। অন্ধকারের মধ্যে দূরের তাঁবুগুলো ভিতরে জ্বলে থাকা টর্চের আলোয় স্নান করে এক অনবদ্য সুন্দর প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে।

ree

পাঁচ।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলাম রোদ ঝলমলে আবহাওয়া । আজকের যাত্রা সবথেকে দীর্ঘ্য। আমাদের পুরো ট্রেকের কঠিনতম অধ্যায় আজ। প্রথম থেকেই খাড়া চড়াই। অল্প অল্প হাঁটছি আর একটু করে দাঁড়িয়ে নিচ্ছি। রাস্তার দুই পাশ আলো করে ফুটে আছে নানা রঙের রডডেন্ড্রন। আজ আবার প্রথম থেকেই গভীর জঙ্গল। প্রদীপের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সবাই একসাথে হেঁটে চলেছি।

ree

মাঝে মধ্যে দেখা মিলছে ইয়াক ও ঘোড়ার দল। বাধ্য হয়েই পাহাড়ের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তাদের জায়গা করে দিতে হচ্ছে। আজও একটি কুকুর আমাদের সঙ্গে নিয়েছে। সেও আমাদের সাথে বিশ্রাম নিয়ে আমাদের সাথেই চলতে আরম্ভ করলো। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আরো কিছুটা পথ হাঁটতে হাঁটতে আমরা দেখতে পেলাম চেরা গাছের গুড়ি বিছানো গোচেলা ট্রেকের আইকনিক রাস্তা। আমরা ছবি তুললাম, ভিডিও তুললাম। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। এই রাস্তা কাদা মাখা। এখানে পা হড়কে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। এই রাস্তায় আমাদের আজকের পুরোনো সাথী কুকুরটা কে আর দেখতে পেলাম না। পরিবর্তে অন্য একটা কুকুর এসে যোগ দিলো। সেও এসে কখনো আমাদের সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, কখন ও বা এগিয়ে গিয়ে আমাদের জন্য অপেখ্যা করছে, কখনো বা আমাদের পিছনে পিছনে শান্ত ভাবে হেঁটে চলেছে। সে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন সেও আমাদের দলেরই এক অন্যতম সদস্য। আজ প্রায় পুরোটাই চড়াই। কাঠের ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে চড়াই ভেঙে উঠতে আমাদের অবস্থ্যা কাহিল। কিছুক্ষন পর কয়েকটা বাজ পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর শুরু হলো ঝিরঝিরে বৃষ্টি। জঙ্গলের মধ্যে সেই বৃষ্টি গায়ে মেখে এগোতে লাগলাম। কিছুক্ষন চলার পর বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো, চলার পথ এখন কাদায় পরিপূর্ণ। সবাই সবাই কে সাবধান করতে লাগলাম দেখে চলার জন্য। আরও কিছুটা এগোতেই সাবুদানার মতো বরফের টুকরো পড়তে আরম্ভ হলো। মাঝে মধ্যে শোনা যাচ্ছে বাজ পড়ার শব্দ। এই ভাবে চড়াই পথে উঠতে উঠতে শুরু হলো ঝড়।

ree

তবু বাঁচোয়া যে আমরা আমরা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলেছি, তাই ঝড়ের দাপট কিছুটা হলেও কম। আরো পনেরো মিনিট হাঁটার পর শুরু হলো শিলাবৃষ্টি। মাঝে মধ্যেই মনে হতে লাগলো কেউ যেন আমাদের মাথা লক্ষ করে ঢিল মারছে। এইরূপ প্রতিকূল প্রকৃতিতে ঝড় বৃষ্টি কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম প্রায় ৩২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ছোট্ট একটা উপত্যকা স্বরূপ জায়গা ফেদাং এ। এই ফেদাং থেকে একটা রাস্তা চলে যাচ্ছে জংরির দিকে- যে রাস্তা দিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। মাঠের একধারে একটা কাঠের দোকান। ঝড় বৃষ্টি পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে। একটু কফি অর্ডার দিয়ে শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ভিতরে ঢুকে বসে প্যাকেড লাঞ্চ খেতে লাগলাম। দেড়টা নাগাদ আবার রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

ree

এদিকে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। আরো কিছুটা ওঠার পর শুরু হলো তুষারপাত। রাস্তা, দুপাশের গাছ গাছালি বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়তে লাগলো। জঙ্গল পেরিয়ে যখনি একটু ফাঁকা জায়গা আসছে তখনি বুঝতে পারছি হওয়ার প্রচন্ড দাপট। আমাদের সঙ্গী কুকুর টা আমাদের পিছন পিছন আসছে। এই নিরবচ্ছিন্ন তুষারপাতে হাঁটতে বেশ অসুবিধা হতে লাগলো আর চলার গতিও কমতে লাগলো। তবুও থামলে চলবে না এগিয়ে যেতেই হবে। কখনো প্রানান্তকর চড়াই , কখনো ঝড় আর তার সাথে তুষারপাত এর দৌরাত্ম। এই ভাবে ঘন্টা দুয়েক চলার পর চড়াই পথ শেষ করতেই সামনে এক উন্মুক্ত অংশ। এটাই সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৩১০৯ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত দেওরালি টপ।সামনে শুধুই সাদা। এখানে ভীষণ ভাবে তুষারপাত হয়ে চলেছে, আর সামনে পাঁচ মিটার দূরেও কি আছে তা দেখা যাচ্ছেনা। সঙ্গে তুষারপাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে ভয়ঙ্কর ঝড়ের দাপট। স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারা যাচ্ছেনা। উপলের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো - "ব্লিজার্ড।.......".

ree

মাথা ঢাকা একটা গোলাকার জায়গায় এসে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলাম। চারপাশে ঝড়ের দাপট ঠেলে ফেলে দিচ্ছে । এদিকে শরীর ক্লান্ত, অবসন্ন। এগিয়ে চলার ক্ষমতা যেন কমে আসছে। প্রদীপ আমাদের এগিয়ে যেতে বললো। ইতিমধ্যে আমাদের স্থানীয় গাইড আমাদের ফেলে এগিয়ে চলে গেছে। অনির্বান বললো -"প্রদীপ, এর মধ্যে যাবো কি করে? কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না।"

- "তোমরা, আমার পায়ের ছাপ অনুসরণ করে এগিয়ে চলো। কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে যাবে না।" প্রদীপের নির্দেশ।

-"প্রদীপ পারবি তো?"- উপলের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

- "আমি তো আছি, চিন্তা করোনা।"- প্রায় পনেরো বার এই ট্রেক এ আসার অভিজ্ঞতার ভরসায় আমাদের আস্বস্ত করার চেষ্টা করলো প্রদীপ।

সামনে ধবল শুভ্র অন্ধকার। রাস্তা কোথায়? অন্য রাস্তা দিয়ে যাব কিভাবে যাব কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। একটু এগিয়েই শুরু হলো নিচে নামার পথ। এগিয়ে চললাম আক্ষরিক অর্থে প্রদীপের প্দাঙ্ক অনুসরণ করে। অনেকটা নামার পর,কিছুটা সমতল অংশ। আমার ট্রাভেল ভিডিও দেখার স্মৃতি মনে করিয়ে দিল এখানে একটা জলাশয় থাকার কথা। কিন্তু এখানে তো শুধুই সাদা। -"প্রদীপ, এখানে একটা জলাশয় ছিল না ?"

-"দাদা এসব ভুলে যাও শুধু আমার পা দেখে দেখে চলো ।" -প্রদীপের নির্দেশ।

সামনে যারা চলেছে তাদের প্রত্যেককে মনে হচ্ছে একটা তুষার আবৃত তুষার মানব। সমতল শেষে আবার চড়াই শুরু। কোন রাস্তা নেই, কোথায় উঠছি, কেন উঠছি, সঠিক রাস্তায় উঠছি কিনা, কিছুই বুঝতে পারছি না। তবুও মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে চলেছি। দলের একজন বলে উঠলো যে তার মাসল ফ্যাটিগ অর্থাৎ মাংসপেশির অবসন্নতা হচ্ছে । একটা পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে পড়লাম সবাই । একটু কিছু পেটে দিতেই ভালো লাগলো । তারপর আবার পথ চলা শুরু নিরুদ্দেশের পথে । চারিপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা । পাশের রোডডেন্ড্রন গাছগুলো ও বরফের চাদরে ঢেকে গেছে, চারিপাশে শুধুই সাদা । মনে হচ্ছে আমরা এক হীমশীতল অন্ধকূপের মধ্যে অন্তহীন পথে হেঁটে চলেছি । আমার অনুভূতি গুলো কেমন জানিনা স্থূল হয়ে আসছে, মুখমণ্ডলে বরফের ঝাপ্টা, ঝড়ের ধাক্কা কিছুই যেন উপলব্ধি হচ্ছে না ।একটা গিরিশিরার মাঝখানে ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। প্রদীপ এর ধমক খেয়ে আবার চলতে লাগলাম। পাহাড়ের একদিকে গভীর গিরিখাত, পা ফসকালেই ..।

ree

মাঝেমধ্যেই চলেছে বরফের মধ্যে আছাড় খেয়ে পড়া , আবার উঠে দাঁড়ানো , আবার পথ চলা । গত ঘন্টা তিন আমরা ছয় জন ব্যাতিত আর কারো মুখ দেখিনি। আবার দেখতে পাবো তো ?

এইভাবে ঘণ্টা দুই যুদ্ধের পর, ঝড় কমে এলো। তখনো তুষারপাত চলছে। চারিপাশ একটু পরিষ্কার হতে,দূরে দেখতে পেলাম দুটো বাড়ি। দেবজ্যোতি উচ্ছ্বাসের সাথে বলে উঠলো -"ওটাই মনে হচ্ছে জংরি!"চোখে মুখে আসার আলোক। আবার একজন পিছলে পড়ে গেল। কারো শুরু হল উচ্চতাজনিত অসুস্থতা। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। গন্তব্য খুবই কাছে। আজকের এই শেষ দু ঘন্টার যাত্রাপথের ইতিবৃত্ত আমাদের জীবনে চিরকাল রূপকথার মত হয়ে থাকবে!

ree

ছয় ।

অন্যান্য ট্রেকাররা এসে ভিড় করলো আমাদের কাছে। ওরা আগের দিন থেকেই এখানে রয়েছে। কারো এটা acclimatization Day আবার কেউবা দুর্যোগের কারণে সামনেই এগিয়ে যেতে পারেনি। তাদের একটাই প্রশ্ন- আমরা কি করে এই দুর্যোগের মধ্যে এসে পৌঁছলাম? আমরা প্রদীপের দক্ষতার কথা বলতে সবাই তাকে সাধুবাদ জানালো। এই অঞ্চলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আরো দুদিন পরে তুষারপাত হওয়ার কথা ছিল। এই দুর্যোগে যাদের থানসিং এগিয়ে যাবার কথা ছিল তারা এখানেই রয়ে গেছে। আগামী মেঘমুক্ত উজ্জ্বল দিনের আশায় ।আমরা ঠিক করলাম আর তাঁবু নয়, লগ হাট এই রাত্রি বাস করব। লগ হাটের সামনের দিকটাতে প্রায় কুড়ি তিরিসটা তাঁবু। সামনে পিছনে সব জায়গা,এমনকি সামনের পাহাড়ও বরফের চাদরে ঢাকা। আকাশের যা অবস্থা কাল আর সকালে জংরি টপে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়া যাবে না। অগত্যা রাতের খাবার খেয়ে দেয়ে স্লিপিং ব্যাগের তলায় ঢুকে পড়লাম। শুয়ে পড়লে কি হবে ঘুম আর আসতে চায় না। সারাদিনের রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা ভাবতে ভাবতেই জেগে থাকলাম অনেকক্ষণ। সত্যি যে রাস্তায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ট্রেকার আসে,তার কোন সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। দেওরালি টপে দেওয়াল ছাড়া শুধুমাত্র একটি ছোট্ট বিশ্রাম স্থল,কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খোঁজার জন্য ড্রোনেরও ব্যবস্থা নেই ,বিপদ হলে মাঝখানে মাথা গোজার কোন স্থান নেই ।এছাড়াও স্থানীয় গাইড বিশেষভাবে প্রশিক্ষিতও নয়। এইসব ভাবতে ভাবতে চোখে লেগে আসে ঘুমের আবেশ। এই ঘুম কেমন যেন একটা চেতনা আর অবচেতনের মাঝামাঝি একটা অবস্থা।অধিক উচ্চতায় এ এরকম হয়ে থাকে। মাঝরাতে নিরবচ্ছিন্ন নৈঃশব্দের মধ্যে কুকুর এবং ঘোড়াদের তারস্বরে চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। কেমন একটা অস্বস্তিকর অবস্থা ।হেড টর্চের আলোয় বাইরে দেখলাম অঝোরে তুষারপাত হয়ে চলেছে।


সকলে উঠেও দেখলাম তা অব্যাহত ।অন্যান্য ট্রেকার্সরা কেউই জংরি টপে যাওয়ার সাহস দেখায়নি। সকালে জলখাবার খাওয়ার পালা সাঙ্গ হল।টয়লেটটাও বরফ পেরিয়ে প্রায় ১০০ মিটার দূরে। যেতে গিয়ে আবার আছাড় খেলাম।আমায় ধরতে এসে অনির্বাণও আছার খেল।

ree

বেলা ১১ টা নাগাদ তুষারপাত বন্ধ হলো। সবার মনেই একটু আশা দেখা দিল। অন্যান্য দল ও এখনো পর্যন্ত থানসিং এর দিকে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। হঠাৎ আমাদের স্থানীয় গাইড শিবা এসে খবর দিল সামনের পাহাড়ের একটু উঁচু একটা খাঁজে বিশেষ মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সামনে একটা প্রায় জমে যাওয়া পার্বত্য স্রোতস্বিনী পার হয়ে পাহাড়ের উপর উঠে একটা বিশেষ জায়গায় নেটওয়ার্ক পেলাম। সবাই বাড়িতে কালকের ঘটনার কোন ইঙ্গিত না দিয়ে নিজেদের কুশল সংবাদ জানালাম। মধ্যাহ্ন ভোজন এর পর সবাই আলোচনায় বসলাম। ঠিক হলো যদি কাল সকালে রোদের দেখা মেলে,তাহলে আমরা এগিয়ে যাব। যদি আবার আবহাওয়ার অবনতি শুরু হয়, তাহলে কাল অবশ্যই ফেরার পথ ধরবো। আলোচনা শেষ করে সর্বসম্মতি নিয়ে যখন মনের মধ্যে কিছুটা আলোর দিশা দেখতে পাচ্ছি,তখনই পরিবেশ আবার সাদা হয়ে শুরু হলো প্রবল তুষারপাত। সঙ্গে এলোমেলো হাওয়া। নিরাশায় মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। এখন শুধু কাল সকালের অপেক্ষায়।


সাত।

আমরা বরফের রাজ্য জংরি থেকে ফেরার পথ ধরেছি। মাঝেমধ্যেই বরফের মধ্যে অনেকটা পা ঢুকে যাচ্ছে। একদিকে গভীর খাদ,অন্যদিকে পাহাড়ের গা বরাবর হাঁটতে থাকলে মাথার উপর পড়ছে গাছের উপর জমে থাকা বরফের ডেলা ।মাথা ফুলে ঢোল হওয়ার অবস্থা। আকাশ এর ঈশান কোণ থেকে কালো মেঘ ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমাদের সঙ্গী হিসাবে হেঁটে চলেছে একটি কুকুর । আজ সকালে অন্যান্য ট্রেকাররাও আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সবাই ফিরে আসবে বলে মনস্থ করেছে।এদিকে সামনে থানসিংয়ের দিকে এগোনোর পথে এতই বরফ পড়েছে ঘোড়া, ইয়াক চলাচলের জন্য একদম অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে । তাই ওই রাস্তায় পণ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া এখন বন্ধ ।আমরাও দেরি না করে প্রদীপের ভরসায় বেরিয়ে চলতে চলতে এসে পৌঁছলাম দেউরালি টপ। এখনো এই স্থান মেঘ কুয়াশায় ঢাকা। সেখান থেকে টানা উতরাইয়ের পথ। বরফ গলে জল হয়ে প্যাচপ্যাচে কাদায় অসম্ভব পিচ্ছিল সেই নামার পথ। প্রতিমুহূর্তে হড়কে পরে যাবার সম্ভাবনা। দুই হাতে দুই লাঠির উপর ভর করে সন্তর্পনে দেখে দেখে পা ফেলে নিচে নামতে থাকলাম।

-"আজ নিজের পা কে নতুন করে চিনছি, কারণ শুধু পায়ের দিকেই তাকিয়ে আছি । " উপল এর স্বগতোক্তি।

ree

এইভাবে টানা নামতে নামতে ফেদাং হয়ে প্রায় চারটে নাগাদ পৌঁছে গেলাম শোকা। তাঁবুতে না থেকে আমরা মনস্থ করলাম যে লগ হাটেই থাকবো। সন্ধ্যা থেকে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। পরের দিন আমরা শোকা থেকে ১৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নেমে আসব ইয়কসামে। নেটওয়ার্ক পাওয়াতে আমরা খবর পেলাম অনির্বাণের ছেলের দুর্দান্ত রেজাল্টের কথা। আমরা সবাই উচ্ছ্বসিত। পুরো পথ জুড়ে একটা জিনিস লক্ষ্যণীয় যে কোন না কোন কুকুর সব সময় আমাদের সঙ্গে চলেছে ।একটা কুকুর একটা নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত চলে এসে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে ।তারপর সেই জায়গা থেকে আরেকটা কুকুর আমাদের সঙ্গ নিচ্ছে ।ব্যাপারটা সত্যিই খুব অদ্ভুত!এরা কি শুধু খাবারের লোভে এই আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে ? পথ চলতে চলতে উপল বলল-"খুব বরফ পড়লে স্নো লেপার্ডরা খাবারের সন্ধানে নিচে নেমে আসে । এই কুকুরগুলো হয়তো পালা করে ট্রেকার দের রক্ষা করে চলেছে । "

প্রাকৃতিক নিয়মে এরাই হয়তো আমাদের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ ।

হাঁটতে হাঁটতে শেষ বিকেলে আমরা এসে পৌঁছালাম কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কের গেটের সামনে। আর কোন কুকুরের দেখা মিলল না। এরপর আরো ঘন্টাখানেক হেঁটে প্রায় ১১ ঘণ্টা যাত্রার পর এসে পৌঁছলাম ইয়াকসাম এ।

পিছনে ফেলে আসা পথের দিকে তাকিয়ে নিরাশ কণ্ঠে বললাম-"কাঞ্চনজঙ্ঘা এভাবে আমাকে কখনোই নিরাশ করেনি ।"

দেবজ্যোতি বললো-"এবারের অভিযানে আমরা অনেক কিছুর সাক্ষী থাকলেও ,কাঞ্চনজঙ্ঘাটা হলো না ।"

-"হয়তো আমরা এ পথে আবার ফিরে আসবো"-বলল অনির্বাণ ।

-"আমরা নিশ্চয়ই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখব ,আরো কাছ থেকে ,নেপাল হয়ে ,কাঞ্চনজঙ্ঘা বেস ক্যাম্পে ।" হেসে বলল উপল ।

-"মিশন কেবিসি"-উৎসাহ ভরা মুখে বলল সত্যম।



ছবি: লেখক


লেখক পেশায় একজন চিকিৎসক।




Comments


86060474-00b1-415d-8c11-9c4471c9c5e7.png
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page