top of page
  • ..

উন্নয়নের হাওয়া লেগেই কি অসুস্থ দার্জিলিং?

চির পরিচিত দার্জিলিং নিয়ে একটু অন্যরকম ভাবলেন ঋতিঙ্কর বসু






চারিদিকে সুউচ্চ পাহাড়। ঘন অরণ্যে মোড়া।

গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ, মানুষের কথাবার্তা বন্ধ। প্রকৃতির যে আত্মনিভৃত এক ভাষা রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সেই ভাষা শুনতে পাওয়া যায়। তখন নিজেকে বড় আদিম মনে হয়, তাই না? কত ক্ষুদ্র ঠেকে নিজেকে প্রকৃতির এই অমোঘ, অপার সৃষ্টির কাছে। শহরের অভ্যাসকেন্দ্রিক জীবনযাত্রা থেকে রেহাই পেতে তাই পাহাড়ের বিকল্প নেই।

উত্তরবঙ্গের পাহাড় বলতে আমরা ঠিক যতটা বুঝি, পাহাড়ের বিস্তৃতি তার চেয়ে আরও হাজার হাজার মাইল ছড়ানো। উচ্চতায় সব একেকজন যেন আকাশ ফুঁড়ে উঠেছে। বরফসাদা শিখরের ওপর সূর্যের আলো এসে পড়ে। সোনালি আভার বিশ্ববন্দনা করেন চাক্ষুষরা। তারপর মোটা জামা, প্যান্ট, চাদর, জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন। চা, কফির খুচরো পসারিদের তখন পোয়া বারো। বাঙালিদের ঘনঘন যাতায়াতে তাদের মুখে হিন্দি, নেপালি, ইংলিশ ছাড়া বাংলার ব্যবহার সূক্ষ্ম হলেও লক্ষণীয়।

কখনো কুয়াশা ঢুকছে, কখনো কুয়াশা কেটে রোদ। হিমালয়ের হিম শীতল হাওয়া। ঘুরেফিরে বেরাচ্ছে পায়রা আর কুকুরের দল। সমতলের পায়রাদের সঙ্গে পাহাড়ি পায়রার পালকের ঘনত্বের ফারাক তেমন একটা না-দেখা গেলেও কুকুরের শরীরে কিন্তু লোমের আধিক্য চোখে পড়ে। পাহাড়ের ঠাণ্ডা বলে কথা। আর তাই দেখে কুকুরপ্রেমীদের মুখ থেকে আদুরে শব্দগুলো বের হয়। কুকুরগুলো ল্যাজ নাড়তে নাড়তে চলে আসে। মাঝেমধ্যে স্থানীয় কিছু লোকেদের মর্নিং ওয়াক, জগিং করতে দেখা যায়। মেদহীন চেহারাগুলো দেখে, ঘুরতে আসা বাঙালি বিবেকে নিজের ভুঁড়ি নিয়ে সামান্য শরমবোধ চলে আসে। তবু মনে হয় সবকিছুই বড় ভালো। যা কিছু হচ্ছে হয়ে যাক, আপাতত আমি নিশ্চিন্ত। হাওয়ায় উড়তে থাকে হেঁটে যাওয়া সদাহাস্য লামার পোশাকের খুঁট।

যতগুলো দিন থাকা, ঠিক ততগুলো দিনে পয়সা উসুল করে খাওয়া-দাওয়া, ঘোরাফেরা আর সন্ধ্যে হলেই কেনাকাটার মেজাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়া। তবু বারবার বলা, প্রকৃতির কাছে যেতে কার না-ইচ্ছে হয়? এদিকে কাছে গিয়ে যদি কিছু গ্রহণ করার মতন ইচ্ছেটুকু না দেখাই, সেটা কি সম্ভব? দার্জিলিং যে ভালো নেই, সচেতন পর্যটকদের সেই কথা বুঝতে হবে। লক্ষ লক্ষ পথিকের পায়ের চাপে দিনে দিনে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে দার্জিলিং।


দার্জিলিং যে ভালো নেই, সচেতন পর্যটকদের সেই কথা বুঝতে হবে। লক্ষ লক্ষ পথিকের পায়ের চাপে দিনে দিনে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছে দার্জিলিং।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৭০৯ ফুট উচ্চতায় পূর্ব হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট জনপদ- দার্জিলিং। তবে, দার্জিলিং কি আর আগের মতন ছোট আছে? অতীতের মত পড়ে রয়েছে আধুনিকতা এবং সভ্যতার উন্নয়ন থেকে অনেকটা পিছনে? একেবারেই না। পাহাড়ের কুয়াশা আর হিমালয়ের হিম বাতাসের সঙ্গে দার্জিলিং-এ পড়ছে সমতল থেকে ধেয়ে আসা উন্নয়নের শ্বাস-প্রশ্বাস। উন্নয়ন অর্থাৎ একের পর এক কনস্ট্রাকশন। শহরের বিস্তৃতি হচ্ছে, জঙ্গলের পরিসর কমছে। ফলে দার্জিলিং বলতেই যে প্রথমে নিশ্চিন্তের ঘুরে বেরানোর ঠিকানার কথা মনে আসে, এবার সময় হয়েছে সেই ধারণা কিছুটা পরিবর্তন করার। কিন্তু প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে কি উন্নতি সম্ভব? অবশ্যই প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা অসম্ভব ঠেকেছিল খোদ ব্রিটিশ সাহেবদের কাছেও। এখন তো সেই ধারণা করাটাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আজকের কথাটা পরে বলছি। অতীতের কথা আগে বলে নেওয়া যাক।

বাংলার মানচিত্রে অতীতে দার্জিলিং-কে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ১৮৩৫ সালের আগে দার্জিলিং ছিল সিকিমের অংশ। সেই সময় দার্জিলিং-এর নাম ছিল দোরজে লিং। এটি তিব্বতী শব্দ। দোরজে শব্দের অর্থ বজ্র। আর লিং হচ্ছে দেশ বা জায়গা। ১৮১৭ সালে অ্যাংলো-নেপাল যুদ্ধের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নেপালের হাত থেকে দার্জিলিং সিকিমের হাতে তুলে দেবার কাজটা নিখুঁত দক্ষতার সঙ্গে করে। বন্ধুত্বের উপহার হিসেবে সিকিমের রাজা ১৮৩৫ সালে দার্জিলিং তুলে দেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের হাতে। দার্জিলিং-কে অবনতির পথে পাঠানোর খুঁটিপুজো ব্রিটিশ সাহেবদের হাত ধরেই যে হয়েছে, সে কথা এখন আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম দিকে অবশ্য এই পরিস্থিতি ছিল না। সাহেবদের নজর যখন দার্জিলিং-এর উপর পড়ে তখন দার্জিলিং বলতে মনে করা যেতে পারে ঘন বন্য পাহাড়ি একটি এলাকা। জনসংখ্যা মাত্র ১০০ মতন। অতীতের দার্জিলিং-এর মানুষ এবং প্রকৃতির বোঝাপড়ার দিকটা ভালোরকম নজরে পড়েছিল সাহেবদের।

এটা সেই সময়ের কথা যখন দার্জিলিং মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের বসবাসের একটি জায়গা হিসেবেই থেকে গিয়েছে। কারণ ব্রিটিশদের মনে তখনো পর্যন্ত দার্জিলিং-এর জঙ্গল নতুন করে কোন লাভের গুড় তুলে ধরেনি। এদিকে লেপচা, সিকিমের অধিবাসী এবং ভুটানের মানুষের মধ্যে জঙ্গল সাফের মতন বিষয় মাথাতেই আসত না। স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির কোন ক্ষতি সেই সময় হবার সম্ভাবনা ছিল না। ফলে তখন যেটা হত, সেটা একমাত্র প্রকৃতির নিজের মনমর্জি মতন। অতিরিক্ত বৃষ্টি, অথবা ভূমিকম্প হলে দার্জিলিং-এ ধস নামার সম্ভাবনা দেখা যেত। অর্থাৎ, যাকে বলে ন্যাচারাল ক্যালামিটি। মানুষের হাত এক্ষেত্রে ছিল না। তখনো জীবন নষ্ট হত, ঘরবাড়ি সমূলে ভেঙে পড়ত, উপড়ে পড়ে যেত গাছ। তবু সেটা কখনোই ভয়াবহ কোন আকার নেয়নি।

মুশকিলটা হল, দার্জিলিং আরও ধসপ্রবণ হয়ে উঠল, মানুষ যখন ধীরে ধীরে দার্জিলিং-কে নিজের মতন করে ব্যবহার করতে শুরু করল। সবচেয়ে ভয়াবহ যে ল্যান্ডস্লাইড বা ধস দার্জিলিং-এ নেমেছে, সেটা ১৮৯৯ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে। তার একটা রেকর্ড খাতায় কলমে রয়েছে। ১৮৯৯ সালের ২৪ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ বৃষ্টি হয়। তার জেরেই নামে ধস। অতিবৃষ্টির কারণে ধস নামে ৭০০০ ফুট উঁচু থেকে একেবারে খাদ পর্যন্ত। কার্শিয়ং ডিভিশনের ৯ জন মানুষ মারা যান। প্রায় ২ হাজার একরের কাছাকাছি চা বাগান একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ছিল প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মতন। দার্জিলিং এলাকার বহু অরণ্য একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তবু বলতে হবেই, ন্যাচারাল ক্যালামিটির মতন বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া দার্জিলিং মোটের ওপর বেশ সুস্থ ছিল।

কিন্তু সাহেবদের মনে প্রকৃতির চেয়ে বেশি পছন্দ ছিল অর্থ। কিভাবে প্রকৃতি কিভাবে লক্ষ্মী হয়ে উঠবে, সেটা নিয়েই ব্রিটিশ সাহেবরা ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছিলেন। তারই পরবর্তী পদক্ষেপ চা-বাগান। দেরি না করে জঙ্গল সাফের মত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁরা। নির্দ্বিধায় জঙ্গলের গাছ কাটা হতে লাগল। মাটির বাঁধন আলগা হতে শুরু করল। বন উজার করে দেবার মতন কাজটা যে দার্জিলিং-এর পরিণতি দিনদিন আরও ভয়াবহ এবং বিপদগ্রস্ত করে তুলবে, সেই কথাটা আর সাহেবদের মাথায় আসেনি। অতএব, ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স গেল ঘেঁটে।

১৮৬৯ সালে দার্জিলিং-এর জনসংখ্যা ছিল ২২ হাজার মতন। ১৮৮১ সালে কালিম্পং-এ জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২,৬৮৩ মতন। মনে করা হয়, এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধির সময়কাল ছিল ১৮৭২ থেকে ১৮৯১ সালের মধ্যে।

চা চাষ ছাড়াও সিঙ্কোনা, আলু, এলাচ এবং কমলালেবুর চাষের সঙ্গে পরিচিতি হল দার্জিলিং-এর। উন্নয়নের হাওয়া বওয়ানোর জন্য রাস্তা এবং রেল সম্প্রসারণের কাজ শুরু হল জোরকদমে। অর্থাৎ ঘুরেফিরে জঙ্গলের পরিমাণ কমতে শুরু হবার ট্র্যাডিশন ভালোরকম বহাল থাকল। একটা সময় শাল গাছের ঘন জঙ্গল লক্ষ্য করা যেত কার্শিয়ং জেলাতে। কিন্তু শাল গাছ নিধন এমনই দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করল যে দেখা গেল, ৫ ফুটের ওপর সকল শাল গাছ উধাও হয়ে গিয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ সাহেবদের হাত ধরেই শুকনা থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত তৈরি হল রেল লাইন। সঙ্গে নগরায়ন, একের পর এক ফ্যাক্টরি নির্মাণ, কৃষিকাজের জন্য জমি বিস্তারের কারণে কমে আসতে শুরু করল জঙ্গলের পরিমাণ।

১৯৯২-৯৩ সালে ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া একটি সমীক্ষা চালায়। তার আগে ১৯৭৪ সালে হাই ফরেস্ট এরিয়া বা ঘন জঙ্গলপূর্ণ এলাকা যেমন সিঙ্গালিলা এবং টংলু-তে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। ১৯৮১-৮৩ সালের মধ্যে দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এর মধ্যে একটি সমীক্ষা চালায় ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। তবে ১৯৯২-৯৩-এর সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দার্জিলিং-এর ঘন জঙ্গলপূর্ণ এলাকা রয়েছে মাত্র ১২০৪ স্কোয়ার কিমি। অর্থাৎ দার্জিলিং-এর ভূমিভাগের ৩৮.২৩%। এই পুরো সার্ভে করতে সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দফতর কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজটি করেছে।

যথেচ্ছ জঙ্গল সাফের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে বন্য প্রাণীরা। তাদের অস্তিত্ব আজ খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। পর্যটকরা টিকিট কেটে ঘুরে আসেন দার্জিলিং হিমালয়ান জু, যার সাবেকি নাম পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক। সেখানে দেখা মেলে পান্ডা, স্নো লেপার্ড সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। এখানেই জানিয়ে রাখাটা প্রয়োজন যে, জঙ্গলের পরিসর কমার কারণে দার্জিলিং-এর চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলে যে সকল প্রাণীর দেখা আপনারা পেয়ে থাকেন, তাদের প্রত্যেকের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন। ভেবে দেখুন, মানুষের অর্থলোভ দিন দিন কোন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে! প্রকৃতিকে নিজের মতন যথেচ্ছ ব্যবহার শুধু দার্জিলিং-এর জঙ্গলের ওপরেই প্রভাব ফেলে নি, বরং এই সকল প্রাণীদের সংখ্যাও বিপজ্জনকভাবে কমিয়ে এনেছে। আর তাদের দেখার জন্যই আবার টাকা খরচ করে দেখতে আসছেন পর্যটকরা।


যথেচ্ছ জঙ্গল সাফের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে বন্য প্রাণীরা। তাদের অস্তিত্ব আজ খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।

দার্জিলিং ভালো নেই। ভালো নেই, তার কারণ আজ দিন দিন পর্যটকদের পায়ের চাপ পড়ছে পাহাড়ের মাটিতে। যত বেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে, ততই ট্যুরিজমের সম্ভাবনা আরও জোরদার হচ্ছে। কাতারে কাতারে গাড়ি, হাজারে হাজারে মানুষ, শয়ে শয়ে হোটেল আর নতুন নতুন বিল্ডিং-এর কনস্ট্রাকশন। প্রকৃতির অবক্ষয় মানে আবহাওয়ার পরিবর্তন। আবহাওয়ার পরিবর্তন মানে প্রাণীকূলের অস্তিত্বের ওপর পড়ছে প্রশ্নচিহ্ন। অবর্ণনীয় সুন্দর শৈল শহরের ক্ষত তৈরির যে ইতিহাস ব্রিটিশ সাহেবদের হাত ধরে তৈরি হয়েছিল, আজ সেই ক্ষত বিদ্যুৎগতিতে আরও বেশি চওড়া হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে দার্জিলিং-এর স্বাভাবিক সৌন্দর্য। প্রবল ধসপ্রবণ এলাকার মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছে দার্জিলিং। প্রকৃতির সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করে যতই উন্নয়নের জয়ধ্বজা উড়তে থাকুক, এই ক্ষত মলম দিয়ে সারবে না। কারণ সবার আগে সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকে। সেটা আমাদের পক্ষে যত তাড়াতাড়ি বোঝা সম্ভব, তত তাড়াতাড়ি সেটা আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে দার্জিলিং-এর জন্য।


ঋতিঙ্কর বসু


তথ্যসূত্রঃ A Case Study of Colonial Darjeeling – Tapas Debnath

Forest Resources of Darjeeling District (Forest Survey of India-1997)

Google


লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় সংবাদকর্মী। নেশা লেখালিখি, সিনেমা এবং প্রকৃতি। বনেপাহাড়ের পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক।

59 views0 comments
2 e paa_edited.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page