top of page

হাতি-বন্ধু: মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতে দিশা দেখাচ্ছে অসমে

..

সারা দেশ জুড়েই বাড়তে থাকা জনসংখ্যা ও একই সাথে বনজঙ্গল কমে আসার সাথে সাথে বন্যপ্রাণী ও মানুষের সংঘাত উত্তোরত্তর বেড়ে চলেছে। এর মধ্যেই অসমে অভিনব কিছু পরিবেশবান্ধব সমাধান খুঁজে পেয়েছে হাতি-বন্ধু নামে স্থানীয় মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠা একটি পরিবেশবান্ধব সংগঠন যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিনোদ দুলু বড়া। তাদের উদ্যোগ হাতি-মানুষ সংঘাত একেবারে মিটিয়ে ফেলতে এতটাই সফল হয়েছে যে, তাদের কথা উঠে এসেছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানেও। এবার হাতি-বন্ধু ও দুলু বড়াকে নিয়ে বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য কলম ধরলেন অসমের বিশিষ্ট গবেষক, অধ্যাপক ও IUCN এর সদস্য ড. সঞ্জীব কুমার বরকাকতি



নেপিয়ার ঘাসের বনে হাতিরা।  ছবি: হাতি-বন্ধু
নেপিয়ার ঘাসের বনে হাতিরা। ছবি: হাতি-বন্ধু

আসামে মানুষ-হাতি সংঘাত একটি গুরুতর সমস্যা এখন, কারণ এই রাজ্যে ক্রমবর্ধমান বন জঙ্গল উজাড় হয়ে যাবার  ফলে হাতিদের বাসস্থান কমে যাচ্ছে, যার ফলে তারা মানব বসতিতে প্রবেশ করছে এবং গুরুতর সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে । অনেক মানুষ এই সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। হাতিরাও মানুষের প্রতিশোধমূলক হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। প্রাণহানি ও সম্পত্তির অনবরত ক্ষতির ফলে এই সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তবে খুব কম মানুষই এর সমাধান খোঁজার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে বিনোদ দুলু বড়ার নাম করতেই হবে, যিনি মানুষের মধ্যে ‘দুলু’ নামে জনপ্রিয়। তিনি এই সমস্যার সমাধানের জন্য পথপ্রদর্শক উদ্যোগ নিয়েছেন। এতটাই যে, আমি তাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জন্য IUCN-এর শিক্ষা ও যোগাযোগ কমিশনের (Commission on Education and Communication)  আঞ্চলিক পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছি। প্রসঙ্গত, আমি নিজেও IUCN শিক্ষা ও যোগাযোগ কমিশনের একজন সদস্য।

দুলুর পরিবেশ সংরক্ষণে দায়বদ্ধতা ও সচেতনতার প্রসারে দীর্ঘদিনের কাজ  এই অঞ্চলে, বিশেষ করে মধ্য আসামে, IUCN CEC-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি আসামের গ্রামীণ এলাকার জনগণকে সংগঠিত করে মানুষ ও প্রাণীদের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালের আগে দুলুর কাজ করা এলাকাগুলোতে বন্য হাতির পাল ফসল ও মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস করত। কিন্তু এখন ওই অঞ্চলের লোকালয়গুলি  মানুষ ও প্রাণীদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সাক্ষী। এটি সম্ভব হয়েছে কারণ দুলু ওই এলাকার কৃষিভিত্তিক জনগোষ্ঠীকে তার পরিকল্পিত কর্মপদ্ধতিতে অংশ নিতে ভালোভাবে বোঝাতে ও প্রশিক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

লেখক ও  তাঁর স্ত্রী মধুমিতার সাথে সপরিবারে দুলু বড়া
লেখক ও তাঁর স্ত্রী মধুমিতার সাথে সপরিবারে দুলু বড়া

দুলু চপানলায় বাস করেন, যা মধ্য আসামের নগাঁও শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে। শৈশব থেকেই তিনি দেখেছেন কিভাবে হাতিরা গ্রামের ধানক্ষেত ও এমনকি বাড়িঘরও ধ্বংস করত। চপানলার আশপাশে হাতির খাদ্য অনুসন্ধানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে ছিল শুকাঞ্জুরি, বরবাড়ি, জোলাহ, বামুনি, খোলিয়ামারি, পামবস্তি, ভোরাগুড়ি, পদুমনি, সামসোকি, বরদৈ, বালিজুরি, কোঠালগুড়ি, ননৈ, মুত্যাপাহাড় এবং রাবারবাগান। শালবাড়ি সংরক্ষিত অরণ্যের কাছের গ্রামগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যেমন দরিগুজি, চেকোনি, গোহাইঁগাঁও, হাতবাগান, দলোনি, বালিবাট, নিজরাপথ। দুলু এই গ্রামবাসীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন এবং সমাধানের পথ খুঁজতে থাকেন। তার পরিকল্পনা ছিল হাতিদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা গ্রামবাসীদের ধানক্ষেতে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকে।

হাতি-বন্ধুর কর্মক্ষেত্র ।  ছবি: হাতি-বন্ধু।
হাতি-বন্ধুর কর্মক্ষেত্র । ছবি: হাতি-বন্ধু।

দুলু গ্রামবাসীদের বোঝান যে হাতিদের প্রতি আক্রমণাত্মক না হয়ে বরং তাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা উচিত। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আদিবাসী গ্রামবাসীরা তার সঙ্গে হাতির জন্য ঘাস ও ধান চাষ করতে যোগ দেন, যাতে খাদ্যের সন্ধানে আসা হাতিরা গ্রাম ও তাদের ধানক্ষেতে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকে। দুলু যে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে বন্য হাতিদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে বনের  বাফার জমিতে ঘাস ও ধানের চাষ। রংহাং গ্রামের বাসিন্দারা ২০০ বিঘা জমি দান করেন, যা তারা আগে নিজেদের ধান চাষের জন্য ব্যবহার করতেন। বর্তমানে দুলুর নেতৃত্বাধীন একটি দল এই জমির ১৮৬ বিঘায় শালি ধান বা শীতকালীন ধানের চাষ করে। এই দলে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা অন্তর্ভুক্ত। তারা কাছের পাহাড়ের ঢালে নেপিয়ার ঘাস ও ঝাড়ূ ঘাসও রোপণ করেন, কারণ হাতিরা এই ধরনের ঘাস খেতে পছন্দ করে। এর পাশাপাশি, সুয়াং সংরক্ষিত অরণ্যের সীমানায় ১৫,০০০ কলাগাছের চারা রোপণ করা হয়। এই সমস্ত উদ্যোগ আশ্চর্যজনকভাবে সফল হয়। খুব শিগগিরই দেখা যায় যে হাতিরা সেই ঘাসভূমি ও ধানক্ষেতেই সীমাবদ্ধ থাকে, যা গ্রামবাসীরা বিশেষভাবে তাদের জন্য চাষ করেছিলেন।

হাতিদের জন্য চাষ করা ধান
হাতিদের জন্য চাষ করা ধান

দুলু ও গ্রামবাসীদের এই অভিনব কাজ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রখ্যাত সমাজসেবী প্রদীপ ভূঞা। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে, প্রদীপ ভূঞার সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘হাতি-বন্ধু’ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। তারা হাতির বসবাসের এলাকা চিহ্নিত করে, যাতে কাজগুলো আরও পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা যায়। প্রদীপ ভূঞা বৃহত্তর পরিসরে নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন করেন। দুলুকে সংস্থার ফিল্ড ডিরেক্টর করা হয়, আর তার স্ত্রী মেঘনা হাজরিকা তার সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন। মেঘনা দুলুর সঙ্গে সবসময় থাকেন এবং ধানক্ষেতের কাছের একটি গাছবাড়িতে বসবাস করেন, যাতে এই ফসল যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।

দুলুর নেতৃত্বে ‘হাতি-বন্ধু’ সংস্থা সফলভাবে মানুষ-প্রাণী সংঘাত প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। তার ‘হাতি-বন্ধু’ সংস্থাটি কাছের গ্রামের স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে  রংহাং হাতিখুলি গ্রামে ৪০০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস, ঝাড়ু ঘাস, তোরা গাছ, হাতি আপেল, কাঁঠাল গাছ, কুম্ভীর, কাকো বাঁশ ইত্যাদি রোপণ করেছে। ২০১৮ সাল থেকে গত ৬ বছর ধরে দুলু ও তার দল বন্য হাতিদের খাদ্যের জন্য রংহাং হাতিখুলি গ্রামে ২০০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে আসছে। এখন এটি ৩৫টি বন্য হাতি ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।

রাতের অন্ধকারে হাতিরা ওদের জন্য চাষ করা ধান খেতে এসেছে
রাতের অন্ধকারে হাতিরা ওদের জন্য চাষ করা ধান খেতে এসেছে

 

এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে হাতির মানুষের ওপর হামলা বা হত্যার ঘটনা ঘটছে না। বন্য প্রাণীরা আর আগের মতো খাবারের সন্ধানে মানুষের বসতিতে প্রবেশও করে না। তাদের আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তারা আর গ্রামবাসীদের প্রতি আক্রমণাত্মক নয়। তারা গ্রামবাসীদের ধানক্ষেতে প্রবেশ করে না। কেবল তাদের জন্য নির্দিষ্টভাবে চাষ করা ধানই খায়। ফসল কাটার পর তারা ধানক্ষেতে প্রবেশ করে কেবল খড় খাওয়ার জন্য। এমনকি তারা মাঝে মাঝে গ্রামে ঢুকলেও আগের মতো কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালায় না।

৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখে আমি দুলু ও মেঘনার সঙ্গে রংহাং হাতিখুলি এলাকা পরিদর্শন করি। আমরা দেখি ঘুরে ঘুরে কিভাবে আদিবাসী নারী-পুরুষ পাহাড়ের ঢালে নেপিয়ার ঘাসের চারা রোপণ করছিলেন। আমরা নেপিয়ার ঘাসের ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাই, যার অর্ধেক অংশ হাতিরা ততদিনে খেয়ে ফেলেছিল। এটি খুব উল্লেখযোগ্য  যে এই ঘাস হাতিরা খেয়ে ফেলার পরেও পুনরায় বেড়ে ওঠে। ফলে একটি নেপিয়ার গাছ কয়েক মাস ধরে হাতিদের খাদ্য সরবরাহ করতে পারে। এটি একটি চমৎকার টেকসই বন্দোবস্ত।


নেপিয়ার ঘাস
নেপিয়ার ঘাস

 

প্রায় ২৫০টি হাতি বাগসের এলাকা থেকে রংহাং হাতিখুলি এলাকায় আসে, আর অন্য ৮০টি হাতি হোজাই, ডোবোকা ইত্যাদি এলাকা থেকে আসে তাদের জন্য চাষ করা ঘাস ও ধান খেতে। এছাড়া, রংহাং হাতিখুলি এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ৩৫টি হাতি রয়েছে। ফলে, মোট ৩৬৫টি হাতির দেখভাল করে ‘হাতি-বন্ধু’। এটি একটি অনন্য ব্যাপার, যা সম্ভবত বিশ্বের অন্য কোথাও আগে শোনা যায়নি।

দুলু অনেক হাতির শাবক, ভালুক ছানা, হরিণ, চিতা বাঘ, চিতা বিড়াল, সারাউ, গন্ধগোকুল, স্লো লরিস, চীনা বনরুই ইত্যাদিরও উদ্ধার করেছেন।  বিভিন্ন প্রজাতির সাপেরও উদ্ধার করেছেন, যার মধ্যে ২৮টি কিং কোবরা উদ্ধার করে গভীর জঙ্গলে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। মোট ২৭০০টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাণীরা সেখানে এতটাই স্বাধীনভাবে বসবাস করে যে, সেই এলাকায় দুটি হাতির শাবকের জন্ম হয়েছে।


দুলু বড়ার সাথে হাতিবন্ধুতে লেখক
দুলু বড়ার সাথে হাতিবন্ধুতে লেখক

 এছাড়াও, দুলুর দল গোলাঘাট জেলার আশেপাশের থুরামুখ, রংজান, মুরফুলোনি, চারিয়াখাত, বেবেজিয়া, লিপসন, অভয়পুর, টেঙ্গানি, মোরঙ্গি, লেতেকুজান, পঙ্কা, কাঠকোটিয়া, চন্দনপুর, ময়নাপাড়া, জুরিয়াডালং, ফুলঙ্গনি, বিজুলি, বাপচং এবং বরগাঁও ইত্যাদি গ্রামেও কাজ করেছে। তাদের কার্যক্রমের পরিধি এখন ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। দুলু তার স্ত্রী মেঘনার সঙ্গে মিলে এই গ্রামবাসীদের বন্যপ্রাণীদের জন্য উপযোগী একটি বাফার জোন তৈরি করতে উৎসাহিত করেছেন। এমনকি তাদের আড়াই বছরের ছেলে গণেশীশও তাদের সঙ্গে এই অভিযানে সঙ্গে থাকে; সে তাদের সঙ্গে গাছের উপর তৈরি বাড়িতেও বসবাস করে।

 

নেপিয়ার ঘাস রোপণ করা হচ্ছে দুলুর নেতৃত্বে
নেপিয়ার ঘাস রোপণ করা হচ্ছে দুলুর নেতৃত্বে

দুলু এমন একটি পরিবেশবান্ধব  জীবনযাত্রার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন এখানে , যাতে গ্রামবাসীরা বন্যপ্রাণীদের আক্রমণের শিকার না হয়ে নিরাপদে বসবাস করছে। একজন মাটির কাছাকাছি থাকা পরিবেশ সংরক্ষণবাদী হিসেবে, তিনি মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। হাতিদের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে   হিংস্র প্রতিরোধের প্রবণতা কমিয়েছেন। তিনি নিয়মিতভাবে মানুষজনের সঙ্গে  ওঠাবসা করেন।  বিশেষ করে নারী, যুবসমাজ, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তার এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলটি এখন বন্যপ্রাণী উদ্ধারের জন্য একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কিছু গ্রামবাসী বুনন শিল্পের মতো পেশায় লাভজনকভাবে নিযুক্ত হয়েছে। ‘হাতি-বন্ধু’ একটি বুনন কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যেখানে পোশাক তৈরি করা হয়।

 

হাতি-বন্ধুর বস্ত্র বয়ন কেন্দ্র
হাতি-বন্ধুর বস্ত্র বয়ন কেন্দ্র

দুলু বন্যপ্রাণীদের জন্য বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে প্রায় ৬০০ জনকে যুক্ত করেছেন। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ৫,০০০ জন মানুষের মধ্যে এইসব নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ৩৫ জন শিকারি শিকার ছেড়ে দিয়ে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আগে নাগাঁও জেলায় ৪০,০০০ বিঘা এবং গোলাঘাট জেলায় ৭০,০০০ বিঘা জমি বন্যপ্রাণীদের খাদ্যের সন্ধানে আসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু এখন হাতির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা বাফার জোনের চারণভূমি ও ধানক্ষেতে হাতিরা খাদ্য সংগ্রহ করায় গ্রামবাসী ও তাদের ধানক্ষেত বন্য হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

 

এছাড়া, দুলুর দলের প্রচেষ্টায় হাতিদের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর হাত থেকেও রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগে ঝুলে পড়া বিদ্যুৎ লাইনের কারণে ৩৪টি হাতির মৃত্যু হয়েছিল। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারগুলি বাঁশের খুঁটির সাহায্যে উঁচু করা হয়েছে, ফলে প্রাণীগুলো নিয়মিত মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছে।

 

দুলু তার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজকে  আন্দোলিত করেছেন। তার কার্যক্রম মানুষকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উৎসাহিত করেছে। অনেক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রায় ২০০টি স্কুল ও কলেজের তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলো তাকে প্রশংসায় ভূষিত করেছে। বালিপাড়া ফাউন্ডেশন, স্যাংচুয়ারি এশিয়া, ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস, আর্থ ডে নেটওয়ার্ক, স্টার, স্যাংচুয়ারি টাইগার ডিফেন্ডার ইত্যাদি সংস্থাগুলি তাকে সম্মানিত করেছে। লন্ডনভিত্তিক "এলিফ্যান্ট ফ্যামিলি" তাকে মানুষ ও হাতির সহাবস্থান নিয়ে  প্রচারের জন্য পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছে।

 

‘হাতি-বন্ধু’ গঠিত হওয়ার পর, সরকারী সংস্থাগুলি, বিশেষ করে বন বিভাগ, দুলুর দলের সহায়তায় এগিয়ে আসে। নাগাঁওয়ের বিভাগীয় বন দফতর তাদের উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করেছে। চাপানালা বনাঞ্চল বিভাগের কর্মীরাও তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। ‘হাতি-বন্ধু’র সাফল্যের গল্প এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে, আসামের বনমন্ত্রীও রাজ্যের বিধানসভার অধিবেশনে তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।


প্রধানমন্ত্রীর You Tube চ্যানেলে হাতি-বন্ধুর কথা

 

২০২২ সালে ‘হাতি-বন্ধু’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়, যা এই উদ্যোগের গল্প তুলে ধরে। এই চলচ্চিত্রটি মুম্বাই, কলকাতা, লন্ডন, মেলবোর্নসহ বিভিন্ন শহরে প্রদর্শিত হয়েছে। এটি ভারতে একটি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে।


 ছবি: লেখক ও হাতি-বন্ধু।

 

লেখক পরিচিতি:  অর্থশাস্ত্রের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সঞ্জীব কুমার বরকাকতি শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়নমূলক বিষয়, সাহিত্য সমালোচনা, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে প্রায় পঁয়ষট্টিটি বই রচনা করেছেন। তিনি ‘সোসাইটি ফর শ্রীমন্ত শঙ্করদেব’ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সভাপতি, যা মধ্যযুগের বহুমুখী প্রতিভা শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের আদর্শ প্রচারের জন্য কাজ করে।

 তিনি আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা IUCN-এর কমিশন অন এডুকেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন-এর সদস্য। এছাড়াও, তিনি ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস (ICOMOS)-এর সঙ্গে যুক্ত এবং এর আন্তর্জাতিক অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কমিটি ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক পর্যটন কমিটি-র একজন বিশেষজ্ঞ সদস্য।






Commenti


474525369_1074216644505260_833710345513391369_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page