top of page

Wildlife Tourism: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ

  • ..
  • Oct 27
  • 10 min read

ভারতে ৫৮ টি টাইগার রিজার্ভ রয়েছে । রয়েছে আরো বেশ কিছু সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ন্যাশানাল পার্ক ও অভয়ারণ্য। তাদের মধ্যে বেশ কিছু অরণ্যে পর্যটকরা নিয়মিত যান বন্যপ্রাণী দেখতে ও অরণ্য ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে। কিন্তু একটা অংশের মানুষ ও কর্তৃপক্ষের একটা অংশ মনে করে এতে বন্যপ্রাণী ও অরণ্য সংরক্ষণ বিঘ্নিত হয়। বিভিন্ন মাধ্যমে এই নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। কিন্তু প্রকৃত তথ্য ও বাস্তব চিত্র কী বলছে? এই ধরনের পর্যটনে ক্ষতি হচ্ছে বনের না তা আসলে প্রকারান্তরে সংরক্ষণের কাজকেই সাহায্য করছে? এই ব্যবস্থাকে কিভাবে আরো মসৃন ও পরিবেশ বান্ধব করে তোলা যাবে? আলোচনা করছেন বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ধর্মেন্দ্র খান্ডাল




কানহায় সাফারি
কানহায় সাফারি


আমরা প্রায়ই শুনি যে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই বিতর্কে প্রবেশ করার আগে আমাদের নিজেদেরকে একটি প্রশ্ন করা উচিত: বন্যপ্রাণী পর্যটন কি সত্যিই নিয়ন্ত্রণহীন?দেশের বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণাঞ্চলগুলি প্রতিটি রাজ্যের বনদপ্তর এবং একটি সর্বভারতীয় উচ্চতর ব্যবস্থা — ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস — এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। তাই দেখা যায়, ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ শব্দটি কিছুটা হালকা ভাবেই যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়। বন আইন এবং বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন, ১৯৭২ অনুযায়ী বন ও বন্যপ্রাণীর অঞ্চলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মাবলি রয়েছে। তাই তথাকথিত ‘নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন’-এর প্রসঙ্গে যখন কথা বলা হয়, বাস্তব কিন্তু অন্যরকম গল্প বলে।


সেটা কেমন?


১. পর্যটনের ক্ষেত্র সীমিত। জাতীয় উদ্যানগুলির খুব অল্প অংশেই পর্যটনের অনুমতি দেওয়া হয়। টাইগার রিজার্ভের কোর এলাকার মাত্র ২০ শতাংশ পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত, বাকি ৮০ শতাংশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ এলাকা।

২. নির্দিষ্ট সময়সীমা। পর্যটন প্রতিদিন মাত্র ৬–৭ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা ২৪ ঘণ্টার একদিনের মাত্র ২৫ শতাংশ সময়।

৩. ঋতুভিত্তিক বন্ধ। বর্ষাকালে তিন মাস জাতীয় উদ্যানগুলো পর্যটনের জন্য বন্ধ থাকে। ফলে বছরে শুধু ৭৫ শতাংশ সময় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

৪. নির্দিষ্ট পথনির্দেশ। উদ্যানে পর্যটন শুধুমাত্র নির্ধারিত পথে হয়, এবং সেই পথ থেকে বিচ্যুতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৫. নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার। কেবলমাত্র নিবন্ধিত গাড়িমালিক, চালক ও গাইডরাই উদ্যানে পর্যটক নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। ব্যক্তিগত গাড়ি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এবং নিয়ম ভঙ্গ করলে নিবন্ধন বাতিল হতে পারে।

৬. গাড়ির সংখ্যা সীমিত। প্রতিটি পথে কতগুলো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে, তা ১৯৯০-এর দশকের পুরনো ‘carrying capacity’ মডেলের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত, যা মূলত আফ্রিকার জাতীয় উদ্যানগুলির জন্য তৈরি হয়েছিল। এত বছর পেরিয়েও ভারতে পর্যটনের বাস্তবিক প্রভাব নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি।

৭. বাণিজ্যিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ। জাতীয় উদ্যানের সীমানার মধ্যে অন্য কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।


এই তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে ভারতের জাতীয় উদ্যানগুলিতে পর্যটন অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত — কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণহীন/বেলাগাম নয়।


তাহলে প্রশ্ন উঠছে, কর্তৃপক্ষ ও সংবাদমাধ্যমর একটা অংশ কেন “বেলাগাম বা যথেচ্ছ পর্যটন”-এর এই বয়ান বা ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে?


'Narrative' এর বিশ্লেষণ


এই ধারণাটি আসলে বনের ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা ঢাকার এক সুবিধাজনক অজুহাত বলেই মনে হয়। পর্যটনকেই সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করে উদ্যানে প্রকৃত সংরক্ষণজনিত গভীর সমস্যাগুলো—যেমন বনভূমি ধ্বংস, স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সংঘাত, শিকার প্রাণীর (prey base) সংখ্যা হ্রাস, স্থানীয় মানুষের দ্বার প্রতিশোধমূলক বন্যপ্রাণি হত্যা ও পাচার— এসব থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া হয়।সরকারের পক্ষ থেকেও এটি এক ধরণের চতুর কৌশল—জনমতকে একটি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং নিরাপদ ইস্যুর দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া।

অধিকাংশ সময় যাঁরা ‘বেলাগাম পর্যটন’-এর ধুঁয়ো তোলেন, তাঁরা সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি—যাঁরা বন্যপ্রাণী উপভোগের ক্ষেত্রে নিজেদের জন্য একচেটিয়া অধিকার বজায় রাখতে চান।

এই বয়ানকে সমর্থন করার জন্য যে সাধারণ ছবি ব্যবহার করা হয়—একটি বাঘের চারপাশে পর্যটক ভরা জিপসি গাড়ি ঘিরে রয়েছে—তা আসল বাস্তবকে উপেক্ষা করে একটা ধারনা নির্মানের চেষ্টা। কারণ, বাঘ কখনও বাঁধা থাকা জন্তু নয়। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঘ সংরক্ষণবিদ প্রয়াত ফতেহ সিং রাঠোর যেমন বলেছিলেন:“যদি বাঘ বিরক্ত হয়, সে সোজা চলে যাবে। বাঘ রাজা; দর্শনার্থীরা কেবল অতিথি।”


মি. রাঠোর বিশ্বাস করতেন যে পর্যটকদের উপস্থিতি বাঘের কোনো ক্ষতি করে না। বরং সুশৃঙ্খল বা নিয়ন্ত্রিত পর্যটন বন্যপ্রাণীর নজরদারি ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।গাইড ও চালকেরা এক অর্থে স্ব-নিয়োজিত প্রহরী হিসেবে কাজ করেন, যা পর্যটন এলাকার বাঘদের নিরাপত্তায় সহায়তা করে।

রানথম্ভোরের তথ্যেও দেখা গেছে, পর্যটন-অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি বাঘশাবকের জন্ম হয়, অথচ অ-পর্যটন অঞ্চলে থাকা বাঘদের অনেকেই পাচার বা আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে হারিয়ে যায়।



ফতে সিং রাঠোর।   ছবি:  FLICKR/KOSHI KOSHI CC BY 2.0
ফতে সিং রাঠোর। ছবি: FLICKR/KOSHI KOSHI CC BY 2.0




বন্যপ্রাণী পর্যটনের গুরুত্ব


সরকারের পরই সংরক্ষণে সবচেয়ে ইতিবাচক স্বার্থ জড়িত থাকে পর্যটক ও বন্যপ্রাণী পর্যটন-নির্ভর ব্যবসায়ীদের। কারণ তাদের অস্তিত্বই এই সংরক্ষণের উপর নির্ভরশীল। তাই পর্যটনকে দোষারোপ না করে, এটিকে সংরক্ষণের একটি কার্যকর উপকরণ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে।

সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন পারে—

• জনগণকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষিত করতে,

• বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কার্যক্রম ও স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের উপায় করতে,

• দর্শনার্থীদের—বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি আজীবন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে।

পর্যটন নীতির পুনর্বিবেচনা

ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন উদ্যানের আদলে—“জনগণের উপভোগ ও কল্যাণের জন্য।” কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন সেই মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে এসেছি। বর্তমান নীতিগুলি এখন এমন এক দৃষ্টিভঙ্গিতে তৈরি হচ্ছে যেখানে সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জনগণকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এর ফলে অনেক সময় এমন সব নিয়ম তৈরি হচ্ছে যাতে না দর্শনার্থীর অভিজ্ঞতা ভাল হচ্ছে, না বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য তা কোন উপকার করছে।

বান্ধবগড়ে বিখ্যাত টালা জোনে সাফারি শুরুর আগে
বান্ধবগড়ে বিখ্যাত টালা জোনে সাফারি শুরুর আগে

সঠিক ভারসাম্য আনতে আমাদের প্রয়োজন—

১. জাতীয় উদ্যানের স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ।উদ্যানগুলি কি শুধু আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য, নাকি সেগুলির উদ্দেশ্য জনগণকে অরণ্য সম্বন্ধে শিক্ষিত, সচেতন করা ও সংরক্ষণের জন্য সঠিক উপায়ে অর্থ সমাগমের ব্যবস্থা করাও হওয়া উচিত?

২. প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ।পর্যটন নীতি তৈরি করতে হবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে এবং সংরক্ষণবিদ, স্থানীয় সম্প্রদায় ও ট্যুর অপারেটরসহ সমস্ত অংশীদারের সহযোগিতায়।

৩. নীতিগত অসঙ্গতি দূর করা।কিছু উদ্যানে ধর্মীয় যাত্রা বা তীর্থযাত্রার মতো অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড যথেচ্ছ চলছে যার সাথে অরণ্য পর্যটনের কোন সম্বন্ধ নেই। এসব বর্তমান নীতির দ্বিচারিতা স্পষ্ট করে। পর্যটকদের জন্য ন্যায্য নীতি ও যথাযোগ্য সংরক্ষণ নীতি নিশ্চিত করতে এই অসঙ্গতিগুলো সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।


নতুন করে শুরু করা যাক


পর্যটন নিরুৎসাহিত করার বদলে, উদ্যানে কর্মরত কর্তৃপক্ষের উচিত বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের যাতে আনন্দ দায়ক অভিজ্ঞতা হয় সেই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা । এর মধ্যে থাকতে পারে যেমন, বাঘের আশেপাশে যানবাহনের আচরণ নিয়ন্ত্রণে আনা—কিন্তু নির্বিচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়। লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেখানে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে অর্থবহ ও আন্তরিক সংযোগ স্থাপন করতে পারবে এবং সার্বিক সংরক্ষণ-বান্ধব সংস্কৃতি বিকশিত হবে।

কারণ,বন সংরক্ষণ কেবল বন্যপ্রাণী রক্ষার বিষয় নয়—এটি মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটা প্রক্রিয়াও বটে। দায়িত্বশীল পর্যটনকে প্রসারের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও ভারতের অরণ্যের যাবতীয় বিস্ময় ও সৌন্দর্য থেকে প্রেরণা ও অভিজ্ঞতা লাভ করবে—যা ছিল আমাদের জাতীয় উদ্যানগুলির প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।


অরণ্যের বৈচিত্র্য কিন্তু অনমনীয় নীতি: one-size-fits-all


ভারতের জাতীয় উদ্যানগুলো ভৌগোলিক গঠন, জীববৈচিত্র্য এবং পার্শ্ববর্তী বাফার অঞ্চলের দিক থেকে একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিছু উদ্যানে ঘন অরণ্য রয়েছে, আবার কিছু উদ্যান উন্মুক্ত তৃণভূমি। কোথাও পাখি ও জলাভূমির সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য, আবার কোথাও প্রজাতির সংখ্যা তুলনামূলক কম। বাফার অঞ্চলও ভিন্ন—কিছু উদ্যানে চারপাশে পর্যাপ্ত বনভূমি রয়েছে, আবার কিছু উদ্যানে বন সরাসরি মানব বসতির লাগোয়া।



এই বৈচিত্র্যের পরেও নীতিনির্ধারণে প্রায়ই “একই মাপ সবার জন্য” ধারা প্রয়োগ করা হয়। উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়নের এই অমিলের ফলে আদালতের নির্দেশ অনেক সময় ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয় এবং ফলাফল হয় উল্টো। প্রতীকি কিছু বিধিনিষেধ বাস্তব সংরক্ষণে কোনো সুফল না দিয়ে বরং বন দপ্তরের সম্পদেরই অপচয় ঘটায়। অপিকল্পিত উপায়ে তৈরি নীতিগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও ক্ষতি করে এবং স্থায়ী ও পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের সম্ভাবনাকেও নষ্ট করে।


পড়ুন লেখকের অন্য রচনা: বাল্মীক থাপারের সঙ্গে দুই দশক



কেন পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ

পর্যটনের মূল উদ্দেশ্য সহজ—সংরক্ষণ, শিক্ষা ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য আনা।ভারতের জাতীয় উদ্যান ও বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যগুলির দ্বৈত ভূমিকা রয়েছে—বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণ করা এবং একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতনতা ও শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া।

তবে বিদ্যমান নীতিগুলি এই লক্ষ্যগুলির মধ্যে সঠিকভাবে সামঞ্জস্য আনতে পারছে না। সংরক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন একে অপরের পরিপূরক হওয়া উচিত, কিন্তু যৌথ সমন্বয়ী কৌশলের অভাবে প্রায়ই এই দুটি লক্ষ্য নিয়ে পারস্পরিক বিবাদ, বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এর ফলে সংরক্ষণের প্রয়াস যেমন দুর্বল হয়, অন্যদিকে দায়িত্বশীল পর্যটনের মাধ্যমে যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ও শিক্ষা-সচেতনতামূলক সুফল পাওয়া যেত, তারও বিঘ্ন ঘটে।



পর্যটনের প্রভাব

পর্যটন সংরক্ষিত অঞ্চল এবং তার আশেপাশের পরিবেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলে। তাই সতর্ক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি এই ক্ষেত্রে।

১. পর্যটন এলাকার ভেতরের প্রভাব

আফ্রিকার উন্মুক্ত সাভানার মতো নয়, ভারতের বন—যাকে আমরা ‘জঙ্গল’ বলি—ঘন বৃক্ষাচ্ছন্ন এবং প্রাণীদের জন্য প্রচুর আড়ালে থাকার জায়গা দেয়। ভারতীয় প্রাণীরা আত্মরক্ষার জন্য গোপন থাকা ও ছদ্মবেশের কৌশলে অভ্যস্ত। বিরক্ত হলে তারা অনেক সময় সরে যায়, কিন্তু অনেক সময় গাড়ির পাশ দিয়েই চলে যায় বা একাধিক সাফারি গাড়ির মাঝ দিয়ে নিজেই পথ করে নেয়।

বনে যানবাহনের ভিড়কে প্রায়ই গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু যা বলা হয় বাস্তবে তা অনেকটা অতিরঞ্জিত। আফ্রিকার খোলা প্রান্তরে গাড়ির চলাচল কম দৃশ্যমান, কিন্তু ভারতের ঘন বনে তা বিশৃঙ্খল বলে মনে হয়। তবে যখন অস্থির পর্যটকরা বাঘ দেখতে গিয়ে শব্দ করে, তখনই প্রকৃত সমস্যা তৈরি হয়।


বাঘ দেখার ভিড়। রাজা চলেছে নিজের ছন্দে।
বাঘ দেখার ভিড়। রাজা চলেছে নিজের ছন্দে।


৫০–১০০ মিটার দূরত্বে থাকা বা গাড়িগুলির মধ্যে বেশি ব্যবধান রাখার যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়, তা ভারতের বনে বাস্তবে প্রায়ই অকার্যকর। এত ঘন বনাঞ্চলে ৫০ মিটার দূরে থাকলে অনেক সময় কোন প্রাণীকে দেখা সম্ভবই হয় না। তাছাড়া, যদি বাঘ নিজে এগিয়ে আসে, তখন গাড়ির পক্ষে পিছিয়ে যাওয়া বা দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে ওই একমাত্র নির্ধারিত পথে।

ভারতের অনেক পর্যটন অঞ্চলই ছোট—কোথাও মাত্র ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সীমিত এলাকায় নদী বা খোলা জমির কারণে বাঘ দেখা যায় এমন জায়গা খুব কম। সেখানে ১০০–৫০০ মিটার ব্যবধান রক্ষা করা বাস্তবসম্মত নয়।অতএব, এই নির্দেশনাগুলি সদুদ্দেশ্যে বানানো হলেও, ভারতের বনের প্রকৃতি ও প্রাণীর আচরণ বিবেচনায় সেগুলি কার্যকর নয়। বরং গাড়ির সংখ্যা সীমিত করা ও নিয়মগুলি যথাযথ যাতে মানা হয় সেটা দেখা বেশি দরকারি অবাস্তব অনেক নিয়ম তৈরি করার থেকে।


বর্তমান পর্যটন ব্যবস্থাপনা কৌশল

ভারতের জাতীয় উদ্যানগুলিতে সাফারি গাড়ির এক জায়গায় ভিড় করা কমাতে তিনটি প্রধান পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়—

১. জোনিং: পর্যটন রুট বা অঞ্চল ভাগ করে দেওয়া হয়। যেমন, রানথম্ভোরে ১০টি জোন রয়েছে।২. গাড়ির সংখ্যার সীমা: প্রতিটি জোনে নির্দিষ্ট সংখ্যক গাড়ি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় (যেমন রণথোম্বরে ৭টি জিপসি ও ৭টি ক্যান্টার)।৩. সীমিত এলাকায় পর্যটন: পার্কের মোট এলাকার সাধারণত ২০% এরও কম অংশ পর্যটনের জন্য খোলা থাকে, বাকিটা নিষিদ্ধ অঞ্চল। রানথম্ভোরে মাত্র ১৬% অংশ পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত।

এই ব্যবস্থা কাগজে কার্যকর মনে হলেও বাস্তবে সমস্যার আর একটি বড় কারণ—ভিআইপি পর্যটক ও অননুমোদিত সরকারি যানবাহনের প্রবেশ। এ ধরনের গাড়ি পূর্বনির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে উদ্যানে ঢোকে, ফলে সমগ্র ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়।

এছাড়া পার্কের পর্যটন এলাকার হিসাবও প্রায়ই বিভ্রান্তিকরভাবে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ অনেক সময় জোনের বাইরের প্রান্তগুলো যুক্ত করে এক বড় বহুভুজ এঁকে ১৬% দেখায়, কিন্তু বাস্তবে ঘন বনের অনেক জায়গায় প্রবেশই সম্ভব নয়। ফলে এই দাবি অত্যন্ত বিতর্কিত।


পর্যটন ও সংরক্ষণের ভারসাম্য

উদ্যানের ছোট অংশ পর্যটনের জন্য খোলা রাখলে কিছু সুবিধা থাকলেও, তাতে সীমিত জায়গায় অতিরিক্ত ভিড় হয়। এতে বন্যপ্রাণীর মানসিক চাপ বাড়ে ও দর্শনার্থীর অভিজ্ঞতা খারাপ হয়।সমাধান হতে পারে—পর্যটন এলাকা কিছুটা সম্প্রসারণ করা এবং তার উপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।তবে ভিআইপি পর্যটন ও অননুমোদিত গাড়ি প্রবেশ বন্ধ না হলে এই ভারসাম্য রক্ষা অসম্ভব।


২. পর্যটন এলাকার বাইরের প্রভাব

উদ্যান সংলগ্ন অঞ্চলে হোটেল, রিসর্ট ও পরিবহন ব্যবস্থা পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত জল ব্যবহার, কংক্রিটের নির্মাণ, বর্জ্য ও আলোকদূষণ ইত্যাদি ইকোসিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদিও ইকোলজিক্যালি সেনসিটিভ জোন (ESZ) নির্দেশিকা এই সমস্যা মোকাবিলায় তৈরি হয়েছে, বাস্তবে এর প্রয়োগ অত্যন্ত দুর্বল।

তাই পর্যটন রিসর্টগুলির আশেপাশের এলাকা সাধারণত পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশগতভাবে ভালো অবস্থায় থাকে- এই ধারনা ঠিক নয়।


রণথোম্বর ন্যাশানাল পার্ক
রণথোম্বর ন্যাশানাল পার্ক

সমস্যা: অকার্যকর ইকোলজিক্যালি সেনসিটিভ জোন (ESZ) নীতি

বড় বড় হোটেল ও দামি রিসর্টগুলির বিস্তৃত কার্যক্রমই পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ, সে অরণ্যের থেকে তাদের দূরত্ব যতই হোক না কেন।বর্তমান নিয়ম—যেমন কোথাও কোথাও উদ্যানে ১ কিলোমিটারের মধ্যে হোটেল নিষিদ্ধ করা— শুধু এটুকু একদিকে অপর্যাপ্ত, অন্যদিকে বরং ক্ষতিকরও বটে।

রানথম্ভোরে দেখা যায়, ১ কিলোমিটারের বাইরে বিশাল হোটেল তৈরি হচ্ছে, যেখানে বিয়ে, পার্টি ইত্যাদি আয়োজন চলে—যা ইকো-ট্যুরিজমের ভাবনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অপরদিকে বনের কাছাকাছি কোন ছোট ইকো-লজ বা হোমস্টে অযথা বিধিনিষেধের মুখে পড়ে।

আসলে, ১ কিলোমিটার নিষেধাজ্ঞা কেবল প্রতীকী, আসল সমস্যাগুলো তা সমাধান করে না। ১০ কিলোমিটার দূরে থেকেও পর্যটক সহজেই বনে পৌঁছাতে পারেন।বড় বড় রিসর্ট, হোটেলগুলির ব্যবসার জন্য উচ্চ শব্দ, আলো ও ডি.জের ব্যবহার যথেচ্ছ হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে। এতে অরণ্য এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাই অনেক সময় যে বলা হয় গ্রামবাসীরা আজকাল বেশি ডি.জে ব্যবহার করে ও তাদের কিছু না বলে হোটেল/রিসর্টকেই সহজে দায়ী করা হয়- সেই ধারনা হয়ত ঠিক নয়।

আর একটা যে বড় সমস্যা নিয়ে তত আলোচনা হয় না তা হল অরণ্যের সংলগ্ন এলাকায় যথেচ্ছ কৃষিকাজের বিস্তার ও সেই কারণে পরিবেশের বড় ক্ষতি। পার্কের সীমানার পাশে আধুনিক কৃষিকাজ ও সেখানে ব্যবহৃত—কীটনাশক, প্লাস্টিক মালচিং, কাঁটাতার ও বৈদ্যুতিক বেড়া—পরিবেশ ও বন্যপ্রাণের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এর তুলনায় বনের কাছে থাকা ছোট ইকো-লজগুলো অনেক কম ক্ষতি করে এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা পরিবেশবান্ধব বিকল্প হতে পারে।


সমাধান: হোটেলের সংখ্যা, আকার ও নকশা নিয়ন্ত্রণ


দূরত্বভিত্তিক নিষেধাজ্ঞার বদলে, হোটেলের সংখ্যা, আকার ও ধরন নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এমনভাবে পরিকল্পনা করা দরকার যাতে গোটা ব্যবস্থাটা পরিবেশ-বান্ধব হয়ে ওঠে এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সাথে সাযুজ্যতে থাকে।

প্রস্তাবিত ব্যবস্থা এমন হতে পারে:

ইকো-ফ্রেন্ডলি নির্মাণ: কংক্রিট ছাদ (RCC) নিষিদ্ধ ও প্রাকৃতিক উপকরণের ব্যবহার বাধ্যতামূলক যা পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

সবুজ স্থান রক্ষা: হোটেল এলাকার একটি নির্দিষ্ট শতাংশ খোলা সবুজ জায়গা রাখতে হবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে।

হোটেলের ক্ষমতা সীমা: নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি কক্ষ বা পর্যটক ধারণক্ষমতা নিষিদ্ধ করা।

ছোট হোমস্টে উৎসাহ: স্থানীয়দের ছোট ইকো-লজ ও হোমস্টে চালাতে উৎসাহ দেওয়া যা স্থানীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতির সাথে মানানসই হবে।

পরিবেশবান্ধব এইসব ছোট ছোট থাকার জায়গা তাই যেমন বড় বড় হোটেল রিসর্টের বিকল্প হতে পারে, তেমন পরিবেশের পক্ষেও ভাল হবে। আকার ও নকশার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কর্তৃপক্ষ পর্যটনকে যেমন স্থানীয় পরিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে , তেমন তা অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, অরণ্যে সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানলাভ ও স্থানীয় মানুষের আয়ের সহায়ক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।


মূল সুপারিশসমূহ

১. হোটেলের কক্ষ সীমা ও নকশা নির্দেশিকা

  • ইকো-সেন্সিটিভ জোনে (ESZ) প্রতিটি হোটেলের কক্ষসংখ্যার উপর সীমা নির্ধারণ করা।

  • ভবনের উচ্চতা সীমিত রাখা এবং পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য নকশা বাধ্যতামূলক করা।

  • স্থানীয় সম্প্রদায়কে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত করতে ছোট ইকো-ট্যুরিজম ইউনিট ও হোমস্টে গড়ে তোলাকে উৎসাহিত করা।

২. ভূমির ন্যূনতম ব্যবহার ও প্রাকৃতিক আবাসভূমি সৃষ্টি

  • নির্মাণের জন্য ভূমির পরিমাণ ন্যূনতম হতে হবে তা বাধ্যতামূলক করা।

  • জমির ৫%–এর বেশি নির্মাণ করা যাবে না; অবশিষ্ট অংশে দেশজ উদ্ভিদ প্রজাতি রোপণ করে প্রাকৃতিক আবাসভূমি তৈরি করতে হবে, যা বাফার জোন অরণ্যকেই পুষ্ট করবে।


    ৩. পুনর্নবীকরনযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার

    • মোট জ্বালানি চাহিদার অন্তত ২৫% নবায়নযোগ্য উৎস থেকে পূরণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৪. জল সংরক্ষণ

  • প্রতিটি লজিং এ বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও জল পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।


৫. আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ

  • উজ্জ্বল আলো ও উচ্চ শব্দ, যা বন্যপ্রাণের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করে, তা নিষিদ্ধ করতে হবে।

  • বিবাহ অনুষ্ঠান বা পার্টিতে সংগীতের ডেসিবেল মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; নিয়ম লঙ্ঘনকারীর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

৬. বন্যপ্রাণ চলাচল করিডর

  • সম্পত্তির চারপাশের বেড়ার নকশা এমন হতে হবে যাতে বন্যপ্রাণ অবাধে চলাচল করতে পারে।

৭. স্থানীয় সম্প্রদায়কে নিয়ে উন্নয়ন

  • বনসীমার বাইরে নির্মাণে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত নয়। স্থানীয় মানুষদের পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা অনুসরণ সাপেক্ষে বাড়ি, স্কুল ও ব্যবসা স্থাপনের অধিকার বজায় রাখতে হবে।

৮. নতুন হোটেলের আকারের সীমা

  • ইকো-সেন্সিটিভ জোনে ২০টির বেশি কক্ষবিশিষ্ট নতুন হোটেল নির্মাণ নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে বড় পার্টি বা বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন সীমিত থাকে।


জাতীয় উদ্যানে ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ উন্নয়ন


৯. পর্যটন অঞ্চলে উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার

  • উদ্যানের বৃহৎ অংশ পর্যটনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত নয়। উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার বাইরের মানুষের পর্যবেক্ষণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। অতীত অভিজ্ঞতা—যেমন সারিস্কা ও রানথম্ভোরে বাঘের চোরাশিকার সংক্রান্ত ঘটনাকে অস্বীকার করা —এমন স্বাধীন তদারকির প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছে।


১০. নিয়মিত প্রতিবেদন

  • প্রতি ছয় মাস অন্তর উদ্যানের অবস্থা, ক্যামেরা ট্র্যাপ ও পর্যটকদের গাড়ি থেকে প্রাপ্ত বাঘের জনসংখ্যার অনুমান তথ্যসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন রূপে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে।


১১.  স্বচ্ছ পেট্রলিং

  • সব বনে পেট্রলিং এর গাড়ি জিপিএস-এ সজ্জিত করতে হবে যাতে টহল দেবার কাজ নজরে রাখা যায়।

  • সরকারি যানবাহন যেগুলো ভিআইপি পর্যটনে ব্যবহৃত হয়, তাদের ব্যবহারের বিস্তারিত রেকর্ড—যাত্রীদের নাম ও বাজেটসহ—সংরক্ষণ ও প্রকাশ করতে হবে।

  • “ভিআইপি” শব্দটির একটি আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণ ও প্রকাশ করতে হবে।


১২. পর্যটন রেঞ্জার নিয়োগ

  • সাফারির সময়কালে পর্যটকদের চলাচল পর্যবেক্ষণ ও বন্যপ্রাণের অসুবিধা কমাতে বিশেষ পর্যটন রেঞ্জার নিয়োগ করতে হবে।


১৩. কঠোর দর্শনার্থী নির্দেশিকা

  • উদ্যান প্রবেশদ্বার ও পর্যটক যানবাহনে সুস্পষ্ট নিয়মাবলি লেখা থাকতে হবে।

  • নিয়ম ভঙ্গকারীদের উপর জরিমানা আরোপ এবং বারবার অপরাধ করলে এক বছরের জন্য পার্কে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে, যেমন বিমান সংস্থায় “নো-ফ্লাই লিস্ট”-এর মতো ব্যবস্থা আছে।

১৪. মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

  • পার্কের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে বন্যপ্রাণের কাছে গিয়ে বিপজ্জনকভাবে “সেলফি” তোলার প্রবণতা বন্ধ হয়।

  • দর্শনার্থীদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সঠিক ক্যামেরা ব্যবহার করতে উৎসাহিত করতে হবে।


এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা সম্ভব হবে, যাতে বন্যপ্রাণ ও স্থানীয় সম্প্রদায়—উভয়েই উপকৃত হয়।

পর্যটন তিনটি মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণ করে—অরণ্য সংরক্ষণ, জীবিকা এবং সচেতনতামূলক শিক্ষা। স্থানীয় জনগণ এর থেকে উপকৃত হন এবং বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বন্যপ্রাণী পর্যটন। তবুও, একে প্রায়ই অযৌক্তিকভাবে সমালোচনা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত অপ্রতিহতভাবে বিস্তৃত ধর্মীয় পর্যটন, অন্যান্য কার্যকলাপ ও তার সম্ভাব্য পরিবেশগত প্রভাবের দিকে নজর দেওয়া, পর্যটনকে নয়—যা মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

জোর দেওয়া উচিত স্থানীয় মানুষকে ইকো-ট্যুরিজমে যুক্ত করার ওপর, এবং তাই সরকারের উচিত ছোট ইকো-ট্যুরিজম ইউনিট, হোম-স্টে ও ফার্ম/গ্রামীণ পর্যটনকে উৎসাহিত করা।



লেখক পরিচিতি: ধর্মেন্দ্র খান্ডাল একজন বিশিষ্ট ভারতীয় পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকর্মী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজস্থানের রণথম্ভোর টাইগার রিজার্ভে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে কাজ করছেন এবং Tiger Watch নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বৈজ্ঞানিক সমন্বয়কারী (Conservation Biologist)। তাঁর কাজ মূলত অবৈধ শিকার, পাচার ও মানব-বন্যপ্রাণ সংঘাত নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত। Caracal নিয়ে প্রামান্য একটি গ্রন্থের লেখক যৌথভাবে ঈশান ধরের সাথে।




Comments


86060474-00b1-415d-8c11-9c4471c9c5e7.png
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page