top of page
  • ..

কোথায় পাড়ি? দারিংবাড়ি!

ভূগোলের পাঠ নিতে ওড়িশার দাড়িংবাড়ি। চেনা-জানা ঘোরার বাইরে প্রকৃতিকে নতুন করে আবিষ্কার ভৌগোলিকের চোখে। একসাথে সরস্বতী পুজো। অমরকন্টকের স্মৃতি। কলমে ড: শারদা মন্ডল।




কয়েকবছর ধরেই উড়িষ্যার দার্জিলিং, দারিংবাড়ি নামটা শুনছিলাম।গত বছর আমাদের প্রাক্তন ছাত্র প্রদীপ এসে বলল, বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে ও ফিল্ডে গিয়েছিল দারিংবাড়ি।জায়গাটার যা বর্ণনা ও দিল, ঠিক করলাম এবারে যেতেই হবে।দলবল তো কম নয়।পঁয়ত্রিশ জন ছাত্রছাত্রী।সঙ্গে আমরা মিলে মোট ঊনচল্লিশ।হাজারো চিন্তাভাবনা, ঝক্কি শেষে একটা দিন নির্দিষ্ট করা গেল।জানুয়ারির শেষে।


দারিংবাড়ির অদ্ভুত বাড়ি

হাওড়া স্টেশন থেকে রাতে ট্রেন।সকালবেলা ব্রহ্মপুর।সেখান থেকে প্রাতরাশ সেরে পাহাড়ি রাস্তায় ঘন্টাচারেকের পথ।আমি এর আগে বিশাখাপত্তনম, আরাকুঘুরেছি, তাই পূর্বঘাট পর্বতমালা আমার একেবারে অচেনা নয়।কিন্তু এদিকের ভূদৃশ্য বেশ কিছুটা আলাদা। রাস্তা কিছুটা ভালো, কিছুটা আবার খুবই এবড়ো খেবড়ো।তবে দুপাশের অপরূপ সবুজে চোখ জুড়িয়ে যায়। ব্রহ্মপুর থেকে পুরো রাস্তায় একটা বিশেষ ব্যাপার নজরে পড়ছিল। সেটা হল প্রতিটি বসতিতে বাড়ির অদ্ভুত নক্সা। আমরা দারিংবাড়ি পৌঁছলাম দুপুর দুটোয়।অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে হোটেলের সামনে আমাদের বাসটা দাঁড়ালো, সেই হোটেলের সামনের বিল্ডিংটাও ঐ একই নক্সায় তৈরি।নক্সাটা হল বাড়িগুলি আয়তাকার। অনুপাতে প্রস্থ খুব কম আর লম্বায় খুব বেশি। বাড়িগুলোর সামনের অংশ হল আয়তক্ষেত্রের প্রস্থ। এখানে একটি দরজাও সরু জানলা থাকে।লম্বায় টানা দেওয়াল এবং সেই দেওয়ালে কোনো জানলা নেই।নেই মানে নেই।আমি এর আগে কখনো এমন বাড়ি দেখিনি।দরজার সোজাসুজি করিডোর উলটোদিকে মুখোমুখি আর একটি দরজা পর্যন্ত।বাকি অংশে পাশাপাশি ছোট ছোট ঘর।আর কোনো দিক দিয়ে বাইরের আলোবাতাস ঢোকার পথ নেই।হোটেলের সামনের দিকের বিল্ডিংটা এমন হলেও পিছনের নতুন বিল্ডিং যেখানে আমরা ছিলাম, সেটার প্ল‍্যান আধুনিক।আমাদের জানলা দিয়ে পাহাড় দেখা যাচ্ছিল।


বয়ে চলেছে ডুলুরি নদী ছবি: লেখক



কাজশুরু

হাতে সময় কম, জায়গাটা চিনতে হবে, সার্ভের কাজ শুরু করতে হবে।একটাই ঢালু রাস্তা নেমে গেছে।দুপাশে কয়েকটি হোটেল, দোকান।পাকা দোকান কিছু আছে।বেশিরভাগ দোকান বেড়া, খড় আর টালি দিয়ে তৈরি।আনাজ, খাবার জিনিস খোলা রাস্তার ধারে মাটিতে বসে বিক্রি হচ্ছে।আদিবাসী মহিলারা নানা রঙের, নানা রকমের বীজ আর ডালের পসরা সাজিয়ে বসেছেন, বেশিরভাগই অচেনা। ।বেশ কিছুটা নেমে চারমাথার মোড় দেখতে পেলাম।এবারে সামনে বেশ ফাঁকা।চারিদিকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে।পূর্বদিকে ঢালুপথ গড়িয়ে গেছে এলাকার একমাত্র বাসডিপোর দিকে।খবর পেলাম ওদিকেই বনবিভাগ ও ব্লকের অফিস আছে।আজ আর যাওয়ার সময় নেই।পশ্চিমের আকাশে লাল ফাগের হোলি।লালচে-সোনালি রোদের আভায় লালমাটি আর বাদামি ঘাস জ্বলজ্বল করছে।দূরে পাহাড়ের রং লালে, ধূসরে মাখামাখি।আমার প্রিয় রং নীল।লাল নয়, তবু মাটি থেকে আকাশ সবার এই রং খেলা দেখে কেমন নেশা ধরে যায়।কী কাজে এসেছি ভুলে যেতে ইচ্ছে করে।


মশলার প্যাকেট তৈরি করছেন আদিবাসী মহিলারা ছবি: লেখক

চারমাথা থেকে পশ্চিমদিকে রাস্তা উঁচু।ওদিকে সামনেই উৎকল সরকারের ট্যুরিস্ট বাংলো। লোহার গেটের আড়ালে বড় সাজানো ক্যাম্পাস।দেখে খুব লোভ হচ্ছিল একবার ঢোকার জন্য।কিন্তু হল না।মনের কথা মনেই রাখা ভাল, কারণ কাজে এসেছি, আর কাজের নাইকো শেষ।

দুদিকে দেখতে দেখতে মন থেকে যেটা খুঁজছিলাম, সেটা দেখতে পেলাম।একটি বাড়ির চত্ত্বরে তিনটি ছোট, মাঝারি সরস্বতী প্রতিমা।আসলে চারমাস আগে যখন অনেক হিসেব কষে দিন ঠিক করা হয়েছিল, তখন কারোরই খেয়াল হয়নি, মাঝে সরস্বতী পুজো পড়ে গেছে। ছেলেমেয়েরা আজ কাজে বেরোনোর সময়ে ইচ্ছে জানিয়েছিল যে আজ যদি কোথাও সরস্বতী পুজোর মন্ডপ চোখে পড়ে তো ওরা কাজের ফাঁকে আগামীকাল পুজোয় অঞ্জলি দিয়ে আসবে। আমাদের আপত্তি তো কিছু নেই।কিন্তু আজ এত ঘুরেও মন্ডপ খুঁজে পাওয়া গেল না।এটা তো বাংলা নয় ওড়িশা।তায় আদিবাসী অঞ্চল।এঁরা সকলে খৃষ্টান।অনাদিবাসীরাও থাকেন।প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে, মানে পুজো হয়, বাড়িতে হয়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার মতো যোগাযোগ কারোর সঙ্গে নেই, থাকলেও চল্লিশজন মিলে যাওয়া সম্ভব হত না। চকিত সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরাই হোটেলের ঘরে পুজো করব।প্রতিমা থাকলেও কেনা সম্ভব নয়।অচেনা জায়গায় ভাসান দেব কোথায়? আমার ব্যাগে মা সরস্বতীর ছবি ছিল।ঠিক হল ঐ ছবিতেই পুজো হবে। আমাদের পুজোর উপকরণ কেনার জন্য আমরা দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।তখনই নজরে পড়ল যে বাসনকোসন আর মণিহারী জিনিসের দোকানদার সব উত্তর ভারতীয়।স্থানীয় মানুষ স্থানীয় ফসল, ফল, মুড়ি, মোয়া এসব বিক্রিবাটা করছেন।আর বাকি দোকানের মালিক ওড়িয়া, কিন্তু আশপাশের জেলা থেকে এসেছেন। কেউই এখানকার ভূমিপুত্র নন।হোটেলব্যবসা যাঁরা করছেন তাঁরা বেশিরভাগই গঞ্জাম জেলার মানুষ।ব্রহ্মপুরের সমতল থেকে পাহাড়ি পথে দারিং বাড়ি ওঠার সময়ে আমরা গঞ্জাম জেলা পেরিয়ে এসেছি।তবে কি ঐ অদ্ভুত বাড়ি গঞ্জাম জেলার বৈশিষ্ট্য? একটা জিনিস স্পষ্ট বুঝলাম।দারিং বাড়ি ওড়িশার পর্যটন মানচিত্রে এসেছে ২০১৫ সালে। এখন ২০২০।ব্যবসাবাণিজ্য, নতুন যানবাহন, নানান কারণে এই আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি জনপদে অনাদিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। পথেঘাটে প্রচুর আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে।সদ্যে উন্নয়নের ধাক্কা লেগেছে,পরিপক্ক হতে সময় লাগবে।অনেক খুঁজেও ফুল পাওয়া গেলনা।গাছের ফুলও যে বিকিকিনির জিনিস, সেটা এখনও স্থানীয় মানুষের ধারণায় আসেনি।

আদিবাসীদের শস্য রাখার ঝুড়ি ছবি: লেখক


ঘুম ভাঙলো বেশ ভোরে। শীতকাল, এখনো ভালো করে আলো ফোটেনি।আজকের সার্ভের জন্য দরকারি কাগজপত্র ফাইলে গুছিয়ে নিলাম।কুয়াশা ভেজা কাচের জানলা দিয়ে সকালের নরম রোদ ঢুকে অগ্নিশার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে। শাল গায়ে জড়িয়ে দুজনে করিডোরের কমন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।নীচে ভ্রমণ সংস্থার রন্ধনকর্মীরা অতি দ্রুত প্রাতরাশ তৈরি করছেন। এত বছর ধরে দেখছি, এঁরা যে কখন ঘুমান, কখন ওঠেন হিসেব করা মুস্কিল। সবই ঘড়ির কাঁটা ধরে চলে। পুজোর ঘরে ফুল সাজানো শেষ।ছাদের টবে সাকুল্যে পাঁচটি ফুল পাওয়া গেছে।হালকা কমলা রঙের বড় পঞ্চজবাটি চেয়ারে ঠাকুরের সামনে মাঝখানে। সবচেয়ে লোভনীয় বাক্স ভর্তি লাড্ডু।পঞ্চপ্রদীপের আগুনের আভা সকলের চোখে।সঙ্গে ঘন্টাধ্বনি বলছে আমরা সবাই এক।এই অনুরণন ঢেউ হয়ে ভেসে যাক পাহাড়ে জঙ্গলে, ছড়িয়ে পড়ুক আসমুদ্র হিমাচলে।ফুল তো নেই, মোবাইল দেখে অগ্নিশার উচ্চারণের সাথেই সকলে চোখ বুজে অঞ্জলি দিলাম নিজেদের ভক্তি। প্রসাদ বিতরণ সারা হল।এবার ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে দৌড়।ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ হাউসহোল্ড সার্ভে করবে হোটেলের চারপাশের বাড়িগুলিতে।দূরে যাবে না।একটা ছোট দল আর ইন্সট্রুমেন্টের ট্রলি নিয়ে রওনা হলাম চারমাথা মোড়ের দিকে।বেরোনোর মুখে দেখি দুপুরের খাবারের যোগাড় চলছে।আজ আর মাছের ঝোল নয়।আমাদের আবদারে মেনুবদল।খিচুড়ি, লাবড়া, ধোঁকার ডালনা, চাটনি, পায়েস।মনটা বেশ খুশি খুশি লাগছে।


দরকারি কাজ সেরে হোটেলে যখন ফিরলাম তখন সন্ধ্যা নেমেছে। হোটেলের উল্টোদিকে একটা হনুমান মন্দির আছে। সেখান থেকে ঘন্টাধ্বনি শুনে লোহার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। একজন মাত্র পূজারী আরতি করছেন, আর জনমনিষ্যি বলতে আমরা এই ক'জন। গর্ভগৃহে টিমটিমে হলুদ বাল্ব জ্বলছে। কামিনীর গন্ধ আসছে নাকে। পাঁচিলের মধ্যে ধারে ধারে ফুলগাছ, পাতাবাহার। মাথার ওপরে শুক্লাপঞ্চমীর আধখানা চাঁদ। আকাশে মেঘ নেই, চারিপাশে বিজলি আলো যথেষ্ট নেই। প্রায়ান্ধকার নিরিবিলি এই মন্দিরটিতে মনটা ভারি শান্ত লাগছিল। আরতি শেষ হল। আমাদের ঘরেও যে সরস্বতী মা বসে আছেন, তাঁকেও আরতি করতে হবে।

নিভৃতে ছবি: লেখক


তৃতীয়পর্ব


ভোরে রান্নাঘরে দধিকর্মার আর্জি পেশ করলাম। মঞ্জুরও হল। এবারে সবাই মিলে ঘড়ির সঙ্গে যুদ্ধে নামলাম। কাজ শেষ করেই ছোড়েঙ্গে। আবার দারিংবাড়ির সাইট সিইং সবটা দেখার পণটাও নেহি তোড়েঙ্গে।

হোটেলের সামনে থেকে ঢালু পায়ে চলা পথ গড়িয়ে গিয়েছে বাসরাস্তার দিকে। বেশি খোঁজাখুঁজি করে মাথা গরম করার দরকার কি? এ পথে যথেষ্ট ঢাল আছে। ক্লাইনোমিটার সার্ভে ভালোই হবে।হৈ-হৈ করে সকলে কাজে নেমে পড়লাম। এরপর একটা উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে হবে, যেখানে প্ল্যান্ট ডাইভার্সিটি ম্যাপিং করা যায়।বাসরাস্তায় পৌঁছে কয়েকজন বলল, ওপারে একটা জায়গা আছে যেখানে ঐ কাজ করা যেতে পারে। গতকাল হাউসহোল্ড সার্ভে করতে করতে ওরা ওখানে পৌঁছে গিয়েছিল।রাস্তা পেরিয়ে বিরাট মাঠ, আর বিশাল দুটো অশ্বত্থগাছ।আরও এগোই।ওপাশে তো একটা মন্দির মনে হচ্ছে।কল্পনা করিনি দু'মিনিট পরে কোন বিস্ময়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি।জানিনা পাঠক বিস্মিত হবেন কিনা।জিওমরফোলজির বই-এর পাতা জ্যান্ত হতে দেখলে ভৌগোলিকের হৃদস্পন্দন নিজের বশে থাকে না।


দারিংবাড়ির আবিষ্কার

অশ্বথগাছ পেরিয়ে মন্দিরে ঢোকার পায়ে চলা পথ।পথের ওপারে এবড়ো খেবড়ো একটা উপযুক্ত জায়গা পাওয়া গেল, যেখানে প্ল্যান্ট ডাইভার্সিটির কাজ করা সম্ভব।যে স্পটে কাজ করতে চাইছি, তার ডান সীমানা দিয়ে সোজা চলে গেছে উঁচুমাটি আর পাথর দিয়ে তৈরি বাঁধ।আমাদের সামনে বাঁধের গা ঘেঁষে সিমেন্টের দেওয়াল তোলা আছে।ডানদিকে সিঁড়ি নেমে গেছে।মন্দিরের মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম সিঁড়ি দিয়ে নেমে মহিলাদের স্নানের জায়গা।পুকুর তো নেই এখানে।আমার সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে।কথা বলে তা নিরসন হল।মাটির তলা থেকে সারা বছর জল ওঠে।একজন ছাত্রকে বলি জিজ্ঞেস করো তো, ওটা কোন ঠাকুরের মন্দির।যা ভেবেছি তাই।দেবাদিদেব শিবশম্ভুর ভজনা করা হয় এখানে।একজনকে বলি চট করে দেখে এসো তো মূর্তি পুজো হচ্ছে, নাকি শিবলিঙ্গ।সে এসে বলে মূর্তি নয় ম্যাডাম।আমি হাসি।এ জিনিস প্রথম দেখেছিলাম প্রায় কুড়ি বছর আগে মধ্য ভারতে।মহাকাল পর্বতের অমরকন্টকে।আসলে একটি প্রাকৃতিক কুন্ড, বা ঝর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা।ভূগর্ভস্থ জলস্তর আগ্নেয় আর রূপান্তরিত শিলার ফাটল দিয়ে চুঁইয়ে বেরিয়ে আসছে।সিঁড়ি দিয়ে নেমে দেখে এলাম জলের লেভেল।এখন শীতকাল।জলস্তর নেমে যাওয়ার কথা।এখনো এতটা জল মানে জলস্তর ভূপৃষ্ঠের খুবই কাছে।হুমম,বুঝলাম।জলস্তর কাছে বলে বেশি ফিল্টার হবার সুযোগ পায় না।সেজন্যই এসে থেকে সবার পেটের গোলমাল হয়েছে।এবারে শিবঠাকুরকে দেখে আসি।সাদামাটা মন্দিরটির পিছনে একটি বেশ বড় চাতাল।দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলে সিমেন্ট বাঁধানো বড় ঘর।

শিবমন্দির ছবি: লেখক

একসাথে অনেকের বসা সম্ভব।তার একপাশে মেঝেতেই জটাজূট শিবঠাকুর বসে আছেন নন্দীকে পাশে নিয়ে।তবে সেখানে পুজো হয় না।বাঁদিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে পথ।পূজারী উঠে এসে জিজ্ঞেস করলেন স্নান করে এসেছি কিনা।অবশ্যই স্নান করে এসেছি। 'তা হ্যানে আপণ আসুন' পূজারী ডাকছেন।আমি আর অগ্নিশা পা বাড়ালাম।কিন্তু সৌরভ যাচ্ছেনা কেন? হায় ভগবান, ও চান করে আসেনি।ব্যস।তিনজনের যাওয়াই আটকে গেল।কারণ পূজারী রাজি হলেন না।হয়তো ভেবেছেন এক পরিবারে এক যাত্রায় পৃথক ফল হয়না।মনে মনে হাসি, পূজারী ঠিকই বুঝেছেন, আমরা এক পরিবারের তো বটেই।মাঠেপ্রান্তরে, মানুষের অন্তরে বাহিরে খুঁজে বেড়াচ্ছি ভূগোলের জ্ঞান ক্ষ্যাপার মতো, ভৌগোলিক পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে।পূজারী একটা জিনিস বোঝেননি।আমরা ফুলবেলপাতায় পুজো দিতে আসিনি।শিবলিঙ্গ স্পর্শ করে দেখতে চেয়েছিলাম ঊদবেধী শিলা কিনা।জ্ঞানের অন্বেষণই আমাদের প্রণাম।পূর্বঘাট পাহাড়েরশ্রেণী আসলেতো পাহাড় নয়।সৃষ্টির প্রথম আগ্নেয় শিলায় পৃথিবীর বুকে তৈরি হয়েছিল মালভূমি।সেই আদি মালভূমি টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে আফ্রিকায়, দক্ষিণ আমেরিকায়, অস্ট্রেলিয়ায়, ভারতে, আন্টার্কটিকায়।ভারতের দুই উপকূলে পূর্বঘাট আর পশ্চিমঘাট হল সেই আদিম মালভূমির দুই ধার।আজ দুধারের মাঝখানের অংশটা ক্ষয় হয়ে নিচু হয়ে গেছে।সৃষ্টির সেই অশান্তদিনে পাথর ফেটে গিয়েছি কোথাও কোথাও।সেই ফাটল দিয়ে উঠে আসছিল পৃথিবীর বুকের ভিতরে লুকোনো গরম তরল ম্যাগমা।পশ্চিমে আরবসাগরের দিকে কাছাকাছি অনেক ফাটল দিয়ে পাতলা লাভা বেরিয়ে পড়ল বাইরে।তৈরি করল মালভূমি আর একটা পরত - কালো ব্যাসল্টপাথরের।ভারতের বাকি মালভূমির ফাটলের ম্যাগমা কিন্তু ছিল ভারি ও সান্দ্র, পশ্চিমা লাভার মত পাতলা ছিলনা।তাই তারা বেরোতে পারেনি।মাটির গভীরেই জমে গেছে।তাদেরই আজ বলে ঊদবেধী শিলা।উল্লম্ব আগ্নেয় উদবেধী শিলাকে বলে ডাইক।কোটি কোটি বছরের ক্ষয়ের ফলে অনেক ডাইক আজ বেরিয়ে এসেছে।অমরকন্টকে শুনেছিলাম ও স্থানটি শিবক্ষেত্র।কারণ ওখানকার মন্দিরের কোনো শিবই মানুষ প্রতিষ্ঠা করেনি, সবই পাতাল থেকে উঠেছে।শহুরে মন নিয়ে আমরা বিশ্বাস করিনি।আর যত নদীর উৎস সব মন্দিরে।এটাও বিশ্বাস করিনি।পরে দেখলাম সব মন্দিরেই শিবলিঙ্গ ভেজা, ওপর থেকে নয়, নিচের দিক থেকে।স্থানীয় মানুষ বলেন বর্ষাকালে মা গঙ্গা দেখা করতে আসেন।ভলকে ভলকে বেরিয়ে আসে জল।ঐ ডাইকগুলিই যে শিবজ্ঞানে পূজিত হচ্ছে সহস্র বছর ধরে।মানুষের সাধ্য কি পাতাল থেকে ঐ দেবতাকে উপড়ে এনে অন্য কোথাও প্রতিষ্ঠা করার।বর্ষাকালে ভূগর্ভস্থ জল ঐ ফাটল দিয়ে ওভারফ্লো হয়।যে জলের উৎস জানা নেই, ধর্মভীরু মানুষের কাছে তা গঙ্গা জল ছাড়া কী?লোকবিশ্বাসকেও মর্যাদা দিতে হয়।তার মধ্যে থাকতে পারে সত্য অনুষঙ্গ।এই কথাটা অমরকন্টকে জীবন একটা চড় মেরে শিখিয়েছিল।অমরকন্টকে এই প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোকে পৌরাণিক গল্পের মোড়কে, সঙ্গে দোকানবাজার বাহারি চটকের সাথে পরিবেশিত হয়।আর দারিংবাড়িতে অজান্তে অগোছালো হয়ে পড়ে আছে এখানে ওখানে।


চতুর্থ পর্ব

বাস চলল জনবসতির সীমানা ছাড়িয়ে, আর দারিংবাড়ির রূপরস আমাদের চোখে স্পষ্ট হতে শুরু করল।ঢেউ খেলানো কালো পিচের রাস্তা, দু'পাশে পাইনের বন।মাঝেমাঝে চা বাগান।ফাঁকেফাঁকে লালচে আগ্নেয় পাথরের টিলা।নিজের কলেজ জীবনের ফিল্ডের কথা মনে পড়ে।যেন দারিংবাড়ি নয়, পাঁচমারী; যেন পূর্বঘাট নয়, সাতপুরা; যেন আমি শিক্ষিকা নই, ছাত্রী।মনটা পালকের মতো হাল্কা লাগে।পাইনের পাতায় রোদের ঝিলমিল, আর পিছনের সিটগুলোতে চাপা খিলখিল, আড়াইদিনের কাজের চাপ সরে গিয়ে রঙিন প্রজাপতিরা ডানা মেলেছে।পাইনের বন শেষ, এবারে পর্ণমোচী গাছের সারি, কখনও ঘন, কোথাও বা একটু ফাঁকা ফাঁকা।সঙ্গে চলেছে দূরে, কাছে পাহাড়ের শ্রেণী।আন্দাজ সতেরো আঠেরো কিলোমিটার যাওয়ার পরে বাসটা পাকা রাস্তা ছেড়ে কাঁচা রাস্তায় উঠল, লালচে হলুদ ধুলো উড়িয়ে চলল নাচতে নাচতে।রাস্তা খুব খারাপ, সরুও।এত বড় বাস, কষ্ট করে চালাতে হচ্ছে।প্রায় এক কিলোমিটার এমন যাবার পর বাস থামল।কোমরটা যেন আরাম পেল।কিন্তু মনে ছিলনা আরাম হারাম হ্যায়।বাস থেমেছে আরাম দিতে নয়।এখান থেকে হাঁটতে হবে।মূলত উৎরাই , মাঝে মাঝে চড়াই, আর প্রায় দুশোর কাছাকাছি সিঁড়ি ভেঙে আমরা পৌঁছব মিদুবান্দা জলপ্রপাতের সামনে। অমরকন্টকের দুধধারা বা পাঁচমারীর বী-ফলসের মতো রাস্তা অতটা কঠিন নয়।তবে পাহাড়ি পথ, সমতল তো নয়।দম লাগে।যাওয়ার পথটুকু ছাড়া দুপাশে জঙ্গল।

অর্ধেক পথ নামার পর একটু জিরিয়ে নেবার জন্য পাথরের ওপর বসেছি, সায়ন এসে গাছের ডাল ভাঙা লাঠি হাতে ধরিয়ে দিল আমার।তাতে বাকি পথটা পার হতে বেশ সুবিধে হয়ে গেল।লাঠি ঠুকেঠুকে নামতে লাগলাম।এবারে পাশের নিচু খাদে জলের আওয়াজ শুনতে পেলাম, নদী এখনও দেখা দেয়নি।শেষ পর্যায়ে এসে নদীর জল দেখলাম, কিন্তু একি, নদীতে অনেক ভাত ভেসে যাচ্ছে।বড় বড় পাথরের বাঁক পেরিয়ে একটা গাছের গুঁড়ি লাল সিমেন্টে বাঁধানো, সিঁদুরমাখা। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সব পৌঁছে গেছে, মোবাইলে ছবি তুলছে। অন্য পর্যটকেরাও আছে।

দাড়িংবাড়ির প্রকৃতি ছবি: M KAR / CC BY-SA 4.0

ঘুরে পিছু ফিরতেই বাকরুদ্ধ হলাম। পাহাড়ের মাথা থেকে ঘন বনের মধ্য দিয়ে তিনটে ধাপে নেমে আসছে দুরন্ত নদী।জল পাথরে আছড়ে পড়ে কুয়াশা তৈরি করেছে।শীতকালে এত জল! বড় বড় পাথরের খাঁজে গভীর জলাশয়ের মতো তৈরি হয়েছে। শ্যাওলায় গাঢ় সবুজ।কিন্তু পিকনিক পার্টির চাপে চারিদিকে থার্মোকলের বাসন আর এঁটো শালপাতা ভাসছে।বুঝেছি, এই জন্য নদীতে অত ভাত ভেসে যাচ্ছিল। প্রকৃতির এই দান, যদি একটু পরিচ্ছন্ন রাখা যেত, ভালো হত। বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে ফিরতে শুরু করলাম।উঠতে সময় লাগবে আমার। জিরিয়ে নিতে হবে বারবার।সবগুলো স্পট ছুঁতে হবে, একথা ভুললে চলবে না।নামার সময়ে একটানে নেমে গেছি। অন্য দিকে তাকানোর মন ছিল না।এখন চারদিক দেখতে দেখতে উঠছি।পর্যটক বেশিরভাগই স্থানীয়।তবে বাঙালিও আছে।আদিবাসী মহিলারা কাঁচা হলুদ বিক্রি করছেন।এখানে হলুদের চাষ ভালো হয়। মিদুবান্দাকে পিছনে রেখে নেচে নেচে বাস চলল পরের গন্তব্যে।কিছুটা পরে পাকা রাস্তা ধরলাম। চার-পাঁচ কিলোমিটার যাওয়ার পরে, আবার বাঁদিকে লালধুলোয় ঢাকা পথ, তবে আগের বারের থেকে ঢাল কম, অনেকটা সোজা। একটু পরেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হাঁটা শুরু হল।এখানে পাহাড়ের গা রুক্ষ, গাছপালা কম, আর বিশাল বিশাল বোল্ডার। আচ্ছা সামনে নদী আছে তা হলে। বোলপুরের কাছে মামাভাগ্নে পাহাড়ের মতো বড় বড় পাথর রয়েছে ছড়িয়ে। বেশ খানিকটা হেঁটে দেখি সামনে এক বিরাট খোলা জায়গা। না কোনো মাটি নেই।তাই গাছও নেই।বিরাট এক প্রাকৃতিক মুক্ত পাথুরে চাতাল।মাঝে মাঝে হাতির মতো বড় বড় বোল্ডার।একটা জিনিস নজর কাড়ল, পাথরের রং এখানে লাল নয় সাদা।তাই, হোক বিকেলের আলো, চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে।চাতালের ধার দিয়ে বইছে চঞ্চলা নদী, নাম ডুলুরি। জায়গাটা হল দারিংবাড়ির লাভার্স পয়েন্ট পিকনিক স্পট। পাথরে ঘিরে নদীর জল কোথাও কোথাও জলাশয় হয়ে আছে।চান করা যাবে, মিদুবান্দার মতো অপরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে না। এই জায়গাটা দেখে আর একটা স্মৃতি মনে আসে। অমরকন্টকের মাঈ কি মণ্ডপ।একই রকম ভূদৃশ্য। ছেলেমেয়েরা গুহা দেখতে পাহাড়ে চড়ছে, ফিরতে একটু তো সময় লাগবে।এই ফাঁকে গল্পটা বলি। একই রকম পাথুরে চাতাল, পাথরে ঘেরা জলাশয়, মৈকাল পর্বতের কন্দরে গুহা আর দুরন্ত নদী।চাতালের ওপরে পটহোলের মতো গর্ত। কোমল শিলাগুলো ক্ষয়ে গিয়ে বোধ করি অমন গর্ত হয়েছে। অবাক কান্ড গর্তগুলো মাথার দিকে চওড়া আর তলার দিকে সরু।হাতা, খুন্তির মতো দেখতে।দারিংবাড়ির এই লাভার্স পয়েন্টেও চাতালে গর্ত আছে।আমি খুঁজে দেখেছি। আকৃতিতে গোল।যাহোক অমরকন্টকের কথায় আসি।মহাকাল বা মৈকাল পাহাড়ের অমরকন্টক হল নর্মদা, কুমারী আর শোনভদ্র এই তিনটি নদীর উৎসভূমি। শোন তো উত্তর ভারতের সমভূমির দিকে গড়িয়ে গিয়ে গঙ্গায় মিশেছে। কুমারী গিয়ে মিশেছে শোনভদ্রে। আর নর্মদা একই স্থানে জন্ম নিলেও চ্যুতিরেখা ধরে নাক বরাবর চলে গেছে ভূমিঢালের উল্টোদিকে আরবসাগরে। কোনো উপনদীর সঙ্গম ছাড়া একাকী। এই অসামান্য ঘটনার ভূপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যা যাই হোক, এক জমজমাট পৌরাণিক থ্রিলার শুনেছিলাম মাঈ কি মণ্ডপ ঘিরে, যে মাঈ কি মণ্ডপ আর লাভার্স পয়েন্ট একইরকম। নর্মদা শিবের পুত্রী, গঙ্গা অবধি তাঁর মন ভেজাতে দেখা করতে আসেন, দেমাকই আলাদা। কুমারী হলেন তাঁর সখী। এহেন নর্মদা প্রেমে পড়লেন শোনভদ্রের। বিবাহ স্থির হল। এদিকে কেউ জানেনা, কুমারী নদীও মনে মনে শোনকে ভালোবাসে, শুধু কাউকে বলতে পারেনা। নর্মদা আর শোনের বিবাহের আয়োজন সম্পূর্ণ। স্বর্গের দেবতারা নিমন্ত্রিত, মহাভারতের পান্ডবেরা নিমন্ত্রিত।নর্মদা অপেক্ষা করছেন বধূবেশে। বর আর আসে না। অপেক্ষায় ক্লান্ত, বিষন্ন নর্মদা নিজেই সন্ধান করেন শোন কোথায়? অন্ধকার নেমে এসেছে, খানিক দূরে দেখেন কুমারী গিয়ে মিশেছে শোনের বুকে। দুজনে মিলে চলেছে গঙ্গার উদ্দেশে।নর্মদার মতো সাজপোশাকে কুমারী নদী দাঁড়িয়েছিল বর বেশে শোন আসার পথে। অন্ধকারে না বুঝে শোন গ্রহণ করেছে তারই দেয়া বরমালা। প্রতারিত নর্মদার বিষাদ ক্রোধে পরিণত হয়, ঘৃণা ভরে বঙ্গোপসাগরের দিশা পরিবর্তন করে সে পশ্চিম মুখে ধাবিত হয় আরবসাগরের দিকে। আর কাউকে এ জীবনে গ্রহণ সে করেনি, তাই কোন উপনদী নেই, আজও একাকিনী। গঙ্গা শিবের স্ত্রী, সম্পর্কে সৎ মা।আবার আশ্রয় দিয়েছে প্রতারক শোন ও কুমারীর জলকে।তাই আজও মেয়ের মন ভেজাতে শ্রাবণমাসে লিঙ্গরূপী শিবের গা জড়িয়ে, ভূঅভ্যন্তরের ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসেন, দেখা করে যান মেয়ের সাথে।বিয়েতো হল না।মাঈ কি মণ্ডপ পড়ে রইল তার আয়োজন নিয়ে।কোনো বোল্ডারের গায়ে রং দিয়ে লেখা ভীম কা আটা।ভীম খাবে বলে মাখা হয়েছিল। এক সারি বোল্ডারের গায়ে লেখা নাগাড়া অর্থাৎ বিয়ের বাদ্য।গোল জলাশয়গুলিকে দেখানো হয় ডালের আর সব্জির কড়া হিসেবে।লম্বাটে পটহোলগুলিকে বলা হয় হাতা, চামচ, খুন্তি।নিজের মনেই হাহা করে হাসি।দারিংবাড়িতে সব প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোই আছে। কিন্তু নেই ব্লকবাস্টার কাহিনীর মিশেল। মাঈ কি মণ্ডপ প্রেম পেরিয়ে বিরহে উত্তীর্ণ হয়। লাভার্স পয়েন্ট নামেই প্রেমের কথা বলে, জানিনা উত্তীর্ণ হবে কিনা।

লাভার্স পয়েন্ট। ছবি: সন্দীপ সরকার/ CC BY-SA 3.0

ছেলেমেয়েরা এক এক করে ফিরছে।এবারে আমিও দৌড় লাগাই।সূর্য ঢলছে পশ্চিমে।বিদ্যুৎবাবুকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছি, ছুঁয়ে দেখার জন্য আরও পাঁচটা পয়েন্ট আছে।

লাভার্স পয়েন্ট থেকে দু'কিলোমিটারের মধ্যেই এমুব্রিডিং ফার্ম, লাগোয়া নেচারক্যাম্প।সুন্দর সাজানো পার্ক আর থাকার কুটির আছে।এবার কফি আর গোলমরিচের বাগান।পাইনগাছের সারির ফাঁকে কফি গাছের সারি।আর পাইনগাছের গা জড়িয়ে আকাশে উঠেছে গোলমরিচের লতা।সূর্য আরও ঢলে পড়েছে। এখানে থামলে বাকি তিনটে পয়েন্ট আর ঘোরা হবে না।সূর্য ডুবে যাবে।তাই বাগানের সামনে দিয়ে বাস চলল খুব ধীরে ধীরে।বাইরে থেকে দেখেই সন্তুষ্ট হতে হল।এবারে দৌড়ে দৌড়ে নেচার পার্ক।নয়নাভিরাম ফুলের মেলা।ভিতরে বাটারফ্লাই পার্ক।কপাল খারাপ এখন একটাও প্রজাপতি নেই।তা হোক, চারিদিকে অসংখ্য ওষধি গাছের মেলা।মাঝে সুশ্রুতর মূর্তি।কুটিয়া কন্ধ উপজাতি মানুষের মডেল সাজানো আছে মিউজিয়ামের মতো।উল্টোদিকে হিলটপ পার্ক।এখানে বাচ্চাদের দোলনা, স্লিপ, ঢেঁকি এইসব সাজানো। একটা উঁচু টাওয়ার আছে পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগের জন্য।

নেচার পার্ক। ছবি: লেখক।

সূর্যদেব পাটে বসেছেন, আমরা পৌঁছে গেছি সানসেট পয়েন্টে।সিমেন্টের গ্যালারির মতো করা আছে।সামনে অসংখ্য পর্বতশ্রেণী।সাগরের ঊর্মিমালা যেন স্থবির হয়ে অপেক্ষা করছে কারো নির্দেশের।এ জায়গাটা আমাকে পাঁচমারীর ধূপগড়ের কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে। নেচারপার্কের কমলাসূর্য এখন টকটকে লাল।দূরের শ্রেণীগুলি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হচ্ছে।দারিংবাড়ি চলেছে ছায়াবৃত্ত পেরিয়ে রাতের গর্ভে, আবার পরের দিনের ভোর দেখবে বলে।পর্বতচূড়ায় যখন রক্তরাগের শেষ রেশ, তখন আমাদের অবাক করে দিয়ে পিছনে বেজে উঠল মাদল। তাকিয়ে দেখি এক কন্ধ পুরুষের হাতের বোলের তালে তালে তাকে ঘিরে নাচছে একদল কন্ধ নারী। আমাদের ছাত্রীরাও যোগ দিল তাদের সঙ্গে।গোলমরিচের বাগানে আমরা ঢুকতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু এটা বাড়তি পাওনা হল।


দারিংবাড়িতে সন্ধ্যা নেমেছে। আমরা হোটেলে ফিরছি। ঘরে গিয়ে ব্যাগ গোছাবো। আগামীকাল দারিংবাড়িকে বিদায় জানাতে হবে।তপ্তপানি, গোপালপুর হয়ে ফিরে যাব যে যার ঘরে। হয়তো অনেক কিছুই জানা হল না। যেটুকু জানলাম সেটাও অনেক।অমরকন্টক, পাঁচমারী, উটি এসব বিখ্যাত পর্যটনক্ষেত্রের মতো সম্পদ এখানেও আছে। কিন্তু সাজান গোছান কম।ভারি আটপৌরে আর আন্তরিক। দারিংবাড়িতে আর একবার আসা যেতেই পারে।




লেখক পরিচিতি: বিভাগীয়প্রধান এবং অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর , ভূগোল বিভাগ, প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজ।






231 views0 comments
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page