top of page
  • ..

সাপে-মানুষে সংঘাত ও সমাধান: উদ্যোগ 'শের' এর তরফে

বর্ষায় গ্রামবাংলার কৃষিজীবি মানুষের কাছে এক বড় বিপদ সাপের কামড় ও মৃত্যু। বিপদে সাপেরাও মানুষের আক্রমণে। এর সামাধানে উদ্যোগ নিল বন্যপ্রাণ নিয়ে লাগাতার কাজ করে চলা সংস্হা-'শের'। কেমন উদ্যোগ তা জানাচ্ছেন শের-এর কর্ণধার জয়দীপ কুন্ডু





ভারতবর্ষে প্রতিবছর বন্যপ্রাণ ও মানুষের সংঘাতের ফলে মানুষের মৃত্যুর যে সংখ্যা উঠে আসে তার অন্যতম কারন হল সর্পদংশন। আমাদের রাজ্যের গ্রামবাংলাতেও একই ছবি। বর্ষার সময় সর্পদংশন গ্রাম বাংলায় বড় সমস্যা ও অত্যন্ত জরুরি স্বাস্থ্য পরিসেবার অন্তর্গত। গ্রামীন ভারতের জীবন জীবিকা কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল।বেশ কিছু সমীক্ষায় বলছে বর্ষা কালেই সবথেকে বেশি সংখ্যায় সর্পদংশন ঘটে এবং তা কৃষিকাজ করার সময়। বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে সাপের সাথে মানুষ সংঘাতের ৯৫% ঘটে গ্রামীন এলাকায় যেখানে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই সবথেকে বেশি এবং এক্ষেত্রে সাপ ও মানুষ উভয়েরই ক্ষতি হয়।

ধান চাষের সময় বর্ষার আগে পরিত্যক্ত জমির ঘাস ও ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করার সময় সাপে মানুষের সংঘাত সৃষ্টি হয় কারন কৃষিজমি সাপের অন্যতম বিচরন ক্ষেত্র। এরপর বৃষ্টির জল যখন পুকুর' নদী' নালা উপচে পরে ধানজমির উপর দিয়ে বইতে থাকে তখন জমিতে বা আলের মধ্যে থাকা ইঁদুরের গর্তে জল ঢুকে যায়। ফলে সেখানে আশ্রিত সাপটি কে বেড়িয়ে পড়তে হয়,এমত অবস্থায় সংঘাত সৃষ্টি অনিবার্য হয়ে ওঠে। গ্রামবাংলার জমিতে বিভিন্ন নির্বিষ ও চন্দ্রবোড়া,কেউটে,গোখরো, শাঁখামুটি ইত্যাদির মত বিষধর সাপের দেখা মেলে।কৃষিজমিতে সাপের আনাগোনা লেগেই থাকে কারন খাবার ও বসবাসের জন্য চাষের জমি তার মানানসই বাসস্থান।সাপের সাথে মানুষের সংঘাতটা হয় কৃষিজমিতে কৃষক বা দিনমজুরের কাজের সময় অজান্তে সাপের গায়ে পা দিলে বা ইঁদুর এর গর্তের আশেপাশে কাজ করার সময় ভুল করে সেখানে আশ্রিত বিষধর সাপটির গায়ে হাত পড়লে বা বিরক্ত করলে বা সাপটি কোনো ভাবে আঘাত পেলে তখন তার দ্বারা মানুষটি আক্রান্ত হয়। গ্রামবাংলায় এটাই সাপ মানুষ সংঘাতের ক্ষেত্রে চরমতম উদাহরণ- এর ফলে কোনো একপক্ষ আক্রান্ত হয় বা বেশ কিছু ক্ষেত্রে মারা পরে। সাপে কাটা রুগীকে হাসপাতালের পরিবর্তে কেউ কেউ ওঝা বা গুনিন এর কাছে নিয়ে যায় এবং এর ফলে সাপে কাটা রুগী প্রায়শই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম অবহেলিত রোগের মধ্যে সর্পদংশনে মৃত্যু সবার উপরে।

প্রাচীন কাল থেকেই সাপ ভারত তথা বাংলার লোকসংস্কৃতি ও বিশ্বাসে একটা প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে।গ্রামবাংলার কৃষকেরা জমিতে চাষ করতে যাওয়ার আগে বাড়ির উঠানে থাকা মনসা গাছ কে প্রনাম করেন কারন জমিতে সাপের সাথে সংঘাত ও সর্পদংশন এর প্রকোপ থেকে বাঁচতে।


আমাদের দেশে ফসল নষ্টের মূলে ইঁদুর এর অতিমাত্রায় উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়। সেখানে সাপই একমাত্র প্রাণী যে সবথেকে বেশি ইঁদুর খেয়ে আমাদের ফসল রক্ষা করে চলেছে। প্রত্যেক দিন দেশের বিভিন্ন অংশে সর্পদংশনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ও তার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেচ্ছ এবং নির্বিচারে সাপ মারা পরছে।

কৃষকদের সাথে


আমরা প্রায় সকলেই জানি যে কোনো রোগ কে আটকাতে সেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই রোগটিকে আটকানো সম্ভব। তাই আমরা শের’এর পক্ষ থেকে সাপ মানুষের সংঘাত মেটাতে কৃষিনর্ভর মানুষজনদের নিয়ে একটি উদ্যোগ নিয়েছি গত ১৬ ই জুলাই ২০২১ বিশ্ব সর্প দিবসে।

শের এর কর্ণধার জয়দীপ কুন্ডু তুলে দিচ্ছেন গ্লাভস ও গামবুট
সচেতনতা বৃদ্ধির সাথেই এই গামবুট ও গ্লাভস্ ব্যবহার সর্পদংশনের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচতে কিভাবে সাহায্য করবে জানানো হল।


শের গ্রামবাংলার বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করে আসছে এক দশকের বেশি ধরে। সাথে চলছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সাপ উদ্ধারের কাজ। হুগলী জেলার হরিপাল ব্লকের ১০০ কৃষকবন্ধু কে সর্পদংশন প্রতিরোধ করতে একজোড়া গামবুট ও একজোড়া গ্লাভস্ দেওয়া হল শের’এর পক্ষ থেকে ১৬ই জুলাই বিশ্ব সর্প দিবস উপলক্ষে। সচেতনতা বৃদ্ধির সাথেই এই গামবুট ও গ্লাভস্ ব্যবহার সর্পদংশনের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচতে কিভাবে সাহায্য করবে জানানো হল। সাপে-মানুষের সংঘাত এড়াতে ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য সংরক্ষণে এটি শের’এর একটি প্রথম পর্যায়ের উদ্যোগ অথবা বলা যায় একটি পাইলট প্রোজেক্ট গ্রহন করা হল এই আশা নিয়ে যা গ্রামীন সমাজে, জনমানসে সাপ ও মানুষের সহাবস্থান সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলবে ও গ্রামবাংলায় সর্পদংশনের মাত্রা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে।




লেখক পরিচিতি: লেখক একজন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ, 'শের' নামক বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা সংস্হার কর্নধার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা।

157 views0 comments
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page