top of page

চম্বলের বুকে বিপন্ন Indian Skimmer এর দল

  • ...
  • Jul 17, 2024
  • 3 min read

উত্তর ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ নদী চম্বল। জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ এই নদী উপত্যকায় ঘড়িয়াল,কুমীরের মতই আশ্রয় পায় Indian Skimmer পাখিরা। প্রজনন থেকে বাচ্চার বড় হয়ে ওঠার জন্য এই স্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য। কিন্তু মানুষের নানান কর্মকান্ডে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের বাসভূমি। বিপন্ন হয়ে পড়ছে এই সুন্দর পাখিগুলি। সেখানে এই সব দেখে এসে লিখছেন ড: ঐশিমায়া সেন নাগ




ree
Indian Skimmer

পৃথিবীর বুক থেকে একটি সুন্দর পাখি হারিয়ে যাবার পথে।  সংখ্যায় এদের ক্রমাগত কমতে থাকা আমাদের   জলজ বাস্তুতন্ত্রের  অবক্ষয় প্রমাণ করে। ২০২০ সালে IUCN এর একটি সমীক্ষায় সেই  পাখি Indian skimmer কে বিপন্ন বা Endangered ঘোষণা করা হয়েছে। যে পাখি একসময় ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত ছিল , তারা এখন অনেকগুলি দেশেই অবলুপ্ত। ভারতেই শুধু এদের অস্তিত্ব টিকে আছে বলতে গেলে। তাই আমাদের ভারতবাসীর এখন বড় দায়িত্ব এই হারিয়ে যেতে বসা পাখিকে বাঁচানো।

এই বছরের  এপ্রিল মাসে আমারা সৌভাগ্য হয় চম্বল উপত্যকায় ওদের বাসস্থানে দেখতে পাওয়ার। এই এলাকাটি দেশে তাদের অল্প ক’টি টিকে থাকা প্রজনন স্থানের মধ্যে একটি। চম্বল নদী ভারতের তিনটি রাজ্য রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ হয়ে  যমুনায় গিয়ে পড়েছে। গতিপথে এই নদী যে বালুতট ও বালির দ্বীপ তৈরি করেছে সেখানেই এরা ডিম পাড়ে।

রাজস্থানের ঢোলপুর থেকে নৌকায় ভ্রমণ করে  এই পাখিদের আশ্চর্য সুন্দর দুনিয়ায় পৌঁছাতে হয়।  এই অভয়ারণ্যের এলাকায় অবশ্য মধ্য প্রদেশের মোরেনা ও রাজস্থানের পালিঘাট থেকে পৌঁছানো যায়। নৌকাতে চেপেই এদের সবচেয় ভালভাবে দেখা যায়।  এই নদী অবশ্য আশ্রয় অতি বিপন্ন (critically endangered) ঘড়িয়াল, বিপন্নপ্রায় মগর প্রজাতির কুমীর ও কিছু কচ্ছপেরও।


ree
চম্বল নদীর ঘড়িয়াল ও কুমীর। ছবি: অরিজিৎ নাগ।

গরম পড়ার সাথে সাথে পুরুষ-স্ত্রী জুটি বাসা বাঁধতে শুরু করে বালুতটে। তারা ছোট ছোট গর্ত করে বা আঁচড়ে জায়গা তৈরি করে ডিম পাড়ার।   এই মিষ্টি  দেখতে পাখিদের  অন্য পাখিদের ভিড়ে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। যেমন black-bellied ternরাও একই বাসস্থানেই থাকে। Indian skimmer  এর উপরের কালো ভাগ তাদের মাথা ও পেটের নীচের সাদা অংশের সাথে দারুণ একটা রঙের বৈপরীত্য তৈরি করে। এদের ঠোঁটটাই সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক। লম্বা, গভীর, উজ্জ্বল কমলা রঙের, সাথে অগ্রভাগটি হলদে। নীচের চোয়ালটি  উপরেরটির তুলনায় লম্বা। পাখিটির এমন নামকরণের কারণ তাদের জল থেকে মাছ তুলে খাবার ধরনের জন্য (skimming for fish)।  জলের উপর এরা ভাসতে থাকে আর ছোঁ মেরে মাছ তুলে নেয় জল থেকে এদের ঠোঁট দিয়ে।


ree
বালিতে গর্ত করে ডিম পাড়ে ইন্ডিয়ান স্কিমাররা।

গড়ে এরা তিনটি ডিম দিয়ে থাকে। ২২ দিন তা দেবার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বার হয়। যদিও এই পাখির বাচ্চা জন্ম দেবার হার বেশ কম। IUCN এর তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৪৩% ডিম ফুটে বাচ্চা বার হয় এবং ন্যাশনাল চম্বল স্যাংচুয়ারিতে ডিম ফুটে বার হওয়া বাচ্চার ৩৫% পরিণত অবস্থায় পৌঁছায়।  এই যে নির্দিষ্ট কিছু বাসস্থানের উপর এদের নির্ভরতা, সেটা এই পাখিদের বিপন্ন করে তুলছে নানা কারণে। নৌ-সফরের সময় এই বিষয়টা আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম।


ree
নিজের বাসায় ইন্ডিয়ান স্কিমার

সাফল্যের সাথে প্রজননের জন্য নদীতে জলর পরিমাণ যথাযথ হতে হবে। অতিরিক্ত জল হলে ডিমগুলি ডুবে যেতে পারে। জল খুব কমে গেলে বালুচর ও দ্বীপগুলির সাথে পারের যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়। এতে ডিম ও শাবকদের অন্য জন্তুদের থেকে আক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

বিভিন্ন প্রকল্পের যে কাজকর্ম এই এলাকায় চলছে তাও এদের বিপন্ন করে তুলছে। যেমন, চারটি বাঁধ ও বেশ কয়েকটি সেচ প্রকল্প রয়েছ  এই নদীতে। এরা এদের প্রয়োজন মত জলস্তরের বাড়া কমা নিয়ন্ত্রণ করে।  অনেকবার এমন হয়েছে যে বাঁধের ছাড়া জলে এই পাখিদের ডিম ভেসে চলে গেছে।

এছাড়াও সেচের কাজে প্রচুর জল নিষ্কাশন আর  জলবায়ুর পরিবর্তনের খামখেয়ালিপনায় অনিয়মিত বৃষ্টিপাত নদীবক্ষকে শুষ্ক করে দেয় সময়ে সময়ে। ফলে নদীর উপর চলাচল সহজ হয়ে যায়। কুকুর ও শিয়ালরা সহজেই পাখিদের এলাকায় চলে এসে ডিম  শাবকদের খেয়ে ফেলে। তৃণভোজী পশুরাও চরে বেড়াতে বেড়াতে এদের বাসা নষ্ট করে দেয়।  এমনকি, স্থানীয় মানুষ অবধি ডিম ও বাচ্চা তুলে নিয়ে যায় খাবার জন্য।


ree
নদীর চরে কুকুরের আনাগোনা।

এখন এই পাখিদের জন্য বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে চম্বল নদীতে দেদার বেআইনি বালি খাদান। প্রকাশ্য দিবালোকে দেদার বালি তুলে বাজারে পাঠানো হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে নদীর বাস্তুতন্ত্র। অনেক মানুষ এই বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম থামাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু সব যে কে সেই।

নদীর জলের দূষণও বিপন্ন করে তুলছে স্কিমারদের। তাদের বাসস্থান ও খাদ্য দূষিত হয়ে পড়ছে।

এছাড়াও যে পর্যটকরা এদের দেখতে আসছেন তারা যেন নৌকা নিয়ে খুব কাছ না যান , যাতে এদের প্রজনন কাজ বিপন্ন হয়ে পড়ে।


ree
বালি খাদানের উপদ্রব ধ্বংস করছে পাখিদের আবাসস্থল

এই ধ্বংসলীলার মধ্যে যে সব পাখিরা বেঁচে আছে, তারা প্রজননের সময়টা ছাড়া বাকি সময়ে সমুদ্র উপকূলে ছড়িয়ে পড়ে লবণাক্ত এলাকায়। কেউ কেউ থেকে যায় বা কাছাকাছি নদী বা জলাশয়ে  চলে যায়।

বর্তমানে মাত্র ২,৯০০ টি Indian skimmers টিকে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে! Bombay Natural History Society (BNHS) এর মত সংস্থা এদের বাঁচাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্থানীয় মানুষদের নিয়ে তারা পাখির বাসা বাঁচানোর প্রকল্প গ্রহণ করেছেন, যেখানে স্থানীয় মানুষরা এদের ডিম বা বাচ্চাকে শ্বাপদের হাত থেকে বা গবাদি পশুর পায়ের নীচে পিষ্ট হয়ে যাওয়ার থেকে বাঁচাতে নজর রাখে।  আরও অন্য কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।


ree
বালির চরে স্কিমারের দল।

Indian skimmersদের টিকিয়ে রাখার অর্থ আমাদের জন্য জীবনদায়ী নদীগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা, তার বাস্তুতন্ত্রকে সচল রাখা। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত একযোগে চম্বল নদীতে এই সুন্দর পাখিগুলিকে বাঁচানোর জন্য।


পাখির সব ছবি: লেখক

কুমীর ও ঘড়িয়ালের ছবি:অরিজিৎ নাগ


লেখক পরিচিতি: ড: ঐশিমায়া সেন নাগ বায়োকেমিস্ট্রিতে ডক্টরেট। বর্তমানে বন্যপ্রাণ ও সংরক্ষণের কাজে নিবেদিত। কানাডা থেকে প্রকাশিত শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট worldatlas এর অন্যতম সম্পাদক। বর্তমানে বাংলা ওয়েবজিন 'বনে-পাহাড়ে'র সহযোগী সম্পাদিকার দায়িত্বেও তিনি যুক্ত।

Comments


86060474-00b1-415d-8c11-9c4471c9c5e7.png
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page