top of page
  • ..

জীববৈচিত্র্যের আধার তৃণভূমি ধ্বংসের মুখোমুখি

দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। যাদের সরকারি হিসাব থেকে জনসমাজের ধারনায় পরিক্তত্য, নাবাল জমি হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। অথচ বনভূমির থেকে জীববৈচিত্রে কোন অংশে কম নয় এই সব এলাকা। আমাদের ভ্রান্ত ধারনায় ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত এই সজীব বাস্তুতন্ত্র। এই নিয়ে কী ভাবছেন পরিবেশবিদরা? পুনাতে কিভাবে কাজ শুরু হয়েছে এই তৃণভূমির সংরক্ষণ নিয়ে! সেই নিয়ে আলোচনায় সুমন্ত ভট্টাচার্য্য


রাজস্হানের তৃণভূমিতে বিলুপ্তপ্রায় একটি গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড। ছবি: Saurabh Sawant/CC BY-SA 4.0


কোন রিজার্ভ ফরেস্টে সাফারিতে গেলে আমরা ঘন গাছের অরণ্যের পাশাপাশি দেখতে পাই বিস্তৃত তৃণভূমি। এই তৃণভূমিও ওই গাছের জঙ্গলের পাশাপাশি সমান গুরুত্বপূর্ণ সেটা অভিজ্ঞ পর্যটক মাত্রই জানেন। কারণ সেই তৃণভূমিতে বাস করে, তার ওপর খাদ্যের জন্য নির্ভর করে বিরাট একটা অংশের প্রাণী। তৃণভোজী হরিণ বা সম্বরের দল অথবা গন্ডারেরা যেমন সেখানে চড়ে বেড়ায় তেমনই বাঘের মত শ্বাপদও শিকার খোঁজে সেখানেই।সেখানেই বাস বিভিন্ন প্রকার সরীসৃপ বা হরেক প্রজাতির পাখির। তাই কোন সাফারিতে গেলে তৃণভূমিতে বিচরণ করেই একটা বড় সময় কাটে পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য। এই সমস্ত রিজার্ভ ফরেস্টের তৃণভূমি সুরক্ষিত। কিন্তু রিজার্ভ ফরেস্টের বাইরে দেশের বিভিন্ন অংশে যে বিস্তৃত তৃণভূমি! তার কী খবর? কতটা সুরক্ষিত সেখানে বসবাসকারী প্রাণী ও উদ্ভিদকুল! আদৌ তাদের আমরা, আমাদের সরকার কোন গুরুত্ব দেয়! বাস্তুতন্ত্রে কতটা গুরুত্ব রাখে তথাকথিত 'পরিক্তত্য জমি' র তকমা পাওয়া এই সব বিস্তীর্ণ প্রান্তর। এই নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। একদল পরিবেশ কর্মী গড়ে তুলেছেন 'দ্য গ্রাসল্যান্ড ট্রাস্ট' এর মত সংস্থা যারা মনে করেন বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি কোন অংশে তৃণভূমি সংরক্ষণ কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং জায়গা ভেদে তার গুরুত্ব কখনও বেশি হতে পারে। এইসব তৃণভূমিতে যথেচ্ছ বৃক্ষরোপণ পরিবেশ উদ্ধারের কোন উপায় নয় বলে তারা মনে করেন।


এইসব তৃণভূমিতে যথেচ্ছ বৃক্ষরোপণ পরিবেশ উদ্ধারের কোন উপায় নয় বলে তারা মনে করেন।
পুনা সংলগ্ন তৃণভূমি এলাকা। ছবি: The Grasslands Trust


ভারতের বিরাট একটা অংশের জমি শুষ্ক প্রান্তর, প্রায় ১০%। উদ্ভিদ বলতে এখানে ঘাস, গুল্মলতা, কাঁটাঝোপ বা ছোট গাছ। কিন্তু বৃক্ষহীন বলেই তা প্রাণহীন নয়। বরং প্রাণবৈচিত্র্যে তা ভরপুর। সেখানের বাস্তুতন্ত্র পরিচিত Open Natural Ecosystems নামে। বিচিত্র রকমের প্রাণীর বাস সেখানে। সেখানে যেমন হেজহগ, রাটেল, ক্যারাকল-এর মত প্রাণীরা রয়েছে তেমনই তৃণভূমিই পছন্দের বাসস্থান নেকড়ে, শিয়াল, লেপার্ড অথবা চিঙ্কারা, কৃষ্ণসার হরিণ, গেজেল হরিণের মত জন্তুদের। তাদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পূর্ণ এক খাদ্যশৃঙ্খল। এছাড়াও বেশ কিছু পাখি সম্পূর্ণ ভাবে এই তৃণভূমির অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। যাদের মধ্যে প্রথমেই আসে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডদের কথা। যাদের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির মুখে নির্বিচার তৃণভূমির ধ্বংস ও শিকারের কারণে। তৃণভূমির ওপর নির্ভরশীল পাইড হেরিয়ার, ফ্লোরিকান , কোয়েল বা নীলগিরি পিপিটের মত পাখিরা।

পুনার সাহসদ তৃণভূমির নেকড়ে। ছবি: The Grasslands Trust
আর পৃথিবী জুড়েই এই সব তৃণভূমি বা সাভানা কার্বন-সিঙ্ক হিসাবে জলবায়ুর ভারসাম্য রাখতে বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করে। পৃথিবীর ২০% ভূ-ভাগ অধিকার করলেও প্রায় ৩০% কার্বন পরিবেশ থেকে ধরে রাখে তারা তাদের শিকড়ে ও মাটিতে (soil organic carbon)।

এছাড়াও বিভিন্ন পতঙ্গ, সাপ আর তার সাথে সাথে হরেক প্রজাতির ঘাসের বৈচিত্র্যে ভরপুর এই সব তৃণভূমি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উচ্চ অংশে যে 'শোলা তৃণভূমি' রয়েছে (শোলা শব্দটি তামিল। আক্ষরিক অর্থে রেন ট্রি) একরের পর একর, যেখানে ছোট গুল্ম জাতীয় শোলা উদ্ভিদ ও ঘাসজমি মিলে দারুণ এক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে, তা যে শুধু প্রাণীদের আবাসস্থল তাই নয়, তা সেখানকার নদীগুলোতে জলের জোগানদারও। এই তৃণভূমি মাটিতে ধরে রাখে বিরাট পরিমাণে জল। আর পৃথিবী জুড়েই এই সব তৃণভূমি বা সাভানা কার্বন-সিঙ্ক হিসাবে জলবায়ুর ভারসাম্য রাখতে বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করে। পৃথিবীর ২০% ভূ-ভাগ অধিকার করলেও প্রায় ৩০% কার্বন পরিবেশ থেকে ধরে রাখে তারা তাদের শিকড়ে ও মাটিতে (soil organic carbon)। তাই বলে কি তৃণভূমিতে মানুষের কোন ভূমিকা নেই? অবশ্যই আছে কয়েক শতাব্দী ধরে। এই সব জমিতে দীর্ঘকাল পশুপালন করে আসছে বিভিন্ন পশুপালক গোষ্ঠী। এছাড়া বজরা, মিলেটের মত শস্যও এখানে চাষ হয়। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সংস্পর্শ ছাড়া এই সকল পদ্ধতি সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের সাথে একাত্ম হয়ে গেছে দীর্ঘকাল। পশুর মল-মূত্র মাটিকে করছে উর্বর।

পশ্চিমঘাটের শোলা তৃণভূমি।

অথচ এই সজীব, প্রাণচঞ্চল একটা বাস্তুতন্ত্রের কথা সম্পূর্ণ বাদ পড়ে গেছে পৃথিবীর অনেক দেশের মতই ভারতের প্রকৃতি সংরক্ষণের পাঠশালা থেকে। এই সব জমি সরকারের তালিকায় পরিক্তত্য, নাবাল জমি হিসাবে পরিগণিত হয়ে এসেছে। কোন রকম জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের গুরুত্বের কথা মাথায় না রেখে তার ধ্বংস সাধন হয়েছে যথেচ্ছ। আর এখন তো বিস্ফোরক জনসংখ্যা ও তার জন্য 'উন্নয়ন' এর চাপে এইসব জমির ওপর নজর পড়েছে আগ্রাসী মানব সভ্যতার বেশি বেশি করে। ভারতের সমস্ত তৃণভূমির মাত্র ৫% সংরক্ষিত এলাকায় পড়ছে অন্ধ্র প্রদেশ, রাজস্থান , গুজরাত ও বিহারের মাত্র ৫ টি ন্যাশনাল পার্কে। বাকি জমিতে চলে যাচ্ছে মহাসড়ক, রেললাইন। জমি দখল হয়ে যাচ্ছে কারখানা, আবাসন বা কৃষি প্রকল্পের জন্য। খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে জীবজন্তুদের আবাসস্হল।


এই সব এলাকা বৃক্ষের জন্য নয়। ছোট উদ্ভিদ ও ঘাসের ওপর নির্ভর করে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ এক বাস্তুতন্ত্র। বৃক্ষরোপণের জন্য গর্ত খুড়তে গিয়ে ধ্বংস হচ্ছে নেকড়ে বা শেয়ালদের বা অন্য জীবদের বাসস্থান। এইসব শুষ্কভূমিতে জল টেনে নিচ্ছে বাড়ন্ত গাছ।
তৃণভূমি তে কৃষ্ণসার হরিণ। ছবি: maxpixel.net

এর সাথে রয়েছে তথাকথিত 'পরিবেশ উন্নয়ন' এর স্বার্থে এই সব জমির যথেচ্ছ ব্যবহার। কোথাও বন কাটা হলে তার পরিপূরক বৃক্ষরোপণের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে এই সব জমিকে। অথচ এই সব এলাকা বৃক্ষের জন্য নয়। ছোট উদ্ভিদ ও ঘাসের ওপর নির্ভর করে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ এক বাস্তুতন্ত্র। বৃক্ষরোপণের জন্য গর্ত খুড়তে গিয়ে ধ্বংস হচ্ছে নেকড়ে বা শেয়ালদের বা অন্য জীবদের বাসস্থান। এইসব শুষ্কভূমিতে জল টেনে নিচ্ছে বাড়ন্ত গাছ। তা নদী বা ঝর্নার স্রোত শুকিয়ে দিচ্ছে। যেসব প্রাণী খোলা জমিতে বিচরণে অভ্যস্ত, তারা স্হান ত্যাগ করছে। এর সাথে সাথে নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে বিকল্প শক্তির উৎস রূপে সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প! যাদের পরিবেশের পক্ষে উপযোগী ভাবা হচ্ছে (যদিও তা ও আমাদের বেড়ে চলা চাহিদা ও লোভ মেটাতে), তারাই দখল করে নিচ্ছে একরের পর এক তৃণভূমির প্রান্তর। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই সুন্দর আবাসস্হল। বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের উইন্ডমিল-এর পাখার আঘাতে বাধা পাচ্ছে পাখিদের উড়ান। পাখিরা ছেড়ে যাচ্ছে সেই সব জায়গা। ফলে সংলগ্ন এলাকায় বাড়ছে বিভিন্ন পতঙ্গ ও সাপের উপদ্রব।

'পরিক্তত্য' বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। ছবি: Wikimedia Commons

কিন্তু, যেসব পাখিদের যাবার উপায় নেই? যারা বেশিদূর উড়তে পারে না? যেমন, গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড। ভারতে পাওয়া যাওয়া এই বিশিষ্ট পাখিটি কবে থেকেই IUCN এর রেড লিস্টে তো বটেই, এখন একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার দোরগোড়ায়। এই বৃহৎ শরীরের ভারি পাখিটি যথেচ্ছ বাসস্থান ধ্বংস ও শিকারের ফলে আগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকলেও কমতে কমতে তা শুধুমাত্র রাজস্থানের ডেজার্ট ন্যাশনাল পার্কে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছুকাল আগেও গুজরাতের কচ্ছে তাদের দেখা মিললেও , ওই অঞ্চলে বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ ওভারহেড তারে ধাক্কা খেয়ে মারা গিয়ে সেখান থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এরা। ২০১৫ সালে বিমানবাহিনীর জন্য কচ্ছের নালিয়া তৃণভূমির যে বিশাল জমি অধিগ্রহণ করা হয় তা ছিল এই বড় পাখিগুলির বাসভূমি।

একদা নালিয়ার তৃণভূমিতে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড। ছবি: Prajwalkm/Wikimedia Commons।

অবশেষে কচ্ছে আর কোন গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড নেই বলে ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন এই বছর রাজ্যসভায় ২রা জুলাই, ২০২১ তারিখে। একই পরিণতি ঘটছে রাজস্থানেও। অথচ গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের উপস্হিতি একটা তৃণভূমির স্বাস্থ্যের ইঙ্গিতবাহী বলে ধরা হয়। এই কারণে এই বছরে এপ্রিল মাসে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট রাজস্হানে সকল অপ্রচলিত বিদ্যুৎ সংস্হাকে তাদের বিদ্যুৎবাহী তার আকাশ থেকে নামিয়ে মাটির নীচে দিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অবশেষে কচ্ছে আর কোন গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড নেই বলে ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রী জানিয়ে দিলেন এই বছর রাজ্যসভায় ২রা জুলাই, ২০২১ তারিখে।

একই ভাবে পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় সেই ব্রিটিশ যুগ থেকে চলে আসা কৃত্রিম ও বহিরাগত প্রজাতির বৃক্ষরোপণ বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে নীলগিরি পিপিটের জন্য। ইউক্যালিপটাস, আকাসিয়া বা পাইনের মত যেসব গাছ এই অঞ্চলের নয়, তাদের উপস্হিতি খন্ড-বিখন্ড করছে এই সবুজ তৃণভূমিকে। কমে আসছে পিপিটের মত ছোট পাখিদের সংখ্যা। তার সাথে বাঁধ, সড়ক, পর্যটন, চাষবাসের জন্য ক্রমাগত জমির অধিগ্রহণ বিপদে ফেলছে গোটা বাস্তুতন্ত্রকেই। তৃণভূমির ধ্বংস, অন্য কাজে ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে মাটির জলধারণের ক্ষমতা। নদীর স্রোত যাচ্ছে শুকিয়ে।

নীলগিরি পিপিট। ছবি: PJeganathan/ CC BY-SA 4.0

এই ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই দুই বছর আগে মিহির গোডবালের নেতৃত্বে পুনায় একদল পরিবেশকর্মী তৈরি করলেন 'দ্য গ্রাসল্যান্ড ট্রাস্ট'।পুনা শহরের অদূরেই সাহসদ অঞ্চলে রয়েছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। গ্রাসল্যান্ড ট্রাস্ট সেখানে পর্যবেক্ষণ করে সন্ধান পায় বিভিন্ন প্রাণীর বৈচিত্র্যে ভরপুর এক আবাসভূমির। নেকড়ে বা ইন্ডিয়ান উলফ্, বেঙ্গল ফক্স বা শেয়াল, জ্যাকেল, চিঙ্কারা হরিণ, স্ট্রাইপড হায়নার মত প্রাণীরা সেখানে দীর্ঘকাল ধরে রয়েছে। প্রচুর পাখি তো আছেই, তার মধ্যে তৃণভূমির বিশেষ কিছু পাখি যেমন-স্যান্ডগ্রাউস যারা জমিতেই ডিম পাড়ে, ইন্ডিয়ান কোর্সার, স্নেক ঈগল, ঈগল আউলের মত পাখিরা আছে। পাশাপাশি পাইড হেরিয়ার, স্তেপ ঈগল, সাইবেরিয়ান স্টোনচাট-এর মত পরিযায়ী পাখিদেরও আনাগোনা।বিভিন্ন সরীসৃপ ও উভচর যেমন, মনিটার লিজার্ড, ফ্যান থ্রোটেড লিজার্ড, লেপার্ড গেকো, মার্বেল বেলুনড ফ্রগ রয়েছে এখানে অনেক। এই তৃণভূমি জীবজগতের পাশাপাশি পশুপালক ধাঙ্গার সম্প্রদায়েরও ঘর। দীর্ঘকাল পশুপালন ও চাষবাসের জন্য তারা রয়েছে এখানে।

কিন্তু বাড়তে থাকা পুনা শহর গ্রাস করছে এই তৃণভূমিকেও। বাড়ছে সড়কপথ, আবাসন প্রকল্প, খেত খামার। বৃক্ষরোপন হচ্ছে অপরিকল্পিত ভাবে। মানুষের অর্থনৈতিক কাজ বাড়ায় বাড়ছে মানুষ-পশুতে সংঘাত। মিহির গোডবালে জানাচ্ছেন, "আমাদের প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রকৃতির কিছু স্হান দেবতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে রাখার প্রথা ছিল। সেখানে মানুষ সাধারণত: হাত দিত না। কোন ফুল, ফল তুলত না। সহনশীল ছিল জীবেদের প্রতি।নাগপঞ্চমী বা ব্রতসাবিত্রীর মত ধর্মানুষ্ঠান প্রকৃতি বাঁচাতে শেখাত আমাদের। সেই ঐতিহ্য দেখতে পাই এখনও এই তৃণভূমিতে যেখানে ধাঙ্গার সম্প্রদায় ও নেকড়েরা একই সাথে রয়েছে।"

ধাঙ্গার সম্প্রদায়ের কৃষক। ছবি: The Grasslands Trust
এই অবস্থা পাল্টাতে উদ্যোগ নিয়েছে দ্য গ্রাসল্যান্ড ট্রাস্ট। তারা এইসব অঞ্চলে ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাথে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কাজ চালাচ্ছে। বন্যপ্রাণ ও তাদের স্বভাব, বাসস্হান নিয়ে গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ, চলচ্চিত্র বানানোর কাজ করছে।

কিন্তু বাড়তে থাকা মানুষ ও উন্নয়নের চাপে পশুরা আর সেই সুরক্ষা পাচ্ছে না। নেকড়ে, হায়না বা শেয়ালের গর্তের মুখ বন্ধ করে, আগুন দিয়ে তাদের মারা হচ্ছে বা বাসস্হান থেকে তাড়ানো হচ্ছে। চাষের ক্ষেত ও বড় গাছ বৃদ্ধি পাওয়ায় দূরবর্তী এলাকার জঙ্গল থেকে লেপার্ডের আনাগোনা বেড়েছে। এর ফলে এখানকার আদি বাসিন্দা জীবেরা যেমন বিপদে পড়েছে, তেমনই বাড়ছে মানুষে-পশুতে সংঘাত। একই সাথে মানুষের ফেলে যাওয়া পোলট্রি ফার্মের মাংস ও আবর্জনা খেয়ে যদিও নেকড়ে বা শেয়াল জাতীয় প্রাণীর খিদে মিটছে, কিন্তু তারা শিকারের স্বভাব পাল্টে ফেলছে।

এই অবস্থা পাল্টাতে উদ্যোগ নিয়েছে দ্য গ্রাসল্যান্ড ট্রাস্ট। তারা এইসব অঞ্চলে ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়ার সাথে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কাজ চালাচ্ছে। বন্যপ্রাণ ও তাদের স্বভাব, বাসস্হান নিয়ে গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ, চলচ্চিত্র বানানোর কাজ করছে। এছাড়াও বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার করা, তাদের বাসস্হান পুনরুজ্জীবনের কাজে তারা জড়িয়ে। তাদের পাতা ক্যামেরা ট্র্যাপে স্ট্রাইপড হায়না, লেপার্ডের মত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা প্রাণীদের গতিপ্রকৃতি জানা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি বনদপ্তরের সাথে মিলে সচেতনতার কাজ চালাচ্ছে মানুষের মধ্যে বন্যপ্রাণী নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে, তৃণভূমির যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে বার্তা দিতে। তৃণভূমির ওপর বানানো তাদের তথ্যচিত্র পুরস্কৃত হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে।

বনবেড়াল ও তার খাদ্যের বাস যেখানে। ছবি: The Grasslands Trust

তাই এরপর কোন খালি বিস্তীর্ণ জমিকে বা জলাভূমিকে পরিক্তত্য ঘোষণা করার আগে আমরা নিশ্চয় ভেবে দেখব সেখানে কোন জীবের বাসস্থান রযেছে কিনা। কারা সেখানেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে! কাউকে উচ্ছেদ করে বা নিশ্চিহ্ন করে আমরা আমাদের নতুন প্রকল্পের কথা ভাবছি না তো!

পরের পর্বে দ্য গ্রাসল্যান্ড ট্রাস্টের কর্মকর্তা মিহির গাডবালের সাথে কথোপকথনে আমরা জানব তাদের পরিকল্পনা, ভাবনা ও ভবিষ্যৎ-পন্থা নিয়ে।













Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page