top of page
  • ..

আন্দামানের পাদপ সমারোহ

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ভারতের এক বিস্ময়কর স্বর্গরাজ্য। ট্রপিক্যাল দ্বীপের যে অনিবার্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকে, সেটা তো আন্দামানে আছেই। কিন্তু সেই নীল জলরাশি বা নারকেল গাছের সারি দেওয়া সৈকতের ছবি দেখেই কিন্তু আন্দামানের প্রাকৃতিক সম্পদের সীমানা শেষ হয় না। এছাড়াও আন্দামানে রয়েছে এমন অনেক বৃক্ষের সমারোহ, যেটা সারা পৃথিবীতে এই এক জায়গাতেই মাত্র রয়েছে। ফলে বেশ কিছু অতিবিরল উদ্ভিদের একমাত্র বাসস্থান হিসাবে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের একটি অসাধারণ বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব রয়েছে। আর অন্য কিছু গাছপালা রয়েছে যেগুলি বহুদূরে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপে হয়ত দেখা যায়; আর দেখা যায় এই আন্দামানে। লেখক রুদ্রজিৎ পালের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে রইল সেইরকম কিছু অদেখা গুল্ম-বৃক্ষ-মহীরুহের বর্ণনা ও ছবি।





এই অপূর্ব নকশা-সমৃদ্ধ গুল্মটির বৈজ্ঞানিক নাম Nervilia aragoana। এই গাছের বৈশিষ্ট্য হল, এতে একটিই পাতা হয় এবং তারপর ফুল হয়। তার মানে, এই ছবিতে দেখা প্রত্যেকটি পাতা হল এক-একটি আলাদা গাছ। আন্দামান ছাড়া দক্ষিণ ভারতের কিছু কিছু স্থানে মাঝে মাঝে এটির দেখা মেলে। সেখানে আবার এটি ওষধি হিসাবে ব্যবহার হয়। এটি কিন্তু এক ধরণের terrestrial orchid। এর ফুলের সমারোহ দেখতে হলে অক্টোবরে যেতে হবে।






এই ফুলটিকে বলা হয় সামুদ্রিক জবাফুল। বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus tiliaceus। আন্দামানে লাল এবং হলুদ, এই দুরকমের ফুল সৈকতে দেখা যায়। গাছগুলি দোতলা সমান উঁচু হতে পারে।








এই গাছটি দেখা যায় ঠিক বালুকাবেলার পাশে, প্রায় সমুদ্রের জল ছুঁয়ে থাকে এদের শিকড়। এর নাম Pandanus tectorius। আন্দামানে এই গাছ যেমন দেখা যায়, তেমন আবার বহুদূরের সাগর পেরিয়ে এটি দেখা যায় হাওয়াই দ্বীপে। ছবি একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এর পাতার দুধারে প্রায় করাতের মত তীক্ষ্ণ কাঁটা রয়েছে। অসাবধানে হাত লেগে গেলে রক্তপাত হতেও পারে। ফলগুলি পাকলে উজ্জ্বল কমলা রঙের বর্ণ ধারণ করে। পরের ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন।





এই গোল সবুজ ফলের গাছকে বলা হয় oilnut tree। বৈজ্ঞানিক নাম Calophyllum inophyllum। এই গাছ পলিনেশিয়ার কিছু দ্বীপে পাওয়া যায়। এর কাঠ থেকে নৌকা তৈরি হয় আর এর বীজ থেকে পাওয়া যায় তেল। তবে এই গাছের কিছু কিছু অংশ বিষাক্ত এবং প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপের অধিবাসীরা এককালে এই ফলের রস থেকে বিষাক্ত তীর বানিয়ে নিত।




এই গাছ এত উঁচু হয় যে সাধারণ ক্যামেরায় এর পুরো উচ্চতা বোঝানো মুশকিল। এটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় থিটপক গাছ। এর শিকড়গুলি হয় অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়ানো buttress root. প্রাচীনকালে এই শিকড় দিয়ে নৌকা তৈরি হত। এক একটি গাছ দেখলে বোঝা যায় যে “মহীরুহ” বলতে কী বোঝায়। দুটি ছড়ানো শিকড়ের মধ্যে যে ফাঁকা স্থান থাকে, সেখানে আট-দশজন মানুষ অনায়াসে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে (পরের ছবি দেখুন)।









এই গাছটির নাম পাদাউক। এর বৈশিষ্ট্য হল এই গাছের ডাল কাটলে লাল বৃক্ষরস বেরিয়ে আসে। এর অন্য নাম হল Andaman Redwood বা East Indian Mahogony. এই গাছের কাঠ দুর্মূল্য এবং নানা কাজে ব্যবহার হয়। এটি আন্দামান রাজ্যের জাতীয় বৃক্ষ। এই গাছের বাণিজ্যিক ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।






হ্যাভ্লক দ্বীপের সৈকতে পাওয়া যায় ম্যানগ্রোভ বৃক্ষের কিছু কিছু নিদর্শন। এই ছবিটি হ্যাভ্লকের রাধানগর সৈকতে তোলা। পরের ছবিতে, ওই একই গাছের একটু কাছে গেলেই, দেখা যাচ্ছে মূল কাণ্ডের চারপাশে শত শত aerial roots। লবণাক্ত জলে জন্মানো গাছেরা এভাবেই বেঁচে থাকে।





বেশ বেলপাতার মত দেখতে এই লতার পাতাগুলো। অর্থাৎ, তিনপাতাওয়ালা compound leaf। বৈজ্ঞানিক নাম Macroptilium, purple bush-bean। এই গাছ দেখা যায় পেরু বা ব্রাজিলে। সেখান থেকে এসে কিভাবে যে আন্দামানের দ্বীপে এই লতা উপনিবেশ স্থাপন করেছে, সেটাই বিস্ময়ের। এটি সৈকতের কাছেই থাকে এবং মাটির ক্ষয় আটকায়।






ঠিক এইরকম সৈকতের ক্ষয় আটকানোর আরেকটি গাছ হল Scaevola। এর অন্য অনেক নাম আছে, যেমন sea lettuce, beach cabbage and fanflower। এই গাছ জন্মায় একদম বালিয়াড়ির পাশেই। এই গাছের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সৈকতে যখন স্ত্রী কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসে, তখন এই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়।





আর সব শেষে দেখাই এলিফ্যান্ট সৈকতে ম্যাংগ্রোভ অরণ্যের কিছু ঝলক।



লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সময়ে সময়ে হাতে কলমও তুলে নেন।





Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page