top of page

কুদরেমুখ ট্রেক: বর্ষার পশ্চিমঘাটে পান্না সবুজ ঘাসবন আর রেইন ফরেস্টে

..

কর্ণাটকের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় কুদরেমুখ শৃঙ্গ। 'শোলা' বন আর ঘাসবনের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করে পৌঁছাতে হল সেই শৃঙ্গে। এ এক অদ্বিতীয় বাস্তুতন্ত্রের সাথে মোলাকাতের অভিজ্ঞতা যা ধরে রেখেছে দাক্ষিণাত্যের নদীগুলিকে, আশ্রয় দিয়েছে বিরাট এক জীববৈচিত্রকে। লিখছেন সুমন্ত ভট্টাচার্য্য


ছড়িয়ে রয়েছে কুদরেমুখ রেঞ্জের শোলা ঘাসবন আর বৃষ্টি অরণ্য

পৃথিবীতে ইউনেস্কোর ঘোষণা মত যতগুলি biodiversity hotspot রয়েছে তার মধ্যে ভারতে যে চারটি রয়েছে- তার অন্যতম হল পশ্চিমঘাট পর্বতমালা। সেই গুজরাত থেকে শুরু হয়ে মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক, কেরল, তামিল নাড়ু হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা অবধি এর বিস্তৃতি। পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যায় না এমন সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্হান এই সব বায়োডাইভার্সিটি হটস্পটে যার অনেকগুলোই আজ বিপন্ন, কারণ হিমালয়ের থেকেও প্রাচীন এই পর্বতমালার আদিম অরণ্যের মাত্র ২৫% ই এখন টিকে আছে মানুষের অত্যাচারের ফলে। অথচ এই অরণ্য ও পর্বত, তার তৃণভূমি ধরে রেখেছে গোটা দাক্ষিণাত্যকে। এই পশ্চিমঘাট পর্বতমালা নিয়ন্ত্রণ করে ভারতের বিরাট ভূ-ভাগের বর্ষাকে আর বর্ষার জল ধরে রেখে সারা বছর সে জীবন দান করে দক্ষিণ ভারতকে। বিচিত্র তার যে শোলা অরণ্য ও তৃণভূমি, তা জন্ম দিয়েছে কাবেরী, কৃষ্ণা, তুঙ্গভদ্রা, গোদাবরীর মত নদীকে। শোলা কথাটি তামিল যার অর্থ বৃষ্টি-অরণ্য।

সেদিন চলেছি চিকমাগালুর জেলার মুল্লডি গ্রামের উদ্দেশ্যে হাসান জেলার বেলুর থেকে। উদ্দেশ্যে মুল্লডি থেকে কুদরেমুখ শৃঙ্গে ট্রেক করে পৌঁছানো। অ্যাডভেঞ্চার তো বটেই তবে তার থেকেও বেশি কৌতূহল। এই শোলা অরণ্য আর ঘাসবনের বাস্তুতন্ত্রকে কাছ থেকে দেখা, বোঝা। কর্ণাটকের ঐতিহাসিক শহর বেলুর আর হ্যালেবিদের অদ্বিতীয় স্হাপত্য আর ভাস্কর্য দেখে চোখ তখন ছানাবড়া।বেলুরে বন্ধু দীপায়ন পাঠিয়ে দিয়েছিল ওর কোম্পানির গাড়ি। তাতে করেই আপাতত চলেছি মোদিগের, কোট্টিগের হয়ে কলসা শহরের দিকে। ভদ্রা নদীর তীরে কর্ণাটকের অখ্যাত এক পাহাড়ি শহর, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা।

কালসার পথে

চারিদিকে কফি বাগিচা আর অরণ্যের বিস্তার দেখছি পথে যেতে যেতে। মসৃণ রাজ্য সড়ক। সুশৃঙ্খল ভাবে চলছে যানবাহন।মাঝে মধ্যেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি আসছে। ক'দিন ধরেই কোন এক নিম্নচাপে মেঘ-বৃষ্টি পিছু ছাড়ছে না পশ্চিমঘাট পর্বতমালার। দেখতে দেখতে এসে গেল কালসা। কালসা ছাড়িয়ে যেতে হবে আমায় বেলাগাল। তারপরে আর এই গাড়ি যাবার রাস্তা নেই। পাহাড়ি এবড়ো খেবড়ো পথে ফোর হুইল পিক আপ ভ্যান আসবে হোম-স্টে অবধি নিয়ে যেতে।ছবির মত ছোট শহর বেলাগালে এসে বিদায় জানালাম মারুতি কোম্পানির ড্রাইভারকে। রুকস্যাক, ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছি পিক আপ ভ্যান। একটু পড়ে শব্দ করতে করতে পাহাড়ি পথে বেয়ে নেমে এল সেটি। ব্যাগ তুলে উঠে বসলাম চালকের পাশে।

উঠে যাবার রাস্তার শুরুতেই দু'পাশে সবুজকে সাক্ষী রেখে বয়ে চলেছে সোমাবতী নদী।গিয়ে মিশেছে ভদ্রায়। এই ভদ্রাই পরে তুঙ্গ নদীর সাথে মিলে জন্ম দিয়েছে তুঙ্গভদ্রার, যা কিনা কৃষ্ণারই উপনদী। গাড়ি চালকের সাথে এই সব কিছু নিয়ে, ট্রেকিং নিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে কথা বলতে বলতে চলেছি। চলছি তো না, পাহাড়ি পথে নাচানাচি করছি। কোমরের স্লিপ ডিস্কটি জানান দিচ্ছে আর মনে পড়ে যাচ্ছে আমার স্পাইনের কনসালটেন্ট বন্ধু সুস্মিতের কথা।দেখতে দেখতে এসে গেল উত্তুঙ্গা হোম-স্টে। উত্তুঙ্গা মানে কন্নড় ভাষায় শৃঙ্গ। গাড়ি থেকে নেমে এসে দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। চারপাশে অরণ্য আর কফি বাগিচার উপরে এক পাহাড়ের উপরে এই দু-তলা শৃঙ্গ। দূরে দূরে সব পাহাড়ের উপরে দেখতে পাচ্ছি সবুজ ঘাসের প্রান্তর। হিমালয় হলে বলতে হত বুগিয়াল। কিন্তু এগুলো সব শোলা ঘাসবন।তাদের প্রকৃতি আলাদা।

হোম স্টে'র বারান্দা থেকে

আজ এখানে আর কোন অতিথি নেই।সপ্তাহের মধ্যের দিন হওয়ায়। ভিড় যত সপ্তাহান্তেই। সন্ধেবেলায় বারান্দার থেকে দেখছি দূর পাহাড়ে সূর্যের অস্ত যাওয়া। নীচের জঙ্গল আর কফি বাগান থেকে ভেসে আসছে ময়ূরের কেকাধ্বনি। গাছে গাছে নেচে যাচ্ছে ছোট ছোট পাখি। কিন্তু বড় লেন্স সঙ্গে নেই এই সফরে। তাই তাদের ছবি নেবার উপায় নেই, দেখেই ক্ষান্ত দিতে হচ্ছে। অন্ধকার নেমে আসার পর দূরের গ্রামে জ্বলে উঠল জোনাকির মত আলো। দূরের পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে কখনও যাচ্ছে এক-আধটা গাড়ি।নীচের খোলা চত্বরে ক্যাম্প-ফায়ারের আগুন জ্বলে উঠেছে। চা নিয়ে সেখানে গিয়ে বসলাম। বাতাসে একটা ঠান্ডা ছোঁয়া। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের খাবার তখন হজম। একটু পরে ডাক আসবে রাতের ডিনারের। তার আগে গা গরম করে নেওয়া।

দু'রকম চিকেনের পদ রান্না হয়েছিল দক্ষিণ ভারতীয় পদ্ধতিতে। অসাধারণ রান্নার হাত হোম-স্টে'র প্রবীণ কর্তার। আর সাথে তো আছেই রসম্। সেটাও দারুণ লাগছে। কর্ণাটকে যে ক'দিন আছি- এক এক স্হানে রসমের রান্না একটু আধটু আলাদা রকমের হলেও লাগছে দারুণ। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম ক্যামেরা থেকে জুতো, মোজা, জোঁক প্রতিরোধী মোজা, রেনকোট , এমনকি ছাতা গুছিয়ে নিয়ে। ছাতা নিয়ে আগে কখনও ট্রেক করিনি, তবে এই ট্রেক নিশ্চই হিমালয় পথের মত অত বন্ধুর হবে না। ক্যামেরাটা তো বাঁচিয়ে রাখা চাই রোজকার এই ঘনঘোর বর্ষার হাত থেকে।

হোম স্টে

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করে বার হতে হতে আটটা তো বেজেই গেল। এখন হালকা রোদ। তবে পাহাড়গুলোর ওপরে বেশ ভালই মেঘ দেখা যাচ্ছে। এসে গেছেন আমার গাইড চন্দ্রু। কাছেই গ্রামের প্রবীণ এক স্হানীয় বাসিন্দা। জিপে করে যেতে হবে ট্রেক শুরুর পয়েন্টে ৪ কিলোমিটার মত। আবার কফি বাগান, জঙ্গল, পথের উপর দিয়ে বয়ে চলা ঝর্ণা, উড়ে যাওয়া ময়ূর দেখতে দেখতে এসে গেলাম বন বিভাগের চেকপোস্টে মুল্লডির শেষ প্রান্তে। দূরে দেখা যাচ্ছে সোমাবতী নদীর ঝর্ণা হয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা। প্রয়োজনীয় পারমিট কেটে পা রাখলাম সংকীর্ণ একটা বেড়া পার হয়ে ট্রেকিং পথে। যে রেইনফরেস্ট আর ঘাসবন দেখার আশায় কবে থেকে পরিকল্পনা করছি, সেখানে অবেশেষে পা রাখতে পেরে একটা রোমাঞ্চ হচ্ছে। যদিও আকাশ মেঘে ঢাকা। তাই যাত্রাপথের শুরুর একটু পরেই কুদরেমুখের যে শৃঙ্গ দেখা যায় এখান থেকে তার দেখা মিলল না। কুদরেমুখ কর্ণাটকের পশ্চিমঘাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এর অর্থ- ঘোড়ার মুখ ।

রেইন ফরেস্ট আর ঘাসবন। এভাবেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে। ডেকে আনছে বৃষ্টিকে।

আকৃতির জন্য এই নামকরণ। যদিও কর্ণাটকের সর্বাধিক উচ্চতার যে শৃঙ্গ মূল্যায়নগিরি রয়েছে চিকমাগালুর শহরের অদূরে তার শিখরের বেশ কাছ অবধি গাড়ি চলে যায়। ফলে কুদরেমুখ হল সবচেয়ে দীর্ঘ ট্রেক এই রাজ্যের, আর সবথেকে সুন্দরও। এই ট্রেকপথ পড়ছে কুদরেমুখ ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে, যে ন্যাশানাল পার্ক একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।তাই এখানে প্রবেশ ও বার হবার সময়ের খুব কড়াকড়ি। সন্ধে নামার আগেই বার হয়ে আসতে হবে। তাই গাইড চন্দ্রু বারবার তাড়া দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি পা চালাতে। এদিকে পথের দুপাশে কত রঙিন ফুল, আদিগন্ত বিস্তৃত ঘাসবন আর নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী। সেসব দেখি না ঝটপট পা চালাই!

সেই বৃষ্টিবনের মধ্যে দিয়ে

এদিকে আবার শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। রেনকোটের উপর ক্যামেরাটা ঝুলছে।ছবিও তো নিতে হবে। অগত্যা এক হাতে ছাতা নিয়ে নিলাম। এখনও অবধি বড় চড়াই ভাঙ্গা হয়নি। কিন্তু দেখতে দেখতে এসে গেল বেশ চওড়া একটা পাহাড়ি নদী। এটা পার হতে হবে। চন্দ্রু কয়েকটা পাথর দেখাল- এর উপরে পা রেখে পেরোতে বলল। কিন্তু পার হতে গিয়ে দেখা গেল পায়ের ওপর দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। গেল গেল সব ভিজে। ট্রেকিং শু, অ্যান্টি লিচ মোজা, তার নীচের মোজা। জোঁকের কামড় আটকাতে পায়ে মেখে আসা ডেটলও সব গেল ধুয়ে। চন্দ্রুর উপরে একটু রাগই হল যে ও ঠিক করে বললে অন্তত জুতো, মোজাটা ভিজত না খুলে নিলে।

নদীই যখন পথ




ওপারে উঠে সব খুলে সাধারণ মোজাটা খুলে নিলাম। আবার জোঁক প্রতিরোধী মোজাটা পরে, জুতো চাপিয়ে হাঁটতে লাগলাম। আর যদি পথে নদী পরে তো খুলে নেব। কিন্তু বৃষ্টির তোড় ক্রমশ বাড়ছে। বৃষ্টিতে ট্রেক করিনি আগে তা নয়! কিন্তু এমন লাগাতার! জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ চলতে চলতে যখন আবার নদী এল তখন সর্বাঙ্গ গেছে ভিজে। চড়াই উৎরাই করতে করতে anti leech socks ও আর নিজের স্হানে নেই। আর নদীর দেখা পাচ্ছি কিছু পরে পরেই। সর্বাঙ্গে ভিজে গিয়ে আর কতবারই বা জুতো খোলা যায়। লাগাতার বর্ষায় শিবের জটার বাঁধন খুলে জল নামছে অঝোর ধারায়। কোথাও নদীটাই পথ। তার স্রোত ধরে ধরে এগিয়ে যাওয়া।

বেশ বুঝতে পাচ্ছি পায়ের নীচ থেকে আক্রমণ করে চলেছে জোঁক। যাদের কামড়ে যন্ত্রণা নেই, কিন্তু আছে রক্তক্ষয়। মুষলধারে বৃষ্টিতে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিচ্ছি ক্যামেরা। আবার বৃষ্টির বেগ কমলে বার করে নিচ্ছি। দেখতে দেখতে একটা ফুলে ছাওয়া পথ পার হয়ে এলাম। শেষ বর্ষায় কুদরেমুখের ঘাসবনে বেগুনী হলুদ ঘাসফুলের সমারোহ। বেশ একটা খাড়া চড়াই চড়ার পর একটা সময়ে এসে পড়লাম মেঘের মধ্যে। সবুজ ঘাসবনের মধ্যে খাদের ধার দিয়ে সরু পথ। দু'হাত দূরে যাচ্ছে না দেখা। দেখতে পাচ্ছি না গাইডকেও। এক এক সময়ে মেঘ সরে পাশের সবুজ পাহাড় দেখা দিচ্ছে। পান্না সবুজ তাদের বুক। সেই সবুজ পাহাড়ে ঘন কালো জঙ্গল মাঝে মাঝে।

সবুজ পাহাড় ডাকে

এই ঘাসবন আর অরণ্য ধরে রাখে মৌসুমি বাতাসের মেঘে বয়ে আসা বৃষ্টিকণাকে। আর সারা বছর ধরে জল ছেড়ে তা সতেজ রাখে এই পশ্চিমঘাট থেকে নির্গত হওয়া নদীগুলিকে। পথে ঝরে পরে থাকা পাতার স্তূপও এই কাজে সাহায্য করে। এই ঘাসবন আর অরণ্যে বাস কত বিচিত্র প্রাণীর যাদের অনেককেই সারা পৃথিবীতে শুধু এই পশ্চিমঘাটেই পাওয়া যায়। এই শোলাবন তাই শুধু ভারতের বড় অংশের মানুষেরই নয়, অসংখ্য প্রাণীরও শেষ আশ্রয়। অথচ গত একশ বছরে শিল্প, পরিকাঠামো আর চাষাবাদ, মূলত কফি ও চা'য়ের জন্য একে ধ্বংস করেছি আমরা নির্বিচারে। আর কমে আসা জল নিয়ে বিবাদে বিবাদে জড়িয়েছে রাজ্যগুলি, চেন্নাইয়ের মত শহরে পড়েছে হাহাকার।

হেঁটে চলেছি বৃষ্টির মধ্যে

এসব ভাবতে ভাবতেই পথ চলছিলাম। দেখছি কিভাবে মেঘ উড়ে উড়ে এসে পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খাচ্ছে। আবার নতুন করে শুরু হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। এমনটাই আমরা ভূগোলে বইতে পড়েছিলাম না? বৃষ্টিভেজা পাথুরে জমিতে পা হড়কে যাচ্ছে বারবার। তার মধ্যেই একবার নিবিড় বন, আর একবার খোলা ঘাসবন- এভাবে পরিবর্তন হচ্ছে পথের আশ্রয়ের। প্রতিটা বনেই একটা , দুটো করে ঝরণা নেমে এসেছে। সাবধানে পার হয়ে যেতে হচ্ছে বর্ষার জলে পুষ্ট সেসব সতেজ নদীর স্রোত। পিছনে একটা দল আসছিল। তারা আর পুরো পথ এল না মাঝরাস্তা থেকে। হয়ত বৃষ্টিতে বিরক্ত হয়ে ফিরে গেছে।

মেঘে ঢাকা বনে

কুদরেমুখ শৃঙ্গের কাছাকাছি পৌঁছাতে বাড়ল বৃষ্টির বেগ। তার সাথে জোর হাওয়া। শৃঙ্গ খুব দূরে নয়। অথচ দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা পড়ে যাচ্ছে এই উচ্চতা থেকে নীচের সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য। একটা দল নেমে আসছে ওপর থেকে। কথায় বুঝলাম ব্যাঙ্গালোর থেকে এসেছে। বৃষ্টি আর জোঁকের কামড়ে অস্হির। আমি আবার দু'দিন পরেই কুরিঞ্জল ট্রেক করব শুনে একটু অবাক হল।বলল- is this not enough? অবসন্ন লাগছে আমারও এই টানা বৃষ্টিতে।তবু শৃঙ্গের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে চললাম।চন্দ্রু পাশের জঙ্গলের মধ্যে ঝরণা থেকে জল নিয়ে এলেন। প্রাণ ভরে খেলাম সে সতেজ জল।

সামনে শৃঙ্গ, কিন্তু অদৃশ্য

সমুদ্রতল থেকে ১৮৯২ মিটার উচ্চতায় এই শৃঙ্গে উঠতে চড়তে হয় ৯ কিলোমিটার। নামতেও তাই। শৃঙ্গে এসে দেখি এক হাত দূরেও ভাল করে ঠাহর করা মুশকিল মেঘের সে দেশে। তবু তার মধ্যেই কিছু ছবি নিলাম সেই আধো আলোছায়াতে। নিজের ব্যাগ খুলে চন্দ্রু বার করলেন দু'জনের লাঞ্চপ্যাক যেটা হোম-স্টে থেকে দিয়ে দিয়েছিল। বেজায় খিদে পেয়েছে তখন। আর দক্ষিণী স্টাইলে পোলাওটি হয়েছিলও বেশ। সাথে রায়তা।

অবশেষে শিখরে

ফিরতে শুরু করলাম তাড়াতাড়ি। কারণ ন্যাশনাল পার্ক থেকে বার হবার সময় বাঁধা। পিছল পথে নামতে হবে দ্রুত। বৃষ্টি যেন একটু কমেছে। নীচে বিস্তৃত ঢেউ খেলানো সবুজ পাহাড় পশ্চিমঘাটের এখন চোখের সামনে। সেখানে মেঘেরা চড়ে বেড়াচ্ছে কবির ভাষায়, গাভীর মত। একটু আলো পেতে বেশ কিছু ছবি তুলে নিলাম। নীচে সেই ট্রেকারদের দলটাকে দেখা যাচ্ছে পিঁপড়ের মত। আবার সেই বন আর ঘাসের পথ দিয়ে, ঝর্ণার স্রোত পার হয়ে ফিরে চলা। বুক ভরে শ্বাস নেওয়া আদিম পৃথিবীর। প্রত্যক্ষ করা ভারতের এক বিচিত্র ও অদ্বিতীয় প্রাকৃতিক ব্যবস্হাকে।




লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় চিকিৎসক। প্রকৃতি ও অরণ্যপ্রেমী। 'বনেপাহাড়ে' ওয়েবজিনের সম্পাদনার দায়িত্বে।



ছবি: লেখক


বনেপাহাড়াতে পাঠাতে পারেন আপনার ভ্রমণ ও পরিবেশ বিষয়ক রচনা,ছবি : boneypahare21@gmail.com






Comentários


474525369_1074216644505260_833710345513391369_n.jpg
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page