top of page
  • ..

কুনো ন্যাশানাল পার্কে চিতারা লড়ছে গরম ও আর্দ্রতার সাথে

মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশানাল পার্কে আফ্রিকা থেকে আনা চিতাদের একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। কী ভাবছেন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা? কী অভিমত বিশেষজ্ঞদের? সবার সাথে কথা বলে লিখছেন সুচিতা ঝা


কুনো ন্যাশানাল পার্কে চিতা। ছবি: https://www.kunonationalpark.org/

২০২২ সালে ভারতীয় বন্যজীবনের অন্যতম যুগান্তকারী ঘটনা চিতা প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি চালু হওয়ার পরে নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে আনা কুড়িটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতার মধ্যে ছ'টি গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এবছরের আগস্টের মধ্যে অস্তিত্বের সংগ্রামের লড়াইয়ে যুঝে উঠতে না পেরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পস্থলে জুলাই এবং আগস্টে তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতা - তেজস, সুরজ এবং ধাত্রীর সাম্প্রতিক মৃত্যু ওদের পর্যবেক্ষণ এবং সুস্থতা নিয়ে যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এই মৃত্যুর জন্য চিতার স্বভূমি আফ্রিকা এবং প্রত্যাবর্তনভূমি ভারতবর্ষের মধ্যে আবহাওয়ার প্রভেদগত দিক'কে দায়ী করেছেন, একাংশ অভিযোগ হেনেছেন কর্তৃপক্ষের নানান উন্নাসিকতাকে। শেষ তিনটি মৃত্যু ঘটেছে এক মাসের চেয়ে সামান্য বেশি সময়ের ব্যবধানের মধ্যে। তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে রেডিও কলারের নিচের ক্ষতস্থানে ম্যাগটসের ডিম পাড়া এবং সেপটিসেমিয়ার কারণকে, যা প্রকারান্তরে আহত প্রাণীর রক্তে প্রাণঘাতী এক সংক্রমণ। ধারাবাহিক মৃত্যুর এই ঘটনার আলোচিত কারণকে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি একটি বিবৃতিতে স্পষ্টত “speculation and hearsay” মর্মে অস্বীকার করেছেন । সংবাদমাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন ছবি প্রকাশ্যে নিয়ে আসে যেগুলি থেকে মৃত্যুর কারণ যে আঘাতপ্রাপ্ত ক্ষতস্থানের সংক্রমণের কারণে হয়েছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

ধাত্রী নামের চিতাটির মৃত্যুর পরে ২ আগস্ট চিতা কনজারভেশন ফান্ড অব নামিবিয়া (CCF), পূর্বতন টুইটারে (বর্তমানে X নামে পরিচিত) একটি বিবৃতি পোস্ট করেছেন, যেখানে একথা উল্লেখ করা হয়েছে যে কুনো ন্যাশনাল পার্কের সাথে সি.সি.এফ-এর পশু চিকিৎসক দল একটি ময়নাতদন্ত পরীক্ষা করেছে এবং সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ম্যাগট ইনফেস্টেশনের (myiasis) কথা স্পষ্ট উল্লিখিত। দু'টি পুরুষ চিতার মৃত্যুও একই কারণে ঘটেছে বলে বলা হয়এবং সেই কারণেই ধাত্রীকে পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল। সি.সি.এফ. নামিবিয়ার বনসংরক্ষণ আন্দোলনের এক সদস্য সংস্থা যারা বন্যপ্রাণ ব্যবস্থাপনার প্রতি দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা বন্য পরিবেশে চিতা সংরক্ষণের জন্য সারা বিশ্বের নানান সরকারি সংস্থার সাথে একযোগে কাজ করছে। নামিবিয়া থেকে ভারতে আটটি চিতার আন্তঃমহাদেশীয় স্থানান্তরণে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে এই সংস্থা। ধাত্রীকে ৩ জুন তার ঘেরাটোপ বা এনক্লোজার থেকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তার রেডিও কলারের ত্রুটির কারণে প্রায় চার দিন ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে ট্র্যাক করে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চলাকালীন আকস্মিকভাবে আগস্টের ২ তারিখে তাকে মৃত অবস্থায় দেখা যায়। তার মৃত্যুর পরে আরও চারটি চিতা ম্যাগটস্ দ্বারা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। যে চিতাগুলি এখনও বেঁচে আছে, তাদের রেডিও কলার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। টুইটারে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়: “We have removed collars from the rest of the cheetahs while we develop and test a better collar material for their monitoring devices. Two females are still out; we are working to bring them back for comprehensive health assessments and any necessary treatments.”


জলবায়ু বিভ্রাট


ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত পশুচিকিৎসক দল জানিয়েছেন যে তারা আর্দ্রতার কারণে ম্যাগটস্-এর সংক্রমণের মতো এই ধরনের ঘটনা আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেননি বলে যথেষ্ট হতচকিত। তাঁরা আরও জানান যে উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধের জলবায়ুগত পার্থক্য চিতাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা গ্রহণকারী। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশ থেকে চিতার প্রত্যাবর্তন ঘটে ভারতবর্ষের মতন উত্তর গোলার্ধের দেশে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভালরকম পার্থক্য তাদের মধ্যে। নামিবিয়ার মতন শুষ্ক দেশের প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত চিতা ভারতভূমির মতন আর্দ্র ও বর্ষাপ্রবণ অঞ্চলে নেহাতই বেমানান। কুনোতে প্রায় ৭৬৪ মিলিমিটার গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং এখানে বর্ষা প্রতি বছর অন্তত আড়াই মাস স্থায়ী হয়।


ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার পূর্বতন অধিকর্তা যাদবেন্দ্রদেব বিক্রমসিংহ ঝালা বলেন, "আমরা এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। প্রাণীদের জৈবিক ছন্দ এবং ফটোপিরিয়ড বা দিন নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।" ক্ষতগুলিতে ম্যাগটদের উপস্থিতির কারণগুলির চিহ্নিত করে ঝালা জানান যে যখন চিতাগুলি স্থানান্তরিত হয়েছিল, তখন দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল ছিল এবং তাদের শরীর তাদের ঘন শীতের লোমে আচ্ছাদিত ছিল। তখনও নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল চলমান। এছাড়াও, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার চিতারা কুনোর মতো অঞ্চলের ভারী বৃষ্টিপাতের অভিজ্ঞতারও কখনও সম্মুখীন হয়নি। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভোপাল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা এস. এন.সাহু সংবাদমাধ্যমকে জানান যে কুনো ন্যাশনাল পার্কে গত ১ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৩২১.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে ১৬১.৩ মিলিমিটার থেকে বেশি। বিজ্ঞানী ঝালা আরও বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম যে আগত চিতারা যদি গরম বোধ করে, তবে তারা স্বাভাবিকভাবে ছায়ায় থাকতে চাইবে এবং ভারতের জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে তাদের শীতের পশমে লঘুতা আসবে। কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল না যে না যে তাদের লোম যাবতীয় আর্দ্রতা ধরে রাখবে এবং এত বড় প্রাণঘাতী সমস্যার দিকে নিয়ে যাবে।”


এই প্রকল্পের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দক্ষিণ আফ্রিকার একজন চিতা বিশেষজ্ঞ ঝালার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত। তিনি মনে করেন যে চিতার ঘাড়ের ঘন চুল থেকে গেছে ঝরে না গিয়ে । এর সাথে উচ্চ বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতার জন্য ভেজা লোম এবং বেশি মাত্রায় পরজীবী বা parasite (মূলত: tick) এর সংক্রমণ সমস্যার জন্য দায়ী । এই ধরনের সমস্যা আফ্রিকাতে খুব কমই দেখা যায় যেখানে বৃষ্টিপাত এত স্বল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে হয় না। সি.সি.এফ.-এর পরিচালক লরি মার্কার বলেন যে তারা নামিবিয়ার চিতাদের উপর ম্যাগটস্ এবং মাছির প্রাদুর্ভাব দেখেছেন ঠিকই, তবে সেখানে রেডিও কলারড্ চিতাগুলির ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়নি। ঝালা অবশ্য একথা জানান যে কলার প্রধান সমস্যা ছিল না, ক্ষত এমন জায়গায় হয়েছিল যে চিতারা তাদের ক্ষতগুলি চাটতে এবং পরিষ্কার করতে অপারগ কারণ কলারের জন্য ক্ষতস্থান অবধি তাদের মুখ পৌঁছনো কঠিন ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অন্য যে চারটি চিতা এখনও এ ধরনের সমস্যার শিকার হয় নি, তাদের কলার সরানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক ছিল ও তা সঠিক সময়ে নেওয়া হয়েছে। কলার আপাতত সরিয়ে দেওয়া এবং শরীরের লোম ছেঁটে দেওয়ায় তা ত্বককে আরো সহজে শুকাতে সাহায্য করবে এবং ক্ষত নিরাময় তাড়তাড়ি হবে।


ছবি: https://www.kunonationalpark.org/


রেডিও কলার ও ম্যাগটস্ সংক্রমণ ভারতে এর আগে ম্যাগটস্ এবং সেপটিসেমিয়ার কারণে রেডিও কলার পরানো বাঘের মৃত্যু দেখা গেছে বন্দিদশায় বেড়ে ওঠা বাঘিনী T4 এর। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পান্না ন্যাশনাল পার্কে তার ঘাড়ের ক্ষতস্থানে মাছি‌র প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল মারা যাবার সময়ে। এই ঘটনাটি ছিল ভারতে এই ধরনের প্রথম কোনও মৃত্যু। মধ্যপ্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন অলোক কুমার বলেন, “এ ধরনের সংক্রমণ নতুন নয়। তবে যথাসময়ে গৃহীত পদক্ষেপ প্রাণীদের বাঁচাতে সাহায্য করেছে। আমরা রেডিও কলার পরানো বাঘের ক্ষেত্রে এমন ঘটতে দেখেছি।" প্রসঙ্গত, T4-এর মৃত্যুর ছ'মাস পরে, রেডিও কলারের নীচে ক্ষতের কারণে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে আরেকটি রেডিও কলার পরিহিত বাঘ মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। T161 নামে মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধেরি টাইগার রিজার্ভের এক বাঘিনীর রেডিও কলারের নীচে ম্যাগটের সংক্রমণ ও সেপ্টিসেমিয়ার কারণে ২০২২-এর মার্চে মারা যায়। তবে বিজ্ঞানী ঝালা একথাও বলেন যে রেডিও কলার নীচে ম্যাগটস্ সৃষ্ট ক্ষতের কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা নিতান্তই এক শতাংশেরও কম। তিনি বলেন, “আমি আমার কর্মজীবনের মেয়াদকালে দেড়শোর বেশি প্রাণীর কলার পরিয়েছি, তাদের মধ্যে কেবল একটি এশীয় সিংহ এবং একটি বাঁদরের মধ্যে এই ধরনের সংক্রমণ দেখেছি। যখন আমরা জানতে পারি যে পশুদের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, আমরা কলারগুলি সরিয়ে তাদের চিকিৎসা করি। তারাও দ্রুত সেরে উঠেছে।” জীববিজ্ঞানী এবং বায়োডাইভার্সিটি কোলাবোরেটিভের সমন্বয়কারী রবি চেল্লামও ঝালার মতামতকে সমর্থন করেছেন। “রেডিও কলার এই প্রাণীদের মৃত্যুর অন্তর্নিহিত কারণ নয়। আমাদের অধ্যয়ন করতে হবে যে আফ্রিকান চিতারা ভারতে নির্দিষ্ট কিছু পতঙ্গ ও পরজীবীদের হাত থেকে সুরক্ষিত কি না এাবং কলারগুলি পরজীবির বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে কিনা ।”

ব্যবস্থাপনাগত গাফিলতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন বিদগ্ধ একজন বিজ্ঞানী বললেন যে জুলাই মাসে দুটি চিতার মৃত্যু নিছকই অবহেলার ফল এবং তা প্রতিরোধ করা যেত। তিনি বলেন যে এ ঘটনা 'লজ্জাজনক' যে কুনোতে অন্তত চারজন পশুচিকিৎসক এবং আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ দল উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও দুটি চিতার মৃত্যু ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, “বিজ্ঞানীদের তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না ওখানে এবং আমলা এবং রাজনীতিবিদরা নাক গলাচ্ছেন। এই দুটি সহজ প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে রয়েছে বিজ্ঞানীদের প্রবেশাধিকারের অভাব। তাঁরা সঙ্কটে থাকা প্রাণীগুলির লক্ষণ শনাক্ত করতে পেরে ওঠেন নি এবং কেন দুটি প্রাণী ক্রমাগত চুলকাচ্ছিল তাদের ক্ষতে এবং তাদের ঘাড়ে মাছি কী করে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। "


কর্মকর্তারা এখন পরিস্থিতির দায়ভার এড়াতে সব হাত ধুয়ে ফেলে চিতা অ্যাকশন প্ল্যানে প্রত্যাশিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ করছেন। চিতা অ্যাকশন প্ল্যানে এলাকা সংক্রান্ত লড়াই, অন্য শিকারি প্রাণীদের সাথে সংঘর্ষ, মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারণে মৃত্যুগুলিকে সম্ভাবনার মধ্যে রেখেছিল। বস্তুত: সেখানে ৫০% চিতার মৃত্যুর কথা বলাই হয়েছিল। কিন্তু তা বন্য পরিবেশে ছাড়ার পর, বন্দী অবস্থাতেই নয়।

যেহেতু গোটা প্রকল্পটির একটি রাজনৈতিক যোগ রয়েছে এবং এই মৃত্যুগুলি আসলে প্রকল্পটি সম্বন্ধে খারাপ বার্তা দেয়, তাই অনেক বিশেষজ্ঞই নাম গোপন রেখে কথা বলতে চেয়েছেন।

চিতার মৃত্যু আটকানো যেত ?

রবি চেলাম বলেছিলেন যে জুলাই পর্যন্ত তিনটি শাবক সহ মোট আটটি মৃত্যুর মধ্যে সাতটি প্রতিরোধ করা যেত। এর মধ্যে রয়েছে সাহসা, একটি প্রাপ্তবয়স্ক চিতা যাকে নামিবিয়া থেকে ভারতে স্থানান্তরিত করার আগে থেকেই স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ ছিল। এখন প্রশ্ন উঠেছে কেন ভারত সরকার এমন একটি চিতা আনতে রাজি হয়েছিল যে অসুস্থ ছিল এবং স্থানান্তরিত করার সময় তাকে আরও চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হতে পারে? কীভাবে তার পক্ষে সম্ভব একটি নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া? দক্ষা নামের একটি স্ত্রী চিতার মৃত্যু ঘটে সঙ্গমের জন্য দু'টি পুরুষ চিতার এনক্লোজারে তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর তারা তার ওপর আক্রমণ করায়। “কর্তৃপক্ষ যখন চিতাটিকে ঘেরাটোপের ভেতরে সঙ্গের জন্যে ছেড়ে দিয়েছিল, তখন দক্ষা মারা যায়। তাপপ্রবাহের কারণে ভারতে জন্ম নেওয়া চারটি শাবকের মধ্যে তিনটির পরবর্তী মৃত্যুও প্রশ্ন তুলেছে। যদি তারা ২০২৩ সালের মার্চ মাসে জন্মগ্রহণ করে তার মানে সঙ্গম হয়েছিল ভারতে, বন্দী অবস্থায়। বন্দী অবস্থায় চিতাদের সঙ্গম করার জন্য কেন তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল যখন তাদের মুক্তির পরে যৌনমিলন একটি মুক্ত পরিবেশে, প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে পারে?" প্রাসঙ্গিকতা বহন করে চেলামের জিজ্ঞাসা। তিনি আরও বলেন যে পুরুষ চিতা উদয়ের ক্ষেত্রে, কার্ডিও-পালমোনারি ফেলিওর মৃত্যুর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে তবে এটি কী কারণে, এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। চেলামের সতর্কতা, “চিতাগুলি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে ছিল, তবুও এই ন'টি মৃত্যু ঘটেছে। আমাদের পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন করার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে।” মধ্যপ্রদেশের নবনিয়োজিত মুখ্য বন সংরক্ষক অসীম শ্রীবাস্তব অবশ্য বলেছেন যে প্রাণীদের যত্ন নেওয়া দলটিকে এত কঠোরভাবে বিচার করা অন্যায়, কারণ তারা চব্বিশ ঘন্টা কাজ করছে এবং অবহেলার কোনও প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন যে, "সুপ্রিম কোর্টের ২০২০ সালের নির্দেশনামায় বলেছে যে চিতাগুলিকে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে আনা হবে। সুতরাং, যখন আমরা ভালোভাবেই সচেতন যে এটি একটি পরীক্ষামূলক ধাপ, তখন কীভাবে কোনও সংশ্লিষ্ট দল সবকিছুর পূর্বাভাস দেবে বলে আশা করা যায়? এই ধরনের পরীক্ষায় যেখানে পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়া যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং কীটপতঙ্গ সহ বেশ কয়েকটি কারণ বিবেচনার মধ্যে রয়েছে, কখনও কখনও এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হয়।" আগামী পথ আরও যে চারটি চিতার ম্যাগটস্ পাওয়া গেছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের জুলাইয়ের শেষের দিকে চিকিৎসা করা হয়েছে এবং তারা এখন তাদের রেডিও কলার ছাড়াই কোয়ারেন্টাইনের ঘেরাটোপে রয়েছে। অন্যান্য চিতাদের কলারও বস্তুত এই সময়েই সরিয়ে নেওয়া হয়। শ্রীবাস্তব জানান, “চারটি চিতা চিকিৎসায় ভালোভাবে সাড়া দিচ্ছে এবং তারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলে আবার বড় ঘেরাটোপে ছেড়ে দেওয়া হবে।” যাইহোক, যে পশুচিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি আমরা এযাবৎ, তাঁদেরই মধ্যে একজন বলেছেন যে চিকিৎসা হওয়ার পর থেকে তাঁদের প্রাণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই, কারণ তারা আর দেখেননি ওদের। তবে তারা আশা রাখছেন যে ওরা সম্পূর্ণ সেরে উঠবে।


বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, অবশিষ্ট এই চিতাগুলি ভারতের জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং পরবর্তী বর্ষার মধ্যে তাদের জৈবনিক ছন্দ এবং ফটোপিরিয়ড পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে কিনা। কুনোর পশুচিকিৎসকের প্যানেল পরামর্শ দেন যে পরের বছর বর্ষা শুরু হওয়ার আগে সমস্ত চিতাকে একটি দীর্ঘকালীন প্রভাবশালী অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত এবং তারপর সমস্যাগুলি পুনরাবৃত্তি হয় কিনা তা দেখার জন্য সাবধানতার সাথে তাদের পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। অপরপক্ষে, বিজ্ঞানী যাদবেন্দ্রদেব ঝালার অনুমান, ভারতের জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে নিজেদের অভিযোজন ঘটাতে তাদের জন্য এক বছর যথেষ্ট সময়। তিনি জানান, "যদি সমস্যার পুনরাবৃত্তি হয় এবং আমরা আরও মৃত্যুর ঘটনা দেখতে পাই, তাহলে আমাদের উত্তর গোলার্ধের আফ্রিকান দেশগুলি থেকে চিতা আনা শুরু করতে হবে, যেমন সোমালিল্যান্ড এবং ইথিওপিয়া। তারা সম্ভবত আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম হবে।" চেলাম এই পদ্ধতির সাথে একমত নন এবং পরবর্তীকালে চিতা স্থানান্তরের আগে একটি অনেক বড় উপযুক্ত আবাস গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, “সঠিক এবং পর্যাপ্ত বাসস্থান ছাড়া, আরও চিতা আমদানি করার কোনও বিজ্ঞানসম্মত তাৎপর্য নেই। আরও উপযুক্ত সাফারি পার্ক তৈরি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের লক্ষ্য অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং প্রাণীদের আনার আগে ৪,০০০ – ৫,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে উচ্চ-মানের আবাসস্থল প্রতিষ্ঠার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা। বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করে শুধু আফ্রিকার দেশে থেকে চিতা আমদানি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।"

শ্রীবাস্তবের মতে, এই প্রকল্পের সার্থকতা বা ব্যর্থতার মূল্যায়নের জন্য মাত্র পাঁচ মাস উপযুক্ত সময় নয়। অন্ততপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছরের দীর্ঘকালীন সময়রেখা নির্ধারণ করবে ভারতে চিতা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।


মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করলেন প্রতীক মহাপাত্র বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2023/08/cheetahs-introduced-in-kuno-national-park-struggle-with-humidity-and-weather-conditions/



107 views0 comments
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page