top of page
  • ..

নেপালের মোমো-প্রীতি অস্তিত্বের সংকটে ফেলছে বন্য মহিষদের

মোমো নেপালে খুবই জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু এই মোমোর প্রতি লোভ কিভাবে সংকটাপন্ন করে তুলেছে নেপালে অল্প সংখ্যায় টিকে থাকা বন্য মহিষ বা wild water buffalo দের সেই চিত্র তুলে ধরেছেন অভয় রাজ জোশী






কুচি কুচি করে কাটা মাংস, স্পাইসি সসের সঙ্গে দিয়ে- মোমো যার নাম- নেপালই ধরাধাম। তবে শুধু নেপাল বলেই নয়, মোমোর অরিজিন রয়েছে তিব্বতেও। কিন্তু মোমো খাদ্যটি একদিক থেকে নপালিদের কাছে প্রধান আবার আরেকদিক থেকে জনপ্রিয়। পেটের এবং মনের আশ একসঙ্গে মিটিয়ে দেয় মোমো। তাই লাঞ্চ, ডিনার এবং মাথা চাড়া দেওয়া খিদেকে ধামাচাপা দেবার জন্য মোমোর বিকল্প নাই। আর মোমোর স্বাদ বাড়াতে বহুক্ষেত্রেই মোষের মাংস দেওয়া হয়। নেপালের শহরাঞ্চলের মানুষ মোষের মাংসের মোমো খেতে বড্ড ভালোবাসেন। তাই খেয়াল থাকে না যে মোষের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। বর্তমানে সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে।পূর্ব নেপালে বিপন্ন বন্য জলের মহিষ (wild water buffalo) বা বলা যেতে পারে, অর্ণর অস্তিত্ব-সংকট পৌঁছে যাচ্ছে চরম সীমায়। যার বৈজ্ঞানিক নাম- Bubalus arnee।


“আমরা খেয়াল করে দেখেছি, নেপালের বাজারে বিক্রি হওয়া মাংসের ৭০% মোষের” বললেন নেপাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল বা NARC- এর বিজ্ঞানী ভোজন ধাকাল। সঙ্গে এটাও জানালেন, “মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে প্রস্তুত যদি মাংসটা বন্য এবং গৃহপালিত মোষের ক্রসব্রিড হয়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এক হাইব্রিড স্ত্রী মোষ এক গৃহপালিত স্ত্রী মোষের (Bubalus bubalis) থেকে অনেক বেশি দুধ দিতে সক্ষম” ।



বর্ডারের অন্য পাশে, ভারতের দিকের কিছু আঞ্চলিক মানুষও তাদের গৃহপালিত মোষকে ছেড়ে রাখে কোশী তপ্পু ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভে, নিশ্চিন্তে। বর্তমানে নেপালের বন্য মহিষদের এক এবং একমাত্র আবাসভূমি এটাই। “কয়েকদিন আগেই আমরা কিছু লোককে এখান থেকে গ্রেফতার করেছি। তারা এখানে তাদের মোষ চুপি চুপি ছেড়ে দিতে এসেছিল”, জানালেন কোশী তপ্পু ওয়াইল্ডলাইফ রিজার্ভের চিফ ওয়ার্ডেন রমেশ কুমার যাদব। তিনি বললেন, “ গৃহপালিত মোষের সঙ্গে বন্য মোষের প্রজনন করানো নেপালে বেআইনি। এটা বন্য মহিষের জন্য সংকটের সৃষ্টি করবে। ”


“আমরা গৃহপালিত মোষের ওপর একটা সার্ভে করতে গিয়েছিলাম। কয়েকটি মোষের মধ্যে লক্ষ্য করলাম বন্য মহিষের কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন মজবুত পেশি, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সাদা সাদা দাগ। আর এটা একমাত্র সম্ভব ক্রসব্রিড করালেই” বলছেন NARC- এর বিজ্ঞানি ভোজন ধাকাল। IUCN, গ্লোবাল কনজারভেশন অথোরিটির মতে, আগে যেখানে বন্য মোষের বিচরণক্ষেত্র বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনামে ছড়িয়ে ছিল আজ তারা রয়েছে শুধু ভারত, নেপাল, ভুটান, কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে। গত তিন দশকে বন্য মহিষের সংখ্যা কমেছে ৫০% মতন।কমে দাঁড়িয়েছে ২৫০০-৪০০০। অনেকে তো মনে করেন, বন্য মহিষ বলতে আসলে যা বোঝায়, এতদিনে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বন্য মহিষের গৃহপালিত ও ভবঘুরে মহিষের সাথে বেলাগাম প্রজননের জন্য।


ধাকালের মতে, অরণ্যবাসী মহিষের তুলনায় গৃহপালিতরা চেহারায় ছোট হয়। তাই গৃহপালিত পুরুষ মহিষ এবং বন্য স্ত্রী মহিষের মধ্যে মিলন হওয়া একটু কঠিন। কিন্তু বন্য পুরুষ মহিষের চেহারা বড় হওয়ায় খুব সহজেই তারা গৃহপালিত স্ত্রী মহিষের সঙ্গে মিলন করতে পারে। ফলে, বন্য পুরুষ মহিষের জিনগত ক্ষয় হবার সম্ভাবনা কম। এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন রমেশ কুমার যাদব নিজেও। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “তার মানে যথেচ্ছা ক্রসব্রিডিং করানোয় প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এতে রোগ বিনিময় হবার সম্ভাবনা দু’দিকেই থেকে যায়। যেমন foot and mouth অসুখ। বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আর নেওয়া যায় না।”

নেপাল হয়ে কোশী নদী ভারতের মধ্যে দিয়েও বহমান। নেপালের এই কোশী নদী সংলগ্ন মানুষদের জন্য এতসব নিয়ম রক্ষা করা মাঝেমধ্যে একটু কঠিন । এটা ঠিক যে, নেপালে গৃহপালিত পশুদের মধ্যে মোষের সংখ্যাই সর্বাধিক। কিন্তু কম জনন ক্ষমতা একটা বড় বাধা। ফলে প্রয়োজন মতন গৃহপালিত মোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় না। তার অন্যতম কারণ বিভিন্ন ধরণের প্যারাসাইটের আক্রমণ এবং তারা ভালোরকম অপুষ্টির শিকার।

গৃহপালিত মহিষ ছাড়াও ১৯৭৬ সালে কোশি তপ্পু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ঘোষণা হওয়ার আগেই এখানে ছেড়ে যাওয়া গরু ও মহিষযদের উপস্থিতিও একটা বিপদ। তারা শুধু অসুখ ছড়ায় না, বন্য মহিষদের খাদ্য ঘাসের সংকটও সৃষ্টি করে।

বনবিভাগ এবিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তেমন সাফল্য পায়নি। কিন্তু সাফল্য যে বড় রকম পাওয়া গেছে, বলা যাবে না। ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ১৬৭ টি ভবঘুরে মহিষকে মেরে ফেলে রিজার্ভের ভেতরে। কিন্তু ঘুরে বেড়ানো গরুকে তারা কিছু করতে পারে না। কারণ, একে নেপালের জাতীয় পশু মানা হয় ও হিন্দুদের কাছে তা অত্যন্ত পবিত্র।


নেপালের ওয়াইল্ড ওয়াটার বাফেলো কনজারভেশন প্ল্যান অনুযায়ী, রিজার্ভ ফরেস্টে অন্তত তিনটি বড় বড় ছাউনি দেওয়া ঘর বানানো উচিৎ। যেখানে এই মালিকানাহীন ভবঘুরে মহিষদের নিলাম করা যেতে পারে। যদিও, এই ধরণের একটি পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে যে অর্থের প্রয়োজন, সেটার ব্যবস্থা করাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এসব ছাড়াও আরও কিছু বাধা রয়েছে। এমন কিছু কিছু বহিরাগত উদ্ভিদ রয়েছে যারা বিস্তার লাভ করে রিজার্ভ ফরেস্টে। তাদের মধ্যে অন্যতম Chromolaena odorata, Eupatorium adenophorum, Lantana camara, Mikania micrantha। এদের বিস্তার সেই সকল ঘাসের জন্য সংকট হয়ে দাঁড়ায়, যে ঘাস বন্য মহিষের প্রধান খাদ্য। এছাড়া স্থানীয় কৃষকদের রিজার্ভ ফরেস্টে অবৈধ আনাগোনা তো রয়েছেই। ফলে তৃণভূমিতে আগুন লাগার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রেও বন্য মোষের খাবারে একটা সংকট উপস্থিত হয়। নদীর গতিপথ পরিবর্তন বিধ্বংসী কারণগুলোর মধ্যে একটা। আচমকা বান আসে। ফলে তৃণভূমিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ও বন্য মহিষদের বাসভূমি কমে যায়। তৃণভূমিতে জঙ্গল গজিয়ে যাওয়ায় একটা সমস্যার বিষয়।


ধাকাল মনে করেন, স্থানীয় মানুষগুলোর যদি সংকর প্রজাতির মোষের মাংসের প্রয়োজন হয় তাহলে কঠিন কোন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে চাষিদের কাছে অন্য আরেকটি সুবিধে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। সেটা হচ্ছে কৃত্রিম প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোষের গর্ভধারণ। তাহলে কৃষকরা আর তাদের গৃহপালিত মোষ সংরক্ষিত এলাকায় অবাধে ছেড়ে আসবে না। তিনি বলছেন, “আমরা একটা ষাঁড় ধরতে পারি এবং তার থেকে বীর্য নিতে পারি। যা হাইব্রিড সন্তান দিতে সক্ষম হবে। ফলে দুধ এবং মাংস পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত। কিন্তু কাজটা সহজ নয়। তার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও অর্থের সংকট রয়েছে। ”



তথ্যঋণ: Nepal Ministry of Forests and Environment. (2020). Wild Water Buffalo (Bubulus arnee) Conservation Action Plan for Nepal (2020-2024). Retrieved from https://dnpwc.gov.np/media/publication/Arna_Conservation_Action_Plan.pdf



মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2023/04/the-love-for-momos-in-nepal-is-threatening-endangered-wild-water-buffaloes/

Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page