top of page
  • ..

পশ্চিমঘাটের অরণ্যে বিপন্ন সিঙ্গালিকা (Lion-tailed macaques) বাঁদরদের রাজ্যে

পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বিশ্বের অন্যতম প্রধান biodiversity hotspot। এখানে এমন সব বিরল প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের বাস যা বিশ্বের অন্য কোথাও মেলে না। তেমন একটি প্রজাতি Lion-tailed macaques যা আজ নিরন্তর অরণ্য নিধনের ফলে বিপন্ন। সিংহের মত কেশর আর ল্যাজ বিশিষ্ট এই কালো বাঁদরদের জীবনধারন, তাদের সংকট, বিশেষজ্ঞদের ভাবনা নিয়ে আলোচনা বনেপাহাড়ের পাতায়। তুলে ধরলেন সুমন্ত ভট্টাচার্য্য


ছবি: লেখক




ওদের দেখার ইচ্ছা অনেকদিনের। কিন্তু ওদের দেখতে হলে ভেলপারাই যেতে হবে। ওখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চা-বাগানে, জনবসতির আশেপাশে ওদের আশ্রয়। গোটা পশ্চিমঘাট একসময় ওদের বিচরণের ক্ষেত্র হলেও তামিল নাড়ুর ওই ছোট্ট হিল স্টেশনেই ওদের দেখা মেলে আজকাল সহজে। দেশ-বিদেশের উৎসাহী মানুষ তাই ওদের, মানে লায়ন টেইলড ম্যাকাকদের দেখতে চলে যান ভেলপারাই।

কর্ণাটকের আগুম্বেতে এসেছিলাম মূলত: Herpetofaunaর সন্ধানে, অর্থাৎ পশ্চিমঘাটে পাওয়া যায় এমন কিছু সরীসৃপ আর উভচর প্রাণীদের দেখতে। আর এখানকার বৃষ্টিভেজা চিরহরিৎ অরণ্যকে কাছ থেকে দেখব বলে। বস্তুত: আমার দুই সপ্তাহব্যাপী কর্ণাটক পশ্চিমঘাট সফরের এটাই শেষ পর্যায় বলা যায়। শেষ দিন আমি আর আমার হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া সফরসঙ্গী বেহালার বাসিন্দা ভাস্বরণবাবু ঠিক করলাম আজ আমরা ঘুরে দেখব আগুম্বের আশপাশটা। এখানকার ঘাট রোড, সেখান থেকে দূরে আরব সাগরের ওই পারে সূর্যাস্ত, বর্ষার বৃষ্টিতে ভরাযৌবন সব জলপ্রপাত আর ‘মালগুডি ডে’স’ র সেই ছোট্ট শহরটি। তাই ডেকে নিলাম ওখানে এক টাটা ম্যাজিক ভ্যানওয়ালাকে। এই গাড়িতে করেই আমি পৌঁছেছিলাম কুদরেমুখ ন্যাশনাল পার্কের ভগবতী নেচার ক্যাম্প থেকে আগুম্বেতে। তার সাথে একটু দরদাম করে বললাম আশপাশটা ঘুরিয়ে দেখাতে।

ঘুরছি, দেখছি….কিন্তু মনের কোনে একটি আশা নেচে নেচে যাচ্ছে। খুব অল্পই কিছু ছবি দেখেছি আগুম্বেতে লায়ন টেইলড ম্যাকাকদের যাদের সংক্ষেপে LTM বলে। আমাদের গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসা করলাম তাদের কি এখানে কোন খোঁজ আছে? তিনি বললেন, আগুম্বের ঘাট রোড যেখানে, . যার একটু পরে শুরু হয়ে যাচ্ছে সোমেশ্বরা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি- সেখানে কখনও কখনও বসে থাকে এই কালো বাঁদররা তাদের সিংহের মত সাদা কেশর হাওয়ায় দুলিয়ে। শুনেই মনটা নেচে উঠল। তাহলে তো ওদিকে যাওয়া যেতে পারে। চালক বললেন, তা যাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু পাহাড়ি পথে অনেকটা ওঠানামা। ভাড়া বেশি লাগবে। বললাম, সে হোক। তুমি একবার চেষ্টা কর ওদের যাতে দেখতে পারি।

তখন শেষ বিকালের ছোঁয়া পশ্চিমঘাটের বনে। বেশ ক’দিন টানা বৃষ্টির পর সেদিন একটু বিরাম তার। গাড়িটা যখন ঘাট রোড ধরে সানসেট পয়েন্ট ছাড়িয়ে নেমে যাচ্ছে - হঠাৎ চোখে পড়ল একদল কালো কালো বাঁদর বসে রয়েছে পথের ধারে। চোখটা প্রথমে কচলে নিলাম যে সত্যিই দেখছি তো তাদের যাদের এতদিন দেখব বলে, ছবি নেব বলে ভেবে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছে। গুটি গুটি এগিয়ে গেলাম আমরা সেইদিকে। বেশ বড় একটা দল।

ছবি: লেখক
ভারতের এই পশ্চিমঘাট পর্বতমালা হল ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট। এমন সব বিরল প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদ পাওয়া যায় এখানে যা endemic এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে। অর্থাৎ পৃথিবীতে শুধু এখানেই তাদের দেখা মেলে।

পথের ধারে গাছের ডালে, রেলিং-এ বা রাস্তার উপরেই কেউ কেউ বসে রয়েছে। আশে পাশে ছড়িয়ে আছে কিছু লালমুখো বাঁদরও (Rhesus Macaque)। ছবি নিচ্ছি, দেখছি ওদের চালচলন। ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ির পর গাড়ি। কেউ কেউ হয়ত দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের। কেউ খাবার দেবার চেষ্টা করছে যা লোকজন করে থাকে আর তাতে যে কোন বাঁদর প্রজাতির ক্ষতি বই উপকার হয় না। ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যায় পশ্চিমঘাটের পাহাড়ি পথে দাঁড়িয়ে ভাবছি যে, আসা যাওয়া করা পথচারীরা কতজন সচেতন আদৌ এদের গুরুত্ব নিয়ে। এদের মত প্রাণীদের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে আছে পশ্চিমঘাটের এই অদ্বিতীয় প্রকৃতির ভালমন্দও যে।

ভারতের এই পশ্চিমঘাট পর্বতমালা হল ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট। এমন সব বিরল প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদ পাওয়া যায় এখানে যা endemic এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে। অর্থাৎ পৃথিবীতে শুধু এখানেই তাদের দেখা মেলে। সেই গুজরাট থেকে শুরু হয়ে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, কেরল, তামিল নাড়ু হয়ে শ্রীলঙ্কা অবধি এর বিস্তার। ভারতে যে ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পর্বতমালা রয়েছে পশ্চিম উপকূল বরাবর, কেরলে পালঘাট নামক গিরিপথ দিয়ে (Palghat gap) তার দুই ভাগ হয়েছে। এর উত্তরভাগের পর্বতমালা পরিচিত নীলগিরি বলে আর দক্ষিণভাগ আন্নামালাই নামে। এই পর্বতমালার আদিম অরণ্যের মাত্র ২৫% ই এখন টিকে আছে মানুষের অত্যাচারের ফলে। আর সেই পশ্চিমঘাটে শুধু কর্ণাটক, কেরল ও তামিল নাড়ুর কিছু অংশেই দেখা মেলে এই lion-tailed macaque (LTM) দের।বিজ্ঞানসম্মত নাম Macaca silenus। কর্ণাটকে ওদের ‘সিঙ্গালিকা’ বলে, কোথাও কোথাও বলে ‘বুক্কা’। এই যে পথেঘাটে ওরা বসে আছে দেখতে পাচ্ছি এটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। ওরা হল arboreal, অর্থাৎ কিনা উঁচু ডালপালাতেই ওদের ঘোরাঘুরি, বাস। কেন তাহলে ওরা নেমে আসছে? আসছি সে কথায় । তার আগে একটু জেনে নিই ওদের সম্বন্ধে।

ছবি: উইকিমিডিয়া

ভারতে মানুষ ছাড়া আরও ২৪ রকমের মেরুদণ্ডী স্তন্যপায়ী প্রাণীর (Primates) খোঁজ পাওয়া যায়। ২ রকমের Loris, ১০ রকমের Langur, ১০ রকমের Macaque আর ২ রকমের ape এর মধ্যে পড়ে। lion-tailed macaque রা একটি বিপন্ন প্রজাতি। এদের এই নামকরণ কিন্তু ওদের মাথার চারপাশে সাদা কেশরের জন্য নয়।

ভারতে প্রাপ্ত মেরুদন্ডী স্তন্যপায়ীদের (Primates) তালিকা ও বন্য পরিবেশে তাদের বর্তমান অবস্থা EN=Endangered NT= Near threatened VU= Vulnerable LC=Least concerned তালিকা সংযোজন: লেখক

ওদের ল্যাজের শেষে যে চুলের গোছা থাকে তার সাথে সিংহের ল্যাজের মিল রয়েছে বলেই ওদের এই নাম। পশ্চিমঘাটের চিরহরিৎ বৃষ্টি অরণ্যেই এরা থাকে ১০০-১৮৫০ মিটার উচ্চতায়। একসময় বিস্তৃত বনাঞ্চলে ওরা থাকলেও আজ পশ্চিমঘাটের এই চিরসবুজ অরণ্য মানুষের উপদ্রবে খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়ায়, নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতেই ওদের দেখা মেলে। কৃষিকাজ, চা-কফির বাগান, খনি, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প খেয়ে নিয়েছে বনভূমির বিরাট একটা অংশকে। বেড়েছে জনসংখ্যা। সেইসব ছোট ছোট বসতিতে স্কুল, হসপিটাল, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে বনগুলি হয়ে পড়েছে আরও খন্ড-বিখন্ড। ফলে বিপন্ন এখানকার বন্যপ্রাণীরাও। তার সাথে অবাধে চলেছে একসময় চোরাশিকার এরা বন্যপ্রাণী আইনে সর্বোচ্চ সুরক্ষাপ্রাপ্ত হলেও। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা ধারণা করা হচ্ছে যে কর্ণাটক, কেরালা ও তামিল নাড়ুর পশ্চিমঘাটের বনাঞ্চলে মাত্র ৩০০০-৪০০০টি lion-tailed macaque টিকে রয়েছে। মাত্র আটটি স্থানে ওদের দেখা মেলে ৪৯টি জনগোষ্ঠিতে(subpopulation)। দেখতে একই হলেও পালঘাটের উত্তর ও দক্ষিণের গোষ্ঠীগুলি জিনগত ভাবে পৃথক। International Union for Conservation of Nature (IUCN) এর Red List অনুযায়ী তারা endangered। ভারতীয় বন্যপ্রাণী আইনের সর্বোচ্চ শিডিউল-১ তালিকাভুক্ত প্রাণী। পশ্চিমঘাটের বৃষ্টি অরণ্যের flagship species এই প্রজাতির বাঁদর। কিছু কিছু স্থানে এরা পশ্চিমঘাটের আর এক উল্লেখযোগ্য প্রাণী Nilgiri langurs এর সাথে একই জায়গায় অবস্থান করে, যদিও গাছের শাখা-প্রশাখার বেশি উপরের দিকে LTM রা থাকে।

কৃষিকাজ, চা-কফির বাগান, খনি, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প খেয়ে নিয়েছে বনভূমির বিরাট একটা অংশকে। বেড়েছে জনসংখ্যা। সেইসব ছোট ছোট বসতিতে স্কুল, হসপিটাল, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে বনগুলি হয়ে পড়েছে আরও খন্ড-বিখন্ড। ফলে বিপন্ন এখানকার বন্যপ্রাণীরাও

ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর পশ্চিমঘাট পর্বতমালার (হলুদ সীমানা) মানচিত্র ও সেখানে মানুষের ক্রিয়াকলাপের স্থানসমূহ

এই বাঁদরেরা দৈর্ঘ্যে ৪০-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পুরুষদের ওজন হয় ১৫ কেজি অবধি, মেয়েদের প্রায় দ্বিগুণ। ল্যাজের দৈর্ঘ্য হয় ২৪-৩৮ সেন্টিমিটার। এরা বাঁচে বন্য পরিবেশে প্রায় ২০ বছর। ওদের ল্যাজের গোরায় যে সিংহর ল্যাজের মত চুলের গোছা থাকে তা ওদের নামকরণের কারণ। আর কালো লোম ঢাকা শরীরের সাথে কালো মুখটাকে ঘিরে রাখা সাদা চকচকে কেশরের মত লোমের রাশির বৈপরীত্য ওদের এক অদ্বিতীয় রূপ দান করেছে। ছোট বাচ্চাদের মুখ অবশ্য অত কালো নয়, গোলাপি হয়। লোম গজায় দুই মাস বয়স থেকে। এক একটি দলে ওদের ১০-২০ জন করে থাকে, সর্বোচ্চ ৩৪ অবধি দেখা গেছে। প্রতি দলেই একটি দলপতি পুরুষ থাকে, এছাড়া আর এক , দুটি পুরুষও থাকতে পারে। বড় বড় পাতাওয়ালা গাছ ওদের পছন্দ। যে কোন জায়গায় ওরা থাকে না। ওদের খাবার বা আশ্রয় নেবার গাছের বিষয়ে ওরা বেশ খুঁতখুঁতে (habitat specialist)। ফলত: ছোট হয়ে আসা অরণ্যে ওদের বাসস্থানের সংকট ওদের অস্তিত্বরক্ষার পক্ষে একটা বিপদের কারণ। এছাড়াও দেরি করে যৌন পরিপূর্ণতা লাভ, দুটি বাচ্চার জন্মের মধ্যে দীর্ঘ সময়(২.৫ বছর) ওদের সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে অসুবিধার কারণ। দলের পুরুষরা হুপ-হুপ ডাক দিয়ে নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করে। দেখা গেছে ১৭ রকমের শব্দ করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে এরা। এছাড়াও শরীরের ভাবভঙ্গি দিয়েও যোগাযোগ করে। যেমন ঠোঁট প্রসারিত করে অন্যকে যেমন স্বাগত জানাতে পারে, মুখ হাঁ করে দাঁত দেখিয়ে অন্যকে ভয় দেখায়। পুরুষদের ক্যানাইন দাঁতগুলি বেশ বড় হয়। নিজেদের এলাকায় এরা অন্য কোন দলকে বরদাস্ত করে না (Territorial)।

মায়ের কোলে শৈশব। ছবি: লেখক

গাছ থেকে গাছে ওরা যাতায়াত করে সাধারণত: ( Arboreal)। ৯৩% সময় ওরা গাছের উপরেই কাটায়। চার পায়েই ওরা হাঁটতে পারে। তাই মাটিতে নেমেও খেলাধুলো করে, জলেও নামে। মানুষ বা অন্য কোন শিকারি জন্তুকে দেখলে গাছের উপরে স্থির হয়ে থাকে এরা। দলবদ্ধ হয়েই ওদের বাস, এমনকি রাতের বেলায় জড়াজড়ি করেই ঘুমায় গাছের উপরে। দলের পুরুষটি বহুগামী। সঙ্গিনী হিসাবে ভোগ করে দলের সব মেয়েদের। সারা বছর এদের বাচ্চা হলেও, বর্ষাই মূলত: প্রজনন ঋতু। গর্ভাবস্থা ছ’মাস থাকে। একটি বাচ্চাই হয় একবারে। প্রায় একবছর মায়ের সাথে থেকেই বাচ্চাটি বড় হয়। দেখা গেছে ছেলে বাচ্চারা বেশি যত্ন পায়। এরপর ছেলে বাচ্চারা এখান ওখান ঘুরে বেড়ানো পুরুষ বাঁদরদের দলে যোগ দেয় যতদিন না বড় হয়ে নিজেদের ‘হারেম’ তৈরি করতে পারে মেয়ে বাঁদরদের নিয়ে। অবশ্য মেয়ে বাচ্চারা মায়ের দলের সাথেই থেকে যায়। এই প্রজাতির একটি পুরুষ বাঁদর ৮ বছর ও মেয়েরা ৫ বছর বয়সে যৌন পরিপূর্ণতা লাভ করে। পুরুষ বাঁদরেরা দল পাল্টায় যতক্ষণ না কোন দলের নেতা সে হতে পারে। অপরদিকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটি মেয়ে Lion-tailed macaque তার প্রভাব বৃদ্ধি করে দলে। অন্য সদস্যদের থেকে পরিচর্যা পায় সে নিয়মিত।


মুখগহ্বরে খাবার বয়ে এরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। ফলে এর সাথে সাথে ফলের বীজও ছড়িয়ে পড়ে। তাই অরণ্যের বিস্তারে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দিনের অর্ধেকটা সময় ওরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। বাকি সময়টা হয় বিশ্রাম করে বা খাবারের এলাকা সন্ধান করে। সর্বভুক প্রাণী হলেও ফলই ওদের মূল খাবার। অশ্বত্থ, বট, ডুমুর, কালোজাম, cullenia নামক পশ্চিমঘাটে প্রাপ্ত একপ্রকার ফল এদের খুব প্রিয়। এছাড়া ফল না পেলে গাছের পাতা, কান্ড, ফুল, কুঁড়ি, ছত্রাক তো বটেই, পোকা মাকড়, টিকটিকি, গেছো ব্যাঙ, শামুক, পাখির ডিম আর জায়ান্ট স্কুইরালের বাচ্চার মত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদেরও ওরা খায়। বছরে দুইবার বর্ষার সময় এদের খাবার পরিমাণ বাড়ে যখন ফলের প্রাচুর্য থাকে। আর এটা যৌনমিলনরেও সময়। মুখগহ্বরে খাবার বয়ে এরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়। ফলে এর সাথে সাথে ফলের বীজও ছড়িয়ে পড়ে। তাই অরণ্যের বিস্তারে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আগুম্বের ঘাট রোডের ধারে । ছবি: লেখক

পশ্চিমঘাট পর্বতে কমে আসা বনাঞ্চল আর বাণিজ্যিক কাজে করা চাষবাস প্রভাব ফেলছে ওদের খাদ্যাভ্যাস ও সামগ্রিক ব্যবহারে। এমনকি বহিরাগত উদ্ভিদ বা কফি গাছ থেকেও খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। উঁচু ফলের গাছ কাটা পড়ায় নীচে নেমে এসে ঘোরাফেরা করছে পোকামাকড় জাতীয় খাবারের খোঁজে যা ওদের স্বভাবের বিরুদ্ধে।

মাটিতে নেমে আসার ফলে কখনও এরা গাড়ি চাপা পড়ছে, কখনও মানুষের সাথে সংঘাতে জড়াচ্ছে। বিদ্যুৎবাহী তার অবলম্বন করতে চাওয়ায় কখনও মৃত্যু হচ্ছে তাদের।

আশঙ্কা করা হচ্ছে মাত্র ২৫০০ এর মত পূর্ণবয়স্ক Lion-tailed macaque এখন রয়েছে ভারতের এই পশ্চিমঘাটে, যাদের সংখ্যা আরও ২০% কমে যেতে পারে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে। crested serpent eagles, mountain hawk-eagles বা জংলী কুকুরের মত শিকারিরা নয়, তার জন্য দায়ী হবে মানুষ। একটা সময় ব্যাপক হারে এদের শিকার হয়েছে। আশির দশকে বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী উল্লাস কারন্থ ক্ষেত্র-সমীক্ষার সময় দেখেছেন, বিভিন্ন স্থানে অধিবাসীরা কুকুর দিয়ে বা গাছে ফাঁদ পেতে শিকার করছে এদের। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী মূলত: দক্ষিণ কর্ণাটকের কুর্গ, কেরালা ও তামিল নাড়ুতে শিকারের হার বেশি ছিল যেখানে বনের অধিবাসীদের মধ্যে মাংস খাবার অভ্যাস বেশি। এমনকি মাত্র কয়েকবছর আগে একটি গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, তামিল নাড়ুর ভেলপারাইতে স্থানীয় অধিবাসীরা হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে এদের শিকার না করলেও, কেরালা থেকে আসা কিছু লোকজন এদের শিকার করছে। কর্ণাটকেও এদের সংখ্যা বিপুল কমে গেছে শুধুমাত্র বেআইনি শিকারের জন্য, যার সতর্কবার্তা উল্লাস কারন্থ আগেই দিয়ে রেখেছিলেন তাঁর গবেষণাপত্রে। এছাড়াও অন্য জন্তু শিকার করতে রাখা ফাঁদে পড়েও এরা মারা যাচ্ছে। বনভূমি কেটে ফেলায়, গাছের সংখ্যা কমে আসায় এদের যেমন ডাল থেকে ডালে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না, তেমন অভাব হচ্ছে খাদ্যের। মাটিতে নেমে আসার ফলে কখনও এরা গাড়ি চাপা পড়ছে, কখনও মানুষের সাথে সংঘাতে জড়াচ্ছে। বিদ্যুৎবাহী তার অবলম্বন করতে চাওয়ায় কখনও মৃত্যু হচ্ছে তাদের।

ভেলপারাইতে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত বাচ্চা বাঁদর। ছবি: Wikimedia commons/ P Jeganathan

এর সাথে আছে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দেওয়া, যার অবশ্যম্ভাবী ফল মানুষের সাথে সংঘাত। তামিল নাড়ুর আন্নামালাই পাহাড়ে ভেলপারাইতে ওদের বাসস্থান আশেপাশের বনাঞ্চল থেকে এতই বিচ্ছিন্ন যে, ওরা খাবারের খোঁজ যেতে পারে না অন্যত্র। লোকালয়ে হানা দেয়, রাস্তার ধারে বসে থাকে কখন পর্যটকরা গাড়ি থেকে খাবার ছুড়ে দেবে , এমনকি আবর্জনা থেকেও খাবার খুঁজে খায়। বাসস্থানের অভাব আর খাবারের সংকটে মানুষের কাছাকাছি থাকায় বাড়ছে রোগের প্রাদুর্ভাব। আন্নামালাই পর্বত এলাকায় মানুষের কাছাকাছি বাস করা Lion-tailed macaquesদের অন্ত্রে গবেষকরা বেশি পরিমাণে পরজীবীর সন্ধান পেয়েছেন। তাঁদের মতে এই কারণেই ওই অঞ্চলে এদের মধ্যে জন্মের হার ও কম বয়সীদের বেঁচে থাকার হার কমে গেছে। ছোট ছোট অরণ্যে বাস করা এই বাঁদরদের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যও কমে আসছে বিভিন্ন আলাদা গোষ্ঠীর মধ্যে মিলিত না হতে পারার কারণে, যা তাদের ভবিষ্যতের পক্ষে শঙ্কার।

পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু: ভেলপারাই ছবি: Wikimedia commons/PJeganathan

বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিমঘাটের চিরসবুজ বনের ধ্বংস আটকাত না পারলে Lion-tailed Macaques কে বাঁচানো যাবে না। বেশকিছু অরণ্য অঞ্চল এখন সংরক্ষণের আওতায় পড়ে ঠিকই, কিন্তু এইসব বাঁদরেরা ঘোরা ফেরা করে এমন অনেক জায়গায় যা সরকারি সম্পত্তি নয়। সেখানে গাছের সংখ্যা হ্রাস, কৃষিজমির বিস্তার ও অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণ এদের অস্তিত্বের পক্ষে সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শুধু গাছের সংখ্যাই নয়, এরা খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে এমন গাছ আরও লাগাতে হবে। তামিল নাড়ুর বনবিভাগ আন্নামালাইয়ের পুঠুতোট্টম অরণ্যে কোন কোন স্থানে গাছেদের মধ্যে উঁচু ডালে ডালে সংযোগকারী সেতু বানিয়ে দিয়েছে যাতে তাদের নীচে নামতে না হয়। এমন ব্যবস্থা আরও নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাছাড়া সুরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে এদের যে অবস্থান, সেখানে যাতে মানুষের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে তার জন্য লাগাতার সচেতনতা প্রচার চাই। যত্রতত্র খাওয়ার ও আবর্জনা ফেলে রাখা, বাঁদরদের খাবার দেওয়া এগুলো বন্ধ করতে হবে। এখনও অবধি এদের কৃত্রিম প্রজননের যে উদ্যোগ ভারতে এবং ইউরোপ-আমেরিকায় নেওয়া হয়েছে তা তেমন ফলপ্রদ নয়।


ছোট ছোট অরণ্যে বাস করা এই বাঁদরদের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যও কমে আসছে বিভিন্ন আলাদা গোষ্ঠীর মধ্যে মিলিত না হতে পারার কারণে, যা তাদের ভবিষ্যতের পক্ষে শঙ্কার।

এদের বাঁচাতে বনবিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বিভিন্ন বনে ছড়িয়ে থাকা এই বাঁদরদের দলগুলিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। দরকার অরণ্যের হাল হকিকত সম্বন্ধেও নিয়মিত তথ্য। জিনগত বৈচিত্র্য বাড়াতে এমনকি বিশেষজ্ঞরা পুরুষ বাঁদরদের এক দল থেকে অন্য দলে স্থানান্তরের (experimental reintroduction) সম্ভাবনার কথাও ভেবেছেন। বনভূমির হ্রাস ছাড়াও বেআইনি চোরা-শিকার এখনও একটা বড় মাথাব্যথার কারণ আগের থেকে অনেক কমলেও। শিকার বন্ধ না করতে পারলে এরা কোন কোন বনাঞ্চল থেকে দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যেত পারে, যেমনটা আগেও হয়েছে অনেক স্থানে।


আগুম্বেতে যখন এই সিঙ্গালিকাদের দেখছি, ছবি তুলছি – তখনই ওখানে আলাপ জোয়েলের সাথে। জোয়েল কোরিয়া। ম্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা। বন্যপ্রাণী গবেষক। Lion-tailed macaque দের নিয়ে গবেষণার জন্য আগুম্বেতে আসা যাওয়া। ওর সাথে কথায় কথায় জানতে পারি, এইখানে সোমেশ্বরা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে ওদের। এই যে রাস্তা জঙ্গল চিরে চলে গেছে পশ্চিমে উদুপি আর আরও উত্তরে গোকর্ণ হয়ে গোয়ার দিকে, তা তো এইসব বন্যজীবের বসতিকে ভেদ করেই যাচ্ছে। পথচারীরা যেভাবে Lion-tailed macaque সহ সব প্রজাতির বাঁদর বা লাঙ্গুর দেখলেই খাবার ছুড়ে দিচ্ছে তা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কাজ কঠিন করে দিচ্ছে। জোয়েল জানালেন যে, বনবিভাগ থেকে প্রহরীরা মজুত থাকেন এই ঘাট রোডের বিভিন্ন বাঁকে এই বিষয়গুলি নজর রাখতে। কিন্তু তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষ ভীষণই অসচেতন। জোয়েল নিজে এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন। এমনও হয়েছে খাবারের জন্য রাস্তায় এসে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁদরেরা গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে। কিন্তু সহজে খাবার পাবার এই লোভ ওদের স্বভাবে যে পরিবর্তন আনছে, তার ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। তামিল নাড়ুর ভেলপারাইয়ের মত এখানেও মানুষে- বাঁদরে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেলে তা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য এক বড় আশঙ্কার কারণ হবে বলে জোয়েলের অভিমত। তাই স্থানীয় এলাকায় জোর কদমে সচেতনতার প্রচার চলছে, বিশেষত: স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে। কারণ জোয়েলের মতে বড়দের বোঝানো কঠিন। তারা মনে করে তারা সব জানেন, তাই বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা গ্রহণেও তারা রাজি নয়। কিন্তু ছোটরাই ভবিষ্যৎ।


মানুষ ভীষণই অসচেতন। জোয়েল নিজে এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন। এমনও হয়েছে খাবারের জন্য রাস্তায় এসে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁদরেরা গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে।

উত্তর কর্ণাটক জেলার হোনাভারে যে আঘনাসিনি Lion-tailed macaque সংরক্ষিত অরণ্যের এলাকা ঘোষণা হয়েছে ২০১১ সালে, সেখানে কর্ণাটকের তথা দেশের সবথেকে বেশি Lion-tailed macaque এর বাস।

কর্ণাটকের উত্তর কানাড়া জেলায় আঘনাসিনি লায়ন টেইলড ম্যাকাক কনজারভেশান রিজার্ভের অবস্থান

কোয়েম্বাটোরের Sálim Ali Centre for Ornithology and Natural History এর সাথে কর্ণাটক বনবিভাগের সমীক্ষায় এখানে ২০১৬-১৭ সালে ৬৫০টি ও ২০১৭-১৮ সালে ৬২০ টি Lion-tailed macaque গণনা করে পাওয়া গেছে। অপরদিকে এই এলাকা মানুষের ঘনবসতিয়ুক্ত। বিভিন্ন তথাকথিত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ও কৃষিকাজে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলও খন্ড-বিখন্ড হয়ে পড়ছে। এই অরণ্যের মধ্যে দিয়ে হাইওয়ে ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যেসব পরিকল্পনা সরকারের আছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের জন্য ২০১৫-১৭ সালের মধ্যে চারটি Lion-tailed macaque মৃত্যু ঘটে। এরপরে বনবিভাগ থেকে বিদ্যুতের তারের বাইরে আস্তরণ (insulation) দেওয়ারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বনবিভাগ ও এন জি ও গুলির তরফে স্থানীয় কৃষিজীবী মানুষকে এই সংরক্ষণের কাজে যুক্ত করার লাগাতার প্রচেষ্টা চলছে, বিশেষত: নানা আর্থিক সুবিধা প্রদান করে।


Lion-tailed macaque নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা কর্ণাটকের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ কে. সন্তোষের সাথে কথা হচ্ছিল। হোনাভার অঞ্চলে ঘন জনবসতি ও কৃষিকাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বাঁদরদের টিকিয়ে রাখাটাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন। তবে এই অঞ্চলে Lion-tailed macaque রা যে এত সংখ্যায় টিকে আছে তার জন্য ওখানকার বাসিন্দা ও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি তিনি। বর্তমানে যদিও সড়ক ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব আটকানো গেছে সেখানকার ঘন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে, তবে ছোট ছোট জনবসতিতে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে গেলে যে বনভূমির একটা বড় ক্ষতি হচ্ছে তা জানালেন তিনি। তাই কৃষিকাজকে আরও পরিবেশবান্ধব করা ও উন্নয়নমূলক কাজকর্মের সময় বন্যপ্রাণীদের কথা মাথায় রাখাতেও জোর দিতে হবে বলে তাঁর অভিমত। কর্ণাটকের বনবিভাগের দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে তবেই রাজনৈতিক দিক থেকে সদর্থক পদক্ষেপ আমরা আশা করতে পারি যে কোন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। Lion-tailed macaque রা বীজ ছড়িয়ে অরণ্যের বিস্তারে সাহায্য করে, আর এই অরণ্য গোটা দক্ষিণ ভারতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রাণীরা টিকে থাকলে তবে বাঁচবে বন, বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকবে, জলের জোগান থাকবে নদীতে। তা পানীয় জল ও জলবিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে।

আঘনাসিনি অরণ্য।

তবে বন্যপ্রাণী পর্যটন ও তার সাথে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এদের ক্ষেত্রে সম্ভব নয় বাঘ বা গণ্ডারের মত। কারণ এই Lion-tailed macaque রা থাকে বনের গহীনে, পাহাড়ে একদম গাছের চূড়ায়। মানুষ দেখলে তারা লুকিয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, অদূর ভবিষ্যতে ওদের সংখ্যা বাড়ার কোন সম্ভাবনা আছে সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করলে? তিনি জানালেন, সেটা অনেক দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। তা নির্ভর করছে ওদের বাসস্থানকে আমরা কিভাবে রাখছি তার উপর।

একটি জীব প্রজাতির অস্তিত্ব ইঙ্গিত দেয় সেখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতির অবস্থার উপর। শুধু বাঘ বা সিংহ বা গণ্ডার কেন, Lion-tailed Macaques রাও ভারতের অন্যতম সম্পদ। তারা ভালভাবে বেঁচে থাকা মানে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অরণ্যের সুস্বাস্থ্যের পরিচয়, যে অরণ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ ভারতের বড় অংশের জল, জীবন ও অর্থনীতি। মাত্রাছাড়া লোভ আজ অনেকাংশে সেই অরণ্যের ও তার বন্য বাসিন্দাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে। শুরু হোক এবার বাঁচানোর লড়াই।



তথ্যঋণ:

Singh, M., W. Kaumanns, M. Singh,H.S. Sushma & S. Molur (2009). The Liontailed Macaque Macaca silenus (Primates: Cercopithecidae): conservation history and status of a flagship species of the tropical rainforests of the Western Ghats, India. Journal of Threatened Taxa 1(3): 151-157.


Mitigation of Forest Fragmentation in Aghanashini LTM Conservation Reserve by K. Santhosh, Medha Hegde and Gangadhara Linga Gowda.


IUCN Red List of Threatened Species.


Karnath KU(1985) Conservation Prospects for Lion-Tailed Macaques in Karnataka, India.

Kumar A (1987) Ecology and Population Dynamics of the Lion Tailed Macaque (Macaca silenus) in South India. PhD Dissertation, Cambridge University, Cambridge, UK.


Srimati R, Moorthi M. Population and Food preference of Lion-tailed Macaque (Macaca Silenus) in Annamalai Hills, Western Ghats, Southern India. JOJ Wildl Biodivers. 2020: 2(4): 555595.


Dhawale AK, Kumar MA, Sinha A (2020) Changing ecologies, shifting behaviours: Behavioural responses of a rainforest primate, the lion-tailed macaque Macaca silenus, to a matrix of anthropogenic habitats in southern India. PLoS ONE 15(9): e0238695.


​Pre-Historic and Recent Vicariance Events Shape Genetic Structure and Diversity in Endangered Lion-Tailed Macaque in the Western Ghats: Implications for Conservation (2015) – Muthuvarmadam S. Ram, Minal Marne, Ajay Gaur, Honnavalli N. Kumara, Mewa Singh, Ajith Kumar, Govindhaswamy Umapathy.


Human Presence Increases Parasitic Load in Endangered Lion-Tailed Macaques (Macaca silenus) in Its Fragmented Rainforest Habitats in Southern India – Shaik Hussain, Muthuvarmadam Subramanian Ram, Ajith Kumar, Sisinthy Shivaji, Govindhaswamy Umapathy.




লেখক পরিচিতি: লেখক পেশায় চিকিৎসক। প্রকৃতি ও অরণ্যপ্রেমী। 'বনেপাহাড়ে' ওয়েবজিনের সম্পাদনার দায়িত্বে।







Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page