top of page

রাজধানী দিল্লির বন্যপ্রাণী: সেকাল ও একাল

  • ..
  • Jun 25
  • 3 min read

সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লিতে যমুনা নদীর ধারে প্রাত:ভ্রমণের সময়ে হেমন্ত গর্গ নামে এক ব্যক্তি একটি নেকড়ের মত প্রাণীকে ঘুরতে দেখেন। আশ্চর্য হয়ে তিনি সেটির ছবি তোলেন। যদিও প্রাণীটি দ্রুত ঘাসবনে অদৃশ্য হয়ে যায় তবু ছবিটি দিল্লির বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। কারণ এই সকল বন্যপ্রাণী উন্নয়ণের বুলডোজারের সামনে কবেই তো হারিয়ে গেছে দিল্লি থেকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ও WWF India'র বাঘ সংরক্ষণ দলের সদস্য শ্রী রঞ্জিৎ তলোয়ার তাঁর স্মৃতি থেকে তুলে আনলেন পুরানো সেইসব দিনের কথা।

হেমন্ত গর্গের তোলা সেই নেকড়ের ছবি
হেমন্ত গর্গের তোলা সেই নেকড়ের ছবি

সাম্প্রতিক কালে দিল্লির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনার চর অঞ্চলে বহু দশক পর এক ধূসর নেকড়ে দেখা গেছে। এই ঘটনাটি আমার শৈশবের স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছে — সেই সময়ে দিল্লি এবং যমুনা উভয়ই আজকের মতো মানুষের চাপে বিপর্যস্ত ছিল না।আমি যা লিখছি তা আমার শৈশবের স্মৃতি থেকে নেওয়া, এবং এটি হয়তো তাঁদের কাছেই বেশি বোধগম্য হবে, যারা দিল্লির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর সঙ্গে পরিচিত।

আমি বড় হয়েছি সিভিল লাইন্সের একটি সাধারণ কলোনিয়াল বাংলোতে, যেটি যমুনা থেকে মাত্র তিন মিনিটের হাঁটার দূরত্বে ছিল। বর্ষাকালে নদী ফুলে উঠলে তার জল প্রায়ই আমাদের বাড়ির সীমানা দেয়ালে গিয়ে লাগত। এখন যে বেলা রোড কার্যত অস্তিত্বহীন, সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাড়ির চৌহদ্দিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মাছ ধরেছি — এমনও হয়েছে। সিভিল লাইন্সের সেই অংশটিকে তখন এমনকি ঔপনিবেশিক মানদণ্ডেও শহরের অনেকটা দূরবর্তী বা ‘দূরের জায়গা’ বলে মনে করা হত।

আজ যমুনায় আর কোনও অনিয়ন্ত্রিত বন্যা হয় না, কারণ রিং রোড ও অন্যান্য ব্যবস্থা নদীটিকে নির্ধারিত পথে বেঁধে রেখেছে। সেই সময় বন্যার সময়ে, যখন সিভিল লাইন্সের দিক থেকে নদীর দিকে তাকানো যেত, তখন ওপারের পাড় দেখা যেত না...জলের বিস্তার এতটাই বিশাল ছিল যে মনে হত যেন এক বিশাল সমুদ্র। নদী তখন পূর্ব দিকে সহজেই প্রসারিত হতে পারত অতিরিক্ত জল ধারণ করতে। কিন্তু এখন পূর্ব পাড়ে নানা স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার ফলে নদীর সেই স্বাধীনতা আর নেই। বর্ষাকালে নদীর জন্য যে প্রাকৃতিক পথ থাকা উচিত ছিল, তা এখন অপর্যাপ্ত, ফলে জল ঢুকে পড়ে এমন এলাকায় যেখানে আগে কখনো বন্যা হত না।

হগ ডিয়ারদেরও দেখা মিলত এক সময়ে
হগ ডিয়ারদেরও দেখা মিলত এক সময়ে

পড়ুন লেখকের অন্য রচনা: আমার বন্ধু 'বিলি' অর্জন সিং


তাছাড়া, নদীকে ‘শৃঙ্খলিত’ করার ফলে তা যে একসময় কত জীববৈচিত্র্যকে ধারণ করত, তা এখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্কুলজীবনে যমুনাই ছিল আমাদের খেলার মাঠ।আমি ১৯৪০ সালে জন্মেছি এবং ১৯৪৬ সাল থেকে আমার স্মৃতিগুলো মোটামুটি স্পষ্টভাবে মনে আছে। আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি, শিয়ালদের দেখা যেত এবং রাতে হঠাৎ করে তাদের “হু হু হু হা হা ররর” ডাক শুনে গায়ে কাঁটা দিত। মাঝেমধ্যে নদীর বিস্তৃত বালির চরে ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে হেঁটে বেড়ানো নেকড়ে অবধি চোখে পড়ত। মেটকাফ হাউস ও মজনু কা টিলার নিচের এলাকায় মাঝে মাঝে চিতা, বন্য শূকর ও হগডিয়ার দেখার খবরও আসত। তিমারপুরের কাছে যেখানে রিজটা যমুনার কাছাকাছি আসে, সেখানে হায়েনারাও অজানা ছিল না।

দিল্লির দূষিত যমুনা।  ছবি: Ajay Tallam/ flickr
দিল্লির দূষিত যমুনা। ছবি: Ajay Tallam/ flickr

অনেকদিন ধরে যাঁদের হাতে নদীর ভবিষ্যৎ ছিল, তাঁরা এটিকে কার্যত নর্দমা বানিয়ে ফেলেছেন। আজ যেটিকে নদী বলে দেখা যায়, তা আসলে নর্দমার জল। যেসব মাছ যেমন মহাশোল — যাদের বেঁচে থাকতে পরিষ্কার জল দরকার — তারা হারিয়ে গেছে। পাখিরাও আর নেই। এই অঞ্চল একসময় নক্তা (কম্ব ডাক) পাখিদের প্রজনন ক্ষেত্র ছিল। বহু বছর ধরে তাদের দেখিনি। আরও অনেক প্রমাণ আছে যে যমুনা দিল্লিতে ঢোকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই "মৃত" হয়ে যায়। আমি অবাক হব না যদি শীঘ্রই নিঘমবোধ ঘাটে দাহ করা মৃতরাও 'প্রতিবাদে উঠে দাঁড়ান'!

এই সবই ঘটেছে একটাই জীবদ্দশায়। এমনকি একসময় পবিত্র বলে মানা যমুনাও আজ তার পবিত্রতা হারিয়ে ফেলেছে এবং একখানা দুষিত গন্ধযুক্ত নর্দমায় রূপান্তরিত হয়েছে। এটাই মানুষের তথাকথিত অগ্রগতির মূল্য। মানুষের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে...এই পৃথিবীটা অন্য সবার জন্য ছোট হয়ে আসছে!



লেখক পরিচিতি: লেখক ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ও WWF India'র বাঘ সংরক্ষণ দলের সদস্য।

Comments


86060474-00b1-415d-8c11-9c4471c9c5e7.png
Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG

Editor: Dr. Sumanta Bhattacharya
Co-editor: Dr. Oishimaya Sen Nag

  • Facebook

follow our facebook page to stay updated

© 2021 by Boney Pahare. All rights reserved.

bottom of page