top of page
  • ..

Rusty-spotted cat: পৃথিবীর সবথেকে ছোট যে বিড়ালরা রয়েছে ভারতে

Rusty-spotted cat রা হল পৃথিবীর সবথেকে ছোট বিড়াল। আমাদের ঘরের বিড়ালের আর্দ্ধেক এদের আকার। কোথায় কোথায় থাকে এরা! নিশাচর ও ভীতু এই বিড়ালদের নিয়ে আমাদের জানাটাই বা কতটা? কেমন সংকটের মুখে এদের অস্তিত্ব? এইসব নিয়ে লিখছেন সৌরভ কাটকুড়ায়ার



Rusty-spotted cat। নিশাচর, লাজুক একটি বিড়াল। এদেরকে মনে করা হয় পৃথিবীর সবথেকে ছোট বিড়াল জাতীয় প্রানী। ভারতের বিভিন্ন স্থান সহ নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও এদের অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বাসস্থান, আচার আচরণ, বাস্তুতন্ত্রে এদের ভূমিকা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা নেই। যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু প্রচেষ্টা হয়েছে কিছু অরণ্যে এদের সংখ্যা নির্ণয় করতে, তবে বড় করে গবেষণা চালানো প্রয়োজন যাতে এদের বাঁচানো যায়। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।

এরা হল পৃথিবীর সবথেকে ছোট বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। ওজন হয় দেড় কিলোগ্রামেরও কম, আকৃতিতে ঘরোয়া বিড়ালের অর্দ্ধেক। তাদের পাশুটে বা ছাই রঙের লোমের আবরন থাকে, তার উপরে তাদের নাম অনুযায়ী মরচে বা গাঢ় বাদামী ছোপ ছোপ দাগ। এদেরকে দেখা গেছে ভারতের বিভিন্ন স্থানের পর্ণমোচী অরণ্যে। যেমন উত্তর ও মধ্য ভারতে, পশ্চিমঘাট, কচ্ছ, রাজস্থান, দাক্ষিণাত্য এসব জায়গার অরণ্যে। এছাড়াও নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও দেখা মেলে এদের। এদেরকে International Union for Conservation of Nature (IUCN) তাদের শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী ‘near threatened’ বলে ঘোষণা করেছে।


IUCN এর বিড়াল বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর সমিতা মুখার্জী বলেন, “ এই বিড়ালগুলো খুব ভীতু আর নিশাচর। তাই এদের নিয়ে গবেষণা করা কঠিন। অনেক বছরের গবেষণার পরেও, এদের নিয়ে তথ্য খুব কম আমাদের কাছে। আমাদের আরো গবেষণা করা দরকার।“

এই বছরের শুরুতে ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রক দেশব্যাপী একটি প্রকল্প ঘোষণা করে ছোট বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের বিষয়ে বিশদে জানার জন্য- এর মধ্যে এই Rusty-spotted cat ও রয়েছে।


এর আগে ভারতে অল্প কিছু গবেষণা হয়েছে শুধু এই বিড়াল প্রজাতিটির জন্য। ২০১৭ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে সমিতা মুখার্জী নিজে একটি প্রকল্পে যুক্ত ছিলন মুম্বইয়ের সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশানাল পার্কে। এতে ৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত ছিলেন। তাঁরা ক্যামেরা ট্র্যাপ লাগানো, বিড়ালদের মলের নমুনা সংগ্রহ এবং তথ্যাদি বিশ্লেষণের কাজ করেন।

এই বিড়ালরা এত ভীতু যে এদের দেখতে পাওয়া ও এদের নিয়ে গবেষণা করা বেশ কঠিন। সমিতা মুখার্জী বাঘগণনায় ব্যবহৃত ক্যামেরা ট্র্যাপকেই এই বিড়ালদের জন্য গবেষণায় ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন। তিনি বলছিলেন, “GPS mapping এর সাহায্যে আমরা তাদের অবস্থান ও ঘনত্ব নির্ণয় করতে পারি। এছাড়া এদের মলের নমুনার ডি এন এ নিষ্কাশন ও বিশ্লেষণ করে ওরা কোন জাতীয় প্রাণী খেয়ে থাকে তা বোঝা যেতে পারে। আমরা একটা ভাঙ্গা চোয়াল জাতীয় বস্তু পেয়েছিলাম এমন নমুনায় সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশানাল পার্কে। এই ধরনের তথ্য উঠে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ “।

Rusty-spotted cat রা কী খায় ঠিকমত জানা না গেলেও, মূলত ইঁদুর আর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীই তাদের খাদ্য তালিকায় থাকে। ২০১৪ থেকে ১৮-এর মধ্যে কানহা ন্যাশানাল পার্কে করা একটি গবেষণায় এটাও দেখা গেছে ক্যামেরা ট্র্যাপের ছবিতে যে, এই বিড়ালরা মৃত ইঁদুর বহন করছে।

গবেষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মূলত GPS mapping, মলের নমুনা সংগ্রহ, ট্র্যাপ ক্যামেরা (যা মূলত: বাঘের জন্য লাগানো হয়)-র ছবি আর radiotelemetry- এইসব পদ্ধতির উপর নির্ভর করেন ছোট বিড়ালদের নিয়ে গবেষণার জন্য।

Tiger Watch নামক রাজস্থানের এন জি ও-র কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ধর্মেন্দ্র খান্ডালের মতে, “Rusty-spotted cat দে’র বাস্তুতন্ত্রে কেমন ভূমিকা রয়েছে আমরা জানিনা। এদের মলের নমুনার জিনগত বিশ্লেষণ ওদের খাদ্য নিয়ে বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে। “

যদিও লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে এরা, তবু এরা অনেক এলাকাতেই রয়েছে। খান্ডাল আরো বলেন যে, ” আমরা এই বিড়ালদের তথ্য রাজস্থানের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেছি। এদের পাথুরে এলাকায় পাওয়া যায়, আর কাঁটা ঝোপ ও অন্য গুল্ম জাতীয় গাছপালার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে।“

কানহার গবেষণা এটা প্রমাণ করছে যে, অরণ্য এলাকাতেও এরা থাকে। এর আগে মনে করা হত এরা বুঝি শুধু পাথুরে অঞ্চল আর চাষের জমির আশেপাশেই থাকতে পছন্দ করে।


অনেক গবেষক ও বিশেষজ্ঞের মতে ছোট বিড়ালদের নিয়ে যা গবেষণা হয় তা মূলত: বাঘকে নিয়ে গবেষণার সময় উঠে আসা তথ্যের উপর নির্ভর করে। এটা তাদের মতে যথেষ্ট নয়। বাঘেদের সংখ্যা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়াটা আসলে এদের টিকে থাকার পক্ষে খুব একটা সুবিধাজনক হচ্ছে না। কানহার গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। এই গবেষকদের অন্যতম ও Wildlife Institute of India (WII) এর প্রাক্তন ডিন ওয়াই ভি ঝালার মতে, “ এই জাতীয় বিড়ালরা কোথাও বাঘ থাকলে সুরক্ষিতই থাকে, বাঘ যেহেতু জীববৈচিত্রের সংরক্ষণের জন্য ছাতার মত সুরক্ষা দেয়। কিন্তু কৃত্রিম যে উপায়গুলি নেওয়া হয় বাঘ বাড়ানোর জন্য তা কিন্তু এই সব ছোট প্রাণীদের সংকটে ফেলে দেয়”।

“অরণ্যে ঘাসজমি বাড়ানো হয় যাতে তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা বাড়ে। এটা করা হয় বাঘেদের খাদ্য বাড়াতে। কিন্তু এর ফল Rusty-spotted cat দের জন্য ভাল হয় না”, ঝালা জানালেন।

তিনি জানান, এই ধরণের অরণ্যে বাঘেদের জন্যই শুধু যে সুনির্দিষ্ট সব পন্থা নেওয়া হয়, তা অন্য প্রজাতির বাসস্থান বা খাদ্যের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে। তাই তিনি বললেন, “ এই ধরনের টাইগার রিজার্ভে এই রকম ছোট প্রাণীদের উপর বিশদে গবেষণা প্রয়োজন যাতে বাঘেদের জন্য যে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা ছাতার মত অন্য সব প্রজাতিকেও সুরক্ষা দিতে পারে যথাযথ পন্থায়”।

Global Tiger Forum (GTF) এর সেক্রেটারি জেনেরেল রাজেশ গোপালের মতে, বাস্ততন্ত্রের দিক থেকে সব ছোট বিড়াল প্রজাতিই গুরুত্বপূর্ণ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী।“

Global Tiger Forum, ভারত সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক এবং উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও অরুণাচল প্রদেশের রাজ্য সরকারের সাথে ‘Strengthening conservation and resilience of globally significant wild cat landscapes through a focus on small cat and leopard conservation’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছে। গোপাল বললেন, “ আমাদের লক্ষ্য এখন Rusty-spotted cat সহ ছোট বিড়ালদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতরে ও বাইরে কিভাবে রক্ষা করা যেতে পারে। এই গবেষণায় এইসব বিড়ালদের বাসস্থান ও চরিত্র নিয়ে তথ্য উঠে আসবে যা ভবিষ্যতে এদের বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যবহৃত হবে।"

স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে নিয়েই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। গোপাল জানালেন, "এটা একটা পাইলট প্রজেক্ট। এতে আমরা দেখব কিভাবে স্থানীয় মানুষকে ছোট বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের বাঁচাতে কাজে লাগানো যেতে পারে।"


পশ্চিমঘাটের অরণ্যে একটি Rusty-spotted cat। ছবি: Divya Mudappa/Wikimedia Commons.

ধর্মেন্দ্র খান্ডালের মতে, প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে কৃষক ও অন্যান্য মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, যারা হয়ত Rusty-spotted catদে’র চিনবে না। তারা Rusty-spotted cat কে গৃহপালিত বিড়ালের সাথে গুলিয়ে ফেলে। ভারতে এইসব ছোট বন্য বিড়ালরা অনেকসময়ই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আক্রোশে প্রাণ হারায় তাদের অন্য কোন বিপজ্জনক বাঘ জাতীয় জন্তু হিসাবে ভুল ভেবে ফেলায়।

সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশানাল পার্ক একটি অভিবন উদ্যোগ নিয়েছে এই Rusty-spotted catদে’র কৃত্রিম প্রজননের। ভারতে ছোট বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের কৃত্রিম প্রজননের প্রথম উদ্যোগ। এখানে ওদের প্রাকৃতিক বাসস্থানের মত পরিবেশে রাখা হয়। ব্রিটেনের বিশেষজ্ঞ দল এখানে সাহায্য করছে।

২০২৩ এর জানুয়ারীতে এখানে দুটি শাবকের জন্ম হয় মহারাষ্ট্রের সাতারা থেকে উদ্ধার করা Rusty-spotted catদে’র থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশানাল পার্কের এক কর্মকর্তা বলেন যে, “সুবিধাজনক পরিবেশ না দিলে এই বিড়ালরা প্রজনন করতে পারবে না। আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশের মতই বাসস্থান তৈরি করেছি প্রজনন কেন্দ্রে"।

এর আগে সাধারণ খাঁচায় এদের কৃত্রিম প্রজননের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এখানকার বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী যে এই প্রকল্প এইবারে সফল হবে। তিনি বলেন, “ আমাদের উদ্দেশ্য যে ওদের যথাযথ সংখ্যা যেন বজায় থাকে। এরপর এদের সেইসব জায়গায় ছাড়া যেতে পারে যেখানে ওদের সংখ্যা কমে এসেছে”।


মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2023/11/rusty-spotted-cat-conservation-hinges-on-dedicated-research-and-management-plans/




Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page