মহারাষ্ট্রের বনে রাতের অভিজ্ঞতা। পদস্থ বনকর্তার কলমে গল্পের ছলে। লিখছেন নীল মজুমদার।
৭২এর আগের কথা বলছি বুঝলি তো সেই সময় ভামরাগঢে ইলেকট্রিসিটির বালাই ছিল না। সাধারণত, এই ভাবেই গল্পটা শুরু করতেন অলোক দা । মাঝখানে সিথি কাটা কুচকুচে কালো চুল, পাতলা কালো গোঁফ। সোফা যেমনই হোক, যেখানেই থাকুক তার ওপর পা উঠিয়ে বসতেন প্রথমে, তারপর শুরু হতো গল্প।
মহারাষ্ট্রের একেবারে পূর্ব প্রান্তে আলাপাল্লি আর ভামরাগঢ পাশাপাশি দুটো ফরেস্ট ডিভিশন। দুটোর ই হেড কোয়ার্টার অবশ্য আলাপল্লিতে। পাশাপাশি দুই ডিভিশনের ডি এফ ও'র সরকারি বাড়ি।আমি যখন আলাপল্লিতে রয়েছি আমার বন্ধু ওয়াসিম বদলি হয়ে এলো ভামরাগঢে।
পাশাপাশি ডিভিশন হলে কি হবে, এই দুই ডিভিশনের জঙ্গলে কিন্তু তফাৎ আছে । আলাপল্লী সেগুনের জন্য জগত বিখ্যাত। আলাপল্লি থেকে যেমন যেমন পূব দিকে মানে ভামরাগঢে র দিকে যাবি, সেগুন কম হয়ে , ধাওড়া, বিজা, সাজ, সিশম, মহুয়া, জারুল এইসব মিশ্র প্রজাতির গাছ বাড়তে থাকবে। তবে, 'তেন্দু গাছ' সাধারণ ভাষায় যাকে বিড়ি পাতার গাছ বলে এই দুটো ডিভিশনেই প্রচুর। এই তেন্দু নিয়েই সেবার গরমে হিমশিম খাচ্ছিলাম আমরা।
মহারাষ্ট্র বিশেষ করে পূর্ব মহারাষ্ট্র তেন্দু প্রধান জায়গা। গরমের দিনে এখানের জঙ্গলে শ'য়ে শ'য়ে স্থানীয় গ্রামের লোক, এমনকি বাইরের গ্রাম থেকে আসা লোক তেন্দু পাতা তুলে, বান্ডিল বেঁধে ঠিকেদার এর কাছে বিক্রি করে এবং বান্ডিল পিছু ঠিকেদারের কাছ থেকে পয়সা পায়। আর আমাদের কাজ হল, এই বেচাকেনা ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, সেটা রেকর্ডে ঠিক মতো দেখানো হচ্ছে কিনা, বেআইনিভাবে কিছু গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে কিনা, শ্রমিকরা ঠিক মতো মজুরি পাচ্ছে কিনা, এই সব দেখা। গ্রামে গঞ্জে যেখানে এই বেচাকেনা হয় সেটাকে বলে, 'কালেকশন সেন্টার' বা স্থানীয় ভাষায় 'ফড়ি'। আমার ডিভিশনে তখন অন্তত শ' দুয়েক ফড়ি ছিল আর ভামরাগঢ়ে আড়াইশোর বেশি।
একদিন সকালে ফিল্ডে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি, হন্তদন্ত হয়ে ওয়াসিম এসে বলল, আমার গাড়িটা ট্রাবল দিচ্ছে। অথচ আজ গোটা দশেক ফড়ি চেক না করলেই নয় কি করি বলতো ! আমি বললাম, চল এক সঙ্গে বের হই। আমার ডিভিশনের ফড়ি দেখতে দেখতে তোর ডিভিশনে ঢুকে পড়বো।
ওয়াসিম বলল সেই ভালো ফড়ি দেখে ওদিকেই কোথাও থেকে যাব রাত্রে। কাল সকালে অন্য রাস্তায় কয়েকটা আমার দিকের আর কয়েকটা তোর দিকের ফড়ি দেখে ফিরলেই হবে।
অতঃপর, জিপে বসে দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। সকাল আটটা থেকে বাঘের মতন রোদ, যেন কামড়ে দেবে। একটু পরেই শুরু হবে গরম হাওয়া। কান ঢেকে মাথায় কাপড় টাপড় বেঁধে তার জন্যে আমরা তৈরি। দুপুরের দিকে পারা উঠবে ৪৪-৪৫ এরকাছাকাছি। মে মাসের মাঝ বরাবর এটাই এখানে স্বাভাবিক ঘটনা।
গোটা ছয় ফড়ির কাজকর্ম দেখে পীরমিলির রেস্ট হাউসে পৌঁছতেই দুপুর ২ টো বাজলো।তাড়াহুড়ো করে লাঞ্চ সেরে আবার পথে। এই সময় অধিকাংশগাছ ই পাতা ঝরিয়ে ন্যাড়া। কোথাও যেএকটু ছায়া পড়বে সে আশাও নেই।এক কাপ চা খেলাম তাড়গায়ে।ওয়াসিমের দিকের শেষ ফড়ি টা দেখতেই বিকেল মোলায়েম হয়ে গেল। মাথার কাপড় খুলে মুখের ঘাম মুছে, গাড়ির কাছে ফিরলাম।এখান থেকে ভামরাগঢ প্রায় ৩২ কিলোমিটার। পৌঁছেঘড়ি দেখলাম সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা।
ভামরাগঢ ছোট একটা গ্রাম তার এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তিরতিরে জলের পাহাড়ি নদী পামলগোতা। তার পাশে আগাগোড়া কাঠের তৈরি একটা রেস্ট হাউস, আমরা বলতাম 'লগ হাট' ।সেখানেই থাকার ব্যবস্থা।
লগহাটের সামনে ঢাকা বারান্দায় চেয়ারে বসেই ওয়াসিম হাঁক দিল, তানু , আদা দিয়ে বেশ কড়া করে চা করত।
টেবিলের উপরে রাখা লন্ঠনটা উসকে দিয়ে আমি ডাইরিতে কয়েকটা জরুরী কথা লিখে রাখছিলাম। জুতো খুলে নিচু টেবিলে পা উঠিয়ে ওয়াসিম একটা সিগারেট ধরিয়েছিল। এই সময় চৌকিদার তানু এসে বলল সাহেব, চা।
ওয়াসিম মুখ তুলে বাঁদিকে হঠাৎ প্রখর ভাবে তাকিয়ে ফিসফিস করে তানুকে বলল চা রেখে দৌড়ে যা, একটা ডান্ডা নিয়ে আয়।
ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে যা দেখলাম বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল। বারান্দার কোণে বেশ বড় সাইজের একটা কেউটে সাপ ফণা তুলে স্থির হয়ে আছে।
তানু কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে দু চোখ বিস্ফারিত করে বলল, ডান্ডা !! ডান্ডা কি হবে স্যার?
ওয়াসিম সাপের উপর থেকে চোখ না সরিয়ে দাঁত চেপে বলল, ডান্ডা নিয়ে আয় ভাংড়া নাচবো!! সাপটা দেখতে পাচ্ছিস না?
সাপ!! আমাদের ধৈর্যের সীমা ভেঙে তানু বলল, সাপ কোথায় স্যার, ওটা তো নাগ!
ওর দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে ওয়াসিম আমাকে বলল অলোক, একটা কিছু আন। আমি নড়লেই বিপদ হবে।
আমি চকিতে ঘরে ঢুকে মশারি টাঙানোর লাঠি খুলতে খুলতে শুনতে পেলাম তানু কাকুতি মিনতি করছে , সাহেব, গরিবের কথাটা শুনুন, নাগ মারবেন না। ভীষণ বিপদ হবে।
বিনা বাক্য ব্যয়ে আমি লাঠি ওয়াসিমের হাতে দিলাম ।সাপটা ওয়াসিমের বাঁদিকে, তখন ও ফনা তুলেই ছিল, সেই একইভাবে। আমাদের নাড়াচড়ায় কিংবা অন্য কোন কারণে জানিনা এইবার ফনা নামিয়ে তীরের মতন ওয়াসিমের পায়ের দিকে এগিয়ে আসতেই অসীম বিদ্যুৎ গতিতে লাঠি বসিয়ে দিল।
ওয়াসিম ন্যাটা।ডান হাতে লাঠি চালালে এরকম সুবিধাজনক অ্যাঙ্গেল থেকে মারতে পারত না। এক বাড়িতেই সাপের মাথাটা ধড় থেকে আলাদা হয়ে গেল।
আরো পড়ুন: সাহেবের গামবুট
কিছুক্ষণ কথা বলিনি কেউ ।তানুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুখ ফিরিয়েনিয়েছে অন্যদিকে। চায়ের ট্রে টা উঠিয়ে নিয়ে যেতে যেতে থমথমে মুখে বলল, অন্য চা আনছি।
ও চলে যাবার পর আমি বললাম তানু বেজায় আপসেট হয়ে গেছে। লাঠিটা বারান্দার এক কোণে রেখে রুমালে ঘাম মুছে ওয়াসিম বলল, হওয়ারই কথা। কি করবো বল আর কোন উপায় ছিল না। সাপটা যেভাবে আর যেখানে ছিল তারপরে যেভাবে এগিয়ে এসেছিল না মেরে ছেড়ে দিলে আমাদের একজনের প্রাণ নিয়ে আজ টানাটানি হতে পারতো।
আমি বললাম, সে তো বটেই অ্যান্টি ভেনাম সেরাম বলতে সেই হেমলকসা , তার আগে কোথাও কিছুর আশা নেই।
দ্বিতীয় দফা চা নিয়ে এসে তানু বললো, কিন্তু সাহেব ওটা যে নাগ! এরপরের কথা গুলো ভাবলেন না!
পরের কথা, পরের আবার কি কথা ?
সাহেব , তানু জড়সড় হয়ে একদিকে দাঁড়িয়ে বলল, নাগকে যে লোক মারে নাগের চোখে তার ফটো থেকে যায় । পরে নাগিনী যখন খুঁজতে আসে, সেই ফটো দেখে মানুষটাকে চিনে নেয়, মনে রাখে। তারপর সাহেব, আমার দোষ নেবেন না, খুঁজে খুঁজে একদিন তাকে ঠিক ছোবল মারে।
চায়ে চুমুক দিয়ে ওয়াসিম বলল, ঠিক আছে সে আমি বুঝবো।তুই সাপের ধড় মাথা এইসব বাইরে বাগানে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দে তো।
জ্বালিয়ে, জ্বালিয়ে দেব! সাহেব কি বলছেন !!
না জ্বালাবি তো গর্ত খুঁড়ে গোর দিয়ে দে। সাপটা কোন ধর্মের ছিল সে তো জানিনারে বাবা।
তানু দুই কানে হাত দিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল, স্যার আমি বরং ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমি বললাম তোমাকে কাউকে পাঠাতে হবে না , যা করবার আমরা করে নেব।
সারাদিন রোদে ঘুরে কাজ করে ভীষণ খিদে পেয়েছিল। ধরে রাখা কুয়োর ঠান্ডা জলে চান করে শরীর জুড়িয়ে, সেই খিদে বেড়ে গেল পাঁচ গুণ। রসুন দেওয়া মসুর ডাল, আলুর তরকারি আর স্যালাড দিয়ে রুটি মনে হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডিনার।
সামনের বাগানে দুটো বেতের চেয়ার পেতে রেখেছিল তানু।পূর্ণিমার ধারে কাছে একটা সময়। পরিষ্কার আকাশে বড় চাঁদ। থমথমে জ্যোৎস্নায় দাঁড়িয়ে আছে অলৌকিক অরণ্য। নদীর জলের শব্দ ভেসে আসছে অস্পষ্টভাবে। চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে ওয়াসিম বলল আমাদের দেশে সাপ নিয়ে বড্ড বেশি গাল গল্প বানিয়ে রেখেছে লোকেরা।
আমি বললাম, হ্যাঁ সবচেয়ে পপুলার যেটা, সেটা হলো সাপ গান-বাজনা ভালোবাসে, বিনের শব্দ শুনে দুলে দুলে নাচে। বস্তুত সাপের কান নেই সাপ শুনতেই পায় না। গান-বাজনা ভালো লাগার প্রশ্ন কোথায়!
ওয়াসিম বলল, হাওয়ায় যে ধ্বনি তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তার বেশির ভাগটাই সাপ গ্রহণ করতে পারেনা কান নেই বলে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, এই শব্দ তরঙ্গের খুব সামান্য অংশ সাপ গ্রহণ করতে পারে তার lungs দিয়ে যদিও তার মধ্যে গান বাজনা টা আসে না।
আরো আছে। যেমন ধর, প্রচলিত ধারণা হলো যে ফ্লাইং স্নেক পাখা মেলে আকাশে উড়ে বেড়াতে পারে। এর মধ্যে বিজ্ঞানের সত্য হল এই যে, সাপেদের মোটেই পাখা নেই। পাঁজরের হাড় সামান্য একটু চওড়া করে এরা একটু গ্লাইড করতে পারে মাত্র।
আমি হেসে বললাম, তবে যাই বল নাগিনীর ফটো দেখে চেনাটা কিন্তু একেবারে টাটকা গল্প। এটা আগে কখনো শুনিনি।
ওয়াসিম হাসছিল, বলল এর মধ্যেও সামান্য একটু বিজ্ঞান আছে অবশ্য। মেয়ে পুরুষ সব সাপদেরই লেজের দিকে একটা মাস্ক গ্ল্যান্ড থাকে। সেই গ্ল্যান্ডের সেক্রেশনের গন্ধ ও থাকে। একেক প্রজাতির একেক রকম। সাপ মরলে সেই গন্ধ হাওয়ায় ছড়ায়। তখন ওই প্রজাতির বিপরীত লিঙ্গের কোন সাপ ধারে কাছে থাকলে, গন্ধে আকর্ষিত হয়ে চলে আসে, বা আসতে পারে। ব্যস এইটুকুই। বাকিটা বিশুদ্ধ গল্প।
ওয়াসিমের কথা শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তানু বেরিয়ে এসেছিল বারান্দা থেকে । চাঁদের আলোতেও বুঝতে পারলাম ওর মুখ কাগজের মত সাদা আর দুই চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে বাইরে।
চমকে উঠে আমি বললাম, কি হয়েছে, তানু, কি ব্যাপার ?
- সাহেব, তানুর গলা কেঁপে গেল, নাগের মুন্ডিটা নাগিনী নিয়ে গেছে!
আমরা দুজনে একসঙ্গে বললাম, সে কিরে !
তানুকে অনুসরণ করে বারান্দায় এসে যা দেখলাম তাতে ভয়ে ততটা না হলেও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম স্বীকার করতে লজ্জা নেই। সাপের ধড় টা যেমন ছিল, যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে আছে। মাথাটা কিন্তু সত্যিই কোথাও নেই।
খানিকক্ষণ গুম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম তিনজনে ই । আমি বললাম চল আগে এটার একটা ব্যবস্থা করি। বারান্দার কোণে রাখা লাঠি দিয়ে সাপের ধড়টা উঠিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে আমি বললাম, তানু একটা কোদাল টোদাল কিছু জোগাড় কর তো। তানুর আনা কোদাল দিয়ে বাগানের এক কোণে একটা সেগুন গাছের নিচে বেশ খানিকটা মাটি খুঁড়ে ফেললাম দুজনে মিলে। সাপটাকে মাটি চাপা দিতে দিতে আমি বললাম, এই দিকে ই গ্ল্যান্ডটা থাকে, তাই না? মিছিমিছি গন্ধ টন্ধ ছড়িয়ে -
ওয়াসিম চেঁচিয়ে বললো, অলোক শেষ পর্যন্ত তুইও এসব বিশ্বাস করলি !!
- কি বিপদ ! আমি বললাম, তুই নিজেই তো একটু আগেবললি সেক্রেশনের গন্ধে আকর্ষিত হয়ে অন্য সাপ চলে আসে ...
- আরে তাই বলে কি মুন্ডু নিয়ে যাবে নাকি ফটো দেখার জন্য?
- আমি কি তাই বলেছি?
ওয়াসিম উত্তেজিতভাবে বলল, না বলিস নিঠিকই, তবে ওই লাইনেই যাচ্ছিস প্রায়। দ্যাখ অলোক, আমি মরে যাব তাও ভালো তবু কুসংস্কারে বিশ্বাস করব না। আর তোকেও করতে দেবো না।
আমি বললাম, খুব ভালো কথা এবার এসব ভুলে যা। অনেক রাত হয়েছে, চল শুয়ে পড়া যাক।
পাশাপাশি দুটো ঘরে আমাদের দুজনের শোওয়ার ব্যাবস্থা হয়েছে, মাঝখানের দরজা খোলা। আমি রসিকতা করার লোভ সামলাতে পারলাম না। হাঁক দিয়ে বললাম, ওয়াসিম, মশারি টা ভালো করেগুঁজে নিস নাগিনী কন্যাকে বিশ্বাস নেই।
ওয়াসিমও ছাড়ার পাত্র নয়। বলল, আমি তো ভাবছি খাটটা নিয়ে গিয়ে বাগানে গিয়ে শোবো দেখা হলেও তুই জানতে পারবি না।
সারাদিনের ক্লান্তিতে নিঃসাড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রীতিমতো রোমহর্ষক একটা স্বপ্ন দেখলাম তারই মধ্যে। জঙ্গলের মধ্যে, ক্লীয়ার ফেলিং হয়ে যাওয়া একটা ফাঁকা জায়গায় আমি আর ওয়াসিম দাঁড়িয়েআছি। ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাত। আমাদের ঠিক মাথার ওপর পরীর মত দুই পাখায় ভর দিয়ে রীতিমতো সুন্দরী এক নাগিনী কন্যা বৃত্তাকারে ঘুরছে। ঘুরছে আর বারবার ইংরিজিতে জিজ্ঞাসা করছে, বল, কে আগে প্রাণ দিবি বল ?
এই সময় হঠাৎ গায়ে হাত পড়ায় আঁতকে উঠে দেখি ওয়াসিম মশারির ভেতর হাত ঢুকিয়ে ধাক্কা দিয়ে আমায় ডাকছে।
- কিরে! ধড়মড় করে উঠে বসে আমি বললাম, কি হয়েছে, নাগিনী?
ওয়াসিম গম্ভীর ভাবে বলল, হ্যাঁ, আয়।
বালিশের নিচ থেকে টর্চটা বার করে ওর পেছন পেছনওর ঘরে গেলাম। ঘর আর বাথরুমের মাঝখানে এক টুকরো জায়গা, জামাকাপড় বদলাবার জন্যে। সেখানে পুরনো আমলের একটা ঢাউস ড্রেসিং টেবিল রাখা। তারই সামনে বসে নিচে টর্চের আলো ফেলল ওয়াসিম। এবং মন্ত্রমুগ্ধের মতন আমিও। যা দেখলাম তাতে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাওয়ার জোগাড়। অসংখ্য বড় বড়, স্বাস্থ্যবান, কালো পিঁপড়ে সাপের মাথার ওপর চেপে বসেছে। মহানন্দে চলছে মিড নাইট পার্টি । রীতিমতো আমিষ আহার।
উঠে দাঁড়িয়ে আমি বললাম যাক ওয়াসিম অন্তত একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
ওয়াসিমের হাসি তখনও থামেনি ও বলল কি ব্যাপারে রে ?
আমি বললাম, পরে যদি কখনো নাগিনী টা এসে নাগের হত্যাকারী বা হত্যাকারীর সহকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে, লাভ বিশেষ কিছুই হবে না। তার আগেই সর্বভুক পিঁপড়েরা ফটোর নেগেটিভের বারোটা বাজিয়ে দেবে !!
[মূল লেখাটি আনন্দবাজার পত্রিকা (রবিবার: মুম্বাই ) ৫ই জুন, ২০০৫ সালে "কাল কেউটের গপ্পো" শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে যৎসামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে।]
লেখক পরিচিতি: লেখক অবসরপ্রাপ্ত আই এফ এস আধিকারিক এবং ঔপন্যাসিক।
Comentários