top of page
..

কলকাতার ভয়াবহ বায়ুদূষণ থেকে কি আমরা মুখ ফিরিয়ে রয়েছি?

বায়ুদূষণে বিশ্বের সবথেকে দূষিত শহর রাজধানী দিল্লীর কাছাকাছিই কলকাতার অবস্থান। বায়ুদূষণের তীব্রতায় শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ছাড়াও এখানে মারাত্মক হারে বাড়ছে ফুসফুসের ক্যান্সার। অথচ দিল্লীর বায়ুদূষণ নিয়ে যতটা হইচই হয়, কলকাতার প্রতি নাগরিক ও সরকারের উদাসীনতায় তার দূষণ নিয়ে তত আলোচনা হয় না। অথচ নি:শব্দে মানুষের প্রাণ কাড়ছে “diesel capital of the world" কলকাতার বাতাস। আলোচনায় নিলাদ্রী সরকার



পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সরব বিশ্বে  ভারতের রাজধানী দিল্লীর ভয়ানক দূষিত পরিবেশ একটা বহু-চর্চিত বিষয়।  এর ফলে ধোঁয়ায় ঢাকা রাজধানীকে বাঁচাতে বিভিন্ন  উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এমনকি রাষ্ট্রসংঘ অবধি নড়েচড়ে বসেছে। কথা বলছে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের সাথে।

  কিন্তু, ততটা গুরুত্ব ভারতের অন্য শহরগুলো পাচ্ছে না যাদের দূষণের মাত্রা ততটাই কি আরও বেশি। কলকাতা এমনই একটা নগরী যা ভয়াবহ দূষণে আচ্ছন্ন, যেখানে ১.৪ কোটি লোকের বসবাস।

Health Effects Institute  এর ২০২২ সালে প্রকাশিত State of Global Air রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালে কলকাতা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিততম শহর। ২০২৩ সালেও নভেম্বরে দীপাবলির সময় বা তার পরে শীতকালেও খুব খারাপ ছিল বাতাসের অবস্থা।

দীপাবলিতে বাজি পোড়ানোর সাথে সাথে নানারকম ক্ষতিকারক গ্যাস বাতাসে চলে আসে। Atmospheric Environment  এ  ২০০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গেছে সিন্ধু-গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের বাতাসে দীপাবলির সময়ে যে দূষণের মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায় তার জন্য মূলত: দায়ী সালফার ডাই অক্সাইড ও সূক্ষ্ম ভাসমান কণা (fine particulates) যাদের PM2.5 বলা হয়। বিভিন্ন বাজি থেকে এদের উৎপত্তি।  এই গবেষণায় দেখা গেছে এত বাজি পোড়ানোর ফলে দীপাবলির রাতেই শুধু নয়, পরের বেশ কিছু দিনও বাতাসের অবস্থা বেশ খারাপ থাকে।

২০২৩ এর দীপাবলির ঠিক চারদিন আগে ৮ই নভেম্বর কলকাতা ছিল বিশ্বের তৃতীয় দূষিততম শহর। দিল্লী ও পাকিস্তানের লাহোরের ঠিক পরেই।  আর ১১ই নভেম্বর, দীপাবলির ঠিক আগের দিন কলকাতার বাতাস ছিল দেশের সব শহরের মধ্যে সবথেকে খারাপ। ১৩ই নভেম্বর আবার কলকাতা দ্বিতীয় স্থানে দূষণে দেশের মধ্যে, পৃথিবীতে চতুর্থ।

আর এই দূষণই চলছে এই ২০২৪ এও।  কলকাতার একটি পরিবেশবাদী সংস্থা SwitchON Foundation এর তথ্য অনুযায়ী , কলকাতার Air Quality Index (AQI) বা বায়ুদূষণের মাত্রা এই সময়ের মধ্যে মাঝামাঝি থেকে খারাপের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। মার্কিন সরকারি প্রতিষ্ঠান AirNow এর  মাপকাঠিতে বাতাসের অবস্থা ভাল বলা যাবে যদি তার Air Quality Index (AQI)- ০ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকে। ৫১-১০০ এর মধ্যে থাকলে তার অবস্থান মাঝারি গোত্রে। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে কোন কোন রুগীর জন্য বা দুর্বল মানুষদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, ১৫১-২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বলে মানতে হবে। ২০১-৩০০ হলে তা অতীব অস্বাস্থ্যকর, আর ৩০০ এর উপরে হলে তা শ্বাস নেবার অযোগ্য বা বিপজ্জনক বলা যেতে পারে।

SwitchOn  এর তথ্য অনুযায়ী এই বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি কলকাতার বাতাসের AQI ১৯৫ থেকে ২৭১ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। তাই তাকে অতীব অস্বাস্থ্যকর  গোত্রে ফেলা যেতে পারে।




কেন হচ্ছে এই দূষণ?

The Centre for Science and Environment (CSE) এর আগে একবার কলকাতাকে বিশ্বের “ ডিজেল রাজধানী” বলেছিল।  এখানকার গাড়ি ব্যবহারকারীদের দৌলতে জ্বালানি ব্যবহারের ৪৫% ই ডিজেল। ২০১৬ সালে CSE তাদের সমীক্ষায় দেখেছিল যে, কলকাতায় নতুন নামা গাড়ির ৬৫% ডিজেল চালিত, আর ব্যবসায়িক গাড়ির ক্ষেত্রে সংখ্যাটা এসে দাঁড়াচ্ছে ৯৯%।

AQI, যা কোন স্থানে বায়ুদূষণের মাত্রা বুঝতে সাহায্য করে, তার পরিমাপ সেই স্থানে সবচেয়ে দূষণকারক উপাদানের উপর নির্ভর করে।  বিভিন্ন রকমের পদার্থ বায়ুদূষণ করে যেমন কিছু গ্যাসীয়, কিছু ভারী ধাতব উপাদান,  বিভিন্ন অর্গানিক অ্যাসিড, বাতাসে ভাসমান কণা এবং বিষাক্ত আরও নানা উপাদান। বাতাসে অবস্থিত এই সব উপাদানের আকারের  উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

কলকাতার বাতাসে সবথেকে বেশি রয়েছে PM2.5 জাতীয় ভাসমান কণা। অর্থাৎ এদের আকার ২.৫ মাইক্রনের কম।

ছোট আকারের জন্য এরা সহজেই শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসে চলে যায়।  এর ফলে শ্বাসযন্ত্রের  ও হৃৎপিণ্ডের নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনা চলতে থাকলে এমনকি ক্যানসার হতে পারে ফুসফুসে। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভস্থ সন্তানেরও ক্ষতি হতে পারে।

২০১৭ এ দিল্লী স্কুল অব ইকনমিক্সের একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে পুরানো, রুগ্ন যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া কলকাতার  এই পরিবেশ দূষণের জন্য বড় অংশে দায়ী।  কলকাতার রাস্তাঘাট মাত্র ৬% তার আয়তনের। সেখানে চলে প্রতিদিন প্রচুর যানবাহন।  এর ফরে যানজট একটি নিত্য সমস্যা। মন্থর গতিতে চলা যানবাহন থেকে  দূষণও ছড়ায় বেশি। গবেষণাপত্রটি বলছে, “ কলকাতায় যানবাহনের সংখ্যা প্রতিবছর ৪% হারে বাড়ছে।  বিশেষত: বেড়ে চলা ব্যক্তিগত যানের ব্যবহারের ফলে যানজট, দূষণ ও দুর্ঘটনা বাড়ছে”।

শশাঙ্ক দেব একজন পরিবেশবিদ, যিনি সবুজ মঞ্চের সাথে যুক্ত। তাঁর মতে, “ আমাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ডিজেল চালিত যানবাহনের উপরে নিয়ন্ত্রণ  করতেই হবে। যতটা গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, ততটা তো রাস্তা বাড়েনি। দেশের মধ্যে কলকাতাতেই রাস্তার অনুপাতে গাড়ির সংখ্যা সব থেকে বেশি।"

পরিবহন দপ্তর ও কলকাতা পুলিশের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে কলকাতার ১৮৫০ কিলোমিটার  রাস্তায় ২০২৩ সালে ৪৫ লক্ষ ৩০ হাজার গাড়ি চলেছে। অর্থাৎ, প্রতি কিলোমিটারে ২৪৪৮টি গাড়ি।  এর বিপরীতে, দিল্লিতে  ১০ কোটি ৩০ লক্ষ গাড়ি থাকলেও  সেখানে রাস্তা রয়েছে ৩৩, ১৯৮ কিলোমিটার। ফলে প্রতি কিলোমিটারে হচ্ছে ৪০০ টি গাড়ি।

পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন দপ্তরের একটি পরিসংখ্যান যা ২০২০ সালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যাচ্ছে কলকাতা ও তার আশেপাশে ৩৩ লক্ষের বেশি গাড়ি ডিজেল চালিত। The Centre for Science and Environment (CSE) এর আগে একবার কলকাতাকে বিশ্বের “ ডিজেল রাজধানী” বলেছিল।  এখানকার গাড়ি ব্যবহারকারীদের দৌলতে জ্বালানি ব্যবহারের ৪৫% ই ডিজেল। ২০১৬ সালে CSE তাদের সমীক্ষায় দেখেছিল যে, কলকাতায় নতুন নামা গাড়ির ৬৫% ডিজেল চালিত, আর ব্যবসায়িক গাড়ির ক্ষেত্রে সংখ্যাটা এসে দাঁড়াচ্ছে ৯৯%।

CSE জানাচ্ছে পেট্রল চালিত গাড়ির থেকে ডিজেল চালিত গাড়ি অনেক বেশি কার্বন কণা নি:সরণ করে যা বাতাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।  এই সমীক্ষা অনুযায়ী ডিজেল গাড়ির কার্বন কণা নি:সরণের মাত্রা ৭ গুন আর নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড নি:সরণ পাঁচ গুন।  এর ফলে স্থানীয় ওজোন স্তরেরও ক্ষতি হচ্ছে।  কলকাতা ও দিল্লিতে মানুষের যানবাহন দূষণের শিকার হতে হয় বিশ্বের গড়ের থেকে ৩-৪ গুণ বেশি।

ইউরোপিয়ান কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী একটি  Euro IV compliant ডিজেল গাড়ি একটি পেট্রোল গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি দূষণ করে। WHO বলছে    ডিজেলে ধোঁয়া একটি প্রথম শ্রেণীর ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী উপাদান (class 1 carcinogen), যা সিগারেটের ধোঁয়ার  মতই ক্ষতিকর।  উভয়েই ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত ক্যান্সারের ১৪% হল ফুসফুসের। যেখানে সারা দেশে  তা ৬%।

Indian Journal of Medical Research, এ ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র বলছে গোটা ভারতে  সবচেয়ে বেশি ফুসফুসের ক্যান্সার যে শহরগুলোয় হচ্ছে তার একটি কলকাতা।

   পুরুষদের মধ্যে  প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায়  ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা (incidence rate)  ২২টি কলকাতায়। যেখানে দিল্লিতে ও চেন্নাইতে তা ১১.৮, মুম্বাইতে  ৯.৫। মহিলাদের মধ্যে কলকাতায় সেই সংখ্যাটা ৭।  দিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাইতে তা যথাক্রমে ৪, ৪.৭ ও ৬।

শুধু কলকাতা শহরেই ক্যান্সারের ঘটনা সীমাবদ্ধ নয়। ফেব্রুয়ারিতেই একটি সংবাদপত্রের খবরে দেখা যাচ্ছে কলকাতার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত ক্যান্সারের ১৪% হল ফুসফুসের। যেখানে সারা দেশে  তা ৬%। উদ্বেগজনক ভাবে বেশি তাঁদের মতে।

শশাঙ্ক দেব জানাচ্ছেন, এখন পেট্রোল ও ডিজেলের দাম মোটামুটি একই হয়ে গেলেও , কিছু বছর আগেও ডিজেল অনেক সস্তা ছিল।  এর ফলে ডিজেল গাড়ি বেশি চলত রাস্তায়। বেশি কার্বন ছড়াতো বাতাসে।

ডিজেল চালিত গাড়িগুলিকে সি এন জি তে পরিবর্তিত করলে এর একটা সমাধান মিলতে পারত। কিন্তু গোটা রাজ্যেই মাত্র ৪৬টি সি এন জি স্টেশন রয়েছে যেখানে শুধু দিল্লিতেই আছে  ৪৭০টি।

এত গাড়ি থাকা সত্ত্বেও কলকাতার আদ্ধেক জনসংখ্যাই কিন্তু বাস,  বাইসাইকেল , ট্রেন বা ট্যাক্সি,  অটোর ব্যবহার করে যাতায়াতের জন্য। CSE এর রিপোর্ট বলছে এক চতুর্থাংশের বেশি কাজে যাওয়া লোকজন পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করে। এরা কেউই দূষণের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু দূষণের শিকার। CSE এর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান এবং CSE এর গবেষণা বিভাগের  এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টার অনুস্মিতা রায়চৌধুরী বললেন, "কলকাতায় খুব দ্রুত কিছু করতে হবে। বাতাসের দূষণ দূর করতে  গণ পরিবহনে অনেক জোর দিতে হবে, গাড়ির সংখ্যায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, হাঁটার সুবিধা রাখতে হবে। "





বায়ুদূষণের জের


WHO এর মতে পৃথিবীতে বছরে ৪২ লক্ষ মৃত্যু হচ্ছে বায়ুদূষণের সাথে সম্পর্কিত। তা হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, chronic obstructive pulmonary disease, ফুসফুসের সংক্রমণ বা ফুসফুসের ক্যান্সার- যেভাবেই হোক না কেন।

International Journal of Environmental Health Research এ ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে যে, কম সময়ের জন্য দূষিত বায়ুতে শ্বাস নিলে আগের থেকে যদি শ্বাসযন্ত্র বা হৃৎপিন্ডের  কোন অসুখ থাকে –তবে তার বাড়াবাড়ি হতে পারে। হসপিটালের ভর্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

National Allergy Asthma Bronchitis Institute এর মেডিকেল ডিরেক্টার ও ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা: অলোক গোপাল ঘোষাল বলেন, “ বাযুদূষণের ক্ষতিটা বুঝতে আমাদের অন্য কোন অসুখের কথা বলার দরকার নেই।  এটা সরাসরি ফুসফুসের ক্যান্সারের সাথে যুক্ত আর মৃত্যুর বড় কারণ। এটাই আমাদের সতর্ক হবার বড় কারণ নয়?”

তিনি আরও বলেন, “ বয়স্ক ও শিশুরা এতে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চার জিনগত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে দূষণের জন্য। তার জীবনের পরবর্তীতেও যদি সে সুস্থ বাতাসে থাকে , তবু জিনের যে পরিবর্তন হচ্ছে তা তো আর শুধরবে না। একে আমরা বলি epigenetic change”।

মানুষের স্বাস্থ্য ছাড়াও বায়ুদূষণ স্থানীয় অর্থনীতির পক্ষেও ক্ষতিকর। ভারতে ২০১৯ সালে ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যান। 2022 global air quality report বলছে কলকাতায় সেই বছরে প্রতি এক লক্ষ মানুষে ৯৯ জন মারা গেছেন বাতাসে PM2.5 জাতীয় দূষিত পদার্থের কারণে। ২০১৯ এ Lancet এ প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে বায়ুদূষণ জনিত কারণে অকাল মৃত্যু ও অসুস্থতায় সেই বছরে ভারতে যথাক্রমে ২৮.৮ ও ৮  বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির পক্ষে এই ধরনের ক্ষতি যে বড় বাধা তা ওই গবেষণায় বলা হয়।


সরকারের অবস্থান

তাছাড়া কলকাতায় বাতাসের দূষণ মাত্রা পরিমাপের পরিকাঠামোও যথেষ্ট নয়। কলকাতায় বাতাসের দূষণমাপক যন্ত্র রয়েছে মাত্র সাতটি স্থানে , যেখানে দিল্লিতে রয়েছে  ৩৭টি।

শশাঙ্ক দেব জানালেন, এত ভয়ানক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের তেমন মাথাব্যথা  নেই। "ডিজেলের জ্বালানি ছাড়াও আবর্জনা জ্বালানো আর নির্মাণ কার্য হল বায়ুদূষণের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ কলকাতায়।"  CSE ও তার সমীক্ষায় সেই কথাই বলছে।

শশাঙ্কবাবুর কথায়, "আবর্জনা বা বর্জ্য পদার্থের  সঠিক সংস্কার কলকাতায় হয় না বললেই চলে। বেশিরভাগ আবর্জনা, শুকনো পাতা, কাঠ খোলা হাওয়াতেই পুরানো হয়। এর ফলে নানা দূষিত পদার্থ বাতাসে নির্গত হয়। সরকার মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।"

"ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ না করা ছাড়াও বিভিন্ন কারখানায় কয়লা ও অন্য জৈব জ্বালানির যে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়  তা বন্ধ করাতেও সরকার ব্যর্থ।"

তাছাড়া কলকাতায় বাতাসের দূষণ মাত্রা পরিমাপের পরিকাঠামোও যথেষ্ট নয়। কলকাতায় বাতাসের দূষণমাপক যন্ত্র রয়েছে মাত্র সাতটি স্থানে , যেখানে দিল্লিতে রয়েছে  ৩৭টি। কলকাতার ৭ টি দূষণ পরিমাপক স্টেশনের ৩ টিই আবার রয়েছে অপেক্ষাকৃত সবুজ, কম দূষিত এলাকায়। ThePrint এর একটি রিপোর্ট বলছে এর ফলে যখন সব ক'টি দূষণ পরিমাপক যন্ত্র থেকে একত্রে গড় পাঠ নেওয়া হয়, তখন দূষণের মাত্রা স্বভাবত:ই কিছুটা কম দেখায়।

CSE র ব্যবহৃত দূষণ পরিমাপক যন্ত্রে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যন্ত্রের থেকে দূষণের হার বেশি পাওয়া গেছে।



যদিও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ দপ্তর কলকাতা মেট্রোপলিটান এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য “Clean Air Action Plan For Kolkata Metropolitan Area.” নামক একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।  এর মধ্যে বিবিধ উৎস থেকে দূষণ হবার কারণগুলিকে চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন যানবাহন বা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, বর্জ্য পদার্থের পুড়িয়ে দেয়ার কারণে হওয়া ধোঁয়া, পুরসভার কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ও ধ্বংসকার্য থেকে বার হওয়া ধূলিকণা, ভাঙ্গা রাস্তা থেকে বার হওয়া ধুলো অথবা মরশুম বিশেষে ক্ষেতে আগুন দেওয়ার জন্য হওয়া দূষণ- এইসব ক্ষেত্রকে বিবেচনার মধ্যে রাখা হয়েছে।

রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা, পুরানো গাড়ি  বাতিল করা, সাইকেল ও হাঁটার জন্য আলাদা পথ বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।  এছাড়াও বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের বিষয়টি ১০০% নিশ্চিত করা ও  একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

 যদিও Mongabay Indiaর তরফে বহুবার পরিবেশ মন্ত্রক ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ  পর্ষদের সাথে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় তাদর এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে ও কলকাতার দূষণ নিয়ে তারা কী ভাবছেন তা জানতে। অনেকবার ই-মেল ও করা হয়। কিন্তু কোনবারই তাদের তরফ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।


 মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2024/06/kolkatas-overlooked-air-pollution-crisis/

Comments


Royal_Bengal_Tiger_Kanha.JPG
bottom of page