তেলে- ইথানলে: পরিবেশ-বান্ধব নাকি লুকিয়ে আছে অন্য আশঙ্কা?
- ..
- Sep 27
- 7 min read
সম্প্রতি দেশ জুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে মোটরগাড়ির জ্বালানি পেট্রলে ২০% অ্যালকোহল মেশানের ঘটনা নিয়ে, যা ভারত সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতির ফল। গাড়ি ব্যবহারকারীদের ক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সুবিধার সাথে একে পরিবেশের পক্ষে উপযোগী বলেও তুলে ধরছেন। কিন্তু বিষয়টি সত্যিই কি তাই? জানাচ্ছেন কুন্দন পান্ডে।

চলতি বছরের জুলাই মাসে ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল যে তারা ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণযুক্ত পেট্রোল (E20) ব্যবহারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের নির্ধারিত সময়সীমার পাঁচ বছর আগেই অর্জন করেছে। এই ঘোষণার পরপরই একাধিক বিতর্ক শুরু হয়—অনলাইন প্রতিবাদ, মিশ্রণের অনুপাত নিয়ে তথ্য জানার জন্য আরটিআই আবেদন, এমনকি সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা পর্যন্ত হয়। সমালোচকদের দাবি ছিল যে এই কর্মসূচি তাড়াহুড়ো করে চালু করা হয়েছে, রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। গাড়ির মালিকদের তরফ থেকেও অভিযোগ ওঠে—জ্বালানির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, অনেক গাড়ি এই মিশ্রণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এবং বিকল্প হিসেবে খাঁটি (অমিশ্রিত) জ্বালানি বাজারে নেই। তবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি এইসব সমালোচনাকে “স্বার্থান্বেষী মহলের প্রচারণা” এবং “ভয় ছড়ানোর কৌশল” বলে উড়িয়ে দেন।
একই সময়ে, জুলাই মাসে, দিল্লি সরকার ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোলচালিত এবং ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেলচালিত গাড়ির জন্য জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই নির্দেশকে ঘিরে বহু মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, যাতে পুলিশ গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ব্যবস্থা নিতে না পারে।
পরিবেশগত বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে এমন প্রতিক্রিয়া একটি বৈশ্বিক প্রবণতাকেই প্রতিফলিত করে, যাকে বলা হয় গ্রিনল্যাশ (Greenlash)। এই শব্দটি জনপ্রিয় করেন ইতালীয় রাজনৈতিক বিজ্ঞানী নাথালি তোচ্চি, যা সমাজ ও রাজনীতিতে পরিবেশনীতি-বিরোধী প্রতিরোধ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
২০১৮ সালে, উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁকে ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়, যখন তার সরকার কার্বন কর বাড়ানোর চেষ্টা করে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে জনরোষ এতটাই তীব্র হয় যে তিনি পরিকল্পনাটি বন্ধ করতে বাধ্য হন। ইউরোপে ২০৩৫ সালের মধ্যে নতুন অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন (ICE) চালিত গাড়ি ধাপে ধাপে বন্ধ করার পরিকল্পনাও তীব্র প্রতিরোধের জন্ম দিয়েছে। যদিও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেছে, জার্মানি ই-ফুয়েল (synthetic fuels) চালিত গাড়ির জন্য ছাড়ের ঘোষণা করেছে। এরকম আরও বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে।
গবেষকেরা এই ধরনের প্রতিরোধের পেছনে কিছু সাধারণ কারণের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের পোস্টডক্টরাল গবেষক ইয়েন্স এওয়াল্ড বলেন, “ এর মূল সাধারণ কারণ হলো খরচ ও সুফল সম্পর্কে অস্বচ্ছতা, অন্যায্যতার ধারণা — যেমন কিছু গোষ্ঠী অন্যদের তুলনায় বেশি বোঝা বহন করছে বলে মনে করা। এবং হঠাৎ করে বা সঠিক ভাবে না জানিয়ে এইসব নীতির বাস্তবায়ন।” তিনি সতর্ক করে বলেন, জনসাধারণের আস্থা ছাড়া এমনকি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা নীতিও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কখনও প্রত্যাহার হয়ে যায় বা বিলম্ব হয় রূপায়ণ করতে। পরিবেশবান্ধব নীতির প্রতি মানুষের প্রতিরোধ বোঝার জন্য তিনি একাধিক গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ম্যাগনাস বার্গকুইস্ট যোগ করে বলেন, “সম্প্রতি করা কয়েকটি গবেষণায় আমি দেখেছি যে, পরিবেশগত নীতিকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে অন্যায্যতার ধারণা ই আসলে, তাদের কার্যকারিতা বা খরচ সংক্রান্ত ধারণার চেয়ে অনেক বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া, যখন কোনো নিয়ম মানুষ অন্যায্যভাবে প্রয়োগ হচ্ছে এবং অসমভাবে বণ্টিত (অসম খরচ বহন বিভিন্ন মানুষের দ্বারা) বলে মনে করে, তখন তা নীতিনির্ধারকদের প্রতিও আস্থা নষ্ট করে।” বার্গকুইস্ট জলবায়ু কর ও আইন সম্পর্কে মানুষের মতামত গঠনে কোন কোন উপাদান প্রভাব ফেলে তা অনুসন্ধান করার জন্যও একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
ভারতে পেট্রোলিয়াম নীতি বাস্তবায়নের মানচিত্র
ভারতে পেট্রোলে ইথানল মিশ্রণ কর্মসূচির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০০১ সালে ৫% ইথানল-মিশ্রিত পেট্রোল চালু করার জন্য একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে এটি শুরু হয় এবং ২০০৩ সালে ইথানল ব্লেন্ডেড পেট্রোল (EBP) কর্মসূচি হিসেবে আনুষ্ঠানিক রূপ পায়। ২০০৬ সালের এক বিজ্ঞপ্তিতে ৫% EBP আরও কয়েকটি রাজ্যে চালু করা হলেও অগ্রগতি ছিল ধীর, এবং ২০১৩–১৪ সময়কালের আগে পর্যন্ত গড় মিশ্রণের হার ০.১% থেকে ১.৫% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
এই ব্যাপারটা ২০১৪ সাল থেকে গতি পেতে শুরু করে, বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে—যার মধ্যে ছিল ইথানলের জন্য নির্ধারিত মূল্য ব্যবস্থা, ২০১৮ সালে প্রবর্তিত এবং ২০২২ সালে সংশোধিত জাতীয় জৈব-ইন্ধন (biofuel)নীতি, ইথানলের ওপর কম জিএসটি, এবং ২০২১ সালের একটি রোডম্যাপ যেখানে স্পষ্ট মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ভারত ২০২২ সালে ১০% মিশ্রণের লক্ষ্য পূরণ করে (নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস আগেই), এরপর E20 লক্ষ্য ২০৩০ সাল থেকে এগিয়ে ২০২৫ সালে নিয়ে আসে, এবং জুলাই মাসে ঘোষণা করে যে তারা ইতিমধ্যেই E20 লক্ষ্য অর্জন করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে এসব নীতি গড়ে উঠলেও উপভোক্তারা দাবি করেন, তাদের গাড়িতে কত শতাংশ ইথানল ব্যবহার হচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের জানানো হয়নি। নয়ডার সেক্টর ৫০–এর বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সী দিনেশ সিংহ একটি মারুতি ডিজায়ার চালান, যা তিনি ২০১৬ সালে কিনেছিলেন। তিনি জানান, গত এক বছর ধরে তার জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে বলে তার মনে হচ্ছিল, কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন এটি গাড়ির পুরনো হওয়ার কারণে হচ্ছে। পরে যখন তিনি সামাজিক মাধ্যমে ইথানল মিশ্রণ এবং তা কীভাবে গাড়িতে প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে আলোচনা দেখলেন, তখনই তার মনে হলো এটাই হয়ত কারণ। তিনি বলেন, “এখন আমার কাছেও ব্যাপারটা পরিষ্কার। আমি তো জানতামই না যে আমার গাড়িতে ইথানল ব্যবহার হচ্ছে।”
তার মতো আরও অনেকে আছেন। মিশ্রণের মাত্রা বাধ্যতামূলকভাবে প্রদর্শন না করা হলে বা দামের ফারাকের ঘোষণা না থাকলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি তেমন আকৃষ্ট হয় না। সরকারের E20 ঘোষণার পরই ব্যাপক সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়—বিশেষ করে কম মাইলেজ নিয়ে অভিযোগ।
উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল Ask CarGuru-এর মোটরগাড়ি রিভিউয়ার অমিত খারে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে উপভোক্তাদের উদ্বেগ তুলে ধরা হয়। সেই ভিডিওতে হাজার হাজার মন্তব্য আসে, যার অনেকগুলোতেই E20 ব্যবহার শুরুর পর মাইলেজ কমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানাচ্ছে।
মাইলেজ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা স্বীকার করলেও মন্ত্রীরা বলছেন, নিয়মিত সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং এর পেছনে অন্য কারণও থাকতে পারে, যেমন চালকের চালানোর ধরন। তারা ২০২১ সালের নীতি আয়োগের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দেন, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে জ্বালানিতে বেশি ইথানল মেশালে গড়ে প্রায় ৬% মাইলেজ হ্রাস পেতে পারে।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় ৪ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যবহারকারীরা সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পরে, ১২ আগস্ট পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি এক বিস্তারিত বিবৃতিতে এই নীতিকে একটি সেতুবন্ধনমূলক জ্বালানি উদ্যোগ হিসেবে তুলে ধরেন , যা দূষণ কমায়, গ্রামীণ আয় বাড়ায়, আখ চাষিদের বকেয়া সমস্যা দূর করে এবং ভুট্টা চাষ উন্নত করে। তিনি এমনকি এর ফলে কৃষি আয়ের বৃদ্ধির সঙ্গে কৃষক আত্মহত্যার হার কমার যোগসূত্রও টানেন।
ভোক্তাদের আপত্তি এখনও অব্যাহত। সম্প্রতি এক বেসরকারি পুরোনো গাড়ির ডিলার একটি ১০ বছর বয়সী মারুতি সুজুকি ডিজায়ার (যা E20–এর জন্য অনুমোদিত নয়) পরীক্ষা করে দেখেন যে সাধারণ পেট্রোলের তুলনায় E20 ব্যবহার করলে মাইলেজ ৩৫% কমে যায়। ভোক্তারা আরও প্রশ্ন তুলেছেন—ওয়ারেন্টি, বীমা এবং যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ নিয়ে—কারণ তাদের কখনোই স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি যে তারা কী ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করছেন। তাছাড়া, গাড়ির সঙ্গে দেওয়া ইউজার ম্যানুয়ালেও E20 পেট্রোল ব্যবহারের সুপারিশ করা নেই।
আমাদের তরফে গাড়ির ইউজার ম্যানুয়ালগুলোর পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, অনেক ম্যানুয়াল স্পষ্টভাবে ১০%-এর বেশি ইথানল মিশ্রণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৫ সালের মারুতি সেলেরিও–এর ইউজার ম্যানুয়াল এবং ২০১৮ সালের ভিটার ব্রেজা–এর ম্যানুয়াল শুধুমাত্র E10 পর্যন্ত অনুমোদন দেয়, অন্যদিকে ২০১৮ সালের হুন্ডাই ক্রেটা–এর ম্যানুয়াল ১০%-এর বেশি মিশ্রণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে এবং মিথানল ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। কিছু নতুন মডেল (২০২০ সাল থেকে) E20–এর জন্য অনুমোদিত।
আমরা মারুতি সুজুকি, হুন্ডাই, মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা এবং কয়েকটি অন্য কোম্পানির সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করি, তবে প্রকাশের সময়ে কোনো উত্তর পাইনি।
উপভোক্তাদের বাড়তে থাকা উদ্বেগের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইন্টেলক্যাপ নামের একটি পরামর্শদাতা সংস্থার সার্কুলার ইকোনমি পার্টনার অশ্বিন কাক উল্লেখ করেন, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোতে উপভোক্তাদের দুটি সুবিধা দেওয়া হতো—পছন্দের স্বাধীনতা এবং ধাপে ধাপে যানবাহনের মানের বা যন্ত্রাংশের উন্নয়ন। তিনি বলেন, “এই দুটি ব্যাপারই এখন ভারতের ক্ষেত্রেও করতে হবে।”
ভারতে ইথানলকে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উভয় লক্ষ্য পূরণের একটি সেতুবন্ধনমূলক জ্বালানি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি উল্লেখ করেন, যে ২০১৪–১৫ সাল থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত তেল বিপণন কোম্পানিগুলো পেট্রোলে ইথানল মেশানোর মাধ্যমে ১.৪৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করেছে। এটা প্রায় ২৪.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কাঁচা তেলের বিকল্প, এবং প্রায় ৭৩.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন CO₂ নির্গমন হ্রাস হয়েছে, যা ৩০০ মিলিয়ন গাছ লাগানোর সমান।
অনলাইন অনেক ব্যবহারকারী এই দাবিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, কারণ কম মাইলেজের জন্য তারা বেশি জ্বালানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন শেষমেশ। অন্যদিকে, ২০১৪ সাল থেকে ভারত কাঁচা তেলের আমদানি এবং পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানিতে দুটো ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে।
ইথানল সংক্রান্ত সাম্প্রতিক ঘটনা ঘটেছে সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ, যখন গডকড়ি ভারতের ইথানল রপ্তানি করার পক্ষে বক্তব্য রাখেন, উল্লেখ করে যে ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বার্ষিক প্রায় ১৮.২২ বিলিয়ন লিটারে পৌঁছেছে। নীতি আয়োগের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছিল যে E20 মিশ্রণ বজায় রাখার জন্য ২০২৫–২৬ সালের মধ্যে ভারতের ১৫ বিলিয়ন লিটার ক্ষমতা প্রয়োজন হবে। যেহেতু বর্তমান উৎপাদন ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্য অতিক্রম করেছে, তাই দেশে এখন অতিরিক্ত ইথানল থাকার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
কিন্তু এই উৎপাদন বৃদ্ধি পরিবেশগত উদ্বেগও তৈরি করছে। সেন্টার ফর স্টাডি অফ সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড পলিসি (CSTEP) নামের একটি অলাভজনক সংস্থার ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের বিবৃতিতে বড় পরিসরে ইথানল উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত অসুবিধাগুলি তুলে ধরা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে ভুট্টা প্রধান ইথানলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেখানে বলা হয়েছে যে ইথানল উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ভুট্টার দাম বৃদ্ধি, সার ব্যবহারে বৃদ্ধি, জমির ব্যবহার পরিবর্তন থেকে আরো বেশি গ্রীণ হাউস গ্যাস নির্গমন, এবং সার্বিকভাবে ভুট্টা-ভিত্তিক ইথানলের 'কার্বন ফুটপ্রিন্ট' বৃদ্ধির মতো বিষয় দেখা দিয়েছে।
CSTEP ভারতের জন্যও একই ধরনের ঝুঁকির পূর্বাভাস দিয়েছে। যদি E20–এর চাহিদার অর্ধেকই ভুট্টা থেকে পূরণ করতে হয়, ভুট্টার ফলনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে না বাড়লে প্রায় আট মিলিয়ন হেক্টর অতিরিক্ত জমি প্রয়োজন হবে, যা অব্যবহৃত জমি বা বনাঞ্চলকে চাষের জন্য রূপান্তরিত করতে পারে। শুধুমাত্র আখ থেকে চাহিদা পূরণ করতে হলে ৩.৫ মিলিয়ন হেক্টর অতিরিক্ত জমি প্রয়োজন হবে, যা খরা প্রবণ অঞ্চলে বার্ষিক ৬০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পর্যন্ত জল উত্তোলন বাড়াতে পারে। সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পরিবর্তে, E10 মিশ্রণ ব্যবহার করাটা সুবিধাজনক।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ইথানল মিশ্রণের মূল যুক্তি ছিল জ্বালানি জোগানের নিরাপত্তা এবং কার্বন নির্গমন হ্রাস। তারা বলেন, উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণের দৌড়ে এই লক্ষ্যগুলো যেন না হারায়। স্থানীয় উপভোক্তাদের উদ্বেগ এবং পরিবেশগত প্রভাবকে উপেক্ষা করলে দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্যপূরণে ক্ষতি ঘটতে পারে, এ কথা তারা সতর্ক করে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তারা স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেছেন।
কাক উল্লেখ করেন যে ভারতের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের পরিস্থিতির থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। তিনি বলেন, “আমাদের কাঁচামাল (ফিডস্টক) সেচের জলে চাষ করা আখ থেকে শুরু করে ভুট্টা পর্যন্ত বিস্তৃত, যাদের ব্রাজিলের বৃষ্টিনির্ভর আখ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্চ-ভিত্তিক ভুট্টার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এই জটিলতার কারণে, ইথানল মিশ্রণ সম্পর্কে আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণ এবং উপভোক্তাদের জন্য বিকল্পগুলো বোঝার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের গবেষণা প্রয়োজন।”
একইভাবে, ইওয়াল্ডও কর্তৃপক্ষের তরফে পরিষ্কার করে ঝেড়ে কাশার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ভারতকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে সুবিধাগুলো কী—পরিবেশগত (নির্গমন হ্রাস, উন্নত বায়ু ) এবং অর্থনৈতিক (জলবায়ুর ক্ষতি এড়ানো, জ্বালানির জোগান নিশ্চিত করা)। ধাপে ধাপে বাস্তবায়নও যুক্তিসঙ্গত হতে পারে, যাতে মানুষ মানিয়ে নিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী সফলতার জন্য যে আস্থা প্রয়োজন তা গড়ে তোলা যায়।”
মূল প্রবন্ধটি Mongabayপত্রিকায় প্রকাশিত। ইংলিশ প্রবন্ধটির অনুমতিক্রমে অনুবাদ করা হল বনেপাহাড়ের পাঠকদের জন্য। মূল প্রবন্ধটির লিঙ্ক: https://india.mongabay.com/2025/09/from-policy-to-pushback-indias-greenlash-over-ethanol-blended-petrol/







Comments