সবুজ মুন্নারের উদ্ভিদজগৎ
- ..
- Jul 13
- 2 min read
পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কোলে এক জনপ্রিয় শৈল শহর মুন্নার। কেরলের এই অংশে প্রাকৃতিক দৃশ্য যেমন মনোমুগ্ধকর, তেমনই মনযোগী ভ্রমণার্থীর চোখে ধরা পড়ে এখানকার উদ্ভিদের বৈচিত্র। তেমন কিছু উদ্ভিদের কথা উঠে এল রুদ্রজিৎ পালের কলমে ও ক্যামেরায়।

মুন্নার উত্তর কেরালার এক অতীব সুন্দর হিল ষ্টেশন। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একে দক্ষিণ
ভারতের কাশ্মীরও বলা হয়। মুন্নারের মূল কৃষি হল চা। দার্জিলিং-এও চা বাগান রয়েছে। তার
মনোরম দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু মুন্নারে পাহাড়ের কোলে যেভাবে চা-বাগানের সৌন্দর্য
ধরা পড়ে, তার কোনও তুলনা নেই। নীচের ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন যে কেন আমি
দার্জিলিং দেখার পরেও, মুন্নারের চা বাগানের দৃশ্য দেখে এত উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছি। মাইলের
পর মাইল সবুজ চা বাগানের গালিচা যেন গিয়ে মিশে গেছে আকাশের নীল দিগন্তে। আমি
গিয়েছিলাম ক্রিসমাসের সময়ে। তখন আকাশ একদম পরিষ্কার। ফলে সেই সময়ে এই পাহাড়ের
শোভা যেন পিকচার পোস্টকার্ড।
তবে এই ক্ষুদ্র লেখায় মুন্নারের চা বাগানের সৌন্দর্য বর্ণনা আমি করছি না। সেটা ছবি দেখলেই
বুঝবেন। আমি আজকে বলব এই চা বাগানের অন্তরালে থাকা মুন্নারের অন্যান্য গাছের সম্ভার
নিয়ে। কেরালা সাধারণভাবে এবং মুন্নার বিশেষভাবে উদ্ভিদপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ। এই পাহাড়ি
শহরের পথে পথে ঘুরলেই এত রকম গাছ এবং ফুল চোখে পড়ে যে সেগুলো দেখতেই দিন
কাবার হয়ে যায়। এর জন্য বিশেষ কোনও বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়ার দরকার পড়ে না।
হোটেল বাদ দিলে এই পাহাড়ি শহরের রাস্তার পাশে যে সব গ্রামের বাড়ি, সেখানেও নানারকম
গাছ লাগানো থাকে। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। আসুন, সেরকম কিছু গাছের পরিচয় নেওয়া
যাক। এগুলো সব পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই দেখা। এরপর শেষে মুন্নারের একটা স্পাইস
গার্ডেনে দেখা কিছু গাছের বর্ণনাও দেব।

এটি গোলমরিচ গাছ। ওখানে অনেক বাড়িতেই এই লতানে গাছ হয়ে থাকে। একটা নারকেল গাছ
বা পেঁপে গাছ বেয়ে এই লতা ওঠে। আর গাছ ভরে থাকে এরকম ছোট ছোট গোলমরিচের
ছড়ায়।
এরপর দেখা যাক কিছু ফুলের গাছের ছবি।



প্রথমটি হল বাটারফ্লাই উইড। এর আদি নিবাস আমেরিকা। হয়ত কেউ কখনও এনে
লাগিয়েছিল। এখন মুন্নারের পথের ধারের জঙ্গলে হয়ে থাকে। দ্বিতীয়টি হল ইয়েলো জ্যাকোবিনা।
তৃতীয় ফুলটি হল হালকা গোলাপি রঙের লঙ্কা জবা। লালের বিভিন্ন শেডের লঙ্কা জবা
পশ্চিমবঙ্গে দেখেছি। কিন্তু এরকম অপূর্ব হালকা গোলাপি রঙের ফুল আমি আগে দেখিনি। গাছটি
হয়ে ছিল পাহাড়ি পথের ধারে এক পাথরের খাঁজে।

তবে সবথেকে আশ্চর্য হল শেষ গাছটি। ওই যে ছোট গোলাপি ফুল আর কাটা কাটা পাতা।
এটি হল লজ্জাবতী লতা। ওখানকার লোকেরা বলে যে এই গাছ স্থানীয় আয়ুর্বেদে ব্যবহার হয়।
আরেকটি কাছ থেকে তোলা ছবি দিলাম (নীল তীরচিহ্ন)।

গোলমরিচ গাছের ফাঁকে ফাঁকে আবার হয়ে থাকে এই বিষাক্ত ব্লাডবেরি গাছের ফল।

এই ফল কিন্তু মানুষের জন্য বেশ বিপজ্জনক।
এ তো গেল মুন্নারের পথে পথে দেখা কিছু গাছের কথা। কিন্তু কেরল আয়ুর্বেদের জন্য বিখ্যাত।
প্রচুর ওষধি গাছের চাষ হয় এখানে। সমস্ত টুরিস্ট স্পটে এরকম ওষুধ বিক্রি হয়। সেরকম এক
স্পাইস গার্ডেনে গিয়ে তোলা কিছু ছবি রইল এখানে।
এলাচ হল এইসব বাগানের প্রধান শস্য। তার একটা কারণ এই যে, এলাচ গাছ কলাবতী গাছের
মত। একবার লাগালে শিকড় থেকেই নতুন গাছ জন্মাতে থাকে এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে
থাকে। এরকম একটি এলাচ গাছের ঝাড়ের ছবি রইল নীচে।

এরপর সেই গাছের গোড়া থেকে বেরনো এলাচের ফুল ও ফলের ছবি।

এরপর দেখুন সঞ্জীবনী লতার ছবি।

কেরলে পাওয়া যায় একটি বিশেষ ধরণের লাল কলা। এটা মানুষে খায় না। এর ব্যবহার ওষুধ
তৈরিতে।

আর সব শেষে রইল কেরল গেলেই যে দুটি গাছ না দেখে ফেরা যায় না, সেই কফি আর
কোকো গাছের ছবি।


শেষে পাঠকদের জন্য মুন্নারের দুটি অপূর্ণ নিসর্গ চিত্র রেখে গেলাম।


প্রত্যেকটি ছবি লেখকের নিজের তোলা।
লেখক পরিচিতি: ডা: রুদ্রজিৎ পাল একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লেখক।
advertisement








Comments